19/07/2025
মাঝে মাঝে কাউকে বেশি গুরুত্ব দেওয়াটাই দুরত্ব সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটা খুবই মজার, আবার কষ্টেরও বাস্তবতা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা যার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করি, তাকেই নিজের জীবনের অগ্রাধিকার বানিয়ে ফেলি। সবকিছুর আগে তার খেয়াল রাখি, তার প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে চেষ্টা করি, তার মুখে হাসি দেখতে পারলেই নিজের মন ভালো হয়ে যায়। আমরা ভাবি, এই ভালোবাসা বা গুরুত্ব একদিন না একদিন সে বুঝবে, সে প্রশংসা করবে, সে হয়তো আমাদের মতো করেই ভাববে।
কিন্তু অনেক সময় বাস্তবতা হয় পুরোপুরি ভিন্ন।
যাকে আপনি প্রতিনিয়ত গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, সে হয়তো আপনাকে সেভাবে ভাবেই না। সে ধরেই নেয়, আপনি তো এমনিতেই থাকবেন—আপনার তো কোনো অভিযোগ নেই, আপনি তো তার সঙ্গেই সুখী। আপনার সবটা দিয়ে ভালোবাসাটা, যত্নটা, আগ্রহটা একসময় তার কাছে হয়ে যায় একঘেয়ে, অনুমানযোগ্য আর গুরুত্বহীন।
মানুষ সহজে যা পেয়ে যায়, তার কদর করতে শেখে না—এটাই চিরন্তন সত্য।
আপনি যদি কাউকে প্রতিদিন খোঁজেন, সে একদিন ভাবতে শুরু করবে আপনি না খুঁজলে আপনি নিজেই অস্থির হয়ে যাবেন। আপনি যদি তার প্রতিটি পোস্টে লাইক দেন, তার প্রতিটি কথার উত্তর দেন, তার প্রতিটি দুঃখে-সুখে সবার আগে পাশে দাঁড়ান, সে একসময় ভাবতে শিখবে আপনি না থাকলেও কিছু আসে যায় না। কারণ আপনি তো আছেই, আপনি তো গুরুত্ব দিতেই থাকবেন।
তখন সে আপনার গুরুত্বকে অবহেলা করতে শিখবে। উত্তর দেবে দেরিতে, আপনার প্রতি আগ্রহ দেখাবে না, ব্যস্ততার অজুহাতে আপনাকে এড়িয়ে চলবে। অথচ আপনি তখনো আগের মতোই তার জন্য পাগল, তার একটু মনোযোগ পাওয়ার জন্য ছুটে চলেছেন।
এই অসম ভালোবাসার জায়গা থেকেই জন্ম নেয় দূরত্ব।
একজন যত এগিয়ে যায়, অন্যজন তত সরে যায়। একজন যত বেশি চায়, অন্যজন তত কম দেয়।
এই কারণেই ভালোবাসা হোক বা বন্ধুত্ব—সেখানে ভারসাম্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব দিতে হবে, ভালোবাসতে হবে, কিন্তু সবকিছুর আগে নিজের আত্মসম্মানকে জায়গা দিতে হবে।
যদি দেখেন আপনি প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু সে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বা আরও পিছিয়ে যাচ্ছে, তাহলে একটু থামুন। দেখুন, সে আদৌ আপনার গুরুত্বের যোগ্য কি না।
নইলে একসময় আপনি নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন—আর তখন নিজেকে দোষ দিয়ে বলবেন, “ওকে এত গুরুত্ব না দিলেই ভালো হতো।”
তাই হৃদয় দিয়ে ভালোবাসুন, কিন্তু নিজেকে ফেলে দিয়ে নয়। নিজের অনুভূতিকে অপমান করে নয়। সব সম্পর্কেই সমতা থাকুক, সম্মান থাকুক—তবেই না হবে আসল বন্ধন।