
30/04/2025
অভিনয় জগতের এক হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র - হুমায়ূন কন্যা শিলা আহমেদ
অভিমান কিংবা পরিবর্তন! চার/পাঁচ অক্ষরের এই শব্দ যার উপর ভর করে, তাকে আর কোনোভাবেই ফেরানো যায় না।
কিছু অভিমান কিংবা পরিবর্তন হয়তো ভাঙে, কিন্তু যখন খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে বড় কোনো আঘাত আসে, অথবা জীবনে বড় কোনো মোড়ের মুখোমুখি হতে হয়— তখন সেই পরিবর্তন বা অভিমান সহজে ভাঙে না। যাকে উদ্দেশ্য করে বলছি, তার বেলাতেও দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেই অভিমান বা পরিবর্তন আর ফিরে আসেনি।
একবার আফসানা মিমিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কোন অভিনেত্রীকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করেন? উত্তরে তিনি বলেন, “যাকে নিয়ে বেশি প্রত্যাশা করি, সে তো একেবারেই কম অভিনয় করে।”
তিনি সত্যিই খুব কম অভিনয় করেছেন। বাবার নাটকের বাইরেও তেমন দেখা যায়নি তাকে, আর কাজও করতেন বেছে বেছে। সব মিলিয়ে হয়তো দশটির মতো কাজ, তবুও এই কাজগুলোর মাধ্যমেই তিনি দর্শকদের মনে চিরসবুজ হয়ে আছেন— থেকে গেছেন এক আক্ষেপ হয়ে।
তিনি আমাদের প্রিয় সেই মিষ্টি হাসির মেয়ে— কঙ্কাবতী শীলা আহমেদ।
আজ রবিবার নাটকের কঙ্কা চরিত্র দিয়েই শুরু হয় এই জনপ্রিয় ধারাবাহিক। কঙ্কার মাধ্যমেই একে একে অন্য চরিত্রগুলোর আবির্ভাব ঘটে। ধারাবাহিকজুড়ে কঙ্কার প্রাণবন্ত সারল্য ও উপস্থিতি যে কাউকে মুগ্ধ করেছিল। অনেক তরুণ দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিল কঙ্কার চরিত্রটি। বড়বেলায় এসে এই নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে শীলা আহমেদ যেন নতুন করে আত্মপ্রকাশ করলেন। শুধুমাত্র এই কাজটিই তাঁকে দর্শকদের মনে স্থায়ী করে রাখার জন্য যথেষ্ট।
শৈশব থেকেই শীলা আহমেদের জনপ্রিয়তা। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের কন্যা।
‘বহুব্রীহি’ ধারাবাহিকে গায়ে হলুদের এক অনুষ্ঠানে তার সংক্ষিপ্ত উপস্থিতির মধ্য দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক ঘটে। এরপর 'অয়োময়'-এ তিনি বাবার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকন্যা। তবে পরিচিতি বাড়তে থাকে ‘প্রিয় পদরেখা’ ও ‘অচিন বৃক্ষ’ নাটকের মাধ্যমে।
এরপর ইতিহাস গড়া নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’-এ লীনা চরিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে নিজের সহজাত অভিনয় দিয়ে নজর কাড়েন, যেখানে অনেক দাপুটে অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকার পরেও তিনি নিজের উপস্থিতি জানান দেন দৃঢ়ভাবে।
‘আগুনের পরশমণি’ ছিল তার জীবনে এক বিশেষ মোড়। বাবার পরিচালনায় এটি ছিল তার প্রথম চলচ্চিত্র, যেখানে তিনি ঢাকায় আটকে পড়া একটি মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিবারের ছোট মেয়ে ‘অপলা’ চরিত্রে অভিনয় করেন।
এই ছবিটি যারা দেখেছেন, তাদের কাছে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার— একটি মাত্র সিনেমায় অভিনয় করেই!
এরপর একে একে করেন ‘উইজা বোর্ড’, ‘হিমু’, ‘নক্ষত্রের রাত’-এর ‘পলিন’ চরিত্রে কাজ। এরপর আসে ‘আজ রবিবার’। কাছাকাছি সময়ে করেন ‘নিমফুল’ ও ক্লোজআপের একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন। সেই সময় তিনি হয়ে উঠছিলেন নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী। সর্বশেষ অভিনয় করেন ‘খোয়াবনগরে খোয়াব কন্যা’ নাটকে।
এরপর আচমকাই তিনি অভিনয় জগৎ থেকে সরে যান। এমনিতেই তিনি কম কাজ করতেন, তবে হঠাৎ করেই সব কিছু থেকে সরে যাওয়া— তার কারণ পরিষ্কার নয়। শোনা যায়, বাবার প্রতি অভিমান ছিল তার। হয়তো সেই অভিমান, অথবা অন্য কোনো অজানা কারণেই অভিনয়কে বিদায় জানান শীলা আহমেদ। এক সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল এই অভিনেত্রী আড়ালে চলে গেলেন— আর ফিরে এলেন না।
ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রথম বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি বিয়ে করেন শিক্ষক ও লেখক আসিফ নজরুলকে।
শীলা আহমেদের অভিনয় থেকে সরে যাওয়ার আক্ষেপ দর্শকদের হৃদয়েও দাগ কেটেছে। তাই তো অভিনয়ে না থেকেও তিনি আজও আমাদের মনে সেই চিরচেনা মুখ, সেই তরুণী কঙ্কা। আশায় আছে হয়তো কখনো অভিমান ভেঙে অভিনয়ে আসবেন শীলা, হয়তো আর আসবেন ও না। সেই সিদ্ধান্ত তার হাতেই থাকুক।
ছবিতে দুই বোনের মাঝখানে শীলা আহমেদ।
সৌজন্যে: বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র
#শীলা_আহমেদ #হুমায়ূন_আহমেদ #বাংলা_নাটক #বাংলাদেশের_দুষ্প্রাপ্য_ছবি_সমগ্র #ইতিহাসেরখোঁজেগিরিধর