15/07/2022
বিচ্ছেদের অনেক বছর পর, জ্যোৎস্না রাত, হঠাৎ ঘর থেকে বের হয়ে সিরির কাছে দাড়ালাম। সিরি থেকে নেমে ১ পা ২ পা করে হেটে এগুতেই দেখলাম চারোপাশ নিরব নিস্তব্ধ. সারা গ্রাম তখন নিশীঘুমে বিভর। ঘরের সামনেই একটা খোলা উঠান যার একটু সামনেই গাছ গাছালিতে পূর্ণ বাগান। বাতাস বইছে ঘরের পিছনের গাছগুলো দুলছে। সিঁড়ি থেকে সামনে এসে তাকাতেই দেখি বিশাল একটি গোলাকার চাঁদ,আহ দেখামাত্রই কি শান্তি মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল, মাঝে মাঝে এক খন্ড মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দেয় তখন অন্ধকার নেমে আসে। চাঁদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলা কতইনা সুন্দর লাগছিল দেখতে। এরমধ্যে আরেকটু সামনে এগোতে বাড়ির কোনার বরই গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আমিও উঁকিঝুঁকি করে চাঁদ দেখতে লাগলাম। একা একা উঠানে হাঁটছি চারপাশ নিস্তব্ধ নির্জন কোন মানুষ নেই। কত সুন্দর অনুভূতি। বাতাস বইছে সেই বাতাসে আমার গা দুলছে কত না শান্তি কত ভালোলাগা। নিজেই একটু একটু মিষ্টি হাসি হাসছি নিজের সাথে। সেই পুরনো নিজেকে মনে হয় খুঁজে পেলাম। মুহূর্তেই এই বুকের মধ্যে কেঁপে উঠল হঠাৎই মনে পড়লো পূর্বের এরকম একটি দিনের কথা।
যে রাতে ফোনের অপর প্রান্তে ছিল সেই মানুষটি, যার চোখে ছিল এক সাগর মায়া।চশমার মধ্যে তার চাহনি আমাকে দুর্বল করে ফেলে এক নিমিষেই, যার ঠোঁটের আলতো হাসিতে নির্বাক করে দিতো আমায়।
সেদিন দুই প্রান্তে দুইজন চাঁদ দেখছিলাম আর কথায় মেতে উঠলাম। হঠাৎ বললাম-এই ভালোবাসো আমায়!!অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে উঠলো হ্যা ভালোবাসি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।
আমি বললাম ছেড়ে যাবা না তো ?সে বলল না কখনোই তোমায় হারাতে দেবো না, এই বুকের মধ্যে তোমায় সারাটি জীবন আগলে রাখব।
আমিঃ এই চাঁদ দেখতে পাচ্ছ?
সেঃ হ্যাঁ অপরূপ সুন্দর ঠিক তোমার মত।
আমিঃ হা হা, ইস একদমই না পাগল।
সেঃমন প্রাণ দিয়ে সে হাসছে, মনে হয় কোনো এক অলৌকিক শক্তি দিয়ে সে আমায় চাঁদের ন্যায় রূপান্তর করেছে।
আমিঃসুন্দর না তাই এভাবে ভেংচি দিচ্ছ?ফোনের মধ্যেই অভিমানের ভংগীতে একটু মুখ ঝামটি দিলাম।
সেঃআরে হা সুন্দর বলেই তো তোমার রুপের এত অহংকার। আর সেই অহংকারের আগুনে আমি প্রতিনিয়ত জ্বলছি, এটা বলেই সে হেসে উঠলো।
আমিঃ ওর হাসির সাথে হাসতে শুরু করলাম আর বললাম এই শুনো শুনো বলেই
দুজনেই আবার হাসতে শুরু করলাম।
সেঃ বলো বলো..
আমিঃহাসতে হাসতে মজার ছলে বলে উঠলাম তোমার যদি কখনো আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে আর দেখতে পারছোনা এমন হয় তখন চাঁদের দিকে তাকাবে আমায় দেখতে পাবে, আর আকাশের দিকে তাকালে আমার কথা তোমার মনে পরবে।
সেঃ হেসে উঠে বললো তাই করবো আজ থেকে পাগলি আমার..
হাসির শব্দ সহ পুরো লাইন টা আমার কানে ভাসতেছে এখনো.........
হঠাৎ বাতাসে আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো, আমার ওড়না টেনে নিচ্ছিলো, এক হাত দিয়ে ওড়না টেনে ধরলাম আরেক হাত দিয়ে জামার নিচের অংশটা ঠিক করতে করতে মাটিতে তাকিয়ে দেখি চাঁদের আলোতে মাটি আর বালিগুলো জ্বল জ্বল করছে... মুহূর্তেই ফিরে এলাম অতিত থেকে বাস্তবে.
ভাবছি তার কি আজও আকাশের দিকে তাকালে আমায় মনে পড়ে?? চাঁদের দিকে তাকিয়ে তকিয়ে কি আমায় দেখে??
ভাবতে ভাবতেই বুকের ব্যাথা জেগে উঠলো, নিঃশ্বাস আটকে আসছে... জ্বলে যাচ্ছে ভিতরটা, এই ব্যথার কোন ওষুধ নাই। এই ব্যাথা না সারানো যায় না কমানো যায়।
জোরে জোরে ঝড়ের মত বাতাস বইতে শুরু করল। উঠানের পাশের নারিকেল গাছ গুলো বাতাসের সাথে দুলছে। আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি এক টুকরো মেঘ এসে চাঁদকে ঢেকে দিয়ে আমার না পাওয়ার কথা জানান দিচ্ছে।