02/06/2017
#গল্প
নিহিন যে আমার এখানে আসছে এটা জানলাম বাড়িওয়ালার কাছ থেকে।
অফিস থেকে বাসায় ফিরে সিড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠার সময় বাড়িওয়ালার সাথে দেখা। তখনি উনি বললেন,
-বাবা,বৌমা সেই কখন আসছে!
আমি বাড়িওয়ালার কথা শুনে একটু অবাকই হলাম, নিহিনের আমার কাছে আসার কোন কথাই ছিল না, আর আসবেই যখন একটা ফোন করে আসতে পারত তাহলে আমি একটু আগেই অফিস থেকে বের হতাম।কোন কাজ ছিলনা এমনিতেই বসে ছিলাম।
প্রতিদিন গেট চাবি দিয়ে খুলতে হয়,আজ তেমন হল না কারণ ঘরের ভেতর নিহিন আছে। বাসার একটা এক্সট্রা চাবি ওর কাছে সব সময় থাকে কারণ বাড়িটা যতটা আমার ততটা ওর ও।ও প্রায় প্রায় বাসায় আসত বাট সেটা ফোন করে আসত এভাবে হুট হাট করে নয়।কোন সমস্যা হয়েছে কিনা বোঝা যাচ্ছেনা।
ওর সাথে কথা বলার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
গেটের বাহির থেকে দুবার নিহিনের নাম ধরে ডাক দিতেই গেট খুলে গেল।নিহিন গেট খুলে দরজার এক পাশে দাড়াঁল,আমি প্রথমে ওর দিকে তাকালাম।কোমড়ে শাড়ি গুজানো মনে হয় ঘর পরিষ্কার করছিলো। আমি ঘরে ঢুকে চার পাশে একবার চোখ বুলালাম ঘর পুরো পরিষ্কার দেখেই ভাল লাগছে।মনেই হচ্ছেনা এটা আমার বাসা। ঘরের প্রতি অনেক শ্রম দিয়েছে নিহিন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সোফার পাশে নিহিনের ব্রিফকেস ও চোখে পরল ।ও কি পার্মানেন্টলি চলে আসল নাকি আমার কাছে?
আসলেও মন্দ হবেনা।
সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসতেই নিহিন বলল,
-রোজার মাসে তো অফিস দ্রুত ছূটি হয় তোমার এত দেরী কেন?
-একটু কাজ ছিল,
-ইফতার করছ?
-হ্যাঁ,তুমি?
নিহিন আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়েই বলল,
-আমি অনেক ক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি,
-সরি,একটা ফোন করলেই পারতা,
-না,ভাবলাম জরুরী কাজে আছো হয়ত।
-উম,,হঠাৎ?
-কেন? আসা যাবেনা?
-না তা বলিনি,রোজার মাস,খাওয়া দাওয়ার প্রবলেম,
-রোজা রাখো?
-হ্যাঁ,
-সেহরীতে কি খাও?
আমি জবাব দিলাম না,সেহরীতে রুটি কলা খাই।গত দিন এটাই খাইছি।তাই এটা বলার মত কিছু না।অবশ্য বললে লাভ ও হইতে পারে,আমার কষ্ট দেখে নিহিনের মায়া জন্মাতে পারে আর ও এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
-কি হল বলো?
-বাদ দাও এটা, খাওয়া দাওয়া করছ রাতে?
-নাহ,তোমার জন্য ছিলাম,
-চল,বাহিরে গিয়ে কিছু খেয়ে আসি,
-লাগবেনা,বাসা থেকে খাবার আনছি।
-আম্মা পাঠাইছে?
-আম্মা পাঠাবে কেন? আমি আনছি,
-আচ্ছা,ধন্যবাদ।
নিহিনের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে আটমাস এর মত, এই আট মাসে ও আমার সাথে থেকেছে হাতে গুনা কয়েক দিন।ওর ভার্সিটি আমার এখান থেকে একটু দূরে হয়।তাই ও ওর মায়ের বাসাতেই থাকে।অবশ্য এবছর ওর ফাইনাল ইয়ার চলছে তারপর আমার এখানেই আসবে।
নিহিন খাবার এনেছে প্রচুর।মনে হয় সেহরীর সহ। খাওয়ার সময় নিহিন বলতে লাগল ও নিজে রান্না করে এনেছে আমার জন্য। কোন কোন আইটেম আমার ভাল লাগবে সেটা বেশি করে খাওয়াতে লাগল পুরো বউ বউ ভাব চলে এসেছে নিহিনের মধ্য।
খাওয়া শেষে নিহিন কে আরো একটা ধন্যবাদ দিলাম। বহুদিন পর ভাল কিছু খাওয়া হল। শ্বশুর বাড়িও যাইনা প্রায় মাস খানেক। ইচ্ছা ছিল ঈদের পর যাব।যেহেতু নিহিন এসেই গেছে সেহেতু আর গিয়ে কি লাভ?
নিহিনের রান্নার হাত ভালই,তাই শ্বশুর বাড়ি না গেলেও চলবে।
খাওয়া দাওয়া শেষে নিহিন বলে উঠল,
-ভাবছি,রোজায় তোমার এখানেই থাকব,
-তোমার পড়াশুনা,,
-সারাজীবন তো পড়লাম।
-হুম,
-তোমার খাওয়া দাওয়ার হয়ত খুব কষ্ট হয়,
-তা একটু,
-বাড়িওয়ালারা রোজা রাখেনা?
-না,রাখতে পারেনা,
-ওহ,তুমি কি বিরক্ত হচ্ছ আমি এসেছি তাই,
-আজব কি বলো,বিরক্ত হব কেন? আমি তো সব সময় চাইতাম তুমি এখানে আসো।
-কখনো বলোনি তো?
-এইতো আজ বললাম,
নিহিন আমার কথা শুনে অদ্ভুত ভাবে তাকাল। হয়ত ও আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছেনা। আসলে এ বিষয় টা নিয়ে আমাদের দুজনের কখনো কথা হয়না। নিহিন কে আমি যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছি। আমি চাইনা কখনো আমার প্রতি ও বিরক্ত হোক।আর কোন এক কারণে আমরা হয়ত উদাসীন,এ ব্যাপার টা চোখে পরার মত। তবুও আমি নিহিনের বিষয় সব সময় গুরুত্ত্ব দিয়ে দেখি।
নিহিন আবার বলল,
-দেখো,সত্যি করে বলো,ব্যাপার কি?
-কিসের ব্যাপার?
-ইদানিং তুমি অনেক চেঞ্জ?
-যেমন?
-আগে রোজ রোজ ফোন করতা, এখন দুই দিনে এক আতবার,
-আরে তেমন কিছুনা,ব্যাস্ত,,
আমার কথা শুনে আবার নিহিন কেমন করে যেন তাকাল।চেঞ্জের ব্যাপারে আমি এক মত না।আমি ওকে প্রতিদিনই একবার করে ফোন দেই তবুও নিহিন কেন এই অভিযোগ আনলো কিছুতেই বুঝলাম না।নিহিন কি বলতে চায় সেটাও বুঝতে পারছিনা।ফোনেও যে ও খুব কথা বলত তা না।খোঁজ খবর নেওয়ার মত কথা হত আরকি এর বেশি না।
কিছুক্ষন বাদে নিহিন আবার বলল,
-কারো কি প্রেমে পরছ তুমি?
নিহিনের কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম। নিহিনের হঠাৎ কি হল বোঝা যাচ্ছেন।এমন প্রশ্ন করার মানে কি?
আমি হাসি থামিয়ে উত্তর দিলাম,
-রোজার মাস, কি বলো এসব?
-সত্যি বলতেছি !
-আচ্ছা, এখন থেকে রোজ ফোন দিব,
-না লাগবেনা।আমি এখন থেকে এখানেই থাকব,,
-তোমার পড়ালেখা?
-এখান থেকেই পড়ব,আর পরীক্ষা দিব।
-আচ্ছা,যেমন তুমি চাও।
-তুমি চাইলে চলে যাব?
-আজব আমি কেন চাইব? আমি চাই তুমি থাকো,
-সত্যি তো?
-হ্যাঁ,সত্যি তো,
আমি একটু অবাক হলেও মনে মনে ঠিকই খুশি হলাম ।তবে বুঝলাম না নিহিনের এত সন্দেহ কোথায় থেকে এল?
তবে যা হয়েছে ভালই তো,খারাপ কোথায়? সবাই তো চায় নিজের গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হোক সেটা যেভাবেই হোক না কেন?
আমি ও চাই।
সেটা যখন এত সহজেই হচ্ছে তবে তা মেনে নেওয়াই উত্তম।
-নাহিদ পারভেজ নয়ন