16/10/2025
Mashrur Imtiaz লিখেছেন:
সিনট্যাক্স শব্দটা ভাষাতত্ত্বের, বাক্যের শব্দক্রমের কথাবলাবলি, যার ধারা থাকে আর কিছু নিয়ম থাকে – আর মানুষেরা সেইসব জেনে না জেনে কথা বলে। তবু এর বাইরে থাকে কথার খেয়াল। শব্দ বা বাক্য ছেঁড়ে, সিনট্যাক্সের বাইরে যেয়ে মানুষ এইসব বলে যায়। এবং ‘মিস’ করে, একজনকে, বহুজনকে, কিংবা তোমাকে। রুম্মানা জান্নাত সিনট্যাক্সের বাইরে যেয়ে মিস করার সুলুক সন্ধান করছেন এই সিরিজ থেকে, তা আগে থেকে জানা ছিলো – এবং আনন্দের সংবাদ এই যে, সিনট্যাক্সের বাইরে গিয়েও তিনি খোঁজ পেয়ে গিয়েছেন তার একান্ত লেখার ভাষা, কবিতার ভাষা, তীব্র এক কোমল হাহাকার মুখর বিষাদ! এই বই হাতে নিয়ে কেন যেন পুরনো বই খুঁজে আনন্দ হয়, কারণগুলো বহুবিধ। সেগুলো একপাশে রাখি, পড়ি, আর দেখা হয় এখানের মনোলগে মানুষ নিজের সাথে কথা বলে, আর মনে করিয়ে দেয় - এ তো আমারও কথা, আমিও তো এসব দেখেছি। এই বইয়ের কবিতার পাঠের সাথে নিজস্ব দৃশ্যভ্রমণ তাই একটা অন্তর্গত জার্নির মত হয়ে ওঠে। এরপরের লেখাটুকু শুধু সেই জার্নির গল্পের ফুটনোটস, মার্জিনে বা পৃষ্ঠার কোণায় লেখা থাকে যেটা অমন।
যেহেতু এই বইখানার কবিতার নাম নাই আলাদা আলাদা কোনো, এক দুই তিন এইভাবে কবিতারা হয়ে ওঠে একটা বিচ্ছিন্ন টুকরো গল্পের অবিচ্ছিন্ন বিবরণ যেখানে তুমি কিংবা তোমাকে বলা যায় দুপুরকালে-বিকেলবেলা-রাত্রিকালীন এমন এক কবিতা লেখার কথা – যার তুলনায় চলে আসে বাংলা ছবির কেঁপে ওঠা ফুলের ঠোকাঠুকি! এও হয়, এমনটায় বলা যায় যদিও তুমি সম্বোধনের আড়ালে কী ডাক থাকে, তাও থাকে অপ্রকাশ্যে। ছলনার দস্তখাতের জমা রাখে একজন, কিংবা তারিখ দোলা দিনেও ডাক দেয়া সিনট্যাক্সের বাইরে থেকে। এমনকি ডুকরে না কাঁদার শোকের তরেও বলে দেয়া অজুহাত, যেহেতু পর্দাহীন ঘর তাই রোদ পোহানোও বাহুল্য নয়। ক্রমাগত পাখি ডাকের একজন কি মানুষ, বা অমানুষ, কিংবা শুধু বিগত বর্তমানের মেলাঙ্কোলিয়া, অথবা ঘটমান বর্তমানের সুখের অসুখ! এমনকি প্রতি গ্রামেই যে উত্তরপাড়া থাকে, আমরা তাও পুনর্বার জেনে যাই, জেনে যাই মাছ আর মানুষের দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিমাও। ফুপু আছেন একজন, তার তালাকের সময়ের মাপে দীর্ঘতা মাপা যায় কিংবা তার তাকিয়ে থাকার ধাঁচে বুঝে ওঠা যায় ঋতুরা পালটে যাচ্ছে। ভোর হওয়ার আগের দৃশ্যেও শব্দহীন হয়, কারণ ফিরতে হবেই ক্যালেন্ডারে দাগ কেটে – এইসব কবিতার কোথায় রুম্মানা বলে দিয়েছে এমনকিছু। মিথ আর মোহাম্মদপুরের রাস্তা ক্রমশ একাকার, ওদিকে মিছিলের মধ্যেও বাড়ছে আকুতি বেঁচে থাকার তোমাকে ভালোবাসার পর নিজেকে ভালোবাসা শিখতে জেনে। তারওপরে আসে ভ্রমণ, সেইখানে তাহকে পথের জরুরি অধিক কিছু – গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পাওয়া মখমলি সবুজ একটা দিন- আর সকালের পাখি বাঁকা ঘুম। এমনকি ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে তার অপাপবিদ্ধ শৈশব, তরুণ কিংবা এই এখনেও তার কিছু ভুল চোখে যেন না দেখি তাই ফুল হয়ে দুলন্ত কিছু! আহা, একটা হলুদ বাড়িও থাকে – কয়তলা তা আমরা জেনে উঠি না, কিন্তু জেনে যায় সুন্দরতম এক সরল দৃশ্যের কথা। পুরাতন গানের ভাষা, বিস্মৃতির ঘ্রাণের কবুল, মামুলি খবর থেকে কবর – এরকম শব্দবন্ধ আমাদের চমকে দেয়, অথচ এগুলোও তো আমাদেরও জানা থাকবার কথা ছিলো – এই কবিতাগুলো কেন এসব অযথাই মনে করি দিতে থাকছে? নাম ডাকার ওছিলায় বারবার তোমাকে ডাকা, কিংবা শীতকালকেই ডাকা হোক না কেন, ভালো কিংবা মন্দের ডিলেমার মধ্যেও তোমাকে ছুঁয়ে দেয়ার কথা বলে যা কিছু কম্পমান! নোনতা স্বাদের মত চটজলদি আদৌ কি কাউকে বোঝা যায়, সাময়িক প্রশ্ন জাগে কোনো একটা লাইনে! ফলত, পুবপাড়ায় যাওয়া কিংবা আইলে বসে গান খুঁটে খুঁটে আলাদা করার গল্পও আমাদের শোনানো হয় এইক্ষণে – আর হুট করে চলে আসে র্যাঙ্কিন স্ট্রিট হয়ে নারিন্দা বালিকা ইশকুল, আর এলোমেলো পথঘাটের হদিস। বিবাহের দিনে লাল সামিয়ানা ভালো ভালো লাগে হায়, এও স্মরণে আসে কমিউনিটি সেন্টারের দেয়াল ছাপিয়ে উদ্ভ্রান্ত জানলেভা বাতাসের উড়ে আসার কালে। জানলেভা বাতাস যে কি তা জানা নাই, কিন্তু কিছু একটা বুঝে নিতে তো মন্দ লাগে ভয়ে, সাবধানে। শিশুরা কি সংশয়ী হয়, যদিও এই কবিতায় তা বলা হচ্ছে, দ্বিমত পুষে রাখতে যাওয়ার পরে দেখি মরে গিয়ে বেদনার পাওনা আর আয়ুর বিনিময়। একটা সুখদৃশ্যকে জীবনভর টেনে যাওয়ার বাতুলতা দেখি, জানি এমন হয় না তবু ভেবে ভালো লাগে, কারণ বাতাসের গতিবেগ জানা জরুরি কিছু নয়, তুমি আর তোমাকে রাস্তা ধরে হাঁটানোর কৌশল যেভাবে ফুটে ওঠে প্রায় শেষ কবিতায়; লাল বা নীলের দ্বন্দ্বের রিপিটেশান হচ্ছে - তবু তুমিকে টেনে আনা হয়, আর একটা গান বা সুরের বাইরে হাঁটতে যাওয়ার প্রবণতার আগেই আটকে থাকা যায় ছিপছিপে সাইনবোর্ডবিহীন দোকানে? বইয়ের একদম শেষে যে মেরুন কিংবা হালকা জাম রঙের পাতা, সেইখানেও এই জার্নি থামে না আসলে। রেশ রয়ে যায়, এবং একদম শুরুর পাতায় ফিরতে হয়, এবং সেইখান থেকে আবার একটা নতুন পাঠের জন্ম নিলেও কোন ক্ষতি নাই।
‘মিস করি’
সিনট্যাক্সের বাইরে,
তোমাকে
- এহেন যাদুকরী লাগে, এমন নন-সিনট্যাকটিকভাবে ঘোরের জন্ম দেয়।
এইসব কথা ক্রমাগত বলে যায়, দেখিয়ে যায় এই পৃথিবীর চলমান গল্পের মত দৃশ্যপাঠ, এই পাঠ শুধু একবার নয় বরং বহু পৃথক দৃশ্যের জন্ম দেবে একেকবার করে যখন পড়া হবে। এই দৃশ্যভ্রমণের জন্য হলেও সিনট্যাক্সের বাইরে যেতে হবে আমাদের, রুম্মানাকে ধন্যবাদ তাই দেয়া যেতে পারে এই মিস করার প্রবল উপলক্ষ্য কিংবা আমেজের শব্দগুলোর জন্য, একান্ত নিজস্ব নিঃস্ব দৃশ্যগুলোর জন্য – সিনট্যাক্সের বাইরের পৃথিবীটা মনে করিয়ে দেয়া তো খুব আটপৌরে কিছু তো নয়।
~
রকমারি লিংক
'মিস করি' সিনট্যাক্সের বাইরে, তোমাকে
By- রুম্মানা জান্নাত
Price: 258 BDT
Discount: 14%
Tap to explore: https://www.rokomari.com/book/271837/miss-kori-syntaxer-bairay-tomakey