07/04/2023
ইতিকাফ নষ্ট হয় কি কারণে এবং করণীয় কী
কি কি কারণে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়?
নিম্নের কারণ সমূহে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়।
১. শরীয়তের অনুমোদিত ওজরে শরয়ী ও ওজরে তবয়ী ব্যতীত ই’তিকাফকারী ইতিকাফের স্থান হতে বের হলে।
২. স্বামী স্ত্রী পরস্পর যৌন সংগমে লিপ্ত হলে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন- ولاتباشرواهن وانتم عاكفون في المساجد
[তোমরা মসজিদে ইতিকাফকারী অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলন করিও না। (সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৮৭)]
৩. স্বামী-স্ত্রী পরস্পর চুম্বন করলে বা কামভাব নিয়ে স্পর্শ করলে ইতিকাফ নষ্ট হয়।
৪. জানাযার নামাজ পড়তে বের হলে।
৫. রোগী দেখতে বের হলে। যেমন হাদীস শরীফে আছে-
عن عا ئشة قالت السنة علي المعتكف ان لا يعودمريضا ولايشهد جنازة ولايمس المرأة ولايباشرها و لايخرج لحاجة الا لمابدمنه – ولاا عتكاف الا بصوم ولاا عتكاف الافي مسجد جامع
[আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন- ইতিকাফকারীর জন্য বিধান হলো- তিনি কোন রোগীকে দেখতে যাবেনা, জানাযার নামাজে উপস্থিত হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না এবং তার সাথে মেলামেশাও করবে না। আর একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত বের হবে না। আর রোজা ব্যতীত ইতিকাফ হয় না এবং যে মসজিদে জমাআত হয় ঐ মসজিদ ব্যতীত ইতিকাফ হয় না। (আবু দাউদ, মেশকাত পৃষ্ঠা নং-১৮৩)]
৬. পাগল হয়ে গেলে বা বেহুশ থাকাবস্থায় রোজা রাখা অসম্ভব হলে।
৭. খাবার মসজিদে নেয়া সত্বেও মসজিদের বাহিরে এসে খেলে।
৮. ওজু ও গোসলের জন্য মসজিদের ভিতর ব্যবস্থা থাকা সত্বেও বাহিরে গিয়ে অজু গোসল করলে।
ইতিকাফ ভঙ্গ হলে কি করবে?
ইতিকাফ ইচ্ছায় ভঙ্গ হউক বা ওজরে ভঙ্গ হউক যেমন অসুস্থ হলে অথবা অনিচ্ছায় যেমন মহিলার হায়েজ বা নেফাস আসে অথবা পাগলামী ও অচেতনতা দীর্ঘ সময় ধরে হয় সর্বাবস্থায় ই’তিকাফ কাজা করা ওয়াজিব। এর মধ্যে যদি কয়েকটি ভঙ্গ হয়। যেমন, ১০ দিনের মধ্যে ৩ দিন, তাহলে ১০ দিনের কাজা করতে হবে না। বরং যে কয়দিন ছুটে গেছে ঐ দিনগুলোর কাজা করলেই যথেষ্ট। আর সকল ইতিকাফ ছুটে গেলে সকল ই’তিকাফ কাজা করতে হবে। আর মান্নত ইতিকাফ ধারাবাহিক ওয়াজিব হয়ে থাকলে কাজাও ধারাবাহিক করতে হবে।
কোন কোন অবস্থায় ইতিকাফ ভঙ্গ করে কাযা করা যায়, কিন্তু গুনাহ হবে না?
নিম্নের অবস্থায় ইতিকাফ ভঙ্গ করে পরে কাযা করা যায়, কিন্তু গুনাহ হবে না।
১. ইতিকাফ পালনকালে এমন কোন রোগ সৃষ্টি হয়ে গেলো, যার চিকিৎসা মসজিদের বাইরে যাওয়া ব্যতীত হতে পারেনা, তখন ইতিকাফ ভঙ্গ করা জায়েয। (দুররে মুখতার : ৩য় খণ্ড : ৪৩৮ পৃষ্ঠা)
২. কোন মানুষ পানিতে ডুবে যাচ্ছে কিংবা আগুনে জ্বলছে, তখন ই’তিকাফ ভেঙ্গে ডুবন্ত কে উদ্ধার করবেন আর জ্বলন্ত লোকটির আগুন নির্বাপিত করবেন। (দুররে মুখতার : ৩য় খণ্ড : ৪৩৮ পৃষ্ঠা)
৩. জিহাদের জন্য সাধারণভাবে ঘোষণা দেয়া হলে (অর্থাৎ জিহাদ ফরযে ‘আইন হয়ে গেলে) ই’তিকাফ ভেঙ্গে জিহাদে শরীক হয়ে যাবেন। (দুররে মুখতার : ৩য় খণ্ড : ৪৩৮ পৃষ্ঠা)
৪. যদি জানাযা এসে যায়, অন্য কেউ নামায আদায়কারীও নেই, তাহলে ই’তিকাফ ভেঙ্গে (মসজিদের সীমানার বাইরে গিয়েও) জানাযার নামায পড়তে পারে। (দুররে মুখতার : ৩য় খণ্ড : ৪৩৮ পৃষ্ঠা)
৫. কেউ জোর করে মসজিদের বাইরে নিয়ে গেলে, যেমন সরকারের পক্ষ থেকে গ্রেফতারীর ওয়ারেন্ট এসে যায়, তাহলেও ই’তিকাফ ভঙ্গ করা জায়েয, যদি তাৎক্ষণিকভাবে অন্য মসজিদে চলে যাওয়া সম্ভব না হয়। (দুররে মুখতার : ৩য় খণ্ড : ৪৩৮ পৃষ্ঠা)
৬. যদি নিজের প্রিয়জন, মুহরিম কিংবা স্ত্রীর মৃত্যু হয়ে যায়, তবে নামাযে জানাযার জন্য ইতিকাফ ভঙ্গ করতে পারে। (কিন্তু ক্বাযা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।) [হাশিয়া-ই-তাহতাভী আলা মারাক্বীয়িল ফালাহ্: ৫৭৯ পৃষ্ঠা]
৭. আপনি যদি কোন মামলার সাক্ষী হন, আর আপনার সাক্ষ্যের উপরই ফয়সালা মওকূফ থাকে, তখন ই’তিকাফ ভেঙ্গে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যাওয়া বৈধ। প্রাপকের প্রাপ্য বিনষ্ট হওয়া থেকে বাঁচান। (রদ্দুল মুখতার: ৩ খণ্ড : ৪৩৯ পৃষ্ঠা)
কি কি কাজের কারণে ইতিকাফকারীর গুনাহ হতে পারে?
নিম্নের কাজের কারণে ইতিকাফকারীর গুনাহ সংঘটিত হতে পারে।
কুদৃষ্টি, কুধারণা ও শরীয়তের অনুমতি ব্যতীত কারো মানহানি করা, মিথ্যা, গীবত-চুগলখোরী, হিংসা-বিদ্বেষ, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া, মিথ্যা দোষ রচনা করা, কাউকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা, কারো মনে কষ্ট দেয়া, অশ্লীল কথাবার্তা বলা, গান-বাদ্য শোনা, গালিগালাজ করা, অন্যায়ভাবে ঝগড়া-বিবাদ করা, দাড়ি মুণ্ডানো, এক মুষ্টি অপেক্ষা কম করে ফেলা- এসবই গুনাহ। মসজিদে! তাও আবার ইতিকাফ অবস্থায়!! বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আরো বেশী জঘন্য গুনাহ। এসব গুনাহ থেকে তাওবা, সত্যিকারভাবে তাওবা, সব সময়ের জন্য তাওবা করা চাই।
যদি কেউ ইতিকাফ অবস্থায় (আল্লাহরই পানাহ্!) কোন নেশার বস্তু রাতে সেবন করে থাকে, তবে এ কারণে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হবেনা। নেশা করা হারাম। আর ইতিকাফরত অবস্থায় আরো বেশী গুনাহ। তাওবা করে নেয়া চাই।