21/11/2022
প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক আলী ইমামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে কিশোর বাংলা পরিবার।
আলী ইমাম (৩১ ডিসেম্বর ১৯৫০ — ২১ নভেম্বর ২০২২) বাংলাদেশের একজন শীর্ষ শিশুসাহিত্যিক এবং অডিও ভিজ্যুয়াল ব্যবস্থাপক। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ফিচার, ভ্রমণকাহিনী, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী সবই তিনি লিখেছেন শিশুকিশোরদের জন্য। ২০১৮-এর একুশে বইমেলা পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ছয় শতাধিক।
আলী ইমামের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জন্মের ৬ মাস পরই পুরো পরিবারসহ ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। পুরো পরিবারসহ থাকতেন পুরান ঢাকার ঠাটারীবাজারে। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার ওয়ারী, লিঙ্কন রোড, নয়াবাজার, নওয়াবপুর, কাপ্তানবাজার, ফুলবাড়িয়ায় এলাকায়।
শিশু মনস্তত্ত্ব, রোমাঞ্চ এবং মানবতা ধরনের বিষয় তার কাহিনীতে উঠে এসেছে।তিনি সহজ সরল ভাষায় লিখেছেন। তার লেখায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, রোমাঞ্চকর উপন্যাস ও ইতিহাস সংশ্লিষ্ট রচনা লক্ষণীয়।
আলী ইমাম বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহা-ব্যবস্থাপক ছিলেন এবং ২০০৬ সালে চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন। কর্মজীবনের শেষপ্রান্তে একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের আগে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন (২০০৪-২০০৬) ও অধুনালুপ্ত চ্যানেল ওয়ানের (২০০৭-২০০৮) মহাব্যবস্থাপক ছিলেন।
১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনিসেফের ‘মা ও শিশুর উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম প্রকল্প’ পরিচালক ছিলেন। ওই দায়িত্ব পালনকালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, জার্মানির মিউনিখ, ব্রাজিলের রিওতে অনুষ্ঠিত ‘চিলড্রেন মিডিয়া সামিটে’ যোগ দেন। মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘প্রি জুঁনেসি চিলড্রেনস টিভি প্রোডাকশন প্রতিযোগিতা’র (২০০০) জুরির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছিলেন ‘সার্ক অডিও ভিজুয়াল বিনিময় অনুষ্ঠানে’র প্রধান সমন্বয়কারী (২০০০-২০০১)। টেলিভিশন ও বেতারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের নির্মাতা ও উপস্থাপক হিসেবে তিনি বিশেষ প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘হ্যালো, আপনাকে বলছি’ (১৯৯৯-২০০৪) নামে তার উপস্থাপিত সরাসরি অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিখ্যাত প্রামাণ্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া’র (১৯৮০-১৯৮৭) প্রযোজনা করেন তিনি।
বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য আলী ইমাম ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১২ সালে শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান। এছাড়াও অনেক পুরস্কার পান তিনি। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে জাপান ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ২০০৪ সালে তিনি জাপান পরিভ্রমণ করেন।
আলী ইমামের শিশুসাহিত্য চর্চার শুরু শৈশব থেকে। ১৯৬৮ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান শিক্ষা সপ্তাহে বিতর্ক এবং উপস্থিত বক্তৃতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৮৬ সালে ইউনেসকো আয়োজিত শিশুসাহিত্য বিষয়ক প্রকাশনা কর্মশালায় অংশ নেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রকাশনা বিভাগের ন্যাশনাল কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আলী ইমাম কিশোর বাংলা'র একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। কিশোর বাংলায় বিভিন্ন সময়ে তার গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা ও প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে।