14/06/2025
এক বছর আগে আমার সঙ্গে একজন বিবাহিত নারীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উনি আমার বহু পুরনো পরিচিত—১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিনি তাকে। তখন তিনি এক সন্তানের মা, আর আমি অবিবাহিত। দুজনের সম্মতিতেই আমরা একটা হারাম সম্পর্কের দিকে পা বাড়াই।
সময় যত গড়ায়, সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে। শারীরিক সম্পর্কও হয় একাধিকবার। আমাদের মধ্যে এমন টান তৈরি হয় যে, আমি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিই এবং সেও নিজের সংসার ছাড়ার চিন্তা করে। তবে তার বড় বাধা ছিল—তার ছোট্ট সন্তান। মাত্র ২.৫ বছরের সেই শিশু মা ছাড়া থাকতে পারবে না, আর ডিভোর্সের পর স্বামী সন্তানের দায়িত্ব নেবেন বলেও জানান। সন্তানকে ফেলে সে আমার কাছে আসতে পারে না—এটা বুঝে সে আবার নিজের সংসারে ফিরে যায়।
তবুও আমাদের সম্পর্ক চলতে থাকে, একধরনের মোহ কিংবা ০.০০১% আশার ওপর ভর করে।
আমরা জানতাম এটা ভুল, তবুও থেমে যেতে পারিনি।
একসময় সে প্রেগন্যান্ট হয়। আমরা প্রায় নিশ্চিত ছিলাম—বাচ্চাটা আমার। কারণ আমাদের মিলনের পরই সে ওষুধ খায়, এবং স্বামীর সাথে ওই সময় তার কোনো সম্পর্ক হয়নি। তার স্বামীও সন্দেহ প্রকাশ করে।
তবুও গর্ভকালীন সময়ে আমাদের যোগাযোগ চলতে থাকে। শারীরিক সম্পর্ক আর হয় না, তবে মানসিকভাবে সে আমার প্রতি দুর্বল থাকে। আর আমি তখন নিজের পরিবার থেকে বিয়ের চাপ অনুভব করছিলাম, সব মিলিয়ে এক দোটানায় ছিলাম।
তার গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে আমি আরেকজনের সঙ্গে গোপনে বিয়ে করি, তাকে বিষয়টা জানাই না। ইচ্ছে করেই জানাই না, কারণ সে অসুস্থ অবস্থায় এটা মানতে পারবে না—এমনটাই ভাবি।
এরই মধ্যে তার ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসে।
সন্তান প্রসব হয়, কিন্তু হসপিটালেই শুরু হয় মূল বিপত্তি—বাচ্চার ব্লাড গ্রুপ নিয়ে।
তার, স্বামীর এবং আমার ব্লাড গ্রুপ তিন রকম। আর নবজাতকের ব্লাড গ্রুপ মিলে যায় আমার সঙ্গে!
স্বামী নিশ্চিত হয়, এই সন্তান তার নয়।
চাপে পড়ে একসময় স্ত্রী সব কিছু স্বামীকে জানায়—আমার নাম সহ।
স্বামী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, জানায় যে বউকে সে ছাড়বে না, কিন্তু এই বাচ্চাকেও মেনে নিতে পারবে না। যদিও সামাজিকভাবে সে স্বীকার করেছে, মনের জায়গা থেকে নয়। কথায় কথায় সন্তানকে “জারজ”, “নাজায়েজ” বলে গালি দেয়।
আমার বুকটা ফেটে যায়!
এই নিষ্পাপ বাচ্চা আমার, তার কোনো দোষ নেই।
এভাবে কেউ কীভাবে এমন অবহেলায় বড় হবে? কেমন কষ্ট হবে তার?
আমি নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করি।
নিজেকে কাপুরুষ মনে হয়—যে কাউকে ঠিকমতো ভালোবাসতে পারেনি, কাউকে সঠিক সম্মান দিতে পারেনি, শুধু মোহের জালে ফেঁসে থেকে জীবনের সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।
আজ আমি সমাজ, বিবেক, ধর্ম, ভালোবাসা, দায়িত্ব—সবকিছুর মাঝে এক গভীর দোলাচলে আছি।
নতুন সংসারে শান্তি পাই না, বাচ্চার কথা মাথায় এলেই গলার মধ্যে দলা বাঁধে। আমার সেই প্রাক্তনও জানে—এই সন্তান অবহেলায় বড় হবে, অপমান সহ্য করতে হবে তাকে, হয়ত নির্যাতনেরও শিকার হবে।
এতকিছুর পরও সে বলেছে—সে আর আমার কাছে আসবে না।
সে চায় না আমি আমার নতুন স্ত্রীর জীবন নষ্ট করি। সে চায় না আর কোনো ক্ষতি হোক।
আমার কিছুই ভালো লাগে না এখন।
আমি জানি, আমি একটা জঘন্য পাপ করেছি—এটা অস্বীকার করব না।
আল্লাহর কাছে আমি লজ্জিত, ভীষণ অনুশোচনায় পুড়ছি।
শুধু একটা অনুরোধ—আমার বাচ্চাটার জন্য দোয়া করবেন।
সে যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে, কারও অবহেলায় না পড়ে।
আর যদি পারেন, আমার জন্য একটা দিকনির্দেশনা দিন—আমি এখন কী করবো?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভাই
#জীবনেরগল্প #বাস্তবতা #ভুলেরশাস্তি #অন্তর্জ্বালা #ভেঙেপড়াস্বপ্ন #অনুশোচনা #হারানোভালোবাসা #বিয়েরআগে #হারামসম্পর্ক #ভুলনির্বাচন #ভাঙাসংসার #অবহেলিতশিশু #বাচ্চারজন্য #সমাজেরচোখে #মানসিককষ্ট #জীবনেরপ্রশ্ন #একটুকুশান্তি #গোপনগল্প #বেদনারছায়া #ভালোবাসারদুঃখ #ভুলভ্রান্তি #ভুলথেকেশেখা #আল্লাহরভয় #তওবা #ক্ষমাপ্রার্থী #বিবেকেরআবেগ #জটিলজীবন #আত্মদহন