08/12/2024
সুন্নি মুসলিমদের বিজয়: সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে মুক্তির পথে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, যখন বাশার আল-আসাদের (শিয়া) সরকার দেশজুড়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করে। সেই সময় থেকেই সুন্নি মুসলিমরা দেশে মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবাদ শুরু করে। সুন্নি মুসলিমরা সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও আসাদের শাসনামলে তাদের উপর নিপীড়ন ও বৈষম্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
গৃহযুদ্ধের প্রথম দিকে সুন্নি মুসলিমরা বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে সংগঠিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আসাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এ লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দেয়। কিছু দেশ আসাদ সরকারকে সমর্থন করেছিল, অন্যদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তাদের সহায়তা করেছিল।
অবশেষে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে সিরিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS) এবং সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (SNA) নেতৃত্বে আসাদ বিরোধী সংগঠনগুলো সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা এবং ইদলিব অঞ্চলে সফল সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। তাদের অভিযানের মাধ্যমে সরকার নিয়ন্ত্রিত অনেক এলাকা বিদ্রোহীরা দখল করে। বিদ্রোহী দলগুলো আলেপ্পো, দেইর এজ-জোর, দারা, এবং হোমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো পুনরুদ্ধার করেছে এবং দামাস্কাসের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
বিদ্রোহীদের সফলতার পেছনে মূল কারণ ছিল আসাদের সরকারের দুর্বল প্রশাসন, ইরান ও রাশিয়ার সমর্থন কমে যাওয়া, এবং সরকারি বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও বিচ্ছিন্নতা। তুরস্ক সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোও এই বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। তবে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান ও শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশটির জনগণের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে। সুন্নি মুসলিমদের দীর্ঘ সংগ্রাম একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে দেশটি একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
এই বিজয় শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়; এটি সিরিয়ার জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য এক অমূল্য অর্জন। সুন্নি মুসলিমদের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফসল এই বিজয়। ইনশাআল্লাহ, সিরিয়ার জনগণ ভবিষ্যতে শান্তি ও সমৃদ্ধি উপভোগ করবে।
কৃত :-মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম