
14/06/2025
💔
তুমি তো এখানেই আছো সুশান্ত, কোথাও যাওনি! 💔
ক্যালেন্ডারের পাতায় কিছু তারিখ আসে গভীর ক্ষতচিহ্ন হয়ে। ১৪ই জুন তেমনই একটি তারিখ। এক এমন দিন, যা আমাদের জীবন থেকে শুধু একটা দিন কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছিল একরাশ স্বপ্ন, এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা আর অজস্র উত্তরহীন প্রশ্ন।
২০২০, জুন!
সেদিন দুপুরবেলা। দেশজুড়ে লকডাউনের অলস নিস্তব্ধতা। হঠাৎ একটা খবর ভেসে এলো, বান্দ্রার কার্টার রোডের সেই ফ্ল্যাটের বন্ধ দরজাটা ভেঙে পাওয়া গেছে সুশান্ত সিং রাজপুতকে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। যে ছেলেটা মাত্র কয়েকদিন আগেই তার মায়ের ছবিতে লিখেছিল, “অশ্রুবিন্দু ঝাপসা করে দিচ্ছে স্মৃতি,” কে জানতো সেই অশ্রুই এক মহাসমুদ্র হয়ে তাকে গ্রাস করে নেবে?
সরকারি বয়ানে লেখা হলো, আ*ত্ম*হ*ত্যা।
কিন্তু মানুষের মন? সে তো সহজ সমীকরণে বিশ্বাসী নয়। সেই বন্ধ দরজার আড়াল থেকে যে প্রশ্নগুলোর জন্ম হয়েছিল, তার উত্তর আজও মেলেনি। এটা কি শুধুই এক অবসাদগ্রস্ত শিল্পীর নীরব প্রস্থান, নাকি নাটকীয় ভাবে সাজানো চিত্রনাট্যের শেষ দৃশ্য? এই মৃ*ত্যু এক গভীর রহস্যের চাদরে মোড়া, যার প্রতিটি ভাঁজে লুকিয়ে আছে যন্ত্রণা, ষড়যন্ত্রের গন্ধ আর এক অসমাপ্ত লড়াইয়ের গল্প।
সুশান্ত শুধু এক অভিনেতা ছিলেন না। সে ছিল এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম। ফিজিক্স অলিম্পিয়াড জয়ী, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকায় সর্বভারতীয় স্তরে সপ্তম স্থানাধিকারী এক মেধাবী ছাত্র, যিনি নিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি ছেড়ে অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়িয়েছিলেন শুধু স্বপ্নের টানে। সে ছিল ‘বাইরের’ থেকে আসা এক তারা, যে নিজের আলোয় বলিউডের আকাশকে চমকে দিতে চেয়েছিল।
আমরা তার ‘৫০টি স্বপ্নের তালিকা’ দেখেছি। ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে প্লেন ওড়ানোর লাইসেন্স পাওয়া, মোরস কোড শেখা থেকে শুরু করে এক হাজার গাছ লাগানো, নাসার ওয়ার্কশপে যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে মহিলাদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া, এগুলো শুধু স্বপ্ন ছিল না, ছিল জীবনকে পূর্ণরূপে বাঁচার এক রিফ্লেকশন। তার ব্যালকনির সেই শক্তিশালী টেলিস্কোপটা তার কথায় শিশুদের মহাকাশ দেখানোর অপেক্ষায় ছিল।
কিন্তু যে মানুষটা মহাবিশ্বের রহস্য সমাধান করতে ভালোবাসতো, সে নিজের জীবনের জটিল ধাঁধার সমাধান করতে পারলো না? নাকি তাকে সেই সুযোগটাই দেওয়া হয়নি?
সবচেয়ে বড় প্রহসন হয়ে আসে ‘ছিছোড়ে’ ছবিটি। যে নায়ক পর্দায় দাঁড়িয়ে তার ছেলেকে বলছে, “তোমার রেজাল্ট ঠিক করবে না তুমি লুজার কি না, তোমার লড়াইটা ঠিক করবে,” সেই নায়কের জীবনের শেষ লড়াইটা এত নিঃশব্দে, এত আড়ালে শেষ হয়ে গেল? আমরা তার হাসির দাম দিতে গিয়ে কি তার চোখের জলকে উপেক্ষা করেছিলাম? তার সাফল্যের আলোয় এতটাই বুঁদ হয়েছিলাম যে, তার চারপাশে জমে ওঠা অন্ধকারের খোঁজ রাখিনি?
আজ, এই বিশেষ দিনে, যখন তার মুখটা মনে পড়ে, তখন শুধু একজন অভিনেতার জন্য কষ্ট হয় না। কষ্ট হয় এক স্বপ্নদর্শী তরুণের জন্য, যে এই পৃথিবীর জটিলতা বোঝার জন্য হয়তো বড্ড বেশি সরল ছিল। কষ্ট হয় সেই অমীমাংসিত প্রশ্নগুলোর জন্য, যা আজও বিচারের আশায় ঘুরে বেড়ায়। এই মৃ*ত্যু তাই শুধু শোক নয়, যেন এক অবিচারের বিরুদ্ধে নীরব আর্তনাদ।
যখন আজ রাতে তার কোনো সিনেমা দেখবেন, ‘দিল বেচারা’-র ম্যানি-কে দেখে চোখের কোণ ভিজে উঠবে, তখন অনুভব করার চেষ্টা করবেন সেই মানুষটার ভেতরের তোলপাড়কে। তার হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকা সেই না বলা কথাগুলোকে।
সে তারা খুঁজতে ভালোবাসতো, আর আজ নিজেই এক রহস্যময় তারা হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো হাসছে আর বলছে, “আমার শেষ অধ্যায়টা তোমরা লিখবে।”
যতদিন একজনও স্বপ্নদেখার মানুষ থাকবে, যতদিন উত্তর খোঁজার জেদ থাকবে, ততদিন তুমি থাকবে, সুশান্ত। আমাদের আকাশের সবচেয়ে বিদ্রোহী, সবচেয়ে মায়াবী তারা হয়ে। 💔