27/07/2025
তাড়াশ জমিদার বাড়ি (তাড়াশ ভবন বা রাজবাড়ী) হলো বাংলাদেশের পাবনা জেলায় অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। নিচে এর ইতিহাস, স্থাপত্য এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য দেওয়া হলো:
🏛️ ইতিহাস
তাড়াশ জমিদার বাড়িটি ১৮ শতকের ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয় জমিদার রায় বাহাদুর বনওয়ারী লাল রায় কর্তৃক ।
এই জমিদার পরিবারের আগত বাসুদেব তালুকদার বা নারায়ণদেব চৌধুরী নবাব মুর্শিদকুলীর রাজস্ব বিভাগে তার আন্তরিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘রায়’ উপাধি পান এবং তারাশ মহাল লাভ করেন ।
পরবর্তীতে দত্তক পুত্র বনমালী রায় আধুনিকভাবে তাড়াশ ভবনের নির্মাণ করেন ।
১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জমিদার পরিবার এই ভবনটিকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করেছিল ।
৮ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটি সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে ।
🧱 স্থাপত্য
এই ভবনের প্রাকৃতিক আয়তন প্রায় ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থ রেকর্ড করা হয়েছে ।
ইউরোপীয় রেনেসাঁ বা গ্রিক প্রভাবিত স্থাপত্যশৈলী দেখা যায়, বিশেষত ভবনের প্রবেশদ্বারের তিনটি বিশাল কোরিন্থিয়ান স্তম্ভ এবং অর্ধবৃত্তাকার ফটকের কারণে ।
নিচ এবং দ্বিতীয় তলায় মোট ১৬টি কক্ষ, ৮০টি দরজা ও ৫৩টি জানালা নির্মিত হয়েছিল পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিত করার জন্য ।
প্রবেশপথের প্রস্থ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে জমিদারের দুটি হাতি সমস্যা ছাড়াই আসতে পারত—এটি স্থানীয় কিংবদন্তি হিসেবে প্রচলিত ।
✨ বর্তমান অবস্থা ও দর্শনীয়তা
বর্তমানে এই স্থাপনাটি পাবনা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ।
বিভিন্ন সময়ে ভবনটি সরকারী অফিস বা পাবনা মেডিকেল কলেজের পরিষেবা কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়েছে ।
বর্তমানে সংস্কার করা হলেও কার্যকরভাবে কোনো ব্যবহার নেই; রাতের বেলায় নিরাপত্তার অভাবে এটি অনিরাপদ হয়ে পড়েছে বলে ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেছেন ।
তাছাড়া অনেকেই এই ভবনটিকে জাদুঘরে পরিণত করার দাবি উত্থাপন করছেন ।
📍 কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে গাড়ি, বাস বা ট্রেনে পাবনা পৌঁছাতে পারেন।
এরপর পাবনা বাইপাস টার্মিনাল থেকে অটো বা রিকশায় ৭–১৫ মিনিটে তাড়াশ রাজবাড়ি পৌঁছানো যায়; ভাড়া সাধারণত ১৫‑৩০ টাকা ।
ভ্রমণকালে কোনো প্রবেশ মূল্য নেই—এটি অনেকেই বিনামূল্যে পরিদর্শন করেন ।
পাবনা শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু আবাসিক ও হোটেল রয়েছে, যেমন: প্রবাসী ইন্টারন্যাশনাল, শিলটন, প্রাইম গেস্ট হাউস ইত্যাদি ।
🧭 সারাংশ
তাড়াশ জমিদার বাড়ি হলো ১৮ শতকের রেনেসাঁ প্রভাবিত একটি শ্রেষ্ঠ নিদর্শন, যার নির্মাতা ছিলেন বনওয়ারী লাল রায়।
এটি স্থাপত্য, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের কারণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত।
যদিও এটি বর্তমানে ততটা ব্যবহৃত নয়, স্থানীয়দের দাবি এই জমিদার বাড়ি জাদুঘরে রূপান্তর করা হোক যেন বিকল্প বিপুল পর্যটন আকর্ষণ তৈরি হয়।