30/10/2025
ভাত না রুটি — ওজন কমাতে আসলে কোনটা ভালো?
ভাত না রুটি—এই প্রশ্নটা প্রায়ই সবাই করে।
ওজন কমাতে চাওয়া মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে প্রচুর বিভ্রান্তি আছে।
অনেকে বলেন, রুটি খেলে মোটা হয় না, আবার অনেকে বলেন ভাত বাদ দিলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
আসলে সত্যিটা মাঝামাঝি কোথাও লুকিয়ে আছে।
প্রথমেই বুঝে নিতে হবে — ভাত ও রুটি দুটোই শর্করা জাতীয় খাবার।
অর্থাৎ, দুটো থেকেই আমাদের শরীর গ্লুকোজ পায়, যা এনার্জি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তবে এই গ্লুকোজের রিলিজ রেট দুই খাবারে এক নয়।
ভাতে গ্লুকোজ দ্রুত রিলিজ হয়, আর রুটিতে ধীরে ধীরে।
এই কারণেই যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য রুটি তুলনামূলক ভালো বিকল্প।
কারণ রুটিতে ফাইবার বেশি থাকায় এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়তে দেয় না।
অন্যদিকে, ভাত ফাস্ট ডাইজেস্টেড ফুড, অর্থাৎ সহজে হজম হয়, কিন্তু পেটও দ্রুত খালি হয়ে যায়।
ফলে খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আবার ক্ষুধা লাগে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভাতে কি তাহলে কোনো উপকারিতা নেই?
অবশ্যই আছে। ভাতে থাকে অ্যামিনো অ্যাসিড, ম্যাঙ্গানিজ, এবং বি ভিটামিন কমপ্লেক্স।
এছাড়া ভাতের জলীয় উপাদান বেশি, যা হজমে সাহায্য করে এবং শরীর ঠান্ডা রাখে।
তবে অতিরিক্ত ভাত খেলে শরীরে ইনসুলিনের চাপ বাড়ে, যা ফ্যাট স্টোরেজ বাড়িয়ে দেয়।
আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে ভাত একেবারে বাদ দিতে হবে — এই ধারণা ভুল।
বরং পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এক কাপ সিদ্ধ ভাত (প্রায় ২০০ গ্রাম) প্রায় ২৫০ ক্যালরি দেয়।
অন্যদিকে, একটি মাঝারি আকারের রুটি দেয় প্রায় ৮০–১০০ ক্যালরি।
তাই আপনি যদি ৩ রুটি খান, তবে ক্যালরির হিসাব ভাতের কাছাকাছি হয়ে যায়।
তবে শুধু ক্যালরি নয়, রক্তে শর্করার প্রভাবই মূল পার্থক্য গড়ে দেয়।
রুটি তুলনামূলক ধীরে হজম হয় বলে রক্তে গ্লুকোজ ধীরে বাড়ে।
ভাত দ্রুত হজম হওয়ায় ইনসুলিন তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে, এবং বাড়তি ক্যালরি শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হয়।
যাদের জীবনযাপন স্থির (sedentary lifestyle), অর্থাৎ অফিসে দীর্ঘসময় বসে কাজ করেন, তাদের জন্য রুটি তুলনামূলক ভালো বিকল্প।
আর যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, মাঠে কাজ করেন, নিয়মিত ব্যায়াম করেন—তাদের জন্য ভাত ক্ষতিকর নয়।
এখন আসি রান্না পদ্ধতির কথায়।
ভাত যদি আপনি অতিরিক্ত তেল দিয়ে রান্না করেন বা ভাজা ভাত খান, তাহলে ওজন বাড়বেই।
কিন্তু ভাত যদি সেদ্ধ করেন, তারপর অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে খান, তাহলে সেটি অনেক স্বাস্থ্যকর।
একইভাবে, রুটি যদি ঘি বা তেলে ভেজে খান, তাহলে সেটিও অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়।
তাই রুটি সবসময় শুকনোভাবে সেঁকা উচিত।
আরেকটি বড় বিষয় হলো সময়।
রাতে ভাত খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ রাতে শরীরের মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়।
রাতের খাবারে রুটি রাখলে ফ্যাট জমার আশঙ্কা কমে।
অন্যদিকে, সকালে বা দুপুরে ভাত খাওয়া তুলনামূলক নিরাপদ, কারণ তখন শরীরের এনার্জি চাহিদা বেশি থাকে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সাইড ডিশ বা সহকারী খাবার।
ভাতের সঙ্গে যদি আপনি আলু ভাজি, ভর্তা বা অতিরিক্ত তেলযুক্ত তরকারি খান, তাহলে ওজন বাড়বেই।
কিন্তু যদি ডাল, মাছ, বা সবজি রাখেন, তাহলে সেটি ব্যালান্সড ডায়েট হবে।
রুটির ক্ষেত্রেও একই কথা — সঙ্গে সবজি, ডাল, ডিম বা লিন প্রোটিন রাখলে এটি খুবই স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
এখন অনেকেই “ব্রাউন রাইস” ও “আটা রুটি” নিয়ে প্রশ্ন করেন।
ব্রাউন রাইস বা লাল চালের ভাতে ফাইবার বেশি থাকে, ফলে এটি ধীরে হজম হয় এবং ইনসুলিন স্পাইক কমায়।
অন্যদিকে, ময়দার রুটি নয় — আটা রুটি খেতে হবে।
ময়দায় ফাইবার নেই, বরং এটি ওজন বাড়ায়।
তাই সারাংশ হলো —
ভাত বা রুটি কোনোটিই এককভাবে খারাপ নয়।
মূল বিষয় হলো পরিমাণ, সময় ও রান্নার ধরন।
যদি আপনি ওজন কমাতে চান, রুটির পরিমাণ বাড়ান, ভাত কমান, তবে সম্পূর্ণ বাদ দেবেন না।
দিনে একবার ভাত, একবেলা রুটি রাখলে শরীর ভারসাম্য পায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্লেটে শাকসবজি ও প্রোটিনের পরিমাণ যেন বেশি থাকে।
আরেকটি টিপস — খাওয়ার পর সাথে সাথেই বসে বা ঘুমিয়ে পড়বেন না।
ভাত বা রুটি খাওয়ার পর অন্তত ১৫–২০ মিনিট হাঁটুন।
এতে হজম ভালো হয়, ফ্যাট জমে না, ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শেষ কথাটা হলো —
ওজন কমানো নির্ভর করে না আপনি ভাত খান না রুটি খান।
ওজন কমানো নির্ভর করে আপনি কত ক্যালরি নিচ্ছেন এবং কতটা খরচ করছেন তার ওপর।
তাই খাবার বেছে নেওয়ার চেয়ে খাওয়ার অভ্যাসটাই বদলানো জরুরি।
ধীরে ধীরে খান, সচেতনভাবে খান, আর শরীরের সংকেত শুনে খান।
তাহলেই ওজন কমবে, শরীরও থাকবে ফিট।
আপনি কোন দলের — ভাত না রুটি? 🍚🥙
কমেন্টে লিখে জানান, দেখি কার যুক্তি বেশি শক্তিশালী!
#স্বাস্থ্যপরামর্শ #ভাতনা_রুটি #ওজনকমানো