
18/07/2025
🔥 ডোর টু হেল (Door to Hell): জাহান্নামের দরজা—তুর্কমেনিস্তানের জ্বলন্ত রহস্য
ভূমিকা:
পৃথিবীর বুকে এমন এক স্থান আছে যেখানে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আগুন জ্বলছে—অথচ কোনো মানুষ একে নেভাতে পারছে না। মধ্য এশিয়ার ছোট্ট দেশ তুর্কমেনিস্তান-এ অবস্থিত এই বিস্ময়কর স্থানের নাম "ডোর টু হেল" বা বাংলায় "জাহান্নামের দরজা"।
📍 কোথায় অবস্থিত?
ডোর টু হেল অবস্থিত দারভাজা (Darvaza) নামক এলাকার গারাগুম (Karakum) মরুভূমিতে, তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাত থেকে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার উত্তর দিকে।
🕳️ কীভাবে সৃষ্টি হলো এই গর্ত?
১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের একদল ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানী তুর্কমেনিস্তানের মরুভূমিতে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধানে খনন কাজ শুরু করেন। তারা একটি জায়গায় শক্তিশালী গ্যাস রিজার্ভ পেয়ে যান। কিন্তু সেই জায়গায় ড্রিল করার সময় ভূমি ধসে পড়ে এবং তৈরি হয় একটি বিপজ্জনক বিশাল গর্ত (ক্রেটার), যার ভেতর থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকে।
ভয় ছিল—এই গ্যাস যদি বাতাসে মিশে যায়, তাহলে তা আশপাশের জনপদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, এমনকি বিষাক্তও। তখনকার বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নেন, গ্যাসে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে ফেলা হবে, যাতে নির্গত গ্যাস দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—এই আগুন আজও জ্বলছে, অর্ধ শতাব্দী ধরে!
🔥 কেন একে "Door to Hell" বলা হয়?
>> রাতের বেলায় এই গর্তের চারপাশ লাল, কমলা, হলুদ আগুনে জ্বলতে থাকে, দেখে মনে হয় যেন মাটির গভীরে কেউ জাহান্নামের দরজা খুলে দিয়েছে।
>> এটি দেখতে এতটাই ভয়ংকর এবং অস্বাভাবিক, যে স্থানীয় বাসিন্দারা একে প্রথম থেকেই "জাহান্নামের দরজা" নামে ডাকতে শুরু করে।
>> বিশ্বব্যাপী পর্যটকরাও এই স্থানকে “Door to Hell” নামেই চেনেন।
🧪 গর্তটির আয়তন ও বৈশিষ্ট্য:
🔸 ব্যাস (Diameter): প্রায় ৭০ মিটার
🔸 গভীরতা (Depth): প্রায় ৩০ মিটার
🔸 প্রতিনিয়ত মিথেন গ্যাস ও অন্যান্য হাইড্রোকার্বন নির্গত হয়
🔥 আগুন জ্বলছে টানা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে
🌍 ভ্রমণ ও পর্যটন
আজ এটি তুর্কমেনিস্তানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক মরুভূমি পেরিয়ে এই জ্বলন্ত গর্ত দেখতে আসেন। বিশেষ করে রাতের সময় এটি এক ভৌতিক, অথচ অভাবনীয় দৃশ্য হয়ে ওঠে।
তুর্কমেন সরকার ২০১০ সালে এটিকে পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে ঘোষণা করে।
🛑 বন্ধ করার উদ্যোগ?
২০২২ সালে তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবানগুলি বারদিমুহামেদোভ ঘোষণা দেন, এই গর্ত বন্ধ করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে, কারণ এটি:
* পরিবেশে মিথেন গ্যাস ছড়াচ্ছে
* দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে
* আশেপাশের বাসিন্দারাও ঝুঁকিতে থাকছে
তবে এখনো পর্যন্ত এটি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
📸 Door to Hell নিয়ে মজার তথ্য
>> কিছু ইউটিউবার ও অ্যাডভেঞ্চারার গর্তের মুখে ক্যাম্প করে রাত কাটিয়েছেন!
>> ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সহ অনেক বিখ্যাত চ্যানেল এটি নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে।
>> এটি একটি মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা, যা এখন এক প্রাকৃতিক বিস্ময়।
✅ উপসংহার
Door to Hell আমাদের দেখায়—মানুষ কখনও কখনও প্রকৃতির শক্তির সামনে কতটা অসহায়। একটি ভুল হিসাব কিভাবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম পর্যন্ত স্থায়ী একটা অগ্নিগহ্বর তৈরি করতে পারে।
তবে এটি একইসঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের, পরিবেশবিজ্ঞানের এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক অসাধারণ উদাহরণ।
Image Credit: wikipedia