উনি একজন ফিজিশিয়ান। মতিঝিলে রোগী দেখেন। কুরআনের অনুবাদ পড়েন প্রচুর। কারো কাছ থেকে জেনেছেন, উস্তাযের অনুবাদের কথা।
.
আমাদের নম্বরটা নাকি অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছেন। অনেকখানি পড়েছেন একজনের থেকে নিয়ে। এরপর একদম মজে গেছেন এই অনুবাদে। নিজের জন্য এক কপি দ্রুত পেতে চান। কল দিয়েই বললেন, 'আপনাদেরকে খুঁজে ফিরছি'। কথা বলেন খুব মেপে মেপে। গুছিয়ে। শব্দের উচ্চারণে ব্যাক্তিত্বের ছাপ আঁচ পাওয়া যায়।
বাংলাবাজারের ঠিকানায় এসে 'কুরআন মাজীদ' নিবেন। এমন হন্তদন্ত হয়ে কুরআন খোঁজার প্রজন্ম খুব বেশি দরকার। বায়ান এমন পাঠকবেজ পেয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।
24/09/2025
আমরা আজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানিনা বলেই তাঁর সুন্নাহ থেকে বিমুখ হই, তাঁর সুন্নাহ-কে সেকেলে মনে করি। তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শকে ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রীয় জীবনে অপাঙ্ক্তেয়, অমীমাংসিত মনে করি। অন্যসব বাতিল বিশ্বাস আর মতাদর্শকে তাঁর আনীত দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিই।অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে—তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব, ৩৩ : ২১]
এসবকিছু আমরা করি তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জানিনা বলেই।যদি আমরা তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জানতাম তবে কখনোই তাঁর সুন্নাহ-কে সেকেলে মনে করতাম না, তাঁর আনীত দ্বীন আর শারিয়াহ-কে অপাঙ্ক্তেয়, অমীমাংসিত মনে করতাম না।
তাই আমাদের উচিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালোভাবে জানা।আর তাঁকে জানার জন্য তাঁর সীরাত পড়া।সীরাত পাঠের মাধ্যমেই আমরা তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর নেতৃত্ব, তাঁর আদর্শ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবো।এক্ষেত্রে শাইখ ইবরাহীম আলি রচিত ‘সহীহুস সীরাতিন নাবাবিয়্যাহ’ বইটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করতে পারে, যা ‘সীরাতুন নবি’ নামে বাংলায় অনূদিত হয়েছে।
সীরাতুন নবি সিরিজের বিশেষত্ব হচ্ছে, পুরো বইটিকে বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে সাজানো হয়েছে।প্রায় ১৩০০ বছর পূর্বে ইবনু ইসহাক রাহিমাহুল্লাহ রচিত সীরাতের মতো প্রাচীনতম সীরাতগ্রন্থগুলোর স্টাইল অনুসরণ করেই এটি রচনা করা হয়েছে। বইটি পড়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের এক নিখাঁদ চিত্র।
প্রাচীন সময়ের সালাফদের যুগের বই-পত্র পড়ার ছাপ তাদের ভেতরে পেয়ে চমকিত হই। বায়ানের সিমে আসা ফোন-কলগুলোর অনেকেই জানান যে, তিনি বাটন ফোন চালান। তাই কুরিয়ার ঠিকানা হোয়াটসঅ্যাপে দিতে পারবেন না। এন্ড্রয়েড ছেড়ে দিয়েছেন।
আমরা যেন অর্ডার করা বইয়ের সাথে ক্যাটালগ দিয়ে দেই, যেহেতু ফেসবুক চালান না, তাই নতুন বইগুলো নিয়ে জানেন না। ক্যাটালগ লাগবে।
আল্লাহ এমন পাঠকবেজ আমাদেরকে দিয়েছেন বলে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা।
একটু আগে গাইবান্ধার যিনি আবেগ ভরে বায়ান টিমের জন্য দুআ করলেন, সেই আফজাল হোসেন সাহেব হয়তো বায়ান নিয়ে ফেসবুকে রিভিউ লিখতে পারবেন না। কিন্তু তিনি আসল জায়গায় রিভিউ লিখতে পারবেন। আমি বলেছি, মুনাজাতে দুআ চাই। এই দুয়ার যে সুকুন। আসমানে পাঠানো রিভিউয়ের যে ইখলাস, তা আমি ফেসবুকের সাদা-নীল মিক্স করা প্ল্যাটফর্মে পাই না।
আহা! সালাফদের যুগ। আহা! সালাফদের যুগের বইয়ের পাঠক! আপনারা আমাদের কাজ করার অনুপ্রেরণা।
-বায়ান টিমের একজন।
22/09/2025
// পয়েন্ট : পুরোনো গ্রন্থের সহযোগিতা //
কুরআনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা অনুপম সৌন্দর্য আমরা তখনই অবলকন করতে পারি, যখন এর প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হই।
এজন্য প্রয়োজন কুরআনের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জানা। কোনো সন্দেহ নেই, ইসলামের প্রথম তিন প্রজন্মের সময়ে চর্চিত জ্ঞানই সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ ও বিদআত-বিকৃতিমুক্ত। আমাদের অনুবাদটির অনন্যতা এখানেই যে, আমরা সমকালীন গ্রন্থগুলোর পরিবর্তে নির্ভর করেছি কুরআন নাযিলের কাছাকাছি সময়ে রচিত তাফসীর-গ্রন্থগুলোর ওপর।
এক্ষেত্রে তিন ধরনের কিতাবপত্র ব্যবহার করা হয়েছে—তাফসীর, কুরআনের শব্দকোষ এবং অভিধান। প্রত্যেকটি উৎস-গ্রন্থই ইসলামের প্রথম পাঁচশ বছরে রচিত। সেই সময়ের মধ্যেই ইসলামী জ্ঞানের সকল শাখা অত্যন্ত মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, বাংলা ভাষায় এমন একটি কুরআনের অনুবাদ অত্যন্ত দৃষ্টান্তবিরল।
স্বতন্ত্রধর্মী এই কুরআনের অনুবাদটি পড়তে আপনাকে স্বাগত প্রিয় পাঠক!
21/09/2025
যে কাফেলা বদলে দিয়েছিলো ইতিহাসের গতিপথ
রমাদান মাস।
নবীজি (স) ও সাহাবারা বদরের ময়দানে। সাহাবারা যুদ্ধের জন্যে ময়দানে আসেননি, এসেছিলেন কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা আক্রমণ করার জন্যে। কিন্তু এখন যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। পিছু হটার উপায় নেই। যুদ্ধই একমাত্র সমাধান।
নবীজি (স) চিন্তিত হয়ে পায়চারি করছেন। নবীজি (স) ভাবছেন—সাহাবারা কি যুদ্ধ করার জন্যে রাজি হবে? মুহাজিররা না-হয় রাজি হলো, কিন্তু আনসাররা? তারা তো মদীনার বাইরে আমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হয়নি, তাহলে? ওরা যদি যুদ্ধ না করে চলে যায়!
নবীজি (স) সাহাবাদের ডাকলেন। তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। আবু বকর ও উমার (রা) যুদ্ধ করার পক্ষে মত দিলেন। নবীজি (স) চাচ্ছিলেন আনসার সাহাবারা মতামত দিক। আনসার সাহাবারাই সংখ্যায় বেশি। এই মুহূর্তে তাঁদের মতামত জানাটা খুব জরুরি।
আনসারদের পতাকাবাহী সাদ ইবনু মাআজ (রা) নবীজির (স) মনোভাব বুঝতে পারলেন। তিনি সামনে এলেন। এরপর দৃঢ়চিত্ত কণ্ঠে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের মতামত জানতে চান?’
নবীজি (স) বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও।’
সাদ ইবনু মাআজ (রা) বললেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা আপনার ওপর ঈমান এনেছি। আপনাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছি। আপনার কথা শুনবো ও মানবো বলে ওয়াদা করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা চান, তার জন্যে এগিয়ে যান। আমরা আপনার সাথেই আছি। শপথ ওই সত্তার, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছেন, যদি সাগরের কাছে গিয়ে আপনি সাগরে ঝাঁপ দেন, তো আমরাও আপনার সাথে ঝাঁপ দেবো। আমাদের একজনও পিছু হটবো না। আগামীকালই শত্রুর মুখোমুখি হতে আমাদের কোনো অনীহা নেই। আমরা সমরবিদ্যায় পারদর্শী, আর যুদ্ধের সময় বিশ্বস্ত। হতে পারে, আল্লাহ আমাদের মাধ্যমে এমন কিছু দান করবেন—যা আপনার চক্ষুকে শীতল করে দেবে। আল্লাহর অনুগ্রহের ওপর ভরসা করে, আমাদের নিয়ে অভিযানে সামনে বাড়ুন।’
'সীরাতুন নবি (সা:)' বই থেকে
21/09/2025
যার গল্প বলছি তিনি ছিলেন পারস্যের অধিবাসী।
পারস্যের ইস্পাহান নগর। গ্রামের নাম জাই। তাঁর বাবা ছিলেন জমিদার। এলাকার প্রধান জমিদার। বাবা তাঁকে অনেক ভালোবাসতেন। নিজের সকল ধন সম্পদের চেয়ে বেশি। এমনকি অনান্য সন্তানদের চেয়েও বেশি। সে ভালোবাসা এতোটাই বেশি ছিলো যে, তাঁকে বাড়ীতে আটকে রাখতেন। যাতে তিনি কখনো হারিয়ে না যান। কখনো যেনো চোখের আড়াল না হন।
তাঁর বাবা ছিলেন অগ্নিপূজক। মাজূসি ধর্মের অনুসারী। তিনিও তাঁর বাবার ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের গ্রামে অগ্নিপূজকদের বিশাল এক অগ্নিকুণ্ড ছিলো। সে অগ্নিকুণ্ডের প্রধান রক্ষক ছিলেন তাঁর বাবা। বাবার অবর্তমানে তাঁকে রক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। যেহেতু তিনি বাড়ীর বাইরে যেতে পারতেন না। তাই বাইরের আবহাওয়া সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিলো না।
ইতোমধ্যে তাঁর বাবা কয়েকটি প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন। তিনি (তাঁর বাবা) নিজেই নির্মাণ কাজের দেখাশোনা করতেন। একবার তাঁর বাবার প্রাসাদের বাইরের খামারে কিছু কাজ পড়ে যায়। তাই তাঁকে ডেকে বলেন—“ছেলে আমার! প্রাসাদের কাজে ব্যস্ত থাকায়, আমি খামারে যেতে পারছি মা। তাই তুমি যাও। কর্মচারীদের অমুক অমুক কাজ করতে বলো। ওখানে আটকে থেকো না যেনো! তুমি আটকে থাকলে, তোমার দুশ্চিন্তায় আমি অন্য কাজে মন দিতে পারবো না।”
বাবার আদেশ পেয়ে তিনি খামারের উদ্দেশে বের হলেন। পথিমধ্যে ছিলো এক গির্জা। খ্রিষ্টানদের। তিনি গির্জার ভেতরে উঁকি দেন। ভেতর থেকে প্রার্থনার আওয়াজ শুনতে পান। বেশ আগ্রহ তিনি জিজ্ঞেস করেন—“এখানে কী হচ্ছে?”
তারা বলে—“এরা খ্রিষ্টান। প্রার্থনা করছে।”
ওদের কথাশুনে তিনি গির্জার ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে বসে যান। প্রার্থনাকারীদের অবস্থা দেখে তিনি মুগ্ধ হন। এতোটাই মুগ্ধ হন যে, কোনদিক দিয়ে সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়—তিনি টেরই পান নি।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নেমে আসে। তাঁকে খোঁজার জন্যে চতুর্দিকে লোক পাঠানো হয়। জমিদার বাবার খুব আদরের সন্তান ছিলেন কি-না—তাই।
সন্ধ্যের পর তিনি প্রাসাধে ফিরে যান। সেদিন আর খামারে যাওয়া হয় নি তাঁর। তাঁর পিতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “কোথায় ছিলে (তুমি)? আমি কি তোমাকে কিছু বলিনি?’
জবাবে তিনি বলেন, “বাবা! আমি কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। যাদেরকে খ্রিষ্টান বলা হয়। তাদের উপাসনা ও প্রার্থনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাই তারা কীভাবে কী করছে—তা দেখার জন্যে সেখানে বসে গিয়েছিলাম।”
পুত্রের মুখে এমন কথা শুনে পিতা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন। এরপর বললেন, “প্রিয় বৎস! তোমার ও তোমার পিতৃপুরুষের দ্বীন—ওদের দ্বীনের চে’ উত্তম।”
তিনি বললেন, “না। আল্লাহর শপথ! আমাদের দ্বীন তাদের দ্বীনের চে’ উত্তম নয়। তারা এমন এক সম্প্রদায়—যারা আল্লাহর গোলামি করে। তাঁকে ডাকে এবং তারই উপাসনা করে। আর আমরা! আমরা তো আগুনের উপাসনা করি। যা আমরা নিজের হাতে জ্বালাই, আর আমরা দেখভাল ছেড়ে দিলে তা নিভে যায়।”
পুত্রের মুখে এ কথা শুনে পিতা যারপরনাই বিস্মিত হলেন। পুত্রকে হারানোর ভয় তার মাথায় ভর করলো। তাই তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিলেন। তাঁর দু পায়ে শেকল লাগিয়ে দিলেন। একটি গৃহে বন্দী করে রাখলেন।
একদিন তিনি খ্রিষ্টানদের কাছে একটি লোক পাঠালেন। উদ্দেশ্য—খ্রিষ্টানদের দ্বীনের উৎস সম্পর্কে জানা। তাঁর পাঠানো লোকটি এসে জবাব দিলো, “তাদের দ্বীনের উৎস শামে।”
তিনি লোকটিকে বললনে, “ওখান (শাম) থেকে লোক এলে আমাকে জানাবে।”
কিছুদিন পর শাম থেকে কিছু লোক পারস্যে আসে। এ খবর তাঁর কাছে পৌঁছে। তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন পালিয়ে যাওয়ার। যখন শামের লোকজন তাদের কাজ শেষ করে ফিরে যাওয়ার মনস্থ করে, তখন তিনি শেকল ভেঙে পালিয়ে গিয়ে—তাদের সাথে যোগদান করেন। সফর করতে করতে শামে পৌঁছান।
শামে পৌঁছে তিনি খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে জানার জন্যে জিজ্ঞেস করেন, “এ দ্বীনের সর্বোত্তম ব্যক্তি কে?”
তারা একটি গির্জার দিকে ইঙ্গিত করে বলে, “এই গির্জাবাসী বিশপ।”
তিনি গির্জায় পৌঁছান। বিশপের কাছে গিয়ে বলেন, “আমার একান্ত ইচ্ছে—আপনার সাথে এ গির্জায় থেকে আল্লাহর উপাসনা করবো। এবং আপনার কাছ থেকে উপকারী জ্ঞান শিখবো।”
বিশপ তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। তিনি বিশপের সাথে গির্জায় থাকতে লাগলেন। মানুষ বিশপকে ভালো মানুষ মনে করতো। কিন্তু বিশপ ছিলেন লোভী। বিশপ লোকদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ দিতো, কিন্তু নিজে তা করতো না। লোকজন তার কাছে দানের টাকা প্রদান করলে, সে সেগুলো অভাবীদের না দিয়ে—নিজের কাছে রেখে দিতো। তিনি বিশপের এ অবস্থা থেকে অত্যন্ত মর্মাহত হলেন। তাঁর মনের মধ্যে বিশপরে প্রতি ঘৃণা জন্ম নিতে লাগলো।
কিছুদিন পর বিশপ মারা গেলেন। লোকজন বিশপকে দাফন করার জন্যে এলো। তিনি বললেন, “এ-তো একটি খারাপ লোক। সে তোমাদেরকে দান-খয়রাতে উদ্বুদ্ধ করতো। তোমাদের দানের টাকা নিজের কাছে জমা করে রাখতো, অভাবী মানুষকে দিতো না।”
তাঁর কথা শুনে লোকজন ক্ষেপে গেলো। তাদের দৃষ্টিতে যিনি মহৎ, তাকে তিনি মন্দ বলবেন—তা কী করে হয়? তাইতো তারা তাঁর কাছে প্রমাণ চাইলেন। তাদের কথা শুনে তিনি বললেন, “আমি তোমাদেরকে তার জমা করা সম্পদ বের করে দেখাচ্ছি।”
এ-বলে তিনি বিশপের লুকানো সাতটি পাত্র বের করে দেখালেন, যেখানে অনেক স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করা ছিলো। লোকজন এ-দৃশ্য দেখে তাদের ভুল বুঝতে পারলো। বিশপকে তারা দাফন না করে শূলিতে চরালো। এরপর পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলো।
ঐ বিশপ মারা যাওয়ার পরে, আরেকজন বিশপ নিয়োগ দেয়া হলো। যিনি ছিলেন অধিক উত্তম, সৎ, দুনিয়া বিরাগী ও অধিক উপাসনাকারী। তিনি নতুন বিশপের ভক্তে পরিণত হলেন।
যখন নতুন বিশপ মারা যাচ্ছিলো, তখন তিনি তার শিয়রে বসলেন। বসে জিজ্ঞেস করলেন, “হে অমুক! আপনি দেখতে পাচ্ছেন, আল্লাহর ফয়সালা (মৃত্যু) আপনার সামনে হাজির। আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে সবকিছুর চে’ বেশি ভালোবেসেছি। (এখন) আমাকে কী কী কাজ করার আদেশ দিচ্ছেন? কার কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন?”
নতুন বিশপ বললেন, “বৎস! আল্লাহর শপথ! আমি কেবল একজনকেই চিনি, তিনি মসুলে থাকেন। তার কাছে যাও। গেলে দেখবে—তার অবস্থাও আমার মতোই।”
নতুন বিশপ মারা যাওয়ার পর তিনি মসুলে এসে উপস্থিত হলেন। মসুলের বিশপকে তিনি তার ব্যাপারে জানান। সব শুনে বিশপ খুব খুশি হন। তিনি মসুলের বিশপের সাথে সময় কাটাতে থাকেন।
একমসয় মসুলের বিশপের জীবন ঘনিয়ে আসে। তিনি তাকে তা-ই বলেন, যা শামের বিশপকে বলেছিলেন। তার প্রশ্নের জবাবে মসুলের বিশপ বলেন, “বৎস! আল্লাহর শপথ! আমি কেবল একজনকেই চিনি, তিনি নাসীবাইন এলাকায় থাকেন। তার অবস্থাও আমার মতোই। তার কাছে যাও।”
মসুলের বিশপ মারা গেলে তিনি নাসীবাইন পৌঁছান। সেখানকার বিশপের সান্নিধ্য গ্রহণ করেন। নাসীবাইনের বিশপ যখন জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছান, তখন তিনি তাকেও একই কথা বলেন—যা অন্য বিশপদের বলেছিলেন।
তার কথা শুনে নাসীবাইনের বিশপ তাকে বাইজান্টাইন রাজ্যের আম্মূরিয়্যা এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেন।
নাসীবাইনের বিশপকে দাফন করে তিনি আম্মূরিয়্যায় পৌঁছান। আম্মূরিয়্যার বিশপের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি কিছু অর্থ সম্পদ অর্জন করেন। ভেড়ার একটি ছোট্ট পাল ও কয়েকটি গাভীর মালিক বনে যান। যখন আম্মূরিয়্যার বিশপের মৃত্যু ঘনিয়ে আসে, তখন তিনি তার কাছেও নসীহাহ চান।
আম্মূরিয়্যার বিশপ বলেন, “বৎস! আল্লাহর শপথ! আমার মতো আর কোনো ব্যক্তি আছে বলে আমার জানা নেই, যার কাছে তুমি যেতে পারো। তবে সময় খুব কাছাকাছি এসে গিয়েছে। আল-হারাম থেকে একজন নবী প্রেরণ করা হবে। অগ্নেয়শিলা গঠিত দুই অঞ্চলের মাঝামাঝি এলাকায় তিনি হিজরত করবেন। যে অঞ্চলের মাটি হবে কিছুটা লবণাক্ত ও খেজুর গাছবহুল। তাঁর মধ্যে কিছু স্পষ্ট নিদর্শন থাকবে। তাঁর দু কাঁধের মধ্যে থাকবে নবুওয়াতের সীলমোহর। তিনি উপহার গ্রহণ করবেন, কিন্তু সাদাকাহ গ্রহণ করবেন না। সেই অঞ্চলে যাবার সামর্থ্য থাকলে—চলে যাও। কারণ তাঁর আগমনের সময় খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।”
কিছুদিন পর আরব ব্যবসায়ীদের একটি কাফেলার সাথে তাঁর দেখা হয়। তিনি তাদেরকে আরব ভূমিতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলেন। বিনিময়ে তাদেরকে তাঁর ভেড়া ও গাভীর পাল দেয়ার অঙ্গীকার করেন। ব্যবসায়ী কাফেলা তাঁর এ-প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। তিনি তাদেরকে তাঁর গবাধি পশুর পাল দিয়ে দেন। এরপর আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
আল-কুরা উপত্যকায় এসে ব্যবসায়ী কাফেলা তাঁর সাথে গাদ্দারী করে। তারা তাঁকে দাস হিসেবে সেখানে বিক্রি করে দেয়। এক ইয়াহূদী তাঁকে কিনে নেন। তিনি সেখানে খেজুর গাছ দেখতে পান। খেজুর গাছ থেকে তাঁর মনে খুশির ঢেউ উঠতে থাকে। তিনি মনে মনে ভাবতে থাকেন—এটাই হয়তো সেই দেশ!
ইয়াহূদীদের একটি গোত্র—বানূ কুরাইযা’র এক লোক তাঁকে কিনে নেয়। এরপর তাঁকে মদীনায় আনা হয়। মদীনায় পৌছেই তিনি বুঝতে পারেন—এটাই সে শহর, যার সম্পর্কে আম্মূরিয়্যার বিশপ তাঁকে বলেছিলেন। তিনি তাঁর মনিবের অধীনে দাসত্বের জীবন কাটাতে থাকেন। অপেক্ষা করতে থাকেন সে মাহেন্দ্রক্ষণের। কখন তাঁর সাথে সেই মহাপুরুষের দেখা হবে, যার কথা বিশপ তাঁকে বলেছিলেন। কখন সেই মহাপুরুষের কাছ থেকে সত্যের বাণী শ্রবণ করবেন? কখন তাঁর দীর্ঘ সফরের সমাপ্তি হবে?
একদিন তিনি খেজুর বাগানে কাজ করছিলেন। হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন—তাঁর মনিবের চাচাতো ভাই বলছেন, “আল্লাহ বানূ কাইলা-কে শায়েস্তা করুন। আল্লাহর শপথ! তারা এখন মক্কা থেকে আগত এক ব্যক্তির চারপাশে জড়ো হয়েছে—কুবা-তে। তাদের ধারণা সে একজন নবী।”
এ-কথা শোনার পর তাঁর অন্তরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। শরীরে কাপুনি শুরু হয়। অন্যরকম শিহরনবোধ হয়। মনে মনে ভাবতে থাকেন—এ ব্যক্তিটাই কী সেই মহাপুরুষ? তাহলে কী তার প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে? তিনি কি সত্যের কাছে পৌঁছে গেছেন? এ চিন্তাগুলো তাঁর মনে এতোটাই ঢেউ খেলতে থাকে যে, গাছ থেকে পড়ে যাবার উপক্রম হয়।
তিনি দ্রুত গাছ থেকে নেমে আসেন। এসে তাঁর মনিবের চাচাতো ভাইটিকে জিজ্ঞেস করেন, “কী সংবাদ? উনি কে?”
তিনি দাস ছিলেন। তাই তাঁর মুখে একথা শুনে মনিবের চাচাতো ভাই রেগে যান। তাঁর গালে কষে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেন। ভ্রু কুঁচকে জবাব দেন, “এ দিয়ে তোমার কী? যাও! নিজের কাজে যাও।”
তিনি বললেন, “না। তেমন কিছু না। কেবল একটি সংবাদ শুনলাম। তাই জানতে চাইলাম—ঘটনাটি কী?”
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যে হলো। তাঁর কাজও শেষ হলো। তাঁর কাছে জমানো কিছু খেজুর ছিলো। সেগুলো হাতে করে রওনা হলেন। উদ্দেশ্য—সেই ব্যক্তিটির সাথে দেখা করা, যার কথা তাঁর মুনিবের মনিবের চাচাতো ভাই বলেছে।
তিনি সে মহাপুরুষের কাছে পৌঁছুলেন। এরপর বললেন, “শুনলাম—আপনি একজন ভালো মানুষ। আর আপনার সাথে কিছু সাথি আছে, যারা এ এলাকায় অপরিচিত। আমার কাছে কিছু সাদাকাহ’র খেজুর আছে। মনে হলো এ অঞ্চলে আপনারাই হলেন এর হকদার। এই হলো খেজুর। এখান থেকে কিছু খান।”
তাঁর কথা শুনে সে মহাপুরুষ হাত গুটিয়ে নিলেন। খেজুরে হাত দিলেন না। খেলেনও না। তাঁর সাথিদের ডেকে বললেন, “তোমরা খাও।”
তিনি মনে মনে ভাবলেন—আম্মূরিয়্যার বিশপ তাঁকে মহাপুরুষের যেসব গুণাগুণ বলেছিলেন, তার একটা পাওয়া গেলো।
এই ভেবেই তিনি দ্রুত মনিবের বাড়ীতে ফিরে এলেন। কিছুক্ষণ পর আবারও সে মহাপুরুষের কাছে গেলেন। সাথে নিলেন—জমানো কিছু খাবার। মহাপুরুষের কাছে পৌঁছে তাঁর জমানো খাবার দিয়ে বললেন, “একটু আগে দেখলাম, আপনি সাদাকাহ’র জিনিস খান না। এটি উপহার। সাদাকাহ নয়।”
তাঁর কথা শুনে মহাপুরুষটি সে খাবার থেকে খেলেন এবং তাঁর সাথিদেরকেও দিলেন। এ-দৃশ্য দেখে তিনি ভাবলেন—আম্মূরিয়্যার বিশপের দেয়া, দুটো বৈশিষ্ট্য মিলে গেলো।
সেদিনকার মতো তিনি ফিরে এলেন।
এভাবে কিছুদিন কেটে গেলো। একদিন তিনি আবার সে মহাপুরুষের কাছে গেলেন। তিনি যখন মহাপুরুষের কাছে এলেন তখন দেখতে পেলেন, তিনি একটি লাশের পেছন পেছন যাচ্ছিলেন। তাঁর চারপাশে তাঁর সাথিরা।
তিনি মহাপুরুষের চারপাশে চক্কর দিতে লাগলেন। তাঁকে চক্কর দিতে দেখে সে মহাপুরুষ বুঝে ফেললেন যে, তিনি কী খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাই মহাপুরুষটি তাঁর গায়ের চাদর নামিয়ে ফেললেন।
তিনি দেখতে পেলেন—সে মহাপুরুষের দু কাঁধের মধ্যখানে সীলমোহর। যেমনটা আম্মূরিয়্যার বিশপ তাঁকে বলেছিলেন। তিনি কান্নায় ভেঙে পরেন। অবশ্যি এ কান্না দুঃখের কান্না নয়। এতোদিন পর যে তিনি সত্যকে খুঁজে পেয়েছেন, এ কান্না ছিলো তারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি তা খুঁজে পেয়েছেন—যা তিনি হন্নে হয়ে খুঁজেছেন। তিনি সে মহাপুরুষকে খুঁজে পেয়েছেন—যার জন্যে তিনি বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছেন।
তিনি দ্রুত সে মহাপুরুষের কাছে যান। উপুড় হয়ে নবুওয়তের সীলমোহরে চুমো খান। তাঁর চোখ-মুখ ভিজে যেতে থাকে। হাত-পা অসম্ভব রকমভাবে কাপতে থাকে। তিনি বুঝতে পারেন—এ মহাপুরুষই হলেন সে; যার আগমনের কথা বিশপ তাঁকে জানিয়েছিলেন। ইনিই হলেন আল্লাহর রাসূল—মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তাঁর কান্না দেখে আল্লাহর রাসূল ﷺ তাঁকে বলেন, “সালমান! এদিকে এসো।”
এই যা! বলেই ফেললাম—তাঁর নামটা। কি আর করার? আমি যার কাহিনী আপনাদের শুনাচ্ছি, তাঁর নাম সালমান। সালমান ফারিসী। যিনি সত্যকে আলিঙ্গন করার জন্যে—রাজকীয় জীবন পরিত্যাগ করেছেন। যিনি সত্যের স্বাদ আস্বাদন করার জন্যে—দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছে। যিনি সত্যকে খুঁজতে খুঁজতে এতোটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। ক্লান্তি যাকে স্পর্শ করে নি। যিনি বিরতিহীন ছুটেছেন। ছুটেছেন সত্যের পথে।
একবার মানচিত্রটা হাতে নিন। এরপর দেখুন—কোথায় পারস্য, আর কোথায় মদীনা। কতোটা দূরত্ব—এই দুটি শহরের মধ্যে। আর সে সময়ে দ্রুতগামী যানবাহন ছিলো অপ্রতুল। গন্তব্য পথে ছিলো সীমাহীন প্রতিকূলতা।
আসলে সত্যিকার অর্থে যে সত্যকে খুঁজে বেড়ায়, শত প্রতিকূলতা তাঁকে দমাতে পারে না। কোনো ঝড়-ঝঞ্ঝা তাঁকে টলাতে পারে না। কোনো প্রতিবন্ধকতা তাঁর গতিকে রুদ্ধ করতে পারে না। সালমান ফারিসী ছিলেন—তাদেরই একজন। রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু।
রাসূলের ﷺ কাছে তিনি সব ঘটনা খুলে বললেন। রাসূল ﷺ তাঁর মনিবের সাথে সালমানের মুক্তির বিষয়ে কথা বললেন। বিশাল মুক্তিপণ দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনা হলো। এরপর থেকে মৃত্যু অবধি—তিনি সত্যের পথে ছিলেন।
এমনই রোমাঞ্চকর বিশুদ্ধ ইতিহাস নিয়ে সাজানো বই "সীরাতুন নবি"।
সত্যের বার্তাবাহক নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সত্যের পথে সাহাবাদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে জানতে পড়ুন "মাকতাবাতুল বায়ান" প্রকাশিত "সীরাতুন নবি।
20/09/2025
ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন,
মুমিনের উদাহরণ হলো আতর-বিক্রেতার মতো: তার সঙ্গে বসলে তুমি উপকৃত হবে, আর তার কারবারে অংশীদার হলেও তুমি উপকৃত হবে।
(তাবারানি, কাবীর ১২/৩১৯ (১৩৫৪১))
18/09/2025
জনসংখ্যা বিবেচনায় ভারতীয় উপমহাদেশ মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ইতিহাসে দেখা যায়, এই অঞ্চলে আরব ব্যবসায়ীদের আসা যাওয়া থাকলেও সিন্ধু বিজয়ের আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে গণমানুষের জীবনে আরবদের প্রভাব পড়েনি।
.
৭১২ সালে মুহাম্মাদ বিন কাসিমের হাত ধরে সিন্ধু বিজয় হলে আরবের সাথে এ অঞ্চলের ভালো একটি সংযোগ তৈরি হয়। দু:খের বিষয়- এটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তাই বেগবান হয়নি আরবি ভাষার চর্চাও।
.
১২০০ সালের পরে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজি তথা খোরাসানিদের হাত ধরে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক মঞ্চে ইসলামের আবির্ভাব হয়। তাদের মুখের ভাষা আরবি ছিল না। তাই গণ মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে আরবি চর্চা লক্ষ্য করা যায়নি।
.
এসকল কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে স্থানীয় ভাষায় কুরআন অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা তীব্র হয়ে ওঠে। গণ মানুষের ভাষায় কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসেন অষ্টাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহিমাহুল্লাহ। অনেক বিরোধিতা, তির্যক মন্তব্য ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি এই উপমহাদেশে প্রথম প্রকাশ করেন “ফাতহুর রহমান” নামে কুরআন মাজীদের অনুবাদ।
.
পরবর্তীতে সময়ের ব্যবধানে উপমহাদেশে ফারসি ভাষার প্রভাব কমে উর্দু ভাষার প্রচলন বাড়লে শাহ সাহেবের পুত্র শাহ আবদুল কাদির রহিমাহুল্লাহ প্রকাশ করেন কুরআনের উর্দু অনুবাদ “মূজিহে কুরআন”।
.
এর ১০০ বছর পর উর্দু ভাষার বাকরীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিলে উক্ত উর্দু অনুবাদকে হালনাগাদ করেন মহান আলিম- মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহিমাহুল্লাহ। পরবর্তীতে উপমহাদেশের প্রচলিত অনেক ভাষাতে কুরআনের অনুবাদ ও তাফসির রচিত হয়েছে। এসবের বেশিরভাগই শাহ সাহেবের অনুবাদ দ্বারা প্রভাবিত।
.
উপমহাদেশের আরেকটি বৃহৎ ভাষা বাংলা। এ ভাষাভাষীদের সংখ্যা মোট আনুমানিক 273,000,000 ( সাতাশ কোটি ত্রিশ লক্ষ)। বিশ্বের ৩০ হাজার ভাষার মধ্যে ব্যবহারের দিক দিয়ে বাংলা ভাষার অবস্থান ৬ষ্ঠ । এই বৃহৎ জন সাধারণের কুরআন বুঝতে এক মাত্র উপায় হলো বঙ্গানুবাদ। যেহেতু আরবি এই অঞ্চলের গনমানুষের ভাষা নয়। তাই অনুবাদও হতে হবে আরবির সৌন্দর্য ও ভাষাশৈলীর সমন্বয়ে। তবেই অনূদিত কুরআনে পাঠক পাবে আসমানি পয়গামের স্বাদ।
.
বাংলা ভাষাভাষী উচ্চশিক্ষিত, নিম্ন শিক্ষিত, কম শিক্ষিত সকলেরই একটা আক্ষেপ হলো অনুবাদ পড়তে গিয়ে প্রসঙ্গের ওঠা-নামা ধরতে কষ্ট হয়, ভাষার কাঠিন্যতা একে আরো জটিল করে তোলে। এজন্য মাকতাবাতুল বায়ান প্রকাশনী দীর্ঘ বছর যাবৎ স্বপ্ন দেখেছে সবার জন্য সহজ একটি অনূবাদ বিনির্মাণ করার। যেখানে পাঠক পাবে কুরআনের মূল মর্ম। বাংলা শব্দের গাঁথুনি হবে সুনিপুণ ও যথার্থ। আলহামদুলিল্লাহ, “কুরআন মাজীদ- মূলপাঠ, সরল অনুবাদ, পার্শ্বটীকা" এর নতুন সংস্করণ (লুসিড এডিশন ২.০) ইতোমধ্যেই পাঠকদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ছে। সুচারু রুপে অনুবাদের এই কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছেন নিভৃত জ্ঞান সাধক উস্তায জিয়াউর রহমান মুন্সি হাফিযাহুল্লাহ।
.
শব্দের পরে শব্দ গেঁথে কুরআনের বাংলা অনুবাদ কত সাবলীল হতে পারে মাকতাবাতুল বায়ান চেষ্টা করেছে, এই অনুভূতি পাঠকদেরকে দিতে। প্রত্যেক আয়াতের পাশে একটি করে টীকা যুক্ত করে কুরআনের মূল আলোচ্যবিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যা পাঠককে আয়াতের প্রসঙ্গ বুঝে অনুবাদ পড়তে সাহায্য করবে।
04/09/2025
আন্তর্জাতিক ইসলামি বইমেলায় নিজস্ব স্টলে থাকবে মাকতাবাতুল বায়ান। স্টল নম্বর ১২৭ । আপনারা সকলে আমন্ত্রিত। গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রাচীন বই এবারও আসছে, ইনশা আল্লাহ।
Be the first to know and let us send you an email when Maktabatul Bayan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.
হাজার বছর আগে রচিত ইমামদের মূল্যবান বইগুলো বাংলায় পড়ার সুযোগ! . শুরুটা হয়েছিল কাকতালীয়ভাবেই। কীভাবে যেন আমাদের হাতে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল রাহ.-এর “কিতাবুয যুহদ” বইটা চলে আসে। অনেকের সাথে পরামর্শ করেও বইটা অনুবাদের ব্যাপারে হ্যাঁ-বাচক কোনো মন্তব্য পাচ্ছিলাম না।
কেউ কেউ বলছিল, ‘এইসব বই মানুষ পড়বে? আপনারা অন্যকিছু দিয়ে শুরু করুন।’ অনেকটা নিজেদের জেদের ওপর অনড় থেকেই বইটা অনুবাদের কাজ শুরু হয়। তখন আমরা ছিলাম একেবারেই নতুন। কাগজ, বাঁধাই, বাজার—কোনো বিষয়েই ভালো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিছুটা শঙ্কা যে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল না, তা না।
কারণ, ইতঃপূর্বে কোনো ভাষাতেই বইটা অনূদিত হয়নি। প্রথম উদ্যোগ ছিল আমাদের পক্ষ থেকেই। তবুও আল্লাহর নাম নিয়ে যাত্রা শুরু। বিষয়বস্তুর দিকে লক্ষ রেখে এর নাম দেওয়া হলো “রাসূলের চোখে দুনিয়া”। আলহামদু লিল্লাহ, আমাদের ধারণারও ছিল না ১২০০ বছর আগে রচিত হাদীসভিত্তিক কিতাবও এতটা সাড়া জাগাতে পারে। আল্লাহর দয়ায় বইটা অনেকের মনেই ঠাঁই করে নেয়। অনলাইন অফলাইনে রিভিউ আসে চোখে পড়ার মতো। এমনকি অনেকের বাসার তালিমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায় “রাসূলের চোখে দুনিয়া”। বারো শ বছর আগে রচিত হলেও বইটার অনুবাদ ছিল বেশ প্রাঞ্জল।
প্রাজ্ঞ অনুবাদক শাইখ জিয়াউর রহমান মুন্সী হাফিযাহুল্লাহ-এর হাত ধরে বইটা পায় এক অনন্য মাত্রা। পাঠকের উচ্ছ্বসিত ভঙ্গী ছিল তাঁরই বহিঃপ্রকাশ। এরপর থেকেই আমাদের আগ্রহ ছিল ইমামদের বইয়ের প্রতি। যেসব বইগুলো আজ থেকে হাজার বছর আগে রচিত কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্যে প্রাসঙ্গিক, একে একে সেগুলো অনুবাদের তালিকায় যুক্ত হতে থাকে।
তারই ধারাবাহিকতায় ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-এর “আল কাসব”-এর একমাত্র অনুবাদ “জীবিকার খোঁজে”, ইমাম বায়হাকি রাহ.-এর “মৃত্যু থেকে কিয়ামাত”, ইমাম ইবনু আবিদ দুনইয়া রাহ.-এর “আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল”-সহ আরও কিছু বই প্রকাশিত হয়। এর বাইরে শাইখ ইবরাহীম আলি রাহ.-এর হাদীসভিত্তিক বিশুদ্ধ সীরাতগ্রন্থ “সীরাতুন নবি”, শাইখ আলি কাহতানি রাহ.-এর সাড়াজাগানো দুআ ও যিকরের বইয়ের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ “বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া” প্রকাশিত হয়।
ইমামদের কাছে বই পড়ার গুরুত্ব কেমন ছিল, তা তাদের জীবনী পড়লেই বোঝা যায়। কোনো কোনো ইমাম তো জীবনের বেশিরভাগ সময়টা অধ্যয়ন করেই পার করেছেন। হাজার হাজার পৃষ্ঠা পড়েছেন নিজ ঘরে বসে। যে আমলে ছাপানো কিতাব ছিল দুষ্প্রাপ্য, সে-সময়েও তারা সংগ্রহ করেছেন শত শত কিতাব। আসলে জ্ঞানকে তাঁরা সাধনা হিসেবে নিয়েছিলেন।
যার ফলে তাঁদের লেখনীতে ইলমি গভীরতার ছাপ পাওয়া যায়। তাঁদের লিখিত বইপত্রগুলো অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয় পাঠকদের হৃদয়ে। আরবি না জানা থাকার কারণে বাংলাভাষী অনেক পাঠকই মহান ইমামদের লেখনী থেকে উপকৃত হতে পারেন না বলে আফসোস করেন। মনে মনে দুঃখ করেন। আপনাদের সে মনবেদনাকে কিছুটা উপশম করার জন্যেই ‘মাকতাবাতুল বায়ান’ যাত্রা শুরু করে।
বায়ানের উদ্দেশ্য—ইমামদের কিতাবাদি বাংলায় অনুবাদ করে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া। সে লক্ষ্যেই ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক রাহ.-এর “কিতাবুয যুহদ”, ইমাম ইবনু আবদিল বার্ রাহ.-এর “ইসলাম ও জ্ঞান”, ইমাম ইবনু কায়্যিম জাওজিয়্যাহ্ রাহ.-এর “মাদারিজুস সালিকীন”-সহ আরও কিছু বইয়ের অনুবাদ শীঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ইন শা আল্লাহ। ইমামদের রেখে-যাওয়া মূল্যবান বইগুলো নিজেরাও পড়ুন, পাশাপাশি দাওয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন মুসলিম-সমাজে।