24/09/2025
ডঃ ইউনুসকে দেশদ্রোহী, ভন্ড, প্রতারক, প্যাথলজিকাল লায়ার, কুটকৌশলী, নিমকহারাম ইত্যাকার সকল বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়। তবে তার ব্যক্তিত্বকে যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য বলতে হয়, সে একজন প্রচন্ড লেভেলের স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। নিজের স্বার্থের জন্য সে করতে পারে না এমন কোন কাজ নেই। নিজে বাঁচতে সে তার কাছের মানুষদেরকেও হাসতে হাসতে বলি দিতে পারে। আসেন উদাহরণ দিয়ে বুঝাই।
ডঃ ইউনুসের নিয়ন্ত্রণাধীণ গ্রামীণ নামধারী যে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক প্রতিষ্ঠান আছে সে সকল প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আর্থিক অনিয়ম এবং দুর্নীতির দায় নেয়ার জন্য বলির পাঁঠা ঠিক করা আছে। মোঃ আশরাফুল হাসান, মোঃ নাজমুল ইসলাম, মোঃ শাহজাহান এবং নূরজাহান বেগম হলো এর অন্যতম। অবশ্য এদেরকে সে বছরের পর বছর ধরে উচ্চ বেতন, বাড়ি, গাড়ি দিয়ে পেলেপোষে রেখেছেই নিজের পাপের বোঝা বহনের জন্য। নূরজাহান বেগমকে তো উপদেষ্টাই বানিয়ে দিল। ইউনুসের প্রতিষ্ঠান সমূহের বেশিরভাগ কাজ এদের স্বাক্ষরেই হয়, যাতে দায় আসলে এদের উপরে আসে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে ইউনুসের ইচ্ছা ছাড়া একটা সূতারও নড়চড় হয় না।
প্রমাণ চান? শ্রম আদালতের যে মামলায় ডঃ ইউনুসের সাজা হয়েছে সে মামলায় খোদ ইউনুসের আইনজীবী আদালতে এই আর্গুমেন্ট করেছে যে, অন্যায় ও অনিয়ম যেটা হয়েছে সেটা ইউনুসের অজ্ঞাতসারে হয়েছে, এতে প্রতিষ্ঠানের অন্যরা দায়ী, ইউনুস না। এমনকি ইউনুসের ব্যক্তিগত কর ফাঁকির মামলাতেও ইউনুসের আর্গুমেন্ট ছিলো, এটা আইনজীবীর দোষ, তার না। সে নিজে এটা গণমাধ্যমেই বলেছে।
আসেন সাম্প্রতিক ঘটনা দেখি। জাতিসংঘ অধিবেশনে যাবার সময় সে সাথে করে নিয়ে গেলো বিএনপি, এনসিপি আর জামাতের ছয়জনকে। কেন নিয়ে গেল? দেশে বিদেশে তার বিরুদ্ধে যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সেটাকে বাকিদের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য। নিজে কিম জং উনের মতো চারপাশে গার্ড নিয়ে কার্টে চড়ে ঠিকই বের হয়ে গেল, কিন্তু বাকিদের ঠেলে দিল প্রবাসীদের ডিমের মুখে।
ডঃ ইউনুস বিলেতে তারেক রহমানের সাথে কেন দেখা করেছে বলে মনে হয়? উদ্দেশ্য একটাই, তার অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকারের অপশাসন এবং দেশ ধ্বংসের নীল নকশার দায় ভাগাভাগি করার জন্য। এবং সেটা সে ভালোভাবেই করেছে। অবশ্য ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে বিএনপিকে ইউনুসের পাপের বোঝা বইতে বেশ আগ্রহীই মনে হচ্ছে। ডঃ ইউনুসের সামনে দাঁড়িয়ে গদগদ চেহারার মীর্জা ফখরুলের হাত কচলানো আমাদের সেই বার্তাই দেয়।
একটু পেছনে ফিরে যাই। গত বছর প্রধান উপদেষ্টার চেয়ারে বসার আগেই ইউনুস পাবলিকলি ঘোষণা দিয়েছে ছাত্ররা তার নিয়োগকর্তা এবং আন্দোলনের কোন পর্যায়েই সে জড়িত না। ছাত্ররাই তাকে অনুরোধ করে নিয়ে এসেছে। এমনকি গতবছর জাতিসংঘের অধিবেশন চলাকালীন ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রামে গিয়ে মাহফুজকে জুলাই-আগষ্টের মাস্টারমাইন্ড বলেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সবই করেছে ভবিষ্যতে সকল দায়মুক্তি থেকে বাঁচতে। মাঝখানে তার পদত্যাগ করতে চাওয়ার নাটকও ছিলো নিজেকে বিপদমুক্ত রাখার কুটচাল।
আমরা যখন ডঃ ইউনুসকে দেশ ধ্বংসের দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব তখন সে এই বিষয়গুলোই সামনে এনে বলার চেষ্টা করবে, তার কোন দায় নেই। সে যুক্তি দেখাবে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সে ফ্রান্সে ছিলো। আন্দোলনের সাথে সে কোনভাবেই জড়িত না। বরং আন্দোলনকারীদের জোরাজুরিতে সে ক্ষমতা নিয়েছিল। সে বুঝতে পারেনি।
ডঃ ইউনুস কতটা ভন্ড প্রকৃতির মানুষ সেটা বুঝতে পেরেছিলেন তার প্রথম স্ত্রী ভেরা ফোরেস্তেনকা। আর বুঝতে পেরেছিলেন বলেই তিনমাসের কন্যা মনিক ইউনুসকে নিয়ে বিয়ের সাত বছরের মাথায় ইউনুসের ঘর ছেড়ে ফিরে গিয়েছিলেন আমেরিকা। এরপর আর কখনোই যোগাযোগ রাখেননি। অথচ তিনি পরিবার, স্বজন ও নিজ দেশ ছেড়ে ইউনুসের সাথে বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন।
ইউনুস আপাদ মস্তক একজন পিশাচ চরিত্রের মানুষ। যারা তার বিষয়ে জানার সুযোগ পেয়েছে তারা এক বাক্যেই এটা স্বীকার করে। নিরীহ চেহারা আড়ালে ইউনুসের এই কপট দিকটা দেশের বেশিরভাগ মানুষই জানতো না। গত একবছরের বেশি সময় ধরে দেশবাসী সেটা বুঝতে পারছে। সময় যত গড়াবে, আরো ভালোভাবে বুঝবে।
আমি মনেপ্রাণে চাই ইউনুস দীর্ঘজীবী হোক। তার আসল চরিত্র মানুষের সামনে উঠে আসুক। তার ভদ্রবেশী মুখোশটা খসে পরে মানুষের মনে তার জন্য ঘৃণা জমুক পাহারসম। আর একটা দেশকে নরকে পরিণত করার দায়ে সেই দেশের প্রচলিত আইনেই তার এমন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ দেশ ও দেশের জনগণকে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে জন্য বিকিয়ে দেয়ার চিন্তাও না করে। আমি সেই বিচার দেখার অপেক্ষায় থাকব।
#আমিনুল ইসলাম পলাশ