25/04/2024
প্রশ্ন : গরুর ভুড়ি (বট) খাওয়া কি হালাল??
উত্তর : যে কোন হালাল পশুর ভুড়ি বা বট খাওয়া হালাল ও বৈধ। তবে খুব ভাল ভাবে পবিত্র-পরিস্কার করে খাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
قل لا أحد في مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَن يَكُونَ مَيتَةً أو دَمًا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ
আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র। - সূরা আল আনআ'ম- ১৪৫
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ} [الأعراف: 157]
'তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা করেন ও নিষিদ্ধ করেন নোংরা বস্তুসমূহ'। - সূরা আল-আ'রাফ -১৫৭।
রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
'তোমাদের জন্য দু'টি রক্ত হালাল করা হয়েছে। তা হল কলিজা ও প্লীহা'। - সুনানে ইবনু মাজাহ, হা-৩৩১৪; মিশকাত, হা-৪২৩২।
বিশিষ্ট তাবিঈ কাতাদা রহিমাহুল্লাহ বলেন,
حرم من الدماء ما كان مسفوحا ، فأما لحم خالطه دم فلا بأس به
হারাম করা হয়েছে প্রবাহিত রক্ত; সুতরাং যে রক্ত গোশতের সঙ্গে লেগে থাকে তাতে কোন অসুবিধা নেই। (তাফসির ইবন কাছীর ৩/৩৫৩)
হালাল প্রাণীর প্রবাহিত রক্ত খাওয়া হারাম ও নিষিদ্ধ। এ ছাড়া ৬টি জিনিস খাওয়া মাকরূহ তাহরীমী।
১. পিত্ত, ২. মূত্রথলি, ৩. চামড়া ও গোশতের মাঝে সৃষ্ট জমাট মাংসগ্রন্থি, ৪. নর পশুর গুপ্তাঙ্গ, ৫. অণ্ডকোষ, ৬. মাদা পশুর গুপ্তাঙ্গ।
এছাড়া বাকি সবই খাওয়া জায়িয।
হাদিসে এসেছে-
وروي عن مجاهد أنه قال: «كره رسول الله صلى الله عليه وسلم من «الشاة الذكر والأنثيين والقبل والغدة، والمرارة، والمثانة والدم
বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বকরির সাত জিনিস (খাওয়াকে) অপছন্দ করেছেন। (তাহলো)- প্রবাহিত রক্ত, পিত্ত, মূত্রথলি, মাংসগ্রন্থি, নর-মাদা পশুর গুপ্তাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ।' – সুনানে বায়হাকি, মাজমাউয যাওয়াইদ।
বাদায়িউস সানায়ি' গ্রন্থে এসেছে,
وَأَمَّا بَيَانُ مَا يَحْرُمُ أَكُلُهُ مِنْ أَجَزَاءِ الْحَيَوَانِ الْمَأكُولِ فَالَّذِي يَحْرُمُ أَكَلُهُ مِنْهُ سبعة وهي: الدم المسفوح، والذكر والأنثيان والقبل، والغدة، والمثانة والمرارة. لقوله عز شأنه : ويحل لهم الطيبات ويحرم عليهم الخبائث) [الأعراف: 7/157] وهذه الأشياء السبعة مما تستخبثه الطباع السليمة. وروي عن مجاهد أنه قال: «كره رسول الله صلى الله عليه وسلم من الشاة الذكر والأنثيين، والقبل والغدة، والمرارة والمثانة والدم والمراد منه كراهة التحريم، بدليل أنه جمع بين الأشياء الستة وبين الدم، في الكراهة، والدم المسفوح محرم. والمروي عن أبي حنيفة أنه قال: «الدم حرام، وأكره الستة أطلق اسم الحرام على الدم المسفوح، لأنه ثبت بدليل مقطوع به وهو المفسر من الكتاب قال الله تعالى - { أو دَمًا مسْفُوحًا . (بدائع الصنائع، كتاب التضحية، باب صفة التضحية، فضل في بَيَانُ مَا يَحْرُمُ أَكَلُهُ مِنْ أَجَزَاءِ الْحَيَوَانِ الْمَأكُول - 5/61، وكذا في الفتاوى الهندية - 5/290، وفى رد المحتار، كتاب الأضحية
'হালাল প্রাণীর সাতটি অংশ খাওয়া নিষেধ। তাহল, প্রবাহিত রক্ত, পুরুষ লিঙ্গ, অন্ডকোষ, স্ত্রী লিঙ্গ, চামড়ার নিচের টিউমারের মতো উঁচু গোশত, মুত্রথলি, পিত্ত। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা করেন ও নিষিদ্ধ করেন নোংরা বস্তুসমূহ।-সূরা আল-আ'রাফ ১৫৭। আর এই সাতটি বস্তু এমন যা মানুষ স্বভাবত ঘৃণা করে। আর মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, 'রসূলুল্লাহ বকরির পুরুষ লিঙ্গ, অন্ডকোষ, স্ত্রী লিঙ্গ, চামড়ার নিচের টিউমারের মতো উঁচু গোশত, পিত্ত, মুত্রথলি ও প্রবাহিত রক্ত অপছন্দ করেছেন।' এখানে মাকরুহ (অপছন্দ) দ্বারা উদ্দেশ্য, মাকরুহে তাহরিমি। কেননা, উক্ত ছয়টি বস্তুর উল্লেখ প্রবাহিত রক্তের সাথে করা হয়েছে। আর প্রবাহিত রক্ত হারাম। ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, রক্ত হারাম, ছয়টি বস্তু মাকরুহ। রক্ত হারাম; কেননা, তা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। আর তাহল, আল্লাহ তাআ'লার বাণী - أوْ دَمًا مُسْفُوحًا অথবা প্রবাহিত রক্ত।'- বাদায়িউস সানায়ি', ৫/৬১।
আরো দেখুন- ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ৫/২৯০, রদ্দুল মুহতার, শামী।
উপরোক্ত পশুর যে সব অঙ্গ খাওয়া হারাম ও অবৈধ বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ভুড়ি বা বটের কথা উল্লেখ নাই। সুতরাং অন্যান্য হালাল অঙ্গের ন্যায় ভুড়ি খাওয়াও হালাল ও বৈধ।
যদিও কেউ ভুড়ি খাওয়াকে মাকরূহ বলেছেন সেটা তাদের নিকট রুচিবিরূদ্ধ মনে হওয়ায়; কিন্তু সমাজে ভুড়ি বা বট খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে, যার দ্বারা বুঝা যায়, সবার রুচিবিরুদ্ধ নয়। والله تعالى أعلم
উত্তর প্রদান :
M***i Masum Billah হাফিজাহুল্লাহ
সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মুফতি - জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম, ঢাকা।