01/05/2023
কাছের মানুষ হারিয়ে গেলে শুনেছি লোকে আকাশ হতে চায় আমি তো সন্ধ্যা হতে চেয়েছি কাঠবিড়ালি। তোর একান্ত সন্ধ্যা,চায়ের কাপ,প্রিয় বই,ঝুল পর্দায় দোল খাওয়া দখিনা হাওয়া।
তোর পায়ের কাছে হুমরি খেয়ে পড়া এক দস্যি সন্ধ্যা হতে চেয়েছি।
এতো কিছু চাওয়ার পর জানলাম জীবনে সব চাইতে নেই, যা চাওয়া হয়ে যায় তার মূল্য অসীম তাকে হাতে স্পর্শ তো দূর,চোখের আঙিনায় রাখাও দুঃসাধ্য। চাওয়া গুলোকে লুকিয়ে রাখতে হয় ভীষণ গোপনে, বুকের ভাঁজে,হৃদয়ের গোপন সিন্দুকে। যেমন করে অনেক যত্নে লুকিয়ে রেখেছি তোর লাজুক হাসি,ঘুম ঘুম চোখ,বুকের ঘ্রাণ কিংবা ঠোঁটের স্পর্শ যা চিরকাল থেকে যাবে অক্ষত। যাকে ঘিরে রোজ দু'বেলা আমার আঙ্গিনায় দুঃখ পূজা হয়।নীল কিংবা বাসন্তী দূঃখ গুলোর সে কী বাহার! তারা তো আবার রাতভোর ছাড়া পূজা নেবে না।আমিও তাই অভিমানের আঁচল টেনেছি চোখের কাজলে।আর হবে না তার সাথে নিত্যপূজার খেলা।
তোর আদলেই আজকাল আমি ইচ্ছে সাজাই।ইচ্ছের হাজার খানেক রঙের ভীড়ে ভীষণ ব্যস্ত আমি এখন। সেবার ফাল্গুনে হঠাৎ বৈশাখ নামলো আমার উঠোনে আমি কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই সেদিন তাকে বসতে দিয়েছিলাম আমার বসার ঘরে।এঘর-ওঘর, একাল-সেকাল কত কী আলাপ শেষে তোর কথা শুধোলেই আমি বেমালুম পাশ কাটিয়ে উঠতে গেলাম সে হাত ধরে কাছে টেনে তোর সুর ধরেই বললো "কারোর জন্যই কিচ্ছু থেমে থাকে না মীরা।"
আসলেই কারোর জন্য কিচ্ছু থেমে নেই।এ-ই যে গেলো বসন্তে কোকিল ডাকলো দেরি করে,পলাশের দল অভিমানে নিজেকে রাঙালো কম, হাসনাহেনার দল একটু আগে ভাগেই বাহার ছড়াতে লাগলো,বৃষ্টির দল অভিমানে মুখ ফেরালো কতদিন তাই বলে কী প্রকৃতি থেমে আছে? না তো..!
সব দিব্যি চলছে।প্রকৃতির নিয়মেই সব চলে যায় এমনি করেই। ভোর হয়,রাত হয়,সন্ধ্যা নামে শুধু থেমে যায় মন,ভাবনার দল।যে আলো একবার জীবনের জ্যোতি হয়ে জ্বলে সে আলো নিভে গেলে পথ ভুলে যায় পথিক।
তারপর আরও কিছু কথার বাসরে দুঃখের প্রদীপ জ্বেলে তাকে এগিয়ে দিলাম কিছু পথ,উঠিয়ে দিলাম ফিরতি ট্রেনে, বারবার বলে দিলাম যেন ঠিক স্টেশনেই নেমে যায়।কে জানে তার ফেরা হলো কী না....!
শুধু আমারই আর ফেরা হলো না নিজ ঘরে।আমি বেমালুম পথ ভুলে চলে গেলাম অন্য কোনো পথে।আর কোনো দিন ফিরতে চাই না কোনো অভিমান কিংবা অভিযোগে।
তুই তো ভালো করেই জানিস,
যে তল্লাটে চোখের জলে ফাগুন ভেসে যায়,সে তল্লাটে তোর নামে বিষাদ লেখা হয়....।
ভালো থাকিস কাঠবিড়ালি....!
মীরা..
২৭ এপ্রিল ২০২৩.....