25/08/2024
২৬ মিনিটের ওনার ২য় ভাষণ আর ২৬ টি মহাগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
২ সপ্তাহের এই যাত্রায় মানুষের মনে যতো প্রশ্ন ছিলো তার বেশিরভাগই তিনি স্বল্প সময়ে কাভার করার চেষ্টা করেছেন।
ভীষণ শিক্ষনীয়।
১. সবাইকে তিনি নতুন বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া আমাদের প্রথম স্বাধীনতাকে স্মরণ করতে একবারও ভুলেননি।
২. শুরুতেই বন্যা দূর্গতদের জীবন স্বাভাবিক করার জন্য তিনি সকল সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগ নিয়েছেন তা উল্লেখ করেছেন। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উনি preventive measure নেবার কথা আগে বলেছেন। প্রতিবেশী দেশের সাথে কথা বলে ভবিষ্যতে আগে থেকেই প্রতিরোধের কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সেই আলোচনা শুরু করেছেন।ওনার নিজ কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে যেন এ বিষয়ে দ্রুত কাজ হয়।
৩. তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের সকল দূর্বল জায়গাগুলোকে উল্লেখ করেছেন, সম্পদ পাচার, দূর্নীতি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অপব্যবহার, বাক স্বাধীনতা ,ভোটাধিকার ,মানবাধিকার হরণের কথা বলেছেন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে যাদের বিচারের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিচার জনগন যে নিজেরাই করে ফেলার প্রবণতা দেখাচ্ছে, তা থেকে বের হবার কথা বলেছেন। এতে যে ছাত্র জনতার যে প্রধান লক্ষ্য ছিলো, তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
৪. স্বপ্নের বাংলাদেশকে তিনি দেখতে চান বৈষম্যহীন,শোষনহীন, উদার, গণতান্ত্রিক, কল্যানময় এবং মুক্ত বাতাসময়। যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরুক্ষিত। এ ক্ষেত্রে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ।
৫. তিনি খুব টেকনিক্যালি আশেপাশে যা ঘটছে, কিছু হলেই যে দাবি দাওয়া নিয়ে যে কেউ রাস্তায় নেমে পড়ছে, দাবি মানার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে, সে ব্যাপারটা উল্লেখ করেন। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
৬. জুলাই-অগাস্ট মাসে গনঅভ্যুত্থানে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার স্বচ্ছ তদন্ত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে এই সপ্তাহেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তাদের দলের কিছু লোক এসে গেছে।
৭. ছাত্রদের উপর যেসব মিথ্যা মা-ম-লা দেয়া হয়েছিলো, তার বেশিরভাগই প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ছাত্রদের মুক্তি দেবার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
৮. সকল শহীদ পরিবারকে পূনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সম্পুর্ণ দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে, যা সকলের দাবি ছিলো। যারা আগে গুম হয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
৯. এই কাজের জন্য এবং শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে একটি ফাউন্ডেশন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। দেশ বিদেশের সবাই এখানে অনুদান পাঠাতে পারবে। তিনি নিজে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।
১০. আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের উপর যেন মানুষ আস্থা ফিরে পায়, সেই ব্যাবস্থা করা হচ্ছে।
১১. ব্যাংকিং খাতে যেন লু ট পা ট না হয় তার জন্য যোগ্য লোক নিয়োগ করে শৃঙ্খলা স্থাপন, ব্যাংক কমিশন গঠন, ব্যাবসা বানিজ্যের সহায়ক পরিবেশ আনার ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছ। এতে মূল্যস্ফীতি কমে জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে।একটি রূপকল্প জনগনের সামনে প্রকাশ করা হবে।
১২. শেয়ার বাজার আর পরিবহনখাত সহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা আছে,তা নিরসনের ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।
১৩. বিচারবিভাগ কোনো দলের হয়ে কাজ করবে না। জবাবদিহিতা থাকবে একটি সিস্টমের মাধ্যমে। আগের সকল অপকর্মের ন্যায় বিচার করা হবে। সম্পদ যারা পাচার করেছে তাদের বিচার করা হবে।
১৪. নতুন পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে যেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দলীয় প্রভাবমুক্ত থাকে এবং তাদের জবাবদিহিতা থাকে। এখানে তিনি আগে যারা অতিউৎসাহী হয়ে বাহিনীকে কলংকিত করেছেন, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন যেন ভবিষ্যতে যতো বড় জায়গা থেকেই হুকুম আসুক না কেন, তারা যেন তা উপেক্ষা করতে পারেন সেই ক্ষমতা দেয়া হবে।
১৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে সম্পূর্ণ। মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী যেসব আইন আছে তা সংশোধন করা হবে। বিদেশী সাংবাদিকদের এ দেশে আসার যে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিলো তা তুলে নেয়া হয়েছে। সবাইকে দ্রুত ভিসা দেবার কথা বলা হয়েছে।
১৬. শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। এটি অন্যতম অগ্রাধিকার। পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আসবে।
১৭. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হবে।
১৮. দূর্নীতি ঠেকাতে সকল উপদেষ্টাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণী দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে সকল সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক জমা দিতে হবে।
১৯. কৃষি খাতে কৃষক যেন তার ন্যায্য দাম পায় তা নিশ্চিত করা হবে। মধ্যবর্তী মানুষদের অতি মুনাফা করার দিন শেষ।
২০. প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সকল পর্যায়ে সম্মান জনক আচরণ নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসীদের অফিসিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর অনুরোধের পাশাপাশি নতুন কোন মাধ্যমে তারা পাঠাতে এক্সান সেই পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে।
২১. স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে যাতে দেশের সব জেলার মানুষ সমান সুবিধা পায়। হাসপাতাল আধুনিকায়ন এবং সেখানে সরকারি ডাক্তার সহ, বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করে।
২২. জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে কার্বন নিঃসরণ ০ এ নিয়ে আসা হবে।
২৩. রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করা হবে।
২৪. সংখ্যালঘু, আদিবাসী, নারী, শিশু সবার মানবাধিকারসহ সকলকে সম অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সকল ক্ষেত্রে সবাই সমান আইনের সুরুক্ষার অধিকারী। এক্ষেত্রে উপদেষ্টা পদমর্যাদা সম্পন্ন একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যার কাজ হবে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন।কেউ যেন ধর্ম, মতের কারণে কাউকে শত্রুর মনে না করে সেই আহবান জানিয়েছেন।
২৫. গত ১৫ বছরে সরকারের দুর্নীতি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। কোনভাবেই যেন কেউ আর ভবিষ্যতে ঘুষ নিতে না পারে সে জন্য পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন।
২৬. তিনি এবং তাদের সরকার ততোদিন থাকবেন যতোদিন দেশের জনগণ তাদের চান। নির্বাচন কবে হবে তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দেশবাসী ঠিক করবেন কখন তাদের চলে যাওয়া উচিৎ ।ওনারা নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার করার চেষ্টা করবেন যেন একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তার আগে কি কি কাজ দেশে করে যাওয়া উচিৎ তা নিয়ে আলোচনা শুরু করার অনুরোধ করা হয়েছে।
Via : BTV