26/08/2025
সংস্কৃতিক পার্থক্য যখন বন্ধনকে ছিন্ন করে :
১৯৮৬ সালে, কেনিয়ার বিশাল সাভানা অভয়ারণ্যের গভীরে, সুইস নারী কোরিন হফম্যান নিজের জীবনধারা পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তার নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ইউরোপীয় জীবন পেছনে ফেলে, তিনি সাম্বুরু যোদ্ধা লকেটিংগার প্রেমে পড়ে হৃদয়ের ডাকে সাড়া দেন। উজ্জ্বল লাল মাসাই পোশাক পরিহিত অবস্থায়, প্রত্যন্ত উপজাতীয় অঞ্চলে তার আকস্মিক আগমন স্থানীয়দের বিস্মিত করে আর কোরিনের অসাধারণ যাত্রার সূচনা হয়।
সাম্বুরু গ্রামের জীবন ছিল ভীষণ রকমের কঠিন। গরু তাদের কাছে শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, বরং সম্মান ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। গরুর দুধ, রক্ত ও মাংস তাদের অন্যতম খাদ্য।
ওদের বসতিগুলো কাঁটাযুক্ত বেড়া দিয়ে ঘেরা থাকে, যাতে বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ঘরগুলো তৈরি হয় কাদামাটি, গোবর ও খড় দিয়ে। কোরিনকে কঠোর অদ্ভুতুড়ে ঐতিহ্য, কঠিন জীবনযাত্রা এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছিল। তিনি না ফোটানো তাজা দুধ ও গরুর রক্তে পান করে জীবনধারণ করেছেন, স্থানীয় অতি বিচিত্র অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং একাকীত্বের কষ্ট সহ্য করেছেন, দাম্পত্য জীবনে নানান ভুল বোঝাবুঝির মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সালে তার কন্যা নাপিরাইয়ের জন্ম দেন যা মাসাইদের সাথে আজীবন স্থায়ী বন্ধন ও স্মৃতি সৃষ্টি করে।
চার বছর সহনশীলতা ও গভীর চিন্তাভাবনার পর, কোরিন উপলব্ধি করেছিলেন যে তার ইউরোপীয় চিন্তা চেতনা এবং জীবন যাত্রার সঙ্গে তার স্বামীর সাম্বুরু জীবনধারা মেলানো অসম্ভব। ১৯৯০ সালে, তিনি কন্যা নাপিরাইকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে ফিরে আসেন, সাথে নিয়ে আসেন ভালোবাসা, কষ্ট ও নতুন সংস্কৃতি আবিষ্কারের অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তার এই গল্প পরবর্তীতে বেস্ট সেলার আত্মজীবনী 'দ্য হোয়াইট মাসাই' (১৯৯৮) বইয়ে অমর হয়ে থাকে যেটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেয়া হয়।
-NAT GEO.