পড়প্রকাশ Poroprokash

পড়প্রকাশ Poroprokash চিন্তায়... কল্পনায়... কৌতূহলে...পড়

www.poroprokash.com | www.bento.me/poroprokash

বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মানুষের সৃজনশীল জ্ঞানচর্চার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পড়প্রকাশ-এর আত্মপ্রকাশ।

আমরা চাই - মানুষ নতুন করে জানুক, নতুন করে ভাবুক। নিজে আলোকিত হোক; পরিবার, সমাজ ও পরিবেশকে আলোকিত করুক- মহান রবের বাণী-পড় তোমার রবের নামে-এর আলোতে। আমরা চাই-দেশের প্রতিটি বিভাগ, প্রতিটি জেলা, প্রতিটি গ্রাম এবং প্রতিটি গৃহকোণ মহান আল্লাহর এই বাণীর দ্যু

তিতে ভাস্বর হয়ে উঠুক।

আমরা স্বপ্ন দেখি-এমন এক প্রজন্মের, যারা বিপুল অধ্যয়ন নিয়ে জেগে উঠবে, যাদের আঙুলের ইশারায় সমাজ বদলে যাবে, যাদের নিয়ে ইতিহাস রচিত হবে; আমরা তাদের ঠিক এই জায়গায় দেখতে চাই, তাদের স্বপ্ন দেখাই এবং সর্বাত্মক সহায়তার প্রত্যয় ব্যক্ত করি।
আমরা অঙ্গীকার করি, ডাকপিওন হয়ে আপনাদের দ্বারে দ্বারে ওহির আলোর সেই পত্রখানা পৌঁছে দেব, যা আল্লাহ তায়ালা আপনাদের জন্য পাঠিয়েছেন। সত্য, সুন্দরের জয় হোক- এই অভিপ্রায়ে আমাদের সমস্ত চেষ্টা ও প্রয়াস নিবেদিত।

পড় একটি সামাজিক আন্দোলন; একটি সচলায়তন প্রতিষ্ঠান। পড় চায় সমাজের কুসংস্কার, অসংগতি ও ভারসাম্যহীনতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে এবং মানুষের চিন্তা, আচরণ ও অনুশীলনের ভাঁজে ভাঁজে জমে থাকা কালিমা সরিয়ে সমাজকে নির্মল ও পবিত্র করতে। এই সমাজ সংস্কারের আন্দোলনে আমরা আপনাদের পাশে চাই; আপনি নিজে পড়বেন এবং অন্যকে উৎসাহিত করবেন পড়তে, পড়তে এবং পড়তে... আমরা বিশ্বাস করি ধর্মীয় শিক্ষা আমাদের আত্মা। বৈষয়িক শিক্ষা আমাদের অলংকার।

আশা করি, আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরো দৃঢ় হবে। স্বপ্ন পূরণের পথে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবো। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুক।

📩 যোগাযোগ করুন:
📍 ওয়েবসাইট: www.poroprokash.com
📞 ফোন: +880 1511 808 900
📧 ইমেইল: [email protected]

আলহামদুলিল্লাহ বই মেলায় আসছেইনশা আল্লাহ।
28/09/2025

আলহামদুলিল্লাহ

বই মেলায় আসছে

ইনশা আল্লাহ।

28/09/2025
"আজকের সেরা মুহূর্ত – পাঠকের হাতে পৌঁছে দিলাম জ্ঞানের আলো 📚✨"
27/09/2025

"আজকের সেরা মুহূর্ত – পাঠকের হাতে পৌঁছে দিলাম জ্ঞানের আলো 📚✨"

"জ্ঞানই শক্তি — বই পড়ুন, নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। 📚✨"
27/09/2025

"জ্ঞানই শক্তি — বই পড়ুন, নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। 📚✨"

পর্ব-২১নুজাইফার মামার অনুসন্ধানএভাবে আরও কিছুদিন সময় চলে যায়। নুজাইফার মামা, যিনি সম্পর্কের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অত...
26/09/2025

পর্ব-২১

নুজাইফার মামার অনুসন্ধান

এভাবে আরও কিছুদিন সময় চলে যায়। নুজাইফার মামা, যিনি সম্পর্কের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে দেখছিলেন, ওমরের ব্যাপারে আরও গভীরভাবে নিশ্চিত হতে চাইলেন। তিনি কেবল লোকমুখে শোনা কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না, বরং ওমরের এলাকায় তার পরিচিত মানুষদের মাধ্যমে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিলেন। এই উদ্যোগ ছিল তার দায়িত্বশীলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু ফলস্বরূপ, সর্বত্রই ওমরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেল সবাইকে। প্রতিবেশীরা, পরিচিতরা, এমনকি সাধারণ দোকানিরাও এক বাক্যে ওমরের সৎ চরিত্র, বিনয়ী স্বভাব এবং পরোপকারী মনোভাবের ভূয়সী প্রশংসা করল। এ যেন এক বসন্তের আগমনী বার্তা, যেখানে সুবাস ছড়াচ্ছে পবিত্র এক সম্পর্কের সম্ভাবনা।

মসজিদের ইমাম সাহেব, যিনি সমাজের একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি এবং যার সাক্ষ্য ছিল অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, তিনিও ওমরের ব্যাপারে বেশ ভালো সাক্ষ্য দিলেন। ইমাম সাহেব ওমরের নিয়মিত সালাত আদায়, ইসলামিক জ্ঞান এবং সমাজের প্রতি তার দায়িত্বশীলতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন। একজন আদর্শ মুসলিম হিসেবে ওমরের গুণাবলী যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সব মিলিয়ে ওমরের ব্যাপারে আর কোনো সংশয় বা সমস্যা রইল না। এই ফলাফলে নুজাইফার মামা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন।

এই শুভ সংবাদ নুজাইফার মামা, নুজাইফার মাকে জানান। এতে করে নুজাইফার মা আরও নিশ্চিন্ত হন, যেন দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এক সুশীতল বারিধারা নেমে এসেছে। তিনি মনে মনে আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার দু'চোখ বেয়ে আনন্দের মৃদু অশ্রু নেমে আসে। একজন ধার্মিক, ভালো এবং সুপাত্রকে মেয়ের জামাই হিসেবে পাবে বলে তিনি আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেন। তার হৃদয়ে তখন এক অনাবিল প্রশান্তি। তিনি উপলব্ধি করেন যে, আল্লাহ তাআলা তাদের সবরের ফল দিয়েছেন এবং তাদের জন্য এক কল্যাণময় পথ খুলে দিয়েছেন। এই মুহূর্তটি ছিল শুধু একটি ছেলের প্রশংসার খবর নয়, এটি ছিল দুটি পরিবারের মধ্যে একটি পবিত্র বন্ধন তৈরির ইঙ্গিত, যা আল্লাহর রহমতের দিকে পরিচালিত হবে।

#চলবে
বই : শেষ যুগের দম্পতি
দাজ্জালের ফিতনার বিপরীতে—আদর্শ দাম্পত্য জীবন গড়ার পথ।
লেখক : রুহ মাহমুদ
#বাংলা_ইসলামিক_ #বাংলাদেশ

পর্ব-২০আশার সুউচ্চ মিনারওমরের মায়ের সবুজ সংকেতওমরের হৃদয় তখন উত্তেজনার এক অনির্বচনীয় স্পন্দনে কাঁপছিল, যেন নতুন বসন্ত...
25/09/2025

পর্ব-২০

আশার সুউচ্চ মিনার
ওমরের মায়ের সবুজ সংকেত

ওমরের হৃদয় তখন উত্তেজনার এক অনির্বচনীয় স্পন্দনে কাঁপছিল, যেন নতুন বসন্তের প্রথম পাতাটি কেবলই ডানা মেলেছে। নুজাইফার ছবি দেখার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে অনলাইনে এল। ছবি খুলতেই তার চোখে ভেসে উঠল এক স্নিগ্ধ, পবিত্র সৌন্দর্য। মাশাআল্লাহ, মেয়েটি তার কণ্ঠের মতোই রূপসী! ওমরের মনে এক ধরনের অবর্ণনীয় আনন্দ দোলা দিয়ে গেল। সে নুজাইফাকে নিয়ে মনে মনে যে ছবি এঁকেছিল, এখন দেখছে নুজাইফা তার কল্পনার চেয়েও সুন্দর, যেন পূর্ণিমার চাঁদকে হার মানানো এক স্নিগ্ধ জ্যোতি। ওমর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল। তার মুখে উচ্চারিত হলো: আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। (সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)। এই মুহূর্তটি যেন তাকে স্মরণ করিয়ে দিল, যখন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, তখন আমি তোমাদেরকে আরও বেশি করে দেব।

এবার তার কাজ ছিল তার মা-বাবাকে রাজি করানো। যদিও সে জানত এটা তেমন একটা কঠিন কিছু হবে না, কারণ তার মা-বাবা সব সময়ই তার ভালোকে সমর্থন করে এসেছেন; তবুও মনের গভীরে এক চিলতে ভয় তো ছিলই, অজানা আশঙ্কার এক মৃদু ছোঁয়া। এ যেন এক নতুন অধ্যায় শুরুর আগে হৃদয়ের মৃদু কম্পন।

ওমরের মা তখন গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত ছিলেন, মমতার প্রতিচ্ছবি। ওমর দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে গেল। আম্মু, কিছু মনে যদি না করো, তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। তার কণ্ঠে ছিল এক অনুনয়, এক ছেলের মনের গোপন বাসনা প্রকাশের আকুতি, যা সন্তানের প্রতি মায়ের হৃদয়ে এক গভীর সহানুভূতি জাগিয়ে তোলে।

মায়ের চোখে কৌতূহল খেলে গেল, যেন কোনো মিষ্টি গল্পের প্রথম পাতা উন্মোচিত হচ্ছে। অবশ্যই, বল, তিনি স্নেহভরা কণ্ঠে বললেন।
ওমর তখন তার হৃদয়ের গহীনে লালিত স্বপ্নটি প্রকাশ করল। আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করেছি এবং তার ফ্যামিলি সম্পর্কেও জেনেছি। মেয়েটা বেশ ভালো বংশের এবং খুব ঈমানদার, ধার্মিক একটা মেয়ে। আমি চাই তোমরা ওদের সাথে কথা বলো, আর আমাদেরকে এক করে দাও। ওমরের কথায় ছিল স্পষ্টতা, আর এক বুক স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষা। তার প্রতিটি শব্দে ফুটে উঠছিল এই সম্পর্কের প্রতি তার অবিচল বিশ্বাস।

ওমরের মা কিছুটা অবাক হলেন। তিনি জানেন তার ছেলে হঠাৎ কোনো মেয়েকে পছন্দ করার মতো ছেলে নয়। তার ছেলে সচরাচর এমন ব্যক্তিগত বিষয়ে এত খোলামেলা হয় না। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে তিনি বললেন, এত কিছু হলো আমাকে তো বললে না। তার কণ্ঠে ছিল অভিমান আর ভালোবাসার এক অদ্ভুত মিশ্রণ, যেন মিষ্টি অভিযোগের এক পরশ।

আম্মু, আসলে আমি নিজেও শিওর ছিলাম না, ওমর ব্যাখ্যা করল। আমি মেয়েটার মার সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের সবকিছু জেনে রাজি হয়েছেন। এখন তারা তোমার আর বাবার সাথে কথা বলতে চান।ওমরের কথায় এক ধরনের আত্মবিশ্বাস ছিল, যা মায়ের মনে গভীর রেখাপাত করল।

মায়ের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল, যেন ভোরের সূর্যের প্রথম কিরণ। আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি যখন পছন্দ করেছ, আশা করি আমাদেরও পছন্দ হবে। মেয়ের কোনো ছবি আছে? যদি থাকে দেখাও। মায়ের এই কথায় ওমরের মনে এক নতুন আশার আলো ঝলসে উঠল, যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এক শুভ বার্তার আগমন।

ওমর কিছুটা লজ্জা নিয়ে তার মাকে নুজাইফার ছবি দেখাল। নুজাইফার নিষ্পাপ মুখচ্ছবি, হিজাবের আড়ালে ঢাকা পবিত্র সৌন্দর্য দেখে ওমরের মায়ের মুখে এক অনাবিল মুগ্ধতা ফুটে উঠল। তিনি ছবি থেকে চোখ ফেরাতে পারলেন না। ওমর তার মার মুখের ভাব দেখে বুঝতে পারল নুজাইফাকে তার মা পছন্দ করেছেন। এ যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অদৃশ্য ইঙ্গিত, এক নিরবচ্ছিন্ন রহমত।

মাশাআল্লাহ, মেয়ে তো খুবই সুন্দরী, মায়ের মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত প্রশংসা বেরিয়ে এল, যা ওমরের কানে বেজে উঠল বিজয়ীর হাসির মতো। নাম কী?

নুজাইফা, উত্তর দেয় ওমর, তার কণ্ঠে তখন বিজয়ের সুর।
আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমার বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলব। মায়ের এই কথা শুনে ওমরের মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। সে জানে তার বাবা তার মার কথার বাইরে যাবেন না। কথায় যুক্তি থাকলে তিনিও রাজি হয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ। কারণ তাদের পারিবারিক বন্ধন ছিল। যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসাই ছিল মূল চালিকাশক্তি। এই কথাগুলো যেন ওমরের হৃদয়ে শান্তির বৃষ্টিধারা বয়ে আনল।

ঘরে এসে ওমর শোকরিয়া আদায় করল। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে কৃতজ্ঞতা জানাল। এই নামাজ যেন শুধু সিজদা ছিল না, ছিল তার স্বপ্নের প্রতি আল্লাহর অসীম দয়ার স্বীকৃতি। আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। এই আয়াত যেন তার জীবন দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল। নামাজ শেষে সে নুজাইফাকে এক হৃদয়ছোঁয়া বার্তা পাঠাল। ‘নুজাইফা, মা তোমাকে দেখেছেন। এবং পছন্দ করেছেন। তোমাদের বিস্তারিত শোনার পর তিনি রাজি হয়েছেন। আজ বাবার সাথে কথা বলবেন। আমাদের স্বপ্নগুলো সত্যি হবে, ইনশাআল্লাহ।’

এই কয়েকটি শব্দে ওমরের হৃদয়ের সমস্ত আনন্দ আর আবেগ যেন উথলে উঠছিল, যা নুজাইফার অপেক্ষার প্রহরকে আরও মধুর করে তুলল।
নুজাইফা ওমরের মেসেজটা পেয়ে খুব খুশি হয়। তার হৃদয় তখন আনন্দে উদ্বেলিত, যেন শত সহস্র প্রজাপতি তার ভেতরে ডানা ঝাপটাচ্ছে। আল্লাহ তাআলার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা যেন ভাষায় প্রকাশ করার মতো ছিল না। সে মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠল, তার দু’চোখ বেয়ে নেমে এলো এক চিলতে আনন্দের অশ্রু।

এরপর নুজাইফার মা ওমরের সাথে কথা বলতে চাইলেন। নুজাইফা ফোনটি মায়ের হাতে দিল। ওমর এবং নুজাইফার মার কিছুক্ষণ কথা হলো। কী কথা হলো নুজাইফা জানে না, তবে সে বুঝতে পারছিল যে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি স্থাপিত হচ্ছে। এই অদৃশ্য আলাপচারিতায় যেন দুই পরিবারের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের এক সেতু নির্মিত হচ্ছিল। কথা বলার মাঝখানে ওমর বলে যে সে তার মাকে নুজাইফার কথা জানিয়েছে এবং তার মা এই বিষয়ে মত দিয়েছেন।

এটা শুনে নুজাইফার মা খুশি হলেন এবং ওমরের মার সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলেন। তখন ওমর তার মায়ের সাথে নুজাইফার মার কথা বলিয়ে দেন। দুই মা, দুই পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বললেন, যা তাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করল। এই আলোচনায় ছিল পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধা এবং দ্বীনি মূল্যবোধের প্রতিফলন, যেন দুটি পবিত্র নদী অবশেষে এক মোহনায় মিলিত হচ্ছে। কথা শেষে ওমরের মা ওমরকে বলেন, উনারা এই জুম্মাবার আমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন। আমিও কবুল করেছি। এখন আমাদের সাথে আর কে কে যাবে মেয়ে দেখতে? তোমার চাচা, মামা এদেরকেও বলা লাগবে তো।

ওমর তখন তার মায়ের এই জিজ্ঞাসার জবাব দেয় অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে, যা তার দ্বীনি জ্ঞান এবং শরিয়তের প্রতি তার গভীর আনুগত্যের প্রমাণ। তার প্রতিটি শব্দে ফুটে উঠছিল ইসলামের পবিত্র বিধানের প্রতি তার অবিচল আস্থা। সে বলল, মা, নিতে চাইলে নিতে পারো। কিন্তু মেয়েকে তার পর্দা নষ্ট করতে দিও না। এই কথাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ সমাজে পাত্রী দেখার যে প্রচলিত নিয়ম, তা অনেক সময় শরিয়তসম্মত হয় না, যা পবিত্রতার বিধান লঙ্ঘন করে। ওমর তার মায়ের সামনে ইসলামের নির্দেশনাগুলো তুলে ধরে, যেন এক আলোকিত পথ নির্দেশ করছিল। মেয়েকে আমি দেখতে পারব, তুমি দেখতে পারবা বা আমাদের পক্ষ থেকে যে মেয়েরা যাবে তারা দেখতে পারবে। কিন্তু কোনো পুরুষের সামনে তার আসা ঠিক হবে না। কারণ তারা সবাই নুজাইফার গায়রে মাহরাম। সে যেন তার ভবিষ্যৎ স্ত্রীর মর্যাদা রক্ষার জন্য এক বর্ম তৈরি করছিল।

ওমর তার মাকে শরিয়তের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি স্মরণ করিয়ে দেয়: আমাদের সমাজে পাত্রী দেখার যে প্রচলন তা শরিয়তসম্মত নয়। ইসলামি শরিয়তে শুধু পাত্রই শর্ত সাপেক্ষে পাত্রীকে দেখতে পারবে।এই কথাগুলো ছিল খুবই মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ, যা সমাজের প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোকে দূর করে সঠিক পথ নির্দেশ করে।

সে আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে, সেই শর্তগুলো হলো:
এক. পাত্রী দেখার সময় পাত্রপক্ষের কোনো পুরুষ, যেমন: বাপ-ভাই, বন্ধুবান্ধব প্রমুখ কেউ থাকতে পারবে না। তাদের পাত্রী দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও কবিরা গুনাহ। এটি ইসলামের পর্দার বিধানের পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন: আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এই আয়াত যেন তাদের চোখের পর্দার গুরুত্ব তুলে ধরে।

দুই. পাত্র-পাত্রী একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। কিন্তু একে অন্যকে স্পর্শ করতে পারবে না। অপরিচিত নারীর সাথে কথা বলার সময় কণ্ঠস্বরকে নরম করো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হবে। এই আয়াত ইঙ্গিত দেয় যে, কথোপকথনেও শালীনতা বজায় রাখা অপরিহার্য। খবরাখবর নেওয়ার পর বিয়ে করতে মনস্থির করলে পাত্রীকে দেখে নেওয়া উচিত। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী ওলামায়ে কেরাম আনুষ্ঠানিকভাবে পাত্রী দেখাকে নিরুৎসাহিত করেন, কারণ এতে অনেক সময় মেয়ের ইজ্জত নষ্ট হয় এবং অপ্রয়োজনীয় লোকসমাগম হয়।

#চলবে

বই : শেষ যুগের দম্পতি
দাজ্জালের ফিতনার বিপরীতে—আদর্শ দাম্পত্য জীবন গড়ার পথ।

লেখক : রুহ মাহমুদ

#বাংলা_ইসলামিক_ #বাংলাদেশ

আশার আলো: প্রতিক্ষার পর প্রাপ্তির হাতছানিলজ্জার লালিমা নুজাইফার মুখে খেলে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে সে শান্ত কণ্ঠে ওমরকে জ...
24/09/2025

আশার আলো: প্রতিক্ষার পর প্রাপ্তির হাতছানি

লজ্জার লালিমা নুজাইফার মুখে খেলে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে সে শান্ত কণ্ঠে ওমরকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, বলেন কী কথা হলো?’ ওমরের কণ্ঠ থেকে তখনো যেন আনন্দের রেশ ঝরে পড়ছিল। সে বলল, ‘আমার মনে হয় আন্টি আমাকে পছন্দ করেছেন। উনার কথাবার্তা সবকিছুই ইতিবাচক মনে হয়েছে। এখন হয়তো উনি উনার সিদ্ধান্ত নিবেন, বা তোমার আত্মীয়দের সাথে কথা বলবেন।’ আনন্দের আতিশয্যে ওমর অজান্তেই ‘তুমি’ সম্বোধন করে ফেলেছিল। সে নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল, ‘সরি, আনন্দেতুমিকরে বলে ফেললাম। এই সময়টাতে আমাদের দুজনেরই ধৈর্য ধরতে হবে আর অনেক অনেক দোয়া করতে হবে। কী, পারবেন না দোয়া করতে?’ নুজাইফা দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল, ‘পারব না মানে, অবশ্যই পারব! মন প্রাণ দিয়ে দোয়া করব, যেন আল্লাহ সবকিছু সহজ করে দেন। আর একটা কথা বলতে চাই। আমি কিন্তু আপনাকে পর্দার আড়াল থেকে দেখেছি। আপনি অনেক সুদর্শন, মাশাআল্লাহ।’

কথাটা শুনে ওমর কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল, তবে মনে মনে খুশিও হলো। সে বলল, আপনি তো আমাকে দেখেছেন। আমারও তো মন চায় আপনাকে দেখতে। কিন্তু যতই মন চাক, আমি আপনার পর্দা নষ্ট করব না। সবকিছু ঠিক হওয়ার পরে আপনাকে আমি দেখব, মন ভরে দেখব। কিন্তু ততদিন আমাদের দুজনকে ধৈর্য ধরতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবর দিন, ধৈর্য ধরার শক্তি দিন।এরপর কিছুটা ইতস্তত করে ওমর বলল,তবে আপনি যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে আপনার একটা ছবি দিতে পারেন। সাহাবীরাও কিন্তু কাউকে বিয়ের জন্য পছন্দ করলে, সেই মেয়েকে দেখে নিতেন।এই কথাটি উল্লেখ করে ওমর যেন হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরল। সহীহ মুসলিমের ১৪২৪ নম্বর হাদিসে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ কোনো মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি সে তাকে দেখে নেয়, তবে তা বিবাহকে দৃঢ় করার জন্য অধিকতর উপযুক্ত।

কথাটা শুনে ওমর কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল, তবে মনে মনে খুশিও হলো। সে বলল, ‘আপনি তো আমাকে দেখেছেন। আমারও তো মন চায় আপনাকে দেখতে। কিন্তু যতই মন চাক, আমি আপনার পর্দা নষ্ট করব না। সবকিছু ঠিক হওয়ার পরে আপনাকে আমি দেখব, মন ভরে দেখব। কিন্তু ততদিন আমাদের দুজনকে ধৈর্য ধরতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবর দিন, ধৈর্য ধরার শক্তি দিন।’ ওমর কিছুটা ইতস্তত করে বলল, ‘আপনি চাইলে মাহরামসহ একবার দেখা দিতে পারেন কি? সাহাবিরাও কিন্তু কাউকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে, সেই মেয়েকে দেখে নিতেন।’এই কথাটি উল্লেখ করে ওমর যেন হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরল। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যখন তোমাদের কেউ কোনো মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি সে তাকে দেখে নেয়, তবে তা বিবাহকে দৃঢ় করার জন্য অধিকতর উপযুক্ত।

নুজাইফা কিছুটা ভেবে বলল, ‘আচ্ছা, দেখি চিন্তা করে।’
বলেই সেদিনের মতো ফোন রেখে দিতে চাইল।
ওমর দ্রুত বলে উঠল, ‘আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা!’
‘জি বলেন,’ নুজাইফা জানতে চাইল।

‘আপনার বানানো ফালুদাটা অসম্ভব মজা হয়েছিল। আর আপনি যে আমার প্রিয় খাবারটা বানিয়েছেন এজন্য আপনাকে জাযাকাল্লাহ।
এর বিনিময় ইনশাআল্লাহ আপনাকে বাসর ঘরে দিব।’ ওমরের এই কথা শুনে নুজাইফা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
দিন গড়াতে থাকল, সপ্তাহ পেরিয়ে গেল, নুজাইফার মা তখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি। ওমর আর নুজাইফা দুজনেই অস্থির মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকে। তারা আশা ছাড়ে না, সবর করে। তারা জানে আল্লাহ অবশ্যই সবরের পুরস্কার দিবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’

এই আয়াত যেন তাদের মনে এক গভীর বিশ্বাস আর প্রশান্তি এনে দেয়, প্রতিটি প্রার্থনায় তাদের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়। তারা বুঝতে পারে, আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং তাতেই রয়েছে সর্বোচ্চ কল্যাণ।

নুজাইফার মা ওমরের ব্যাপারে গভীরভাবে ভাবতে লাগলেন। প্রথম দিনেই তাকে পছন্দ হয়েছিল, তবুও তিনি কেবল প্রথম দেখায় মুগ্ধ হয়েই থেমে যাননি। তিনি ওমরের এলাকায় লোক লাগিয়ে তার সম্পর্কে আরও খোঁজ খবর নেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তিনি জানতে পারেন ওমর খুবই ভালো একটি ছেলে— ঈমানদার, ধার্মিক এবং পরোপকারী। এই তথ্যগুলো জানার পরে নুজাইফার মা ওমরের প্রতি আরও বেশি সন্তুষ্ট হন। এরপর তিনি তার আত্মীয়দের সাথে এবং নুজাইফার মামার সাথে কথা বলেন। প্রথমে নুজাইফার মামা রাজি হতে চাইছিলেন না, কারণ তারা চাইছিলেন নুজাইফাকে নিজেদের ঘরেই রাখতে, অর্থাৎ পরিবারের মধ্যেই বিয়ে দিতে। কিন্তু নুজাইফার মা যখন ওমর সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করলেন এবং এটাও জানালেন যে ওমর আর নুজাইফা দুজন দুজনকে পছন্দ করে, তখন নুজাইফার মামা কিছুটা রাজি হন। তিনি চান ওমর যেন তার পরিবার নিয়ে তাদের বাসায় আসে এবং একটি আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্ব হয়ে যায়।
নুজাইফার মা তাদের এই সিদ্ধান্ত নুজাইফাকে জানান। খবরটি শুনে নুজাইফা যেন এক বুক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ঘরে এসেই সে প্রথমে শোকরিয়া হিসেবে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে। আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানায়, কারণ তার দীর্ঘদিনের সবর এবং দোয়া আজ ফলপ্রসূ হতে চলেছে। এরপর সে দেরি না করে ওমরকে ফোন দেয়।
‘আপনি কি ব্যস্ত?’ নুজাইফা জানতে চাইল।
‘না তো,’ জানায় ওমর।

নুজাইফার ফোন পেয়েই ওমর বুঝতে পারে হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার বুকটা ধুকধুক করতে থাকে। কী বলবে নুজাইফা? আন্টি কি তাকে মেনে নিয়েছে? তার স্বপ্ন কি সত্যি হবে? তাদের দুজনের এতদিনের দোয়া কি আল্লাহ কবুল করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ? তাদের সবরের ফল পাওয়ার সময় কি হয়েছে? এই প্রশ্নগুলো ওমরের মনে বিদ্যুতের মতো ঝলকে ওঠে। প্রতিটি সেকেন্ড যেন একটি নতুন আশার প্রদীপ জ্বেলে দিচ্ছিল তার হৃদয়ে।

ভালো খবর: আশার সুউচ্চ মিনার
ওমরের হৃদয় তখন উত্তেজনার এক অনির্বচনীয় স্পন্দনে কাঁপছিল। ‘কী বলেছেন আন্টি, একটু খুলে বলেন,’ তার কণ্ঠে অধৈর্য আর আশার এক মিশ্র সুর ফুটে উঠল। নুজাইফা, যার কণ্ঠস্বর মুহূর্তেই পৃথিবীর সব সুরকে ম্লান করে দিয়েছিল, শান্ত অথচ আনন্দ-মথিত কণ্ঠে বলল, ‘আপনার বাবা-মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসতে বলেছেন মা।’ এই কয়েকটি শব্দই যেন ওমরের কানে বেজে উঠল এক অপার্থিব সুরের মতো, যা বহু প্রতীক্ষিত ছিল।

আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! কৃতজ্ঞতায় তার বুক ভরে গেল। ‘সত্যি বলছেন?’ সে যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না, এ যেন মরুযাত্রীর কাছে হঠাৎ এক মরুদ্যানের সন্ধান পাওয়ার আনন্দ। এই কথাটা শোনার জন্য সে কত দিন, কত প্রহর অধীর আগ্রহে বসে ছিল! তার স্বপ্নের রানীকে সে পাবে, নিজের করে পাবে– এ ভাবনাতেই ওমর আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। তার ভেতরের যত আবেগ, যত ভালোবাসা, যা এতদিন সে নিজের গভীরে সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিল, তা যেন এখন বাঁধ ভাঙার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। এই পবিত্র মুহূর্তে, ওমরের মনে হলো, সময় হয়েছে এই সুপ্ত অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করার।
এক দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ওমর বলল, ‘অবশ্যই আমি আসব, ইনশাআল্লাহ। বাবা-মাকে নিয়েই আসব। সবার সামনে আপনার হাত ধরে আপনাকে পরিপূর্ণ মর্যাদা আর ইজ্জতের সাথে আমার ঘরে বউ করে নিয়ে আসব।’ ওমর কখনো তার আবেগের কোনো কথা নুজাইফাকে সরাসরি বলেনি, কিন্তু নুজাইফা ঠিকই বুঝতে পারছিল, ওমর তাকে কতটা ভালোবাসে। এই ভালোবাসা ছিল স্বচ্ছ নদীর মতো, যেখানে ছলনার কোনো ছাপ ছিল না; এটি ছিল তাকওয়ার আবরণে মোড়া এক পবিত্র বন্ধন, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ ধরে এগিয়ে চলে। তাদের এই অনুভূতি যেন আল্লাহর অশেষ রহমতেরই এক নিদর্শন, যেখানে হারাম ভালোবাসা থেকে দূরে থেকে তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেছে।

নুজাইফা তার আনন্দ চেপে রেখে বলল, ‘সামনের জুম্মার দিন যদি আপনার বড় কোনো কাজ না থাকে, তাহলে আমাদের বাসায় আপনার দাওয়াত।’
মা-ও অবশ্য আপনাকে ফোন দিবেন। ওমর সাথে সাথে উত্তর দিল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আপনার দাওয়াত কবুল করলাম। আর হ্যাঁ, আপনার ফালুদাটা খুবই মজা হয়েছিল। যদি কষ্ট না হয়...।’ ওমরের কথা শেষ না হতেই নুজাইফা মিষ্টি হেসে উত্তর দিয়ে দিল, ‘কষ্ট হবে না। আমি আপনার জন্য আবার ফালুদা বানিয়ে রাখব।’ নুজাইফার এই স্বতঃস্ফূর্ততায় ওমর হেসে উঠল। কী সুন্দর সেই হাসির শব্দ! নুজাইফা বিমোহিত হয়ে গেল, যেন এক অলৌকিক সুর তার কানে বাজছে, যা হৃদয়ের গভীরে এক অপার্থিব শান্তি এনে দেয়। ওমর হেসে বলল, ‘আপনি দেখি আমার মাইন্ড রিডার হয়ে গেছেন!’
‘নুজাইফা?’ ওমর ডাকল। তার কণ্ঠে তখন এক অজানা আকুতি।
‘জি,’ নুজাইফার কণ্ঠে মৃদু কম্পন, যেন হৃদয়ের তারে কেউ আলতো করে ছুঁয়ে গেছে।
‘অনেক দিনের মনের ভিতর রাখা একটা আবদার করব।’ ওমর ইতস্তত করল, এইবার যেন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পালা।

অবশ্যই করেন,নুজাইফা সাড়া দিল, তার কৌতূহল বাড়তে থাকল।
এখন তো মোটামুটি আমাদের বিয়ে ঠিক।ওমরের কণ্ঠে আশ্বাসের সুর।
জি ইনশাআল্লাহ।নুজাইফার উত্তর, যেখানে ছিল আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস।
আপনি তো আমাকে দেখেছেন।
জ্বি দেখেছি।

আমারও তো মন চায় আপনাকে দেখতে। এটা আমি আপনাকে আগেও একবার বলছিলাম। আর এটা সুন্নত, বিয়ের আগে মেয়ে দেখে নেওয়া।ওমর পুনরায় হাদিসের প্রসঙ্গ টানল, যা তাদের সম্পর্কের ইসলামিক ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করে তুলছিল। সহিহ মুসলিমের ১৪২৪ নম্বর হাদিসে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তখন সম্ভব হলে তার এমন কিছু বৈশিষ্ট্য যেন দেখে নেয়, যা তাকে বিয়েতে আগ্রহী করে তোলে।এই হাদিসটি যেন তাদের পবিত্র ভালোবাসার এক অনবদ্য দলিল, যা শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের পথকে আলোকিত করছিল। এটি প্রমাণ করে যে, ইসলাম আবেগ বা অনুভূতিকে অস্বীকার করে না, বরং এটিকে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার নির্দেশনা দেয়।
নুজাইফা বুঝতে পারল ওমরের মনের কথা।আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। আপনি আমাকে দেখতে চাচ্ছেন।
হ্যাঁ, আপনাকে আমি দেখতে চাচ্ছি।ওমরের কণ্ঠে স্পষ্টতা।

আচ্ছা, আমি যদি আপনার মনের মতো না হই? বা আপনি যেরকম পছন্দ করেন, সেরকম যদি না হই?নুজাইফার কণ্ঠে সামান্য দ্বিধা এবং এক ধরনের অনিশ্চয়তা, যা প্রতিটি মেয়ের মনেই থাকে যখন সে নিজেকে প্রথমবার তার ভালোবাসার মানুষের সামনে উপস্থাপন করে।
ওমর দৃঢ়তার সাথে বলল,দেখেন, আমি আপনার ধার্মিকতা, ঈমান, আমল—এগুলো দেখে আপনার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। আমার কাছে আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে আপনার ভেতরের সৌন্দর্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কণ্ঠ শুনে সর্বপ্রথম আপনার প্রতি ভালো লাগা কাজ করেছে। এজন্যই আসলে মেয়েদের কণ্ঠের একটি নিজস্বতা আছে, যা অপ্রয়োজনে আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারে এবং এই বিষয়ে আমাদের দ্বীনের নির্দেশনা রয়েছে। (এখানে উল্লেখ্য, যদিও কুরআন ও হাদিসে সরাসরি 'কণ্ঠের পর্দা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি, তবে নারীদেরকে অপরিচিত পুরুষদের সাথে কথা বলার সময় কণ্ঠস্বরকে কোমল না করার এবং অনাকাঙ্ক্ষিত আকর্ষণ এড়াতে সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি গল্পের সাহিত্যিক ও ভাবগত আবেদন ধরে রাখার জন্য রাখা হয়েছে।)

আর আপনি দেখতে কেমন, সেটা আপনাকে দেখার পরেই বলি।ওমরের এই কথা নুজাইফার মনে এক গভীর প্রশান্তি এনে দিল। সে বুঝতে পারল, ওমরের ভালোবাসার ভিত্তি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং তার দ্বীনদারী এবং পবিত্রতা।
নুজাইফা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আপনাকে আমার একটা ছবি দিচ্ছি। কিন্তু সেটা এখন দেখবেন না। আমি দিয়ে রাখব। পরে আপনি দেখবেন।এটা ছিল নুজাইফার পক্ষ থেকে এক নীরব সম্মতি, তার নির্ভরতা এবং ওমরের প্রতি তার আস্থার প্রতীক।

আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি যা বলবেন তাতেই আমি রাজি,ওমর হাসিমুখে সম্মতি জানাল। তার হৃদয় তখন এক অজানা পুলকে ভরে গেছে। কথা শেষ করে ওমর অফলাইনে চলে যায়।
নুজাইফা তখন একটি হিজাব পরা শুধু চেহারার ছবি ওমরকে পাঠাল। ছবিটি ছিল সরল, পবিত্র এবং তার আত্মিক সৌন্দর্যেরই প্রতিচ্ছবি। এটি কোনো সাধারণ ছবি ছিল না, এটি ছিল দুটি হৃদয়ের মাঝে সেতু বন্ধনের এক নতুন প্রতিশ্রুতি, যা আল্লাহর রহমতে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তাদের এই যাত্রা যেন দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের দিকে এক অবিচল পথচলা, যেখানে রয়েছে রাসুলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুসরণ, সাহাবায়ে কেরামের জীবনের অনুপ্রেরণা এবং প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর নির্দেশনা। এই পবিত্র ভালোবাসার গল্প যেন প্রতিটি বিশ্বাসী হৃদয়ে আশার প্রদীপ জ্বেলে দেয়, মনে করিয়ে দেয় যে, ধৈর্যের ফল সবসময়ই সুমিষ্ট হয়।


#চলবে

বই : শেষ যুগের দম্পতি
দাজ্জালের ফিতনার বিপরীতে—আদর্শ দাম্পত্য জীবন গড়ার পথ।

লেখক : রুহ মাহমুদ

#বাংলাইসলামমিক #বাংলাদেশ

Address

Shop 16, Qawmi Market (1st Floor), 65/1 Paridas Road, Banglabazar
Dhaka
1100

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when পড়প্রকাশ Poroprokash posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to পড়প্রকাশ Poroprokash:

Share

Category

‘মননে বই জীবনে বই’

আমরা স্বপ্ন দেখি এমন এক প্রজন্মের, যারা বিপুল অধ্যয়ন নিয়ে জেগে উঠবে, যাদের আঙুলের ইশারায় সমাজ বদলে যাবে, যাদের নিয়ে ইতিহাস রচিত হবে; আমরা তাদের ঠিক এই জায়গায় দেখতে চাই, তাদের স্বপ্ন দেখাই এবং সর্বাত্মক সহায়তার প্রত্যয় ব্যক্ত করি।

আমরা অঙ্গীকার করি, ডাকপিওন হয়ে আপনাদের দ্বারে দ্বারে ওহির আলোর সেই পত্রখানা পৌঁছে দেব, যা আল্লাহ তায়ালা আপনাদের জন্য পাঠিয়েছেন। সত্য, সুন্দরের জয় হোক- এই অভিপ্রায়ে আমাদের সমস্ত চেষ্টা ও প্রয়াস নিবেদিত।

পড় একটি সামাজিক আন্দোলন; একটি সচলায়তন প্রতিষ্ঠান। পড় চায় সমাজের কুসংস্কার, অসংগতি ও ভারসাম্যহীনতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে এবং মানুষের চিন্তা, আচরণ ও অনুশীলনের ভাঁজে ভাঁজে জমে থাকা কালিমা সরিয়ে সমাজকে নির্মল ও পবিত্র করতে। এই সমাজ সংস্কারের আন্দোলনে আমরা আপনাদের পাশে চাই; আপনি নিজে পড়বেন এবং অন্যকে উৎসাহিত করবেন পড়তে, পড়তে এবং পড়তে... আমরা বিশ্বাস করি ধর্মীয় শিক্ষা আমাদের আত্মা। বৈষয়িক শিক্ষা আমাদের অলংকার।

আশা করি, আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরো দৃঢ় হবে। স্বপ্ন পূরণের পথে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবো। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুক।