17/05/2025
'সান্ডা', 'কফিল' নিয়ে মাতামাতি। সান্ডা কী? গুই সাপের সাথে এর পার্থক্য কী?
২য় অংশ
বাংলাদেশি কর্মজীবীদের জীবন আর কফিল
এই গল্পে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র— কফিল। যারা সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে গেছেন, তারা জানেন এই শব্দটার মানে। কফিল হচ্ছে কর্মজীবী প্রবাসীদের মালিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। যে লোকের অধীনে তারা কাজ করেন, সেই-ই তাদের কফিল। এরাই ঠিক করেন কে কোন কাজ করবেন, কখন ছুটি পাবেন, এমনকি কখন দেশে ফিরতে পারবেন কিনা।
কফিল মানেই ভয়ের কিছু না, কিন্তু তাদের চাহিদা অনেক সময় অদ্ভুত হয়। যেমন— “আজ সন্ধ্যায় আমার ছেলের জন্য সানডা রান্না করো”, “কাল লাঞ্চে সানডা বিরিয়ানি চাই”, “সানডার তেল আলাদা করে রাখো”— এসব অর্ডার দিতে কফিলরা দ্বিধা করেন না।
এখানেই আসে সেই ভাইরাল ভিডিওগুলোর গল্প।
⸻
সানডা-র ভাইরাল হওয়া
যারা সৌদিতে কাজ করেন, তারা এই সানডা ধরার মুহূর্তগুলো ভিডিও করে রাখেন। কখনো নিজের আনন্দে, কখনো কফিলের খুশি করতে, আবার কখনো ইউটিউব বা ফেসবুকে কিছু ইনকামের আশায়। একটা ভিডিওতে দেখা গেলো— এক বাংলাদেশি লোক মরুভূমিতে সানডার পিছে ছুটছেন, পিছনে বন্ধুরা হাসছে, ক্যামেরা করছে, আর বারবার বলছে, “এইটা কফিলের জন্য ধরতেছি ভাই!”
আরেকটা ভিডিওতে রান্না হচ্ছে— বিরিয়ানির পাতিলে সানডা ঢোকানো হচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা: “সানডার বিরিয়ানি ফর কফিল ভাই – কফিলের ছেলের পছন্দ।”
শুরুতে কয়েকটা ভিডিও এলোমেলোভাবে আমাদের ফিডে দেখা গেলেও, ফেসবুকের অ্যালগরিদম একে গুরুত্ব দিতে শুরু করলো। কারণ মানুষ দেখছে, লাইক দিচ্ছে, শেয়ার করছে, হাসছে— মানে এ তো ভাইরাল কন্টেন্ট! এরপর শুরু হলো সানডার জয়যাত্রা। এখন হোমপেইজ খুললেই হয়তো দেখা যাবে— “সানডা ধরার সহজ পদ্ধতি”, “সানডা রান্নার ৫টি ভিন্ন রেসিপি”, “কফিলের জন্য আজকের সানডা”, ইত্যাদি।
⸻
রাজুদা, কফিল, আর ফেসবুক অ্যালগরিদম
অনেকের মনে আছে, একটা সময় “রাজুদা” নামের একজন হঠাৎ করেই ভাইরাল হয়েছিলেন। একের পর এক ভিডিওতে তার হাস্যরস, সরলতা, আর বাস্তব জীবনের ঘটনা মানুষকে টেনে নিয়েছিলো। ঠিক তেমনি করে, এই সানডা-কফিল কনটেন্টগুলাও বাস্তব জীবনের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছে, যে মানুষ সেটাকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।
ভিডিওগুলোতে মিশে আছে বিদেশের মাটি, গরমের তীব্রতা, একটা প্রাণীকে ধরার জন্য অমানুষিক কষ্ট, আর সেই কষ্টের মাঝেও হাসির ছোঁয়া— এই মিশ্র অনুভূতিই মানুষকে আকৃষ্ট করে।
⸻
ভাইরাল সংস্কৃতি ও এর প্রভাব
এই পুরো ব্যাপারটা একটা দারুণ উদাহরণ— কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেবারে প্রান্তিক বিষয়গুলো ভাইরাল হয়ে যায়। একসময় যে সানডার নাম মানুষ জানতো না, এখন সেটা নিয়ে মিম, রিলস, এমনকি “সানডা বনাম গুইসাপ” টাইপ আলোচনা হচ্ছে।
মানুষ এখন বলে— “ভাই, কফিলের জন্য সানডা ধরিস?” মজা করে হলেও বলছে, আবার অনেকে সিরিয়াস হয়ে রেসিপিও চাচ্ছে। কিছু রন্ধনশিল্পী এমনকি এই সানডা রান্না করে ভিডিও করছেন, যদিও বাংলাদেশে এ প্রাণী পাওয়া যায় না।
#সানডা #কফিল #সরীসৃপ #গুইসাপ
#সান্ডা #কফিল #গুইসাপ #ষান্ডা #টিকটিকি