News-BD24.com

News-BD24.com Online News Portal From Bangladesh


সত্য এবং নিরপেক্ষ সংবাদ

অভিনয় জগতের এক হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র - হুমায়ূন কন্যা শিলা আহমেদ
30/04/2025

অভিনয় জগতের এক হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র - হুমায়ূন কন্যা শিলা আহমেদ

অভিমান কিংবা পরিবর্তন! চার/পাঁচ অক্ষরের এই শব্দ যার উপর ভর করে, তাকে আর কোনোভাবেই ফেরানো যায় না।

কিছু অভিমান কিংবা পরিবর্তন হয়তো ভাঙে, কিন্তু যখন খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে বড় কোনো আঘাত আসে, অথবা জীবনে বড় কোনো মোড়ের মুখোমুখি হতে হয়— তখন সেই পরিবর্তন বা অভিমান সহজে ভাঙে না। যাকে উদ্দেশ্য করে বলছি, তার বেলাতেও দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেই অভিমান বা পরিবর্তন আর ফিরে আসেনি।
একবার আফসানা মিমিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কোন অভিনেত্রীকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করেন? উত্তরে তিনি বলেন, “যাকে নিয়ে বেশি প্রত্যাশা করি, সে তো একেবারেই কম অভিনয় করে।”
তিনি সত্যিই খুব কম অভিনয় করেছেন। বাবার নাটকের বাইরেও তেমন দেখা যায়নি তাকে, আর কাজও করতেন বেছে বেছে। সব মিলিয়ে হয়তো দশটির মতো কাজ, তবুও এই কাজগুলোর মাধ্যমেই তিনি দর্শকদের মনে চিরসবুজ হয়ে আছেন— থেকে গেছেন এক আক্ষেপ হয়ে।
তিনি আমাদের প্রিয় সেই মিষ্টি হাসির মেয়ে— কঙ্কাবতী শীলা আহমেদ।
আজ রবিবার নাটকের কঙ্কা চরিত্র দিয়েই শুরু হয় এই জনপ্রিয় ধারাবাহিক। কঙ্কার মাধ্যমেই একে একে অন্য চরিত্রগুলোর আবির্ভাব ঘটে। ধারাবাহিকজুড়ে কঙ্কার প্রাণবন্ত সারল্য ও উপস্থিতি যে কাউকে মুগ্ধ করেছিল। অনেক তরুণ দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিল কঙ্কার চরিত্রটি। বড়বেলায় এসে এই নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে শীলা আহমেদ যেন নতুন করে আত্মপ্রকাশ করলেন। শুধুমাত্র এই কাজটিই তাঁকে দর্শকদের মনে স্থায়ী করে রাখার জন্য যথেষ্ট।
শৈশব থেকেই শীলা আহমেদের জনপ্রিয়তা। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের কন্যা।
‘বহুব্রীহি’ ধারাবাহিকে গায়ে হলুদের এক অনুষ্ঠানে তার সংক্ষিপ্ত উপস্থিতির মধ্য দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক ঘটে। এরপর 'অয়োময়'-এ তিনি বাবার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকন্যা। তবে পরিচিতি বাড়তে থাকে ‘প্রিয় পদরেখা’ ও ‘অচিন বৃক্ষ’ নাটকের মাধ্যমে।
এরপর ইতিহাস গড়া নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’-এ লীনা চরিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে নিজের সহজাত অভিনয় দিয়ে নজর কাড়েন, যেখানে অনেক দাপুটে অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকার পরেও তিনি নিজের উপস্থিতি জানান দেন দৃঢ়ভাবে।
‘আগুনের পরশমণি’ ছিল তার জীবনে এক বিশেষ মোড়। বাবার পরিচালনায় এটি ছিল তার প্রথম চলচ্চিত্র, যেখানে তিনি ঢাকায় আটকে পড়া একটি মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিবারের ছোট মেয়ে ‘অপলা’ চরিত্রে অভিনয় করেন।
এই ছবিটি যারা দেখেছেন, তাদের কাছে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার— একটি মাত্র সিনেমায় অভিনয় করেই!
এরপর একে একে করেন ‘উইজা বোর্ড’, ‘হিমু’, ‘নক্ষত্রের রাত’-এর ‘পলিন’ চরিত্রে কাজ। এরপর আসে ‘আজ রবিবার’। কাছাকাছি সময়ে করেন ‘নিমফুল’ ও ক্লোজআপের একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন। সেই সময় তিনি হয়ে উঠছিলেন নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী। সর্বশেষ অভিনয় করেন ‘খোয়াবনগরে খোয়াব কন্যা’ নাটকে।
এরপর আচমকাই তিনি অভিনয় জগৎ থেকে সরে যান। এমনিতেই তিনি কম কাজ করতেন, তবে হঠাৎ করেই সব কিছু থেকে সরে যাওয়া— তার কারণ পরিষ্কার নয়। শোনা যায়, বাবার প্রতি অভিমান ছিল তার। হয়তো সেই অভিমান, অথবা অন্য কোনো অজানা কারণেই অভিনয়কে বিদায় জানান শীলা আহমেদ। এক সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল এই অভিনেত্রী আড়ালে চলে গেলেন— আর ফিরে এলেন না।
ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রথম বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি বিয়ে করেন শিক্ষক ও লেখক আসিফ নজরুলকে।
শীলা আহমেদের অভিনয় থেকে সরে যাওয়ার আক্ষেপ দর্শকদের হৃদয়েও দাগ কেটেছে। তাই তো অভিনয়ে না থেকেও তিনি আজও আমাদের মনে সেই চিরচেনা মুখ, সেই তরুণী কঙ্কা। আশায় আছে হয়তো কখনো অভিমান ভেঙে অভিনয়ে আসবেন শীলা, হয়তো আর আসবেন ও না। সেই সিদ্ধান্ত তার হাতেই থাকুক।

ছবিতে দুই বোনের মাঝখানে শীলা আহমেদ।

সৌজন্যে: বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র

#শীলা_আহমেদ #হুমায়ূন_আহমেদ #বাংলা_নাটক #বাংলাদেশের_দুষ্প্রাপ্য_ছবি_সমগ্র #ইতিহাসেরখোঁজেগিরিধর

সত্যজিতের ইন্দির ঠাকুরন
28/04/2025

সত্যজিতের ইন্দির ঠাকুরন

সিনেমার পর্দায় যাঁর উপস্থিতি অল্প সময়ের, অথচ যাঁর ছায়া ছড়িয়ে আছে পুরো ছবির গভীরে — তিনি ইন্দির ঠাকরুন। আর সেই চরিত্রে যিনি প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন, তিনি এই চুনীবালা দেবী।

সত্যজিৎ রায়ের নিজের কথা,
"উত্তমকুমার না থাকলে যেমন ‘নায়ক’ করতেন না, ঠিক তেমনি চুনীবালা দেবী না থাকলে ‘পথের পাঁচালী’ও হতো না।"

চুনিবালা দেবী হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্না ভারতীয় অভিনেত্রী। যিনি আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিতা হয়েছিলেন। অথচ আমরা কয়জনই বা জানি তাঁর কথা?
আজ তাঁর সম্পর্কেই কিছু অজানা ঘটনা তুলে ধরতে আপনাদের সামনে হাজির হলাম।
সত্যজিৎ রায় তখন "পথের পাঁচালী" সিনেমার হরিহর, সর্বজায়া, অপু, দুর্গা সব চরিত্রের অভিনেতা/অভিনেত্রী পেয়ে গেছেন কিন্ত ইন্দির ঠাকরুন চরিত্রের অভিনেত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। মাথায় হাত। ঐ রকম একজন বৃদ্ধা অভিনেত্রী না পেলে যে এ সিনেমা করাই যাবে না!
অবশেষে সন্ধান মিলল ঠাকরুনের। পাইকপাড়ায় থাকেন এক বৃদ্ধা। বয়েস আশি। নাম তার চুনীবালা দেবী।
এক সকালে সত্যজিৎ হাজির হলেন চুনীবালা দেবীর বস্তির বাড়ীতে। সত্যজিৎ একটা মোড়ায় মুখোমুখি বসলেন ওনার সামনে।
বহুদিন আগে একটি সিনেমার ছোট্ট একটি দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন চুনীবালা।
সত্যজিৎ রায় এক জায়গায় বলেছেন, তখন চুনীবালা দেবীর বয়েস আশি পেরিয়ে গেছে। তোবড়ানো গাল, দেহের চামড়া ঝুলে পড়েছে। ঠিক যেমনটি সত্যজিৎ ভেবেছিলেন এই চরিত্রটিকে ঠিক তেমনি। কথায় কথায় সত্যজিৎ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি পথের পাঁচালী পড়েছেন?
বৃদ্ধা চুনীবালা অল্প লেখাপড়া শিখেছিলেন। কিছু বইও পড়েছিলেন।
চুনীবালা বললেন, হ্যাঁ পড়েছি বাবা।
- সিনেমায় ইন্দির ঠাকরুন করতে পারবেন?
চুনীবালা ফোকলা দাঁত বার করে হেসে বললেন, "তা তোমরা একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নিলে পারবো বই কি বাবা!"

সত্যজিৎ বললেন, "বলুন তো একটা ছড়া? শুনি একটু।"
চুনীবালা "ঘুম পাড়ানির মাসিপিসি ....." পুরো ছড়াটা গড়গড় করে সুন্দর করে বলে দিলেন।
সত্যজিৎ রায় পরে এক জায়গায় বলেছেন, ঐ ছড়াটা আমি চার লাইনের বেশি বলতে পারতাম না। কিন্তু উনি সবটা বলে দিলেন। এই বয়েসে আশ্চর্য স্মৃতি দেখে সত্যজিৎ স্তম্ভিত হয়ে গেলেন!
সত্যজিৎ বুঝে গেলেন ইন্দির ঠাকরুন পেয়ে গেছেন। কিন্তু কলকাতা থেকে বড়াল গ্রামে প্রতিদিন শুটিং - এ যাবার ধকল এই বয়েসে নিতে পারবেন কিনা জিজ্ঞাসা করাতে চুনীবালা বললেন, "খুব পারবো। তোমরা এত কষ্ট করে বই করছো, ওটুকু কষ্ট আমি ঠিক করতে পারবো।"

ওনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল প্রতিদিন কত টাকা পারিশ্রমিক নেবেন। উনি বলেছিলেন "দিনে দশ টাকা দিও।"
সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, "আপনাকে প্রতিদিন কুড়ি টাকা দেওয়া হবে।"
শুটিং এগিয়ে চলল। প্রতিদিন সকালবেলায় ট্যাক্সি করে চুনীবালাকে শুটিং স্পটে নিয়ে যাওয়া হত। সন্ধ্যেবেলায় আবার ট্যাক্সি করে ফিরিয়ে দেওয়া হত বাড়িতে।

সত্যজিৎ একদিন চুনীবালাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি ধর্মমূলক গান গাইতে পারবেন?"
চুনীবালা বললেন, "পারবো।"

পথের পাঁচালীতে চুনীবালা চাঁদনি রাতে দাওয়ায় বসে হাততালি দিয়ে গাইছেন সেই গান,
"হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো, পার করো আমারে ....."

এই গানটা চুনীবালা সত্যজিৎ রায়কে শুনিয়েছিলেন। সেই খালি গলায় গান শুনে সত্যজিৎ মুগ্ধ! সেই গানই রেকর্ড করা হল। ছবিতে খালি গলায় সেই গানই গাইলেন চুনীবালা। এক অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে সেই গান পথের পাঁচালী ছবিকে এক অন্য জগতে পৌঁছে দিলেন চুনীবালা।
পথের পাঁচালী সিনেমা ১৯৫২ সালে এক শরৎকালে কাশ ফুল আর রেলগাড়ির দৃশ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল; শেষ হতে সময় নিয়েছিল তিন বছর।
১৯৫৫ সালে ২৬ অগাস্ট পথের পাঁচালী মুক্তি পেয়েছিল। সেই বছরেই নিউইয়র্কে এ ছবি প্রথম মুক্তি পেয়েছিল।

সত্যজিৎ বুঝেছিলেন এ ছবির মুক্তি চুনীবালা দেবী দেখে যেতে পারবেন না। তাই একদিন প্রজেকটার মেশিন নিয়ে সত্যজিৎ রায় এ সিনেমা চুনীবালাকে তাঁর বাড়িতে দেখিয়ে এসেছিলেন।

চুনীবালা পথের পাঁচালী ছবি বাড়িতে বসেই দেখে গেছিলেন, মুক্তির আগে মহান হৃদয় সত্যজিৎ রায়ের উদ্যোগে।
ছবির মুক্তি চুনীবালা দেখে যেতে পারেননি তার আগেই "হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে ....." গাইতে গাইতে চলে গেলেন!

এবার আসল চমক এলো!
ম্যানিলা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আন্তর্জাতিক সম্মানের পুরস্কারে সম্মানিতা অভিনেত্রীর নাম ঘোষিত হল।

চুনীবালা দেবী হলেন, ভারতীয় অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিতা অভিনেত্রী! এক বিরল সম্মানের অধিকারিনী।
অনেকেই সম্ভবত এ খবর জানেন না।
কিন্তু এই পুরস্কার তিনি গ্রহণ করতে ম্যানিলায় যেতে পারেননি কারণ তার আগেই তিনি বিদায় নিয়েছিলেন।

চুনীবালা বেঁচে থাকলে এখন তাঁর বয়স হতো ১৫৩ বছর। দুর্ভাগ্য চুনীবালার! দুভার্গ্য বাঙালির!

ইন্দির ঠাকরুন "চুনীবালা"-র প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।

কৃতজ্ঞতা: পীযূষ দত্ত
সৌজন্যে: বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র

#পথের_পাঁচালী #সত্যজিৎ_রায় #চুনিবালা_দেবী #ইন্দির_ঠাকরুণ #বাংলাদেশের_দুষ্প্রাপ্য_ছবি_সমগ্র #ইতিহাসেরখোঁজেগিরিধর

নজরুলের সেই গানের পাখি
21/04/2025

নজরুলের সেই গানের পাখি

তাঁকে বলা হতো 'নজরুলের গানের পাখি'! কবি নজরুলকে সামনাসামনি মাত্র ১০ বছর বয়সে সঙ্গীত-জীবনের শুভসূচনা হয়েছিলো যাঁর! কবি নজরুলের অসুস্থোত্তরকালে কবির গানগুলোকে অ-রক্ষিত এবং বিলুপ্ত হবার 'অভিশাপ' থেকে মুক্ত করে 'নজরুল-গীতি' পরিচয় দিতে যে মহীয়সী নারী মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, তিনি আর কেউ নন - ফিরোজা বেগম।

১৯৩০ সালের ২৮শে জুলাই, ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমায় রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই নজরুল-সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী। বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মাদ ইসমাইল ছিলেন তৎকালীন ফরিদপুর জেলার প্রথম মুসলিম আইনজীবী এবং মা কওকাবুন্নেসা বেগম। বাঁধাহীন হওয়া সত্ত্বেও এবং বিশেষ কোনো পারিবারিক অনুপ্রেরণা না পেলেও, তিনি নিজের আগ্রহে এবং আত্মঅনুপ্রেরণায় গান শিখেছিলেন! বাড়িতে পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত পুরনো গ্রামোফোন ছিলো। মা ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী। কাননবালা দেবী, শচীন দেব বর্মন, চিত্ত রায়, কমল দাশগুপ্তদের রেকর্ড বাজতো, পাশাপাশি যাঁর গান তখন একটা 'যুগ' এবং মনের অজান্তেই যাঁকে বেশি শুনতেন ফিরোজা, তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এভাবে বিভোর হয়ে গ্রামোফোন থেকে গান শুনে শুনে কণ্ঠে তুলতেন ফিরোজা।

১৯৩৯ সালে প্রথম অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাবার সুযোগ পান। গ্রীষ্মের ছুটিতে বাবার সাথে কোলকাতা বেড়াতে যান সপরিবারে। ওনার মামা একরামুল কবীর তখন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এম. এ. করছেন। চাচারা ওখানেই থাকতেন। একদিন হঠাৎ চাচাতো ভাইয়েরা ছোট্ট ফিরোজাকে গুনগুন করে গাইতে শুনলে বলে বসলেন কোলকাতা রেডিওতে সে গাইবে কি না! অনেক বড় বয়সে ফিরোজার থেকে তাঁরা। ততদিনে গোটা বাড়ি জানে ছোট্ট ফিরোজা কত সুন্দর গায়! শুনেই ফিরোজা কিছুটা ইতস্তত করলেন! অডিশন আবার কি জিনিস? ফিরোজা বেগমের ভাষ্যে, ওই চাচাতো ভাইদের একজনের বন্ধু কোলকাতায় অল ইন্ডিয়া রেডিওতে চাকরি করতেন। তাঁকে ডাকা হলো। গান শোনামাত্রই প্রস্তাব দিয়ে বসলেন অডিশনে আসার, যদিও ততদিনে হারমোনিয়াম বা কোনো বাদ্যযন্ত্রই দেখেননি ফিরোজা বেগম। অবশেষে, অডিশনের দিন অল্প গান গেয়ে ছেলেমানুষি বিরক্তি প্রকাশ করে গাওয়ার মাঝখানেই থেমে যান ফিরোজা। কয়েকদিন পর চিঠি আসে এবং চিত্ত রায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় ওইবছরই প্রথম কলকাতা অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাইলেন ফিরোজা বেগম।

কবি নজরুলের সান্নিধ্য লাভ এবং কবির দোয়া -

১৯৪০ সালে কবি নজরুলের সাথে সাক্ষাৎ হয় ছোট্ট হিজ মাস্টার ভয়েস - এইচএমভির কোলকাতা স্টুডিওতে। বলাবাহুল্য, কোলকাতা এইচএমভিতে দ্বিতীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী মুসলমান গায়িকা ছিলেন ফিরোজা বেগম। মামা একরামুল কবীরের খুব ইচ্ছে ছিলো ভাগ্নিকে নিয়ে একবার কবির কাছে যাবেন। কারণ, মনের অজান্তে গানের প্রতি টানে বিভোর হয়ে আঙুরবালা, ইন্দুবালা দেবীর কণ্ঠে কবির গান শুনে শুনে তুলতেন ছোট্ট ফিরোজা! মামার হাত ধরে সেই চাচাতো ভাইয়ের বন্ধু-মারফত চলে গেলেন এইচএমভিতে, কবি সেখানেই সারাটাদিন থাকতেন কাজে। এবং, কোলকাতা এইচএমভিতেই প্রথম পরনে ঘিয়ে রঙের পায়জামা-পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি এবং সোনালি ফ্রেমের চশমা চোখে প্রধান প্রশিক্ষক অর্থাৎ কবি নজরুলকে দেখতে পান ছোট্ট ফিরোজা। সেও এত লোকজন দেখে লজ্জায় একটু আড়ষ্ঠ। কবি স্বয়ং এবং কবির চারিপাশে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ তাঁর প্রশংসা শুনে বলে বসলেন একটি গান শোনাবার জন্য। ১০ বছর বয়সের ফিরোজা খালি গলায় গাইলেন কবিরই গান, "যদি পরাণে না জাগে আকুল পিয়াসা, শুধু চোখে দেখা দিতে এসো না...."! সবাই অবাক! কবি নজরুল অবাক হয়ে বলে উঠলেন, "এতটুকু মেয়ে! এই গান তুমি কোথা থেকে শিখলে!" এভাবে তার পরিচিতি কবির সাথে। মামা আসবার সময় ফিরোজাকে বললেন, "তুই গান শোনালি যাঁকে, এত লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে ছিলি যাঁর সামনে, জানিস তিনি কে? যাঁর গান গাস, তিনি - কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সেদিন কবির অসংখ্য গানের বিখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্তের সাথেও তাঁর দেখা হয়েছিলো। কমল তখন ২৭-২৮ বছরের যুবক।
এরপরে আর দেশে ফিরে যাওয়া হয়নি ফিরোজার। মামা এবং চাচাতো ভাইদের অনুরোধে বাবা খানবাহাদুর ইসমাইল তাঁকে তাঁদের কাছে রেখে দিলেন।

ফিরোজা বেগম এক বিবিসি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ১৯৪২ সালে এইচএমভিতে একবার একজনকে গান শেখানোর সময় পাশে বসে থাকতে দেখে কবি তাঁকে গাইতে বললেন কবি ওই শিল্পীকে কি শেখাচ্ছিলেন! তিনি পুরোটাই নিঃসঙ্কোচে গেয়ে দিয়েছিলেন! কবি খুশি হয়ে দোয়া দিয়ে বলেছিলেন, "এত ছোট্ট মেয়ে কি সুন্দর, দরদ দিয়ে গায়! কি করতে পারবো আমি এর জন্য জানি না! তোমরা খেয়াল রেখো! এইচএমভিতে কোনো মুসলমান মেয়ে এমন সুন্দর গান গাইছে, তোমরা ওর যত্ন নিও!" অসুস্থ হবার আগে ওইবছরই কোনো একসময়ে তিনি এটা বলেছিলেন বলে ফিরোজা বেগম বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে এটা বলেন। জীবনের প্রথম এইচএমভি রেকর্ড - কবি নজরুলের ইসলামী সঙ্গীত, চিত্ত রায়ের সুরে 'মরুর বুকে জীবনধারা কে বহালো' ১৯৪২ সালে! গানটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়! বিভিন্ন পত্রিকা লেখাও শুরু করে দিয়েছিলো তাঁকে নিয়ে ওপার বাংলার এক মুসলিম মেয়ে এইচএমভিতে। কবির অসুস্থোত্তর সময়ে নজরুল-সঙ্গীতের অ-রক্ষণবেক্ষণ নিয়ে তিনি আরো বলেন, ১৯৪৬, '৪৭ সাল থেকে কবির গান গাওয়া অনেক শিল্পীই ছেড়ে দিচ্ছিলেন! এদিকে কবিও অসুস্থ, অসহায়! অনেক গান অ-রক্ষিত থেকে যায়, কোনো কোনো গানের রেকর্ডই পাওয়া যাচ্ছিলো না! স্বরলিপিও না! তিনি নিজেও শিখতে পারছিলেন না! এমন বিপর্যয়ের মুখে দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে কোলকাতায় স্থায়ীভাবে থেকে যান ফিরোজা। ধীরে ধীরে কবির গানের সুরকার এবং গায়ক কমল দাশগুপ্ত, ধীরেন মিত্র এবং চিত্ত রায় প্রমুখকে সঙ্গে করে পুনরায় এক নতুন সংগ্রামই শুরু করলেন কবির গানের জন্য। ১৯৫৬ সালে কোলকাতায় কমল দাশগুপ্তকে বিয়ে করেন তিনি। বিবাহের পর কমল দাশগুপ্ত ধর্মান্তরিত হয়ে নাম রাখেন 'কামালউদ্দিন আহমদ'। এ দম্পতির তিন সন্তান - তাহসিন, হামিন এবং শাফিন। ১৯৭৪ সালে মৃত্যুর পর বনানী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। পাকিস্তান আমলে ফিরোজা বেগম ঢাকা-কোলকাতা যাতায়াত করতেন গানের রেকর্ডিংয়ের জন্য। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে কবির সাথে চিরস্থায়ীভাবে ঢাকা চলে আসেন। কবির সাথেই থাকতেন। কবির মূক-অবস্থায় কাছে গেলেই আঙ্গুল দিয়ে হারমোনিয়ামের দিকে নির্দেশ করতেন কবি। এবার শিষ্যা যাবেন কোথায়, গান তো গাইতেই হবে! কবিও শিশুর মতন হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে ফিরোজার গান শুনতেন (ছবি কমেন্টে)! কবির মৃত্যুশয্যায়ও ছেড়ে যাননি ফিরোজা, কবির মুখের দিক তাকিয়ে অনবরত অশ্রুবিসর্জন দিয়েছেন (ছবি কমেন্টে সংযুক্ত)।

২০১৪ সালে ৮৪ বছর বয়সে ঢাকা ইন্দিরা রোডের বাসভবনে শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি!

বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এই মহাত্মার প্রতি।

ছবি: ১৯৮৩ সালে ভারতে বেড়াতে গিয়ে ফিরোজা বেগম।

সৌজন্যে: জাওয়াদ/ বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র

#ফিরোজা_বেগম #সংগীত #নজরুল #নজরুল_সংগীত #নজরুলগীতি #বাংলাদেশের_দুষ্প্রাপ্য_ছবি_সমগ্র #ইতিহাসেরখোঁজেগিরিধর

20/04/2025

১৯৯০-এর দশকে কক্সবাজার কলাতলীর ডলফিন মোড়।

#কক্সবাজার #চট্টগ্রাম #ডলফিন_মোড় #বাংলাদেশের_দুষ্প্রাপ্য_ছবি_সমগ্র #ইতিহাসেরখোঁজেগিরিধর

07/03/2025

যাকাতের নেসাব প্রসঙ্গ

যাকাত আদায়ের আবশ্যিকতার ক্ষেত্রে যাকাতযোগ্য অর্থ-সম্পদ শুধু থাকলেই হয় না, বরং একটি নূন্যতম পরিমাণে তা থাকতে হয়। যাকাতযোগ্য সম্পদের সেই নূন্যতম পরিমাণকেই ইসলামী পরিভাষায় নেসাব বলা
হয়।

সালাফদের ভাষায় স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নেসাব হলো বিশ মিসকাল। [সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৭৭]

আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি।

হাদিসের ভাষায় রুপার নেসাব হলো পাঁচ উকিয়া। এক উকিয়া খাঁটি রুপা সমান হলো ৪০ দিরহাম। সুতরাং ৫ উকিয়া সমান হয় ২০০ দিরহাম। অর্থাৎ রুপার নেসাব হলো ২০০ দিরহাম। [সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৯]

আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এ পরিমাণ রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, কারো যদি শুধু স্বর্ণ থাকে এবং সেটা সাড়ে সাত ভরি হয় তাহলে তখন শুধু স্বর্ণের নেসাব ধরা হবে এবং যাকাত আদায় করতে হবে। এ ছাড়া বাকী সকল ক্ষেত্রে রুপার নেসাবকে মানদণ্ড ধরা হবে। অর্থাৎ তখন সব মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ বা সমমূল্য হলেই যাকাত আদায় করতে হবে।

মাসআলা- ১.
চলতি প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নেসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৩৭

মাসআলা-২.
যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩]

মাসআলা- ৩.
কারো কাছে নেসাবের কম সোনা এবং নেসাবের কম রুপা আছে, কিন্তু যে পরিমাণ সোনা আছে তার মূল্য মজুদ রুপার সাথে যোগ করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় বা তার চেয়ে বেশি হয়। তাহলে সোনা-রুপার মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৭৯,১০৬৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩

মাসআলা-৪.
কারো কাছে কিছু স্বর্ণালংকার আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এর যাকাত দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩

মাসআলা-৫.
কারো কাছে নিসাবের কম রুপা আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা বা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এরও যাকাত দিতে হবে। [আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৩]

মাসআলা-৬.
নেসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের যাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৩২, ৭০৭৪, ৭০৭৫, ৭০৭৯, ৭০৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৯]

মাসআলা-৭.
কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৬৮৭২, ৭০৪০,৭০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩২৫,১০৩২৭]

মাসআলা-৮.
বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে ঐ সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৪২,৭০৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০২]

[আল কাউসারের অবলম্বনে]

[কালেক্ট মাহমুদুল হাসান তুহিন]

ইনি বেশভূষা পাল্টে ফেলেছেন। চেহারা দেখলেও পরিচয় বুঝা যায়না। প্রথম স্ত্রীর সাথেই ছিলেন। আজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্ত্রীর ...
15/01/2025

ইনি বেশভূষা পাল্টে ফেলেছেন। চেহারা দেখলেও পরিচয় বুঝা যায়না। প্রথম স্ত্রীর সাথেই ছিলেন। আজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্ত্রীর রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে বলে মুখটা ঢেকে দিলাম।

সরকারি কর্মকর্তাদের সারাজীবনের আয় ক্যালকুলেটর দিয়ে বের করা সম্ভব। অথচ একেক জন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। কীভাবে সম্ভব! সরকারি অনেক কর্মকর্তার জ্ঞাত আয় যাচাই করার অভিজ্ঞতা থেকে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারি।

একঃ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের শ্বশুড় বাড়ির লোকজন খুব ধনী হন। এরপর সেই শ্বশুড় জামাই অন্তঃপ্রাণ হন। সব সম্পদ জামাইকে দান করেন। আর শ্যালকরা বড় বড় ব্যবসায়ী হন। কেউ বিদেশে অনেক সম্পত্তির মালিক হন। সেই সম্পদের কিছু অংশ আবার তার দুলাভাইকে দান করেন। বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে প্রণোদনাও মেলে। আবার বিদেশে সেই টাকা কীভাবে অর্জিত হয়েছে সেটাও জিজ্ঞাসা করার সুযোগ নেই। আর নিজের স্কুল শিক্ষক বাপও ঢাকার ফ্লাটের মালিক হন। ভাই বোন মালিক হন। স্বামী বা স্ত্রী মালিক হন। পরে সেই ফ্লাট আবার হেবা করে সরকারি কর্মচারিকে দান করেন। সরকারি চাকরিজীবীদের দান পাওয়ার এমনই রাজ কপাল।

দুইঃ সরকারি চাকরিজীবীরা মৎস্য চাষ করেন। গরু মোটাতাজা করেন। রাখিমালের ব্যবসা করেন। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা আবার সেই আয়ের প্রত্যয়ন দেন। মজার বিষয় হলো- কোটি কোটি টাকা এসব কার্যক্রম থেকে আয় হয়। এত কিছু করেন; সরকারি চাকরিটা কখন করেন!

তিনঃ সরকারি চাকরিজীবীরা শেয়ার ব্যবসা করতে পারেন। সরকারি কর্মচারি আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের ফটকা কারবারে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। এই বিধিমালার বরাতে ২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি সরকারি চাকরিজীবিদের শেয়ারে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। অথচ সন্ধ্যায়ই অজ্ঞাত কারণে সেই পরিপত্র বাতিল করা হয়। এ কারণে সরকারি চাকরিজীবীরা টাকা বানানোর মহাসুযোগ পেয়েছেন। যেসব কোম্পানী বাজারে আইপিও ছাড়বে তাদের নিয়ন্ত্রকরাও শেয়ার ব্যবসা করতে পারেন। এতে বাজারে শেয়ার ছাড়ার আগেই সংশ্লিষ্ট সরকারি চাকরিজীবী প্লেসমেন্ট শেয়ারের মালিক হয়ে যান। আইপিও বাজারে আসলেই তিনি সাথে সাথে বিক্রি করে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যেতে পারেন। তাকে কে ঠেকায়!

চারঃ সরকারি চাকরিজীবীদের ঝোঁক জমি কেনায়। সুযোগ পেলেই তারা জমি কেনেন। জমি কিনতে হলে মৌজা রেটই যথেস্ট। বাজারমূল্য কোটি টাকা হলে মৌজা রেট মাত্র দশ হাজার বিশ হাজার টাকা। দলীল মূল্য ধরলে শত কোটি টাকার জমি বা ফ্লাটও তার বৈধ আয়ের নাগালে চলে আসে। পরে সেই সম্পদ বাজার দরে বিক্রি করে দেবেন। টাকা বৈধ হয়ে যাবে। এমন সরকারি কর্মচারিকে আল্লাহ ছাড়া কে ধরতে পারবে!

পাঁচঃ সরকারি চাকরিজীবীর হাত পা বাঁধা। তার স্ত্রী বা স্বামীর তো হাত পা বাঁধা নয়। এ কারণে তারা যে কোনো পেশা বেছে নিতে পারেন। সম্পদশালী সরকারি চাকরিজীবীর স্বামী বা স্ত্রীরা ব্যবসা করেন। তাদের নামে হোটেল, রিসোর্ট, ফার্ম, বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার মালিকানা থাকে। ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকে। সেই লাইসেন্স দিয়ে স্বামী বা স্ত্রীর প্রভাবিত অফিসে কাজ করা যায়। স্ত্রী বা স্বামী কীভাবে কোন পেশায় আয় করছে সেটা তো সরকারি চাকরিজীবীর জানার কথা নয়। তার গাছেরটাও খাওয়ার সুযোগ আছে। গাছের নিচেরটাও খাওয়ার সুযোগ আছে।

ছয়ঃ সরকারি কর্মচারিরা এলাকার মসজিদ মন্দির ধর্মীয় কাজে অফুরন্ত দান করতে পারেন। সবাই তাদের কাছেই টাকা চান। তারাও উদার হাতে দান করেন। এত টাকা কোথায় পান সেটা কেউ জিজ্ঞাসা করেনা। সমাজে তাকে নিয়ে ধন্য ধন্য রব ওঠে। একজন দুর্নীতিবাজ যে সমাজে সম্মান পেতে পারেন; যেখানে সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে; দানবীর হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন- সেখানে টাকা আয়ের যে কোনো পন্থা কেন বেছে নেবেন না সরকারি চাকরিজীবী।

- কাজী সায়েমুজ্জামান

19/09/2024

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন:
" এমন এক সময় আসবে যখন হত্যাকারী জানবে না, যে কি অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না, যে কি অপরাধে সে নিহত হয়েছে"
(সহিহ্ মুসলিম -৭০৩৯)

লোডশেডিং এর কারণ যারা জানেন না, অথবা জানলেও মানেন না, তাদের জন্য। দেশের জনগণের টাকা দিয়ে এই ঋন পরিশোধ করা হবে। এরপরও যা...
11/09/2024

লোডশেডিং এর কারণ যারা জানেন না, অথবা জানলেও মানেন না, তাদের জন্য। দেশের জনগণের টাকা দিয়ে এই ঋন পরিশোধ করা হবে। এরপরও যারা বধির অন্ধ তাদেরকে আর কিছু বলার নেই । আপনি কি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছেন? তাহলে দেশের বাইরে এক লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া কেন। এই টাকা কোথায়? জবাব কে দিবে।

সূত্র, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

"বিদ্যুৎ সেক্টরটা পুরোটাই আমদানি নির্ভর করে রেখে গেছে বিগত সরকার। একদিকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তারা এলএনজি আমদানি করছে। আবার আমরা কয়লার দাম পরিশোধ করতে পারছি না। ফলে কয়লা আসছে না। আর তেলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সে কারণেই আজকে এই অবস্থা।"

22/08/2024

বন্যার সময় জরুরি মাসয়ালা

১. অজুর জন্য ভালো বা পরিস্কার পানির প্রয়োজন নেই। বন্যার পানি পাক। তা দিয়েই অজু গোসল বৈধ।

২. অজুর জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ধৌত হলেই যথেষ্ট। বৃষ্টি বা বন্যার কারণে অজুর অঙ্গ ধোয়া হয়ে গেলে নতুন করে অজু করা আবশ্যক নয়।

৩. পানির কারণে যদি রুকু বা সিজদা করা সম্ভব না হয় তাহলে দাঁড়িয়ে মাথার ইশারায় নামাজ আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে রুকুর তুলনায় সিজদার জন্য একটু বেশি মাথা ঝোঁকাবে। কিন্তু সিজদার জন্য পানির গভীরে মাথা ডুবিয়ে দেয়া সঠিক পদ্ধতি নয়।

৪. বন্যার কারণে যদি কিবলার দিক নির্ধারণ করা সম্ভব না হয় তাহলে অনুমান করে দিক ঠিক করে নামাজ পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে যদি জানা যায় ভুল দিকে নামাজ আদায় করা হয়েছে তাহলে পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই।

৫. বন্যার্তদের জন্য সুন্নত পড়া কষ্টসাধ্য হলে সেটা আপাতত না পড়ার সুযোগ রয়েছে।

৬. কেউ মারা যাওয়ার পর তাকে দাফন দেয়ার জন্য কোনভাবেই যদি শুকনো স্থল পাওয়া না যায় এবং রেখে দেয়াও সম্ভব না হয় তাহলে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দিবে।

~মাসুম বিল্লাহ হাফি.

"আমি সার্কের স্বপ্নে বিশ্বাসী। মহান উদ্দীপনায় সার্কের যাত্রা শুরু হয়েছিল কিন্ত এখন তা নেই। আমরা সার্কের প্রতিটা সদস্য দে...
07/08/2024

"আমি সার্কের স্বপ্নে বিশ্বাসী। মহান উদ্দীপনায় সার্কের যাত্রা শুরু হয়েছিল কিন্ত এখন তা নেই। আমরা সার্কের প্রতিটা সদস্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। আমরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো সবাই পরিবারের মতো থাকতে চাই এবং একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করতে চাই। আমরা একটা পরিবারের মতো।"

ভারতীয় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ডঃ ইউনূস

06/08/2024

দেশের পরিবর্তন চাইলে প্রথম পরিবর্তনটা আপনার থেকেই শুরু হোক।
১. আজ থেকে কোন ট্রাফিক সিগনাল ভাঙবো না।
২. আজ থেকে দেশের কোন সরকারি অফিসে কাজের জন্য অনৈতিকভাবে এক টাকাও দিব না।
৩. আজ থেকে রাস্তায় কোন ময়লা ফেলবো না।
৪. আজ থেকে চোখের সামনে কোন অন্যায় হলে সাথে সাথে রুখে দাঁড়াবো।
৫. আজ থেকে প্রত্যেকটা বান্দার হক নিশ্চিত করব।
ইন-শা-আল্লাহ।

05/08/2024

গনভবনে ঢুকছেন ভালো কথা...
বিজয় মিছিল করেন ভালো কথা কিন্তু লাইট ফ‍্যান কম্বল মাছ পাখি ইত্যাদি লুটপাট কেনো করছেন?
এই ভিডিওগুলো তো ইন্টারন‍্যাশাল সব জায়গায় দেখাবে... আমাদের দেশের সম্পর্কে কি ভাববে সবাই বলেন।
এও কষ্টের বিনিময়ে যা অর্জন করলাম তার ভাবমূর্তিটা এভাবে নষ্ট করবেন না আমার অনুরোধ।

আপনারা যা নষ্ট করছেন তা কিন্তু উনার না, আমাদের দেশের সম্পদ।এটা ঠিক হচ্ছেনা।

আনন্দ উল্লাশ অবশ্যই করবো কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞ করবোনা।

Address

Bashabo
Dhaka
1214

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when News-BD24.com posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share