
08/11/2023
মিরানকে নিয়ে পুরো পরিবার ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। একদিন হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরে বাসায় এসে সগর্বে ঘোষণা দিল সে হিমু হতে চায়। হলুদ পাঞ্জাবি পরে পরেরদিন বাইরে যাচ্ছিল। ওর বড় ভাইয়ের ছেলে নয় বছরের সৌম্য জিজ্ঞেস করল,
"ছোটকা, তুমি সত্যিই হিমু হয়ে যাবে? হিমুরা কিন্তু খালি পায়ে হাঁটে।"
"মিথ্যামিথ্যি হিমু হতে চাইব কেন। আমিও খালি পায়ে যাব।" বলেই স্যান্ডেল খুলে সত্যি সত্যি খালি পায়ে বেরিয়ে গেল।
সেদিন বাড়ি ফিরল রক্তাক্ত পা নিয়ে। রাস্তায় নাকি কাচের টুকরো পড়েছিল। না দেখেই তাতে পা গলিয়ে এই অবস্থা। এরপর আর খালি পায়ে বাইরে যাবার সাহস করেনি।
ওর পাঞ্জাবিতে পকেট আছে। কারণ হিমুর মতো ওর ক্যারিশমাটিক পাওয়ার নেই। টাকা পয়সা লাগে। বাড়ি থেকে অফিস যেতে গাড়ি ভাড়া লাগে। টিফিনের টাকা লাগে। চাকরিতে ওর মন নেই। কিন্তু বাবা কঠিন গলায় বলেছেন,
"চাকরি ছাড়লে এই বাড়িতে জায়গা হবে না।"
মিরানের তেমন কোনো পয়সাওয়ালা বন্ধুবান্ধব নেই, যাদের কাছ থেকে বিপদে টাকাপয়সার সাহায্য পাওয়া যাবে। বিবাগী হয়ে যে হিমালয়ে যাবে, তাতেও টাকা ছাড়া গতি নেই। রাস্তায় থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়৷ ঠান্ডার সমস্যা প্রবল। রোদ-বৃষ্টি কোনোটাই ওর ধাতে সয় না। সর্দিকাশি, জ্বর বাঁধিয়ে একাকার করে ফেলে। তাই এতবড় রিস্ক নেবার কোনো মানে হয় না। ওদিকে অফিসে হলুদ পাঞ্জাবি পরে যাওয়া যায় না। তাই এটাও ছাড়তে হয়েছে। সকাল সকাল অফিসে না গেলে চলে না, তাই রাত জেগে ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় হেঁটে হেঁটে জোছনা বিলাস করাও হয় না।
কয়েকদিনের মাথায় একটা জিনিস মিরান বুঝল, হিমু হওয়া সহজ কথা নয়। মাথা থেকে ভূত নামল।
তবে সব বাদ দিলেও একটা জায়গা থেকে ওকে টলানো গেল না। সেটা হলো বিয়ে। সে হিমু হতে চায়, অন্তত একটা আদর্শ হলেও সে মানবে। সে চিরকুমার থাকবে। কোনোদিন বিয়ে করবে না। মিরানের বাবা মাহমুদ সাহেবের হুমকিতেও এবার কোনো কাজ হলো না। ছেলে অটল রইল নিজের সিদ্ধান্তে।
ওরা যৌথ পরিবার। মাহমুদ আর মহিউদ্দিন সাহেব দুই ভাই একসাথে থাকেন। মহিউদ্দিন সাহেবের তিন ছেলে মেয়ে। ছোট ছেলে বাদে বাকি দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে। নাতি-নাতনিও হয়ে গেছে। তার বড় ছেলে শোভনের ছেলে সৌম্য আর চার বছরের মেয়ে সূচি। মেয়ে শোভার একটা পাঁচ বছরের মেয়ে আছে।
মাহমুদ সাহেবের বড় মেয়ে মিতারও বিয়ে হয়ে গেছে বছর দেড়েক হয়। ছেলেকে নিয়েই তিনি মস্ত বিপাকে পড়েছেন। তার মতো বাস্তববাদী মানুষের ছেলে এমন হবে এটা তিনি ভাবতে পারছেন না। বড় ভাবির কাছে তিনি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না।
মহিউদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়ার ভাইয়ের মেয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব তিনি নিজের মুখে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেটা যে এভাবে বেঁকে বসবে তিনি ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি। ওই পরিবারে জানাবার আগে হলেও ম্যানেজ করা সম্ভব হতো। এখন লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।
এই জন্যই বোধহয় লোকে বলে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিয়ের সম্বন্ধ করতে হয় না।
তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে ছেলেকে ডাকলেন, আজ একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। মিরান এসে তার সামনে দৃষ্টি মেঝেতে নিবন্ধ রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
"বিয়ে নিয়ে তোমার চূড়ান্ত মতামত কী?"
"জ্বি, আমি বিয়ে করব না।"
----- ছলবে