29/03/2025
প্রথমে এসি ছিলো ধনীদের জন্য, বিলাসবহুল দ্রব্য হিসেবে। মিডলক্লাসও যে এসি এফোর্ড করতে পারবে, সেই বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রথমে বাজারে কমদামে এসি আনলো ওয়াল্টন। ওদের পার্টস সবই চাইনিজ, দেশে এসেম্বল করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা প্রথমে দুই বছর ভালো কম দাম রেখে বেশ কিছু এসি সেল করলো, যাদের কোয়ালিটি একেবারে ফেলে দেয়ার মত না।
কোয়ালিটি ভালো হবার সুবাদে তারা অনেকগুলো ভালো রিভিউ পেলো। দুই বছরে সেই রিভিউগুলো দেখিয়ে মার্কেটে তারা একটা পজিশান করে নিলো। এরপরেই তারা একটা ইন্টারেস্টিং কাজ করলো।
পরের বছর ২০২৩ এর গরমের শুরুতে তারা কোনো ধরণের কথাবার্তা ছাড়াই এসির প্রত্যেক মডেলের দাম দশ হাজার বাড়িয়ে দিলো। না, তাদের কোনো পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ানো হয় নাই। আমদানিকৃত পার্টসের উপরও না, দেশীয় বাজারেও না। তারা কাজটা করলো একেবারে বেহুদা, সিম্পলি "মিডলক্লাস এফোর্ড করতে পারে", এই কার্ড দিয়ে।
তাদের দেখাদেখি মার্কেটে ব্যবসা, ইনফ্লুয়েন্স এবং কোয়ালিটি দেখানোর জন্য চায়না থেকে সরাসরি ইমপোর্ট করা গ্রি, হায়ার তো এসির দাম বাড়ালোই, একই সাথে বাড়ালো মার্কেটে অলরেডি সুনাম কামিয়ে এস্ট্যাবলিশড থাকা জেনারেল, প্যানাসনিক, এলজি, ডাইকিনের মত ব্র্যান্ডগুলো। দাঁড়িয়ে গেলো একটি চমৎকার সিন্ডিকেট। বেহুদা দাঁড়ালো, কেউ কিছু বললো না। প্রচন্ডে গরমে মানুষ যখন একটু কমদামে পাওয়ার আশায় এফোর্ডেবল একটা এসি কিনার চেষ্টা করলো, তখন তাদের গলা চেপে ধরা হলো।
এই ঈদের বাজারে আমরা পাঞ্জাবিতে সেইম একটা সিন্ডিকেট দেখতে পেলাম। পাঞ্জাবি বিক্রি করা ইলিয়েন নাম কামিয়ে দেখতে পেলো, মিডলক্লাসের প্রচুর ব্র্যান্ড ফেটিশ আছে। তারা ঈদে পাঞ্জাবি পরে ব্র্যান্ডের নাম বলে নিজেকে গর্বিত করতে প্রচুর পছন্দ করে। তারা এইটুকুকে পুঁজি করে একেকটা পাঞ্জাবির যেই দাম রাখা শুরু করলো, সেই দামে দুইটা মিডিয়াম সাইজের আস্ত ভেড়া কিনা যায়। মানুষের যেহেতু ব্র্যান্ডটাই লাগবে, তারা ১১-১২ হাজার দিয়ে পাঞ্জাবি কেনা বন্ধ করলো না।
যেহেতু ইলিয়েন এত দামে সেল করে পাঞ্জাবিকে দামি প্রোডাক্টের কাতারে তুলে নিয়ে গেলো, বাকি কাপড়ের ব্র্যান্ডগুলো দেখলো, এইটা তাদের জন্যও সুবর্ণ সুযোগ। তারা জানে, মানুষ রোজার ঈদে পাঞ্জাবি কিনবেই। যে ইলিয়েন এফোর্ড করতে পারবে না, সে অন্য কোথাও কিনবে। কিন্তু কিনবেই।
কাজেই, এখন মার্কেটে আড়াই তিন হাজারের নীচে কোনো পাঞ্জাবি নাই। দাঁড়িয়ে গেছে একটি সুন্দর সিন্ডিকেট। পাঞ্জাবির দাম এত কেন, এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করারও সুযোগ নাই। প্রশ্ন করলেই ইলিয়েনকে দেখিয়ে বলা হয়, ওরা সেল করতেছে, মানুষ কিনতেছে তো। আপনি কেন পারেন না??
অথচ মার্কেটে পাঞ্জাবির নামে সেল হচ্ছে গামছার কাপড়। এইসব পাঞ্জাবি কিছুদিন পরার পরে ঘর মোছার ত্যানা হিসেবেও ব্যবহারের অযোগ্য।
তরমুজ না কিনে মানুষ তরমুজের সিন্ডিকেট সাইজ করেছে। পেঁয়াজ না কিনে মানুষ পেঁয়াজের সিন্ডিকেট সাইজ করেছে। ঈদটা শেষ হইলে আপনারা একটু ঠান্ডা মাথায় ভাইবেন, গলাকাটা দামে এই জিনিস কিনাটা কি আসলেই আপনারা ওর্থ ইট মনে করেন?? এই সিন্ডিকেট কি আপনারা চলতে দিবেন?? নাকি অভিনব কোনো কায়দায় এদেরকে সাইজ করবেন??
ভাইবেন ভাই, একটু ঠান্ডা মাথায় ভাইবেন।
© Hazat Sabbir