21/07/2025
🚩উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা; দায় কার?
🚩ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী দা.বা.
🚩উপদেষ্টা ও অভিভাবক- টিম হাফেজ্জী
আজ ২১ শে জুলাই উত্তরার স্বনামধন্য মাইলস্টোন কলেজে যে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রতিটি বিবেকবান মানুষ, প্রতিটি দরদী মানষই মর্মাহত। চূড়ান্ত কথা, ত্বাকদীরের উপরে তো কারোর কোন হাত নেই। পবিত্র হাদীস শরীফ- এর বর্ণনা অনুযায়ী বিশ্বাসী, সৎকর্মশীল মানুষ যদি আগুনে ঝলসে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাকে শাহাদতের সৌভাগ্য দান করেন। এই প্লেন Incident- এ যত মানুষ আগুনে ঝলসে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল, বিশেষ করে; কিশোর-বালক, অবোধ, কচিকাঁচা তাদের প্রত্যেককে যেন আল্লাহ তা’য়ালা শাহাদাতের সৌভাগ্য নসিব করেন, আমিন।
এখন কথা হলো, এ ঘটনাটির পিছনে রাষ্ট্র, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজমেন্টের কোন দায় আছে কিনা, সেটাই খতিয়ে দেখার বিষয়। ঢাকা একটি ডেন্সলি পপুলেটেড রাজধানী শহর। অতএব, এই ঢাকাতে অবস্থিত বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের ট্রেনিং বিমান উড্ডয়ন করা বা ঢাকা শহরের মধ্যবর্তী অংশে প্রশিক্ষণ দেওয়া; এটা যে নগরবাসীর জন্য বড় ধরনের সিকিউরিটি থ্রেট বয়ে আনতে পারে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আগ থেকেই বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল। প্রশিক্ষণ বিমানের মাধ্যমে যোগ্য ও দক্ষ বৈমানিক তৈরি করার জন্য খোলামেলা কক্সবাজার এয়ারপোর্ট, যশোর এয়ারপোর্ট বা বাংলাদেশের দূরবর্তী এয়ারপোর্টগুলোকেও তো ব্যবহার করা যেতো। আমি আশা করি, বর্তমান ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট এবং বিশেষ করে, বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, বিমানটি ছিল F7- BGI, চীনা নির্মিত একটি জুনিয়র মাল্টিরোল যুদ্ধ বিমান। আমরা জানি, ব্যবসা-বাণিজ্যে চায়না যথেষ্ট অগ্রসর হলেও, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তারা এখনও চূড়ান্ত অগ্রগতি অর্জন করেনি। অতএব, যে বিমানের মাধ্যমে আমাদের বৈমানিকগণ হাতে খড়ি নিবেন, আমার মনে হয়, সেই প্রশিক্ষণের যুদ্ধবিমানটি আ/মে/রি/কা বা ইউরোপের নির্মিত হলে আপদকালীন মুহূর্তে প্রশিক্ষণরত পাইলট প্রযুক্তিগত সহায়তা নিতে পারতেন। কিন্তু চিনা এফ-৭ বিজিআই এয়ারক্রাফটিতে সেই সুবিধা হয়তোবা পাইলট পাননি।
তৃতীয়ত হচ্ছে- প্রশিক্ষণ বিমান অবশ্যই একাধিক সিট বিশিষ্ট হওয়া উচিত। যেখানে একজন থাকবেন যিনি ট্রেনিং নেবেন, আর তার পাশে থাকবেন দক্ষ-অভিজ্ঞ দীর্ঘ সময় প্লেন উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা আছে, এরকম যোগ্য ট্রেইনার। এফ ৭- বিজিআই চিনা নির্মিত প্লেনটি ছিল ওয়ান সিটার। প্রশিক্ষণ বিমান হিসেবে এয়ারফোর্সের এই বিমানটিকে বেছে নেওয়া কতটুকু সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা কর্তৃপক্ষই বিবেচনা করবেন।
ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট বাংলাদেশে বিভিন্ন সংস্কার করবেন বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু আমরা উল্লেখযোগ্য কোন সংস্কারই দেখতে পাইনি। বাংলাদেশে যে সংস্থা বা খাতগুলোতে সংস্কার অবশ্যম্ভাবী; তার একটি হচ্ছে- সামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার সংস্কার। অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান ক্রয় করা এবং উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশ্ব মানের বৈমানিক তৈরি করা। পাশাপাশি বাংলাদেশে যুদ্ধবিমান তৈরির প্রযুক্তি দাঁড় করানো যায় কিনা সেদিকে সচেষ্ট হাওয়া। আর বেসরকারি বিমান সংস্থার ক্ষেত্রে বলবো, বাংলাদেশে বেসরকারি বিমান সংস্থায় যারা দায়িত্বে আছে, তাদের অধিকাংশই বেইমান। চরম দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতি বছরই তারা কোটি কোটি টাকার লোকসান দেখায়। অথচ দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি, রাষ্ট্রের তীক্ষ্ণ নজরদারি ও কাজের মধ্যে ট্রান্সপারেন্সি আনার দ্বারা বিমানকে শুধু লাভজনক নয়; বরং জাতীয় রাজস্ব আদায়ের একটা বড় মাধ্যম বানানো যেতে পারে। বর্তমান সরকার বিষয়গুলো বিবেচনায় আনবেন।