13/10/2024
অবশ্যই জানতে হবে? কাঁধে কাঁধ এবং পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়ানো।
১০/৭৬. কাতারে কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলানো। নু‘মান ইবনু বশীর (রহ.) বলেন, আমাদের কাউকে দেখেছি পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির টাখ্নুর সাথে টাখ্নু মিলাতে।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পিছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই। আনাস (রাঃ) বলেন আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৯) (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২৫)
আবূল ক্বাসিম আল-জাদালী থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাঃ) সমবেত লোকদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমুহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাঁড়াও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালি মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৬২, সহিহ হাদিস)
জাবির বিন সামুরা আস-সুওয়ায়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সাবধান! তোমরা এমনভাবে কাতারবন্দী হও যেভাবে ফেরেশতাগণ তাদের প্রভুর নিকট কাতারবন্দী হন। রাবী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ফেরেশতারা তাদের প্রভুর সামনে কিভাবে কাতারবন্দী হন? তিনি বলেন, তারা প্রথম সারিগুলো আগে পূর্ণ করেন এবং সারিতে গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ান। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৯৯২, সহিহ হাদিস)
নতুন কেউ কাতারে প্রবেশ করা
ইবনু উমার ও আবূ শাজারাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে নাও, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও এবং উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর আর তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। (তিনি আরো বলেন,) শাইত্বানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহও তাকে তারঁ রহমাত দ্বারা মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার ভঙ্গ করবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমাত হতে কর্তন করবেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেনঃ “তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও” এর অর্থ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি এসে কাতারে প্রবেশ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিই তার জন্য নিজ নিজ কাঁধ নরম করে দেবে, যেন সে সহজে কাতারে শামিল হতে পারে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৬৬, সহিহ হাদিস)
কাতারে শাইত্বান প্রবেশ করছে
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা কাতারে পরস্পর মিশে দাঁড়াও। কাতারসমূহকে পরস্পর নিকটবর্তী রাখ এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! আমি শয়তানকে দেখছি ছোট ছোট বকরীর মত কাতারের মধ্যে প্রবেশ করছে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১৫, সহিহ হাদিস)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন তোমরা (সালাতের) কাতারসমূহে মিলে মিশে দাঁড়াবে। এক কাতারকে অপর কাতারের নিকট রাখবে। পরস্পর কাধেঁ কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি, কাতারের খালি (ফাঁকা) জায়গাতে শাইত্বান যেন একটি বকরীর বাচ্চার ন্যায় প্রবেশ করছে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৬৭, সহিহ হাদিস)
কাতার সোজা করা সলাতের পূর্ণতা
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২৩)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের সলাতের লাইনগুলো সোজা কর। কেননা লাইন সোজা করা সলাত পুরোপুরিভাবে আদায় করার অন্তর্ভুক্ত। (ই.ফা. ৮৫৭, ই.সে. ৮৭০) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৬১)
আনাস ইবনু মলিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা কাতারসমূহ সোজা করবে। কারণ কাতারসমূহ সোজা করার দ্বারাই সলাত পূর্ণতা পায়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৬৮, সহিহ হাদিস)
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করো। কারণ কাতার সোজা করা সালাত পূর্ণ করার অন্তর্ভুক্ত। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৯৯৩, সহিহ হাদিস)
যে ব্যক্তি কাতার মিলায়
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাতার মিলায়, আল্লাহ তা’আলা তাকে মিলিয়ে দেন, আর যে ব্যক্তি তাকে পৃথক করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে পৃথক করে দেন। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১৯, সহিহ হাদিস)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যারা কাতারগুলো মিলিয়ে রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগন রহমত বর্ষণ করেন। যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৯৯৫, সহিহ হাদিস)
রসূলুল্লাহ (সাঃ) পেছন থেকেও দেখেন
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা কাতার সোজা করে নিবে। কেননা, আমি আমার পিছনে তোমাদেরকে দেখতে পাই। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭১৮)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সলাতের লাইন পূর্ণ কর। আমি আমার পিছন দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই। (ই.ফা. ৮৫৮, ই.সে. ৮৭১) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৬২)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ (একদা) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সালাতে দাঁড়ালেন, তখন তাকবীর বলার পূর্বে আমাদের দিকে মুখ করে বললেন, তোমরা তোমাদের কাতার ঠিক কর এবং পরস্পর মিশে দাঁড়াও। আমি তোমাদেরকে আমার পেছন থেকেও দেখে থাকি। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১৪, সহিহ হাদিস)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলতেনঃ তোমরা বরাবর হয়ে দাঁড়াও, বরাবর হয়ে দাঁড়াও, বরাবর হয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ। আমি তোমাদের দেখছি আমার পেছন থেকে যেভাবে আমি তোমাদের দেখছি আমার সম্মুখ থেকে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১৩, সহিহ হাদিস)
ফেরেশতাগণ তাঁদের প্রভুর সামনে যেভাবে দাঁড়ান
জাবির ইব্ন সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদের নিকট বের হয়ে বললেনঃ তোমরা কি কাতার সোজা করবে না যেরূপ ফেরেশতাগণ তাঁদের প্রভুর সামনে কাতার সোজা করে দাঁড়ান। তাঁরা বললেন, ফেরেশতাগণ তাঁদের রবের সামনে কিভাবে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ান? তিনি বললেনঃ তারা প্রথম কাতার পূর্ণ করেন এবং কাতারে মিশে দাঁড়ান। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১৬, সহিহ হাদিস)
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) যেরূপ তাদের প্রতিপালকের নিকট কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা কি সেরূপ কাতারবদ্ধ হবে না? আমরা বললাম, মালায়িকাহ্ তাদের প্রতিপালকের নিকট কিরূপে কাতারবদ্ধ হয়? তিনি বললেন, সর্বাগ্রে তারা প্রথম কাতার পূর্ণ করে, তারপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো এবং তারা কাতারে পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ায়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৬১, সহিহ হাদিস)
দুই স্তম্ভের মধ্যে দাঁড়ানো
আবদুল হামীদ ইব্ন মাহমূদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমরা আনাস (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা আমীরদের মধ্য থেকে এক আমীরের সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। তারা আমাদের পেছনে হটিয়ে দিল। তারপর আমরা দুই স্তম্ভের মধ্যে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। আনাস (রাঃ) পিছিয়ে যেতে থাকলেন এবং বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সময়ে আমরা এটা (দুই স্তম্ভের মধ্যে দাঁড়ানো) পরিহার করতাম। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮২১, সহিহ হাদিস)
মুআবিয়াহ বিন কুররাহ থেকে বর্ণিতঃ তার পিতা থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর যমানায় আমাদেরকে দু’ খুঁটির মাঝখানে কাতারবন্দী হতে নিষেধ করা হতো এবং আমাদেরকে কঠোরভাবে বিরত রাখা হতো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১০০২, হাসান সহিহ)
কাতারে ডানপাশে দাঁড়ানো
ইব্নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, কোন একরাতে আমি নবী (সাঃ)-এর সংগে সালাত আদায় করতে গিয়ে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পিছনের দিক ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে আসলেন। অতঃপর সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। পরে তাঁর নিকট মুয়াজ্জিন এলে তিনি উঠে সালাত আদায় করলেন, কিন্তু (নতুনভাবে) উযূ করলান না। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২৬)
ইব্নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একরাতে আমি সালাত আদায়ের জন্য নবী (সাঃ)-এর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত বা বাহু ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি তাঁর হাতের ইঙ্গিতে বললেন, আমার পিছনের দিক দিয়ে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২৮)
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি আমার খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর নিকট রাত যাপন করলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) রাতের সালাত আদায় করতে উঠলেন। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে এই বললেন- আমার মাথা ধরে আমাকে তাঁর ডানদিকে দাঁড় করালেন। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮০৬, সহিহ হাদিস)
প্রথম কাতার রহমতের
বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কাতারের একদিক থেকে অন্যদিকে প্রবেশ করে আমাদের কাঁধ ও বুক স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমারা কাতারে এলোমেলো হয়ে দাঁড়াবে না। তাহলে তোমাদের অন্তরে অনৈক্য সৃষ্টি হবে। তিনি বলতেনঃ আল্লাহ প্রথম কাতারের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও প্রথম কাতারের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১১, সহিহ হাদিস)
ইরবায ইব্ন সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি প্রথম কাতারের জন্য তিনবার (রহমত ও মাগফিরাতের) দোয়া করতেন, তারপর দ্বিতীয় কাতারের জন্য একবার। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১৭, সহিহ হাদিস)
ইরবাদ বিন সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রথম কাতারের লোকের জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং দ্বিতীয় কাতারের লোকের জন্য একবার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৯৯৬, সহিহ হাদিস)
প্রথম কাতারের জন্য লটারী করত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যদি লোকেরা জানত যে, আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায়ের কী ফযীলত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করে আগেভাগে আসার চেষ্টা করতো। আর ‘ইশা ও ফজরের জামা’আতের কী ফযীলত যদি তারা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হতো। এবং সামনের কাতারের কী ফযীলত তা যদি জানত, তাহলে এর জন্য তারা কুর’আ ব্যবহার করতো। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২১)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আযান দেয়া এবং প্রথম লাইনে দাঁড়ানোর মধ্যে যে কি মর্যাদা রয়েছে তা যদি মানুষ জানতে পারত, তবে তা পাবার জন্য তারা প্রয়োজনবোধে লটারী করত। দুপুরের সলাতের যে মর্যাদা রয়েছে তা যদি তারা জানতে পারত, তবে তারা এটা লাভ করার প্রতিযোগিতায় লেগে যেত। ইশা ও ফাজরের সলাতের মধ্যে (তাদের জন্য) কি মর্যাদা রয়েছে তা যদি জানতে পারত তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এসে সলাতে উপস্থিত হত। (ই. ফা. ৮৬৩, ই. সে. ৮৭৬) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৬৭)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, লোকেরা যদি জানতো যে, প্রথম কাতারে কী (মর্যাদা) আছে, তাহলে (প্রথম কাতারে দাঁড়াতে) লটারীর ব্যবস্থা করতে হতো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৯৯৮, সহিহ হাদিস)
জ্ঞানীগণ ইমামের পিছনে দাঁড়াবে
'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ বুদ্ধিমান, বিচক্ষন ও জ্ঞানী লোকেরা আমার নিকটবর্তী হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তাদের কাছাকাছি যোগ্যতাসম্পন্ন লোকেরা দাঁড়াবে। তিনি এ কথা তিনবার বলেছেন। সাবধান! তোমরা (মাসজিদে) বাজারের মত শোরগোল করবে না। (ই.ফা. ৮৫৬, ই.সে. ৮৬৯) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৬০)
আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সালাতে আমাদের স্কন্ধ স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমরা কাতারে এলোমেলো হয়ে দাঁড়াবে না। তাহলে তোমাদের অন্তর এলোমেলো হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান, তারা আমার কাছে দাঁড়াবে। তারপর যারা তাদের কাছাকাছি এবং তারপর যারা তাদের কাছাকাছি। আবূ মাসঊদ বলেনঃ আজকাল তোমাদের মধ্যে প্রচণ্ড মতবিরোধ। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮০৭ সহিহ হাদিস)
আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমারা সোজা হয়ে দাঁড়াও, বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তাহলে তোমাদের অন্তরে অনৈক্য সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের মধ্যে জ্ঞানীগণ আমার সাথে মিলিত হয়ে দাঁড়াবে, তারপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী, তারপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (এভাবে দাঁড়াবে)। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১২, সহিহ হাদিস)
পুরুষদের জন্য উত্তম কাতার
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ পুরুষদের জন্য প্রথম লাইন উত্তম এবং শেষের লাইন মন্দ। মহিলাদের জন্য শেষের লাইন উত্তম এবং প্রথম লাইন মন্দ। (ই. ফা. ৮৬৭,ই. সে. ৮৮০) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৭১, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২২৪, সহিহ হাদিস, সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮২০, সহিহ হাদিস)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে (নেকীর দিক থেকে) উত্তম হলো শেষ কাতার এবং তাদের জন্য মন্দ কাতার (কম নেকীর) হলো তাদের প্রথম কাতার। পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হলো প্রথম কাতার এবং তাদের জন্য মন্দ হলো তাদের শেষ কাতার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১০০০, সহিহ হাদিস)
জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হলো তাদের সামনের (প্রথম) কাতার এবং মন্দ হলো তাদের পেছনের (শেষ) কাতার। মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হলো তাদের পেছনের (সর্বশেষ) কাতার এবং মন্দ হলো তাদের সামনের কাতার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১০০১, হাসান সহিহ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাকে এবং আমার পরিবারের এক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি আমাকে দাঁড় করালেন তাঁর ডানদিকে আর মহিলা ছিলেন আমাদের পেছনে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮০৫, সহিহ হাদিস)
অন্তরে অনৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন
নু’মান ইব্নু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করে দিবেন। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭১৭)
আবূ মাস'ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) সলাতের সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমরা সোজাসুজি দাঁড়াও এবং আগে পিছে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তর মতভেদে লিপ্ত হয়ে পড়বে। বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর এ গুণে যারা তাদের নিকটবর্তী তারা পর্যায়ক্রমে এদের কাছাকাছি দাঁড়াবে। আবূ মাস'ঊদ (রাঃ) বলেন, কিন্তু আজকাল তোমাদের মধ্যে চরম বিভেদ-বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। (ই.ফা. ৮৫৪, ই.সে. ৮৬৭) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৫৮)
বারা ইব্ন আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কাতারের একদিক থেকে অন্যদিকে প্রবেশ করে আমাদের কাঁধ ও বুক স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমারা কাতারে এলোমেলো হয়ে দাঁড়াবে না। তাহলে তোমাদের অন্তরে অনৈক্য সৃষ্টি হবে। তিনি বলতেনঃ আল্লাহ প্রথম কাতারের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও প্রথম কাতারের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১১, সহিহ হাদিস)
চেহারা পাল্টে দিবেন
নু'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা (সলাতে) নিজেদের লাইনগুলো অবশ্যই সোজা করে (দাঁড়াবে) সাজাবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মুখ-মণ্ডলকে বিকৃত করে দিবেন। (ই.ফা. ৮৬০, ই.সে. ৮৭৩) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৬৪)
নু'মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের (সলাতের) লাইনগুলো সোজা করে দিতেন, মনে হত তিনি যেন কামানের কাঠ সোজা করছেন। যতক্ষণ না বুঝতে পারতেন যে, আমরা তার থেকে পুরোপুরি বিষয়টি বুঝতে পেরেছি। অতঃপর তিনি স্বস্থানে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহ্রীমা বলতে যাবেন, এমন সময় দেখলেন এক ব্যক্তি কাতার থেকে সামনে এগিয়ে আছে, তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর বান্দাগণ তোমাদের লাইন সোজা কর, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মুখ-মণ্ডল বিকৃত করে দিবেন। (ই.ফা. ৮৬১, ই.সে. ৮৭৪) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৬৫)
নু’মান ইব্ন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কাতার সোজা করতেন যেমন তীর সোজা করা হয়। (একদা) তিনি দেখলেন এক ব্যক্তির বুক কাতারের বাইরে চলে গেছে, তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর, তা না হলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১০, হাসান সহিহ)
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের কাতারসমূহ সমান করে দিতেন। একদিন তিনি (ঘর হতে) বের হয়ে এসে দেখলেন, এক ব্যক্তির বুক কাতারের বাইরে এগিয়ে রয়েছে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের সারিগুলো সোজা করে দাঁড়াবে, অন্যথায় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মুখমণ্ডলে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২২৭, সহিহ হাদিস)
নু’মান ইব্ন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কাতার সোজা করতেন যেমন তীর সোজা করা হয়। (একদা) তিনি দেখলেন এক ব্যক্তির বুক কাতারের বাইরে চলে গেছে, তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর, তা না হলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১০, হাসান সহিহ)
নু’মান বিন বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বর্শা অথবা তীরের মত স্বলাতের কাতার সোজা করতেন। রাবী বলেন, তিনি এক ব্যক্তির বুক একটু বাইরে অগ্রসর দেখতে পান। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করো, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মুখমন্ডলে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৯৯৪, সহিহ হাদিস)
দেরি করে আসে ও পিছনে দাঁড়ায়
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কতিপয় সহাবাকে প্রায়ই পিছনের লাইনে দাঁড়াতে দেখেন। তিনি তাদের বললেনঃ তোমরা সামনে এগিয়ে এসে আমার পিছনে অনুসরণ কর। তাহলে তোমাদের পূর্ববর্তীরা তোমাদের পিছনে অনুসরণ করবে। একদল লোক সবসময় দেরি করে এসে পিছনে দাঁড়ায়। আল্লাহ তাদেরকে (নিজের রহমাত থেকে) পিছনে রাখবেন। (ই. ফা. ৮৬৪, ই. সে. ৮৭৭) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৬৮)
কাতার সোজা হলে তাকবীর দিবে
সিমাক থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমরা সলাতের জন্য দাঁড়ালে রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দিতেন। অতঃপর আমরা সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তাকবীর বলতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৬৫, সহিহ হাদিস)
শেষের কাতার খালি থাকে
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ প্রথম কাতার পূর্ণ কর, তারপর পরবর্তী কাতার। যদি খালি থাকে, তবে তা থাকবে শেষ কাতারে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১৮
সহিহ হাদিস)