11/03/2024
#নামাজে_কোরআন_দেখে_দেখে
#কেরাত_পড়া_যাবে_কি_না ___??
- ১ম কথাঃ
নামাজ অবস্থায় কোরআন ধারন করে পড়া মানে রাসুলুল্লাহ (সা) এর আদেশ থেকে দূরে সরে যাওয়া।
কেননা, নবী করিম (সা) ৬৩ বছরের জীবনে কোনো নামাজে কোরআন দেখে কেরাত পড়েছেন - এ মর্মে কোনো হাদিস পাওয়া যায় না, বিধায় এর উপর ভিত্তি করে ইমামে আ'যম আবু হানিফা (রহ) এর ফাতোয়া হলো -
__ و تفسدها قراءة من مصحف عند الامام قليلا او كثيرا كما في الجامع____
নামাজের মধ্যে দেখে দেখে কেরাত পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়, পরিমানে অল্প হোক আর বেশি। চাই সে একাকী পড়ুন বা ইমাম হয়ে নামাজ পড়ুক। যে কোনো অবস্থায়ই নামাজে দেখে কেরাত পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
#সুত্রঃ مجمع_الانهر - ١ / ١٢
_________________ # দলিল # ________________
========================================
(১) বিশ্বনবী (সা) বলেছেন __
" صلوا كما رأيتموني اصلي "
" তোমরা সেভাবে নামাজ পড়ো, যেভাবে আমাকে পড়তে দেখছো "
#সুত্রঃ সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৬০০৮
আর নবিজী (সা) সারাজীবন নামাজের ইমামতি করেছেন, কিন্তু এমন একটিও বর্ননা পাওয়া যায় না যেখানে নবিজী (সা) নামাজে কেরাত দেখে পড়েছেন।
___________________________________________
(২) আম্মাজান আয়েশা (রা) বলেন __
سألت رسول الله صلي الله عليه و سلم عن الالتفات في الصلوة فقال هو اختلاس يختلس الشيطان من صلوة العبد_____
- " আমি রাসুল (সা) কে নামাজের মধ্যে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। নবিজী (সা) বললেন, এটা এক ধরনের অমনোযোগীতা , যার দ্বারা শয়তান বান্দার নামাজকে নষ্ট করে দেয় "।
#সুত্রঃ সহীহ বুখারী, হাদিস নং - ৭৫১
আর নামাজে কোরআন দেখে পড়তে গেলে নজর এদিক সেদিক যাবে, অমনোযোগীতা সৃষ্টি হবে।
অতএব, উক্ত হাদিস দ্বারাও বুঝা গেলো যে, নামাজে কোরআন দেখে কেরাত পাঠ করা ঠিক না।
___________________________________________
(৩) রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন __
عليكم بسنتي و سنة الخلافاء الراشدين المهدبين ____
" তোমরা আমার ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত কে আকড়ে ধরো "
#সুত্রঃ আবু দাউদ, হাদিস নং- ০৪
অথচ রাসুল (সা) ও চার খলীফার স্বর্নযুগে এমন কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না, যার দ্বারা প্রমানিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা) কেউ নামাজে কোরআন ধারন করে কেরাত দেখে দেখে পড়েছেন। বরং, সাহাবীরা কোরআন দেখে পড়াকে নিষেধ করেছেন।
___________________________________________
(৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন_
نهي عمر ابن الخطاب رضي الله عنه في الرجل يوم القوم و هو يقرأ في المصحف___
" হযরত উমার ফারুক (রা) কোরআন দেখে ইমামতি করতে নিষেধ করেছেন "
#সুত্রঃ كتاب المصاحف__١٨٩
___________________________________________
(৫)
سليمان بن حنظلة البكري - انه مر علي رجل يوم قوما في المصحف فضربه برججله____
একবার হযরত হানযালা (রা) এক কওমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদেরকে এক ব্যক্তি কোরআন দেখে দেখে নামাজ পড়াচ্ছিলেন। এটা তিনি অপছন্দ করলেন এবং ইমামের কাছ থেকে কোরআন কে সরিয়ে নিলেন "
#সুত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং- ৭৩০১
_________________________________________
নামাজে কোরআন দেখে পড়া শুধু নিষেধই নয়, বরং তা ইহুদি-খ্রীষ্টানদের কাজ।
__________________________________________
(৬) ইমাম আ'মাশ বলেন__
عن ابراهيم انه كره ان يؤم الرجل في المصحف كراهة ان يتشبهوا باهل الكتاب____
ইবরাহীম নাখয়ী নামাজে কোরআন দেখে কেরাত পড়াকে অপছন্দ করতেন, তিনি বলতেন - এতে ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের স্বাদৃশ্য পাওয়া যায়"
#সুত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং- ৭৩০৩
__________________________________________
(৭)
و قتادة في رجل يؤم القوم في رمضان في المصحف فكرهاه ___
" হযরত কাতাদাহ (রা) একবার রমজান মাসে এক লোককে কোরআন দেখে নামাজ পড়তে দেখলেন। তখন তিনি এটাকে অপছন্দ করলেন এবং বললেন, তোমরা এমন করো না, কেননা এটা আহলে কিতাবীদের আমল "
#সুত্র__ তারিখে বাগদাদ- ৯ম খন্ড, ১২০ পৃষ্ঠা
=========================================
উল্লেখিত হাদিস ও আছর দ্বারা এটা প্রমানিত যে, নামাজে কোরআন দেখে কেরাত পড়াকে অনেক সাহাবী ও তাবেয়ীগন অপছন্দ ও নিষেধ করেছেন।
___________________________________________
★★★
তবে একদল উলামায়ে কেরাম নামাজে কোরআন দেখে পড়াকে বৈধ বলেছেন। তারা বুখারী শরীফের তা'লীকের হাদিস দ্বারা একটি দলিল পেশ করে থাকে। হাদিসটি হলো-
" আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা) এর গোলাম যাকওয়ান রমজান মাসে তারাবীহের নামাজে কোরআন দেখে তেলাওয়াত করতেন "
#সুত্র__ বুখারী শরীফ, বাবু ইমামাতিল আবদি
______________উক্ত হাদিসের জবাব___________
=========================================
- এবার আসুন আমরা দেখি, এই হাদিসের ব্যাখ্যায় জগদ্বিখ্যাত উলামায়ে কেরামগন ( নিঃসন্দেহে যারা আমার, আপনার, আমাদের সবার চেয়ে কোরআন-হাদিস ভালো বুঝেন) কি বলেছেন __??
(১) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা কা'সানী (রহ) বলেন__
ان عاءشة و من كان من اهل الفتوي من الصحابة لم يعلموا بذلك.. لو علموا بذلك لما مكنوه من عمل المكروه____
হযরত আয়েশা (রা) তার কোরআন দেখে পড়ার বিষয়ে অজ্ঞ ছিলেন। যদি তিনি জানতেন তবে অবশ্যই তাকে এই মাকরুহ কাজ থেকে বিরত রাখতেন।
#সুত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে - ২য় খন্ড, ১৩৩ পৃষ্ঠা
___________________________________________
(২) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ) বলেন__
و كان يقرأ من المصحف في غير حالة الصلوة اشعارا منه___
যাকওয়ান, নামাজ শুরু করার আগে কোরআন দেখে দেখে তা মূখস্ত করতেন এবং নামাজে গিয়ে তা তিলাওয়াত করতেন। নামাজের প্রতি দুই রাকাতে কি তিলাওয়াত করবেন তা আগে ইয়াদ করে নিতেন। রাবী এ কথাটিকেই বলতে গিয়ে এভাবে বলেছেন যে, নামাজে কোরআন দেখে কেরাত পড়তেন।
#সুত্রঃ বিনায়া- ২য় খন্ড, ৫০২ পৃষ্ঠা
___________________________________________
(৩) ইমাম বুখারী এই হাদিসটি তা'লীকান এনেছেন, যা একাধিক মারফু' হাদিসের মোকাবিলায় পরিত্যাজ্য।
___________________________
(৪) উক্ত হাদিস সম্পর্কে নাসির উদ্দিন আলবানী বলেন__
ان عمل هذا الحديث ش*ذ___
" যাকওয়ান রাযি. এর কোরআন দেখে পড়ার ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, ব্যাপক কোনো ঘটনা নয় "
#সুত্রঃ ফাতহুর রহমান- ১২৪ পৃষ্ঠা
___________________________________________
পরিশেষে, ইমাম ইবনে হাযম (রহ) এর একটি ফাতোয়া উল্লেখ করে লেখার ইতি টানছি __
و لا يحل لاحد ان يوم و هو بنظر ما يقرأ به في المصحف لا في فريضة و لا نافلة فان فعل عالما بان ذلك لا يجوز بطلت صلاته____
- কোনো এরুপ ব্যক্তির পক্ষে ইমামতি করা জায়েঝ নেই, যে নামাজে কোরআন দেখে কেরাত পড়ে, ফরজ নামাজেও নয়, নফল নামাজেও নয়। নাজায়েজ জেনেও যদি কেউ এরুপ করে, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে এবং যারা তার পিছনে ইকতিদা করবে তাদের নামাজও বাতিল হয়ে যাবে।
#সুত্রঃ আলমুহাল্লা- ৩য় খন্ড, ১৪০ পৃষ্ঠা
সুতরাং, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট প্রমানীত যে,, নামাজে কোরআন দেখে কেরাত পড়া এটা রাসুলুল্লাহ (সা) করেন নি, সাহাবায়ে কেরাম করেন নি, উলামায়ে কেরাম করেন নি, বরং প্রত্যেকেই নিষেধ করেছেন__
এখন সিদ্ধান্ত আপনার !!!
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।
মুফতি মোহাম্মাদ বারাতুল ইসলাম
সিনিয়র মুহাদ্দিস ও খতিব, আল-মামুর জামে মসজিদ, শান্তি বাগ , নারায়ণগঞ্জ।