24/02/2024
Follow my page Sabrina Mishti
বন্দীনি
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!
কান্না কাটি হল্লাহাটির শব্দ দূর থেকেই শুনছিলাম।কারাগারে ঝগড়া ঝাটি নৈমত্তিক ব্যপার সেই সাথে অশ্লীল ভাষার বহুল প্রয়োগ ! মেয়েরা যেখানে চুমু শব্দটা শুনলেই একেবারে লজ্জায় লাল বেগুনী হয়ে যায় সেখানে মেয়েরা যে এতটা যৌনতায় ভরপুর বাক্য ব্যবহারের সাথে সাথে অরুচিকর অংগ ভংগি করতে পারে -কারাগারে না আসলে তাদের এই পারদর্শীতা আমার অজানাই রয়ে যেত ! মনে হচ্ছিল রুমে না ঢুকি !? কিন্তু উপরযুপরি কিল , চড়,ঘুষির শব্দ আর গোংগানি শুনে মনে হলো ব্যাপারটা দেখতে হবে ! রুমে ঢুকে দেখি, শ্যামলা বরণের যে মেয়েটি গৃহকর্তার দেয়া মোবাইল আর এক জোড়া স্বর্ণের দুল চুরির মামলায় এসেছে তাকে রুমের কিছু বন্দী নির্বিচারে মারছে! সেই সাথে অশ্রাব্য বাক্যের অবিশ্রাম বর্ষণ !”হয়েছে কি? থামুন আপনারা ! “যেই ভদ্র রূপী নারীটির নির্দেশে এই বিচার চলছিল সে হিসহিস করে বলল, “এই চুন্নী মাগী আমার ব্রা চুরি করসে !”
মেয়েটির দিকে তাকালাম, খড়ি উঠা মুখে কান্নার দাগ,গলার কাছে খামচি লেগে রক্ত ঝরছে-প্রবল বেগে মাথা নেড়ে প্রতিবাদ জানালো! “আপনার ব্রা ওর গায়ে লাগবে?”মহিলার ওজন অন্তত নব্বই কেজি হবে ! আরে, “এই চুননী মাগী চুরি কইরা বিক্রি কইরা দিসে”! কারাগারে পোশাক চুরি খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা! ধুয়ে মেলে দিলেই চুরি হয়ে যায় কারন বাসা থেকে পোশাক আনানো বেশ কঠিন ও সময়ের ব্যাপার ! সবধরনের পোশাক কারা অভ্যন্তরে ঢোকানোও নিষেধ ! সবচেয়ে বেশি চুরি হয় অন্তর্বাস কারন এটি পোশাকের নিচে থাকে বলে নিশ্চিন্তে চোরাই মাল ব্যবহার করা যায় ! মেয়েটির একটি চেন ছেড়া কাপড়ের ব্যাগ ছিলো- সেটি চেক করা হলো- শতছিন্ন এক সেট সালোয়ার কামিজ আর একটা মুড়ির প্যাকেট, কাপড় কাঁচা সাবান পাওয়া গেল- একজন এগিয়ে এসে নির্বিকার মুখে মুড়ি আর সাবান নিয়ে চলে গেল! চেক করে কিছু না পাওয়ার পরও শান্তি হলো না হিসহিসে নারীটির-“কইলাম না বেইচা দিসে- কার কাছে বেচছস ক’?”বলেই মেয়েটির গালে এক থাপ্পর ! পৃথিবীর যে কয়টা কাজ মানুষকে চরম সুখ দেয় -নিরীহ মানুষকে অত্যাচার করা তার মধ্যে অন্যতম ! “থামুন, প্লিজ,আমি রুমের পাহারা - আমার রুমে এসব আমি এলাউ করবনা।আপনার কিছু চুরি হলে কতৃপক্ষকে জানান”!
হিসহিসে নারীটি বিষনজরে আমার দিকে তাকালেন! আমার কঠিন চোখের দিকে কটমট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তিনি নিজের বিছানায় ফেরত গেলেন! প্রত্যেকের জন্য এক হাত জায়গা বরাদ্দ কিন্তু এই মহিলা পাশের বন্দীর এক হাত জায়গা খাবার আর লতা হারবালের বিনিময়ে কিনে নিয়ে দুই হাত জায়গা দখল করে জাকিয়ে বসেছেন ! আরেক বন্দীর কম্বল নিয়ে গোল করে মুড়ে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে কোলবালিশ বানিয়ে তার উপর গোদা পা তুলে রেখেছেন! রুকী নানী তার পায়ে সরিষার তেল ডলে দিচ্ছেন ! এত বয়স্ক একজন মানুষকে দিয়ে পা টেপানোর দৃশ্য দেখলে কেমন অরুচিকর লাগে !
আমি যাবার জন্য পেছন ফিরতেই আমাকে উদ্দেশ্য করে হিসহিস করে বললেন,”এক চোরের সাক্ষী আরেক চোর! আমি সত্তর হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে আসছি ! এর আগের বার আসছি এক লাখ নিয়া - ! আপনের মতো দুই পয়সার মামলা নিয়ে তিন বছর ধরে জেলখানায় পচি না !”রাগে, দু:খে,অপমানে চোখে পানি চলে আসতে পারে কিন্তু এই হিসহিসে অভদ্র মহিলাকে আমি চোখের পানি দেখাব না এজন্য কথা না বাড়িয়ে দ্রুত সরে যাই!
মনের কষ্টে রাশিদা আন্টির কামরায় গিয়ে তাকে পুরো ঘটনা বলি -, সে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে
“পাইন্যা বেচব পাব
ধাইন্যা বেচব ধান
বান্দি দাসী কইব কথা
না দিমু কান!
ঐ রহিমা বেটি এই নিয়া চার বার জেলে আইসে ! প্রচুর ট্যাকার মালিক , জেলখানা তার ঘরবাড়ি! “
তারপর রাশিদা আন্টি শুরু করলেন কুখ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ী রহিমার গল্প ….
(চলবে)