10/10/2025
দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি যদি কেউ আপনার ভালোবাসা পাওয়ার ও অনুভূতিগুলো জানার হক্বদার হয় সে হচ্ছে আপনার জীবনসঙ্গী।
আমরা একটা কথা অনেকেই বলি যে, বয়স হয়ে গেলে অনুভূতিরাও বুড়িয়ে যায়। কথাটা কি আদৌ সত্য?
বয়স বাড়ার সাথেসাথে জীবনে অনেক বিষন্নতা, অবসাদ চলে আসে সত্যি, জীবনের নির্মলতাগুলো হারিয়ে জটিল হয়ে যায় জীবন। তার ফলস্বরূপ কচি বয়সে যে অনুভূতিগুলো কাজ করে, যেভাবে আমরা ভাবি প্রেম, ভালোবাসাকেন্দ্রিক ভাবনাগুলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেগুলো সেইমভাবে কাজ করেনা।
কারো ক্ষেত্রে একেবারেই কাজ করেনা, কারো ক্ষেত্রে একটু কম কাজ করে আর কারো ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই যে বিষয়টা কমন তা কি জানেন?
ভালোবাসা একটা চারাগাছের মতো। একে যত্ন নিয়ে বুনতে হয়। হতেই পারে আপনার অনুভূতিগুলো বুড়িয়ে গেছে। কিন্তু যদি আপনি ভাবেন আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে ঠিক কিশোর বয়সের মতো করেই ভালোবাসবেন আপনাকে ফিরে যেতে হবে কিশোর বয়সের দিনগুলোতে।
স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে বের করতে হবে ওই বয়সে আপনার অনুভূতিগুলো কেমন ছিল, কী কী ভাবতেন। নিজেকে সেই সময়টাতেই ফিরিয়ে নিয়ে আজকের সময়টায় দাঁড়িয়ে হলেও জীবনসঙ্গীকে সেভাবেই ভালোবাসা উচিত।
হতে পারে মন থেকে সেগুলো আসবেনা। কিন্তু অভিনয় হলেও করতে হবে আনার। ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে হলেও একসময় মানুষ সেই ফিতরাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
খুব মনে পড়ে আমাদের আম্মিজানের কথা। মাঝেমধ্যেই ভাবি রাসুলুল্লাহ (সা:) যখন উনার জীবনে এলেন জীবনযুদ্ধে কতটুকু হোঁচট খাওয়া মানুষ ছিলেন তিনি।
ব্যবসায়িক দায়িত্ব, উনার দায়িত্বে থাকা মানুষদের জিম্মাদারী, একাধিকবার বিধবা হওয়ার বিস্বাদ।
তবুও নবীজীকে তিনি ঠিক সেভাবেই ভালোবেসেছিলেন যেন এর আগে উনার জীবনে আর কোনো ভালোবাসার সূর্যই উদিত হয়নি। নিজের জীবনের, অনুভূতির সবটুকু উজার করে দিয়েছিলেন নবীজীকে।
এজন্যই নবীজীর জীবনের সাথে কী চমৎকারভাবেই না নিজেকে রাঙিয়ে নিয়েছিলেন। বৃদ্ধা বয়সেও নবীজীর জন্য দরজায় অপেক্ষমান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন, উনার জন্য খাবার নিয়ে যেতেন পাহাড় বেয়ে, উনার মিশনের সর্বাত্মক সাহায্যকারী ছিলেন।
এইযে ভালোবাসা, এই ভালোবাসা নবীজীর জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর নবীজীর আচরণ কেমন ছিল?
রাসুলুল্লাহ (সা:) যে সময়টায় আম্মিজান আয়িশা (রা:) এর জীবনে এলেন তখন উনার জীবনও পড়ন্ত বয়সে পা রেখেছে। তারপরও তিনি আয়িশা (রা:) কে সেভাবেই ভালোবেসেছিলেন যেন তিনিও আম্মিজানের মতোই কম বয়ষ্ক মানুষ।
এজন্যই উনার সাথে দৌড় প্রতিযোগীতা করতেন, উনাকে খেলাধুলার সুযোগ দিতেন। এককথায় ভালোবাসার মানুষটাকে উনার সবটুকু দিয়ে প্যাম্পার করতেন, তাকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী বেড়ে উঠতে দিয়েছিলেন, তার মতো করেই তাকে ভালোবেসেছিলেন।
কখন তিনি অভিমান করে ইব্রাহীমের রবের কসম বলছেন আর কখন তিনি মুহাম্মদের রবের কসম বলছেন এরকম ছোট ছোট বিষয়গুলোও উনার নজর এড়াতোনা। কারণ পৃথিবীর বিশুদ্ধতম মানুষটার ভালোবাসায় তো কোনো ইগনোরেন্স ছিলোনা।
আম্মিজান খাদিজা (রা:) পড়ন্ত বয়সে কমবয়সী রাসূলুল্লাহ (সা:) কে যেভাবে ভালোবেসেছিলেন, আর রাসূলুল্লাহ (সা:) ঠিক একইভাবে উনার পড়ন্ত বয়সে যেভাবে আয়িশা (রা:) কে ভালোবেসেছিলেন তাতে এটাই প্রমাণিত হয় ভালোবাসার কোনো বয়স হয়না। ভালোবাসার মতো করে কাউকে ভালোবাসলে ওই ভালোবাসা বয়সের ভারে কখনোই বুড়িয়ে যায়না।
দুনিয়াতে আমরা বাঁচবোইবা আর কতদিন? এইযে দাম্পত্যজীবনের এতো ছন্দপতন নিত্যনতুন ঘটে, কেন আমরা নজর দেইনা সিরাতের ঘটনাগুলিতে? ভালোবাসার এই অনুভূতিগুলো, একটা চমৎকার দাম্পত্য জীবন উপভোগের যে আদর্শ রোডমেড কেন সিরাহর ক্ষেত্রে সেদিকে তাকাইনা?
আমরা খাবারের সুন্নাহ শিখি, জীবনযাপনের সুন্নাহ শিখি, ভালোবাসার সুন্নাহ শিখি কজন?
যারা শিখে তারা অবিবাহিত অবস্থায় কল্পনার জগতে শিখে। কিন্তু বিবাহিত হওয়ার পর যখন সত্যিকার অর্থেই এপ্লাইয়ের সুযোগ আসে তখন কেন কাজে লাগাইনা? কেন জীবন নিয়ে এতো হাহুতাশ করি?
দুনিয়ার স্বল্প জীবনটা তো একদিন কেটেই যাবে! কি এমন ক্ষতি হয় দুজন দুজনকে যদি কিশোরকালের মতোই ভালোবেসে একজীবন কাটিয়ে দেয়া যায়?
আজকালের মানুষগুলোও না কেমন যেন! ভালোবাসা প্রকাশে অথবা ভালোবাসার ক্ষেত্রে বড্ড কৃপণ...
ভালোবাসার বিশুদ্ধ চারাগাছটির যদি আজ থেকেই যত্ন না নেন একদিন দেখবেন সে মৃতপ্রায় হয়ে বেঁচে আছে। এভাবেই দুজন কাটিয়ে দিয়েছেন বছরের পর বছর। অথচ কী অসম্ভব সুন্দর একটা সুযোগ আল্লাহ আপনাদের দিয়েছেন ভালোবাসাপূর্ণ জীবন উপভোগের! মানুষ সময় ফুরালে ঠিকই আফসোস করে। অথচ সময় থাকতে কেন বুঝেনা?
____________
|| ভালোবাসার সুন্নাহ ||
নওশীন তাবাসসুম
#রৌদ্রময়ী