10/07/2025
জীবনের গল্প পার্ট -১
আমার জন্ম এক প্রান্তিক গ্রামে, নামটা হয়তো মানচিত্রে খুব বড় করে লেখা নেই, কিন্তু সেখানে কাটানো দিনগুলো আমার জীবনের সবচেয়ে গভীর শিক্ষাগুলো দিয়েছে।
গ্রামটা ছিল যেন এক বিস্মৃত জনপদ। এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই কখনো স্কুলের গেট পার হয়নি। সেই সঙ্গে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব আর বিভক্তি, যেন সহাবস্থানের নামে প্রতিদিনের যুদ্ধ। একটু পরেই ঝগড়া, তারপর মারামারি, আবার একদিন চুপচাপ।
আমার চোখের সামনেই বড় হতে দেখেছি এই বিভাজনের গ্রামে,আলো যেন এসেই থেমে যেত অন্ধকারের দেয়ালে।
এই পরিস্থিতিতে পড়ালেখা ছিল একরকম বিদ্রোহ।
আমাদের মধ্যে যারা স্কুলে যেতাম, তারা নিজেদের ভাগ্যবান ভাবলেও, বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। এসএসসি’র গণ্ডি পেরোনোর পর কেউ একজনও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বুনতে পারতো না।
কারণ একটাই “আমাদের এখানে কেউ তো আগে এমনটা করেনি!”
তবে হ্যাঁ, সেই অন্ধকারেই একদিন আমি আলোর ছায়া দেখতে পেয়েছিলাম আমার স্কুলের শিক্ষকদের মাধ্যমে।
আমি যখন হাইস্কুলে পড়ি, লক্ষ্য করলাম, আমাদের গ্রামের শিক্ষার্থীদের থেকে স্কুল অর্ধেক বেতন নেয়, তাও বিনা আবেদনে।
আর কেউ আবেদন করলেই পুরো বেতন মাফ।
অন্য গ্রামের ছেলেমেয়েদের এরকম সুবিধা নেই।
আমার কৌতূহল হলো।
একদিন সাহস করে আমি হেডটিচারকে জিজ্ঞেস করলাম,
“স্যার, শুধু আমাদের গ্রামের জন্যই কেন এই নিয়ম?”
স্যারের মুখে এক অপূর্ব মমতা ফুটে উঠলো।
তিনি বললেন,
“তোমাদের গ্রামের শিক্ষার হার খুবই কম। আমরা চাই, এখান থেকেই কেউ একজন আলোর পথ দেখাক। এজন্যই এই নিয়ম।”
সেই মুহূর্তে মনে হলো, কেউ একজন আমাদের নিয়েও ভাবে!
তারপর আমি টানা পাঁচ বছর বিনা বেতনে স্কুলে পড়েছি। শিক্ষকরা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন।
তবে একটা বছর ছিল ব্যতিক্রম।
সেবার আমি টাইফয়েডে ভুগেছিলাম প্রায় একমাস। পরীক্ষা ভালো দেইনি, রোলও পিছিয়ে গিয়েছিল।
পরীক্ষার পর একদিন জানানো হলো আমাকে এবার বেতন দিতে হবে।
আমার কিশোর মন ভেঙে গিয়েছিল।
আমি বললাম-
“যদি বেতন দিতে হয়, আমি অন্য স্কুলে চলে যাব।”
হেডটিচার চুপ করে শুনলেন, তারপর বললেন-
“তোমাকে কোনো বেতন দিতে হবে না। তুমি এখানেই পড়ো। আমাদের বিশ্বাস, তুমি একদিন অনেক দূর যাবে।”
আজ যখন পেছনে ফিরে তাকাই, তখন বুঝি, শিক্ষার আলো সবখানে সমানভাবে পড়ে না। কিন্তু কেউ একজন যদি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে, আলো ছড়াতেই থাকে।
আমি সেই আলো নিয়েই হাঁটছি নিজেকে নয়, অন্যদেরও পথ দেখাতে চাই।
কারণ আমি জানি, এক বিন্দু সাহস ও আশাই একটা প্রজন্মকে বদলে দিতে পারে।
ড. মো:আবদুল খালেক ( মলিকুলার সেলবায়োলজী)
ভালো লাগলে জানাবেন, আমার পুরো গল্পটা লেখার চেষ্টা করবো। অনেক অজানা কিছু জানতে পারবেন আশাকরি।
“Protected by copyright. Unauthorized use is prohibited.”
Send a message to learn more