13/09/2025
“কখনও রাষ্ট্র হবে না” বলার পরদিনই জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রেকর্ড ভোট!"
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছিলেন, “ফিলিস্তিন কখনও রাষ্ট্র হবে না।” তার ঠিক এক দিনেরও কম সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে পাস হলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাব।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩টি দেশ, বিপক্ষে মাত্র ০৯টি—যার মধ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ২৫ দেশ। প্রস্তাবটি উত্থাপন করে ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
সাত পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে হামাসকে নির্দেশ দেওয়া হয় সকল জিম্মি মুক্ত করার এবং তাদের শাসন শেষ করে অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সৌদি আরব ও ফ্রান্সের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলকে দখলদারিত্বের অবসান ও ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে রিয়াদ ও প্যারিসের যৌথ সভাপতিত্বে জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলনের আগে এই ভোটটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের ১৪৬টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে সমর্থন করেছে। আশা করা হচ্ছে, মাসের শেষে আরও কয়েকটি দেশ—যেমন ফ্রান্স, নরওয়ে, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য—এই তালিকায় যুক্ত হবে।
তবে ঐতিহাসিক এই ভোটকে ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন এক্সে পোস্ট দিয়ে বলেন, হামাসকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” না বলাটা লজ্জাজনক এবং প্রমাণ করেছে যে সাধারণ পরিষদ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাসে পরিণত হয়েছে।
ভোটটি এমন সময়ে হলো, যখন গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী তীব্র হামলা চালাচ্ছে এবং লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া ও কাতার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। শুধু শুক্রবারেই গাজায় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে নিহত হয়েছে অন্তত ৫৯ জন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত সপ্তাহে তারা ৫০০টিরও বেশি স্থানে হামলা চালিয়েছে এবং হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস করতে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
এদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে যোগ দিয়ে ইসরায়েলি নেতাদের “অহংকারী” আখ্যা দেন এবং হামলার মাধ্যমে শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা ভণ্ডুল করার অভিযোগ তোলেন।