11/02/2023
রোদকে কিছুটা চিন্তিত দেখে মাটির কেমন যেন ছটফটানি লাগছিলো, জিজ্জেস করলো, তুমি ঠিক আছো তো?
রোদঃ প্রত্যেকটি পরিবারে দুই প্রকারের মানুষ থাকে।
মাটিঃ কেমন? খুলে বল তো।
রোদঃ
এক - যিনি বাসায় ঢুকলেই সবাই খুশী হয়ে যায়, মজায় থাকে। সবাই অপেক্ষা করে তিনি কখন বাসায় ফিরবেন।
দুই - যিনি বাসা থেকে বের হলেই যেন সবাই খুব খুশী হয়। সবাই মনে মনে চায়, তিনি যেন দেরী করে বাসায় ফিরে। তাঁর মানে তিনি বাসায় না থালেই সবাই যেন প্রানখুলে নিঃশ্বাস নেয়।
মাটিঃ এর কারন কি?
রোদঃ তুমি কি খেয়াল করেছো, আগেকার দিনে মানুষ যেখানে চাঁদের আলো পরতো সেখানে শুয়ে পরতো। আর এখনকার দিনে যেখানে চার্জিং পয়েন্ট পায় সেখানে শুয়ে পরে।
মাটিঃ আমি না তোমার হেয়ালী কথাগুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা।
রোদঃ হতে পারে আমাকে তোমার যতটা ভালোবাসার কথা, ততটা বাসোনা,
তাই বুঝতে পারো না। হা হা হা।
মাটিঃ হয়েছে, আমি তোমায় যতটা ভালোবাসি, ততটা যদি তুমি বাসতে,
তাহলে তো আমার কোন দুঃখ থাকতো না।
রোদঃ তাঁর মানে এখন তোমার দুঃখ আছে অনেক তাই না?
মাটিঃ সেকথা পরে হবে, আগে তুমি আমায় চার্জিং পয়েন্টের কথাটা বুঝিয়ে বলো।
রোদঃ আমি টেকনোলজির বিরুদ্ধে নই,
কিন্তু আজকাল সব পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য।
এখন সবাই প্রিয়জনের চেয়েও প্রিয় মনে করে মোবাইলকে, চায় প্রিয় জিনিসটি যেন চার্জ ফুরিয়ে নিঃশেষ না হয়, তাই চার্জিং পোর্টে মোবাইল চার্জে দিয়েও ব্যবহার করতে পারে। এবার বুঝেছো?
মাটিঃ ঠিক কথা, একেবারেই ঠিক।
কারো যেন অন্য কারো সাথে কথা বলার, কেমন আছে জানার সময়টুকুও নেই।
এই দেখোনা, পাশের বাসার ভাবী অসুস্থ, ঘরে দুটো বড় ছেলে মেয়ে
আর ওনাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে হয় আমার।
চা খাবে আর একবার?
রোদঃ চা খেতে ইচ্ছে না করলেও, চায়ের সাথে যে ভালোবাসাটুকু জড়িয়ে থাকবে,
সেটুকু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবো, তেমনটা বোকা নইতো আমি।
মাটিঃ আচ্ছা আমি চা নিয়ে আসছি
এসে কিন্তু এই সমস্যার সমাধান শুনতে চাইবো।
রোদঃ নিশ্চয়ই, তবে চায়ে এক চামচ চিনি বাড়িয়ে দিতে ভুলোনা যেন!
আর হ্যাঁ সাথে ক্যাপ্টেন ওয়ার্ল্ডের চকলেট কুকিজটা এড়িয়ে যেও না!
মাটিঃ বুয়াকে চা বানিয়ে নিয়ে আসতে বলেছি
আর আমি কুকিজ নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এলাম কারন তুমি একা বসে আছো
আর আমার এর সমাধান শুনতে তড় সইছে না।
রোদঃ (কুকিজ খেতে খেতে) আর একটা ব্যপার বলি তোমায়।
মধু সবাই পছন্দ করে, তাই বলে মৌমাছিকে কি কেউ বাসায় রাখতে চাইবে?
মাটিঃ নিশ্চয়ই না।
রোদঃ কেন চাইবে না? মধু তো এই মৌমাছিই দিচ্ছে, তাহলে?
মাটিঃ জটিল লাগছে, তুমি বল কেন চাইবে না?
রোদঃ মধু দেয়া মৌমাছিকেও বাসায় চাইবে না কারন সে হুল ফুটায়।
মাটিঃ এর সাথে চার্জিং পয়েন্টের সম্পর্ক কোথায়?
রোদঃ আছে। বলছি শোন তাহলে।
প্রথমতঃ রাতের বেলায় পরিবারের সবার কাজ শেষে অন্ততঃ দুই ঘণ্টা সবাই একসাথে সময় কাটান উচিত। কে আজকে কি করেছে, অফিসে কিংবা স্কুলে কি কেমন হইয়েছে, কি করেছে সেগুলো শেয়ার করা। আর নিশ্চয়ই যেন সেই সময়টাতে কারো হাতে মোবাইল কিংবা অন্য কোন ডিভাইস না থাকে।
দ্বীতিয়তঃ বাবা মা যেন পাশাপাশি গাঁ ঘেঁষে বসে।
তৃতিয়তঃ কেউই যেন কাউকে নেতিবাচক কথা না বলে।
যেন সময়টা প্রনবন্ত ও উপভোগ্য হয়।
মাটিঃ আচ্ছা বুঝেছে একসাথে দুই ঘন্টা সময় কাটানো।
তাই বলে বাবা মাকে গাঁ ঘেঁষে বসতে হবে কেন?
রোদঃ যাতে করে পারিবারিক বন্ধনটা বুঝতে পারে সবাই
এতে করে সবার সম্মান বোধটা জন্মাবে।
মাটিঃ আচ্ছা সেও বুঝলাম, কিন্তু সবাইকে ইতিবাচক কথা বলতে হবে কেন?
রোদঃ এখানেই মৌমাছিকে না চাওয়ার ব্যপার।
বাবা উপার্জন করছে হাড়ভাঙ্গা কষ্ট করে
মা সারাটি দিন এদের সবার জন্য নিজের জীবনের সবকিছু দূরে রেখে নিবেদিত থাকছে
কিন্তু তাই বলে কথা দিয়ে কাউকে আঘাত করলে সে যেমন কষ্ট পাবে
তেমনি একসাথে আর সময় কাটাতে চাইবে না।
তখন কেবল মধুটুকুই চাইবে, মৌমাছিকে আশা করবে না।
মাটিঃ বাব্বা, এতো দেখছি মনোবিজ্ঞানীর বচন।
রোদঃ দেখ, আমরা নিজেরাই নিজেদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও দূরে নিয়ে যাচ্ছি নিজেদেরই অজান্তে।
তাই একটা সুখময় সম্পর্ক, একটা প্রনবন্ত পরিবার যাপন সকলের জীবনের প্রথম চাওয়া হওয়া উচিত।
মাটিঃ তুমি কখন কষ্ট পাও?
রোদঃ মানুষ একটা বাড়ী করতে না পারলে কিংবা একটা বিএমডব্লিউ কিনতে না পারলে কেউ আত্মহত্যা করেছে এমন কোন রেকর্ড নেই।
কিন্তু একটা ভালো সম্পর্কের অভাবে আত্মহত্যা করেছে এমন হাজার পরিসংখ্যান আছে।
আসলে পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী আর দুষ্প্রাপ বিষয়ের নামই কিন্তু সম্পর্ক বা রিলেশনশীপ।
মাটিঃ বাহ, দারুণ বললে! আমি সত্যি মুগ্ধ।
এবার বুঝেছো, কেন তোমাকে আমি নিজে থেকে প্রপোজ করেছিলাম?
রোদঃ হা হা হা! আরে সেতো আমি তোমাকে দিয়ে প্রপোজ করিয়েছিলাম।
এমন পরিস্থিতি তৈরী করেছিলাম যেন আমাকে বলতে না হয়।
আমি বললে তো আবার নানান ঢং করতে।
তোমাদের মেয়েদের সাইকোলজী পিথাগোরাসের তত্ত্ব উদ্ঘাটনের চাইতেও কঠিন।