23/03/2025
আপনার শিশুর ১০ বছর হওয়ার আগেই শেখান গুরুত্বপূর্ণ জীবনদক্ষতা
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে দিচ্ছে, শিশুরাও ছোট বয়সেই নানা গ্যাজেট চালাতে শিখে যাচ্ছে। তবে এসব কিছুই হচ্ছে মা–বাবার ছায়াতলে থেকে। কিন্তু যদি কোনো কারণে সে একা পড়ে যায় বা হঠাৎ নিজেই কোনো পরিস্থিতি সামলাতে বাধ্য হয়, তখন কী করবে?
তাই শিশুর ১০ বছর হওয়ার আগেই তাকে কিছু মৌলিক জীবনদক্ষতা শেখানো জরুরি। এগুলো তার জীবনকে যেমন সহজ করবে, তেমনি আপনাকেও করবে নিশ্চিন্ত। এই শিক্ষা সাধারণত কোনো স্কুলে দেওয়া হয় না, তাই মা-বাবাকেই হতে হবে সন্তানের প্রথম শিক্ষক।
১. আত্মরক্ষার প্রথম পাঠ
শিশুকে আত্মরক্ষা শেখানোর আগে তার আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন। জানিয়ে দিন—কোনো পরিস্থিতিতেই মনোবল হারানো যাবে না। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা ও দৌড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আত্মরক্ষার সহজ কৌশল:
আক্রমণকারীর হাঁটুতে আঘাত করে দ্রুত পালানো।
ঘাড়, চোখ, কান ও নাকে আঘাত করলে হামলাকারী বিভ্রান্ত হয়, এতে শিশুর পালানোর সুযোগ বাড়ে।
২. মানচিত্র ও দিক চেনা
ছোটবেলা থেকেই শিশুকে মানচিত্র ও দিক চেনার অভ্যাস করান।
ঘরে একটি বিশ্ব মানচিত্র বা গ্লোব রাখুন।
তাকে বাড়ির আশপাশের এলাকা চিনিয়ে দিন।
দিক চেনার সহজ নিয়ম শেখান (উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম)।
এতে যদি কখনো পথ হারিয়ে ফেলে, সে সহজেই দিক বুঝে ফিরে আসতে পারবে।
৩. বাড়ির ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর মুখস্থ করানো
যখনই শিশু কথা বলতে শেখে, তখনই তাকে নিজের নাম, মা-বাবার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর মুখস্থ করান।
যদি কখনো হারিয়ে যায় বা বিপদে পড়ে, তাহলে যেন কাউকে এসব তথ্য জানিয়ে সাহায্য নিতে পারে।
৪. বিপদের বন্ধু চেনানো
শিশুকে শেখান—বিপদে কাদের সাহায্য নেওয়া যায়।
পুলিশ, র্যাব বা সেনাবাহিনীর পোশাক চিনিয়ে দিন।
শেখান, যদি কখনো আপনাকে ভিড়ে হারিয়ে ফেলে, তাহলে যেন পুলিশের সাহায্য নেয়।
৫. ‘না’ বলতে শেখানো
শিশুকে শেখান, নিজের মতামতের মূল্য দিতে এবং অপ্রয়োজনে বা চাপের মুখে ‘না’ বলতে।
এতে সে ভবিষ্যতে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হবে না।
৬. প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান
খেলতে গিয়ে হাত কেটে গেলে বা কেউ আহত হলে শিশুকে যেন আতঙ্কিত না হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে শেখান।
ক্ষতস্থান অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করা।
ব্যান্ডেজ বাঁধা।
হাত কেটে গেলে উঁচু করে ধরার নিয়ম শেখানো।
এছাড়া শেখান—কখন বড়দের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
৭. অর্থের মূল্য বোঝানো
শিশুকে ছোট থেকেই টাকা বাঁচানো ও খরচের সঠিক পদ্ধতি শেখান।
হাতখরচ বা সালামির টাকা অযথা নষ্ট না করে সঞ্চয় করা।
টাকার সঠিক ব্যবহার শেখানোর জন্য তাকে নিজের শখের কোনো জিনিস কিনতে উৎসাহিত করুন।
৮. রান্নাঘরের ছোটখাটো কাজ শেখানো
শিশুকে ছোট থেকেই রান্নাঘরের কিছু কাজ শেখান, যাতে প্রয়োজনে নিজে খাবার তৈরি করতে পারে।
প্লাস্টিকের ছুরি দিয়ে ছোটখাটো কাটাকাটি।
স্যান্ডউইচ বানানো।
ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে মাইক্রোওয়েভে গরম করা।
এছাড়া ঘরের ছোট কাজের দায়িত্ব দিন—
পেঁয়াজ-রসুনের খোসা ছাড়ানো।
ফ্রিজ থেকে সবজি বের করা।
খাবার টেবিলে গ্লাসে পানি ঢালা।
শেষ কথা
এই ছোট ছোট দক্ষতাগুলো শেখালে শিশু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, জীবনের কঠিন সময়গুলো সহজে মোকাবিলা করতে শিখবে। যদি কখনো সে বাড়ি থেকে দূরে থাকে, নতুন পরিবেশেও সহজে মানিয়ে নিতে পারবে।
মা-বাবার দায়িত্ব শুধু শিশুর জন্য পথ তৈরি করা নয়, শিশুকে তার নিজের পথ তৈরি করার দক্ষতা শেখানোই সবচেয়ে বড় শিক্ষা।