12/02/2024
১ কোটি ৫৯ লাখ মানুষ!!!
যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়েছিলাম এক কাজে। কিন্তু এত ভীড় দেখে তো ভিমরী খাওয়ার অবস্থা। হৈ হট্টোগোল। সিকিউরিটির হুইসেল। মার্কেটে ঢুকতে এত লম্বা লাইন, যেটি প্রধান সড়ক হয়ে বসুন্ধরার গলি থেকে শুরু হয়েছে। পরে জানতে পারলাম এটি ভারতীয় ভিসাপ্রার্থীদের লাইন। চারপাশে এত মানুষ!! ছেলে বুড়ো, বয়স্ক নারী পুরুষ। কয়েকজন অসুস্থ লোককে দেখলাম কাঁধে চড়ে ভিসা নিতে এসেছে। যমুনার এক সিকিউরিটি অফিসারের কাছ থেকে জানতে পারলাম প্রতিদিনই এমন উপচে পড়া ভীড় হয় যমুনার সামনে। সকালে কেউ হৈ হুল্লোর করে ঢুকছে। আবার বিকেলে কেউ বেরুচ্ছে হাসিমুখে, কেউ বিষন্ন বদনে। বিষ্মিত হতে দেখে তিনি বললেন, ‘এখানে কি দেখছেন! দেশের অন্য জেলাগুলিতেও ভারতীয় ভিসা সেন্টারের সামনে তো গভীর রাত থেকে মানুষ লাইনে দাড়ায়’।
যমুনার সিকিউরিটির ওই ভদ্রলোকের ধারনায় প্রতিদিন আনুমানিক আট থেকে দশ হাজার লোক যমুনায় আসে। আর দুটো ঈদ ও পূজা পার্বণের আগে সংখ্যাটি দাড়ায় দ্বিগুণ। ভাবলাম বাড়িয়ে বলছে। কিন্তু সকাল বিকাল মিলিয়ে ভিসা প্রার্থীর সংখ্যাটা এমনটাই হবে বলে মনে হল। হিসাব মিলিয়ে দেখলাম যদি প্রতিদিন আট হাজার ভিসা প্রার্থী এখানে আসে তাহলে গত ১ বছরে (মাসে ২৫ দিন ধরে) শুধু ভারতীয় ভিসা নিতেই মোট ২৪ লাখ লোক যমুনায় এসেছে। এটা শুধু ঢাকার চিত্র। এর বাইরে সারাদেশে ১৪ টি ভিসা কেন্দ্র রয়েছে ভারতের। সে হিসেবে গত এক বছরে (৩০০ দিন) যদি প্রতিদিন ৩ হাজার প্রার্থী ওই ভিসা কেন্দ্রগুলোতে যায় তা হলে সংখ্যাটি হবে ১ কোটি ৩৫ লাখ। সব মিলিয়ে সংখাটি দাড়াচ্ছে ১ কোটি ৫৯ লাখ। সারমর্ম হচ্ছে গত ১ বছরে ভারতীয় ভিসা পেতে আনুমানিক দেড় কোটির অধিক মানুষ ভারতের ভিসাকেন্দ্র গুলোতে গিয়েছেন। সংখাটি আতঁকে ওঠার মতই বড়।
অথচ ভাবতে অবাক লাগে ফেসবুক জুড়েই প্রবলভাবে ভারত বিদ্বেষ পরিলক্ষিত। ভারতের পক্ষে কেউ কিছু একটি বললেই তাকে ছিলে ফেলা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে নানা অপবাদ। অনেককে এ কারণে সামাজিকভাবে নাজেহালও হতে হয়। কি যে সেই প্রবল বিদ্বেষ!!! অথচ ভারতের সিনেমা, সিরিয়াল, গান, পোশাক, চিকিৎসা, ভ্রমণ, আইপিএল এদেশে কত জনপ্রিয়! বিয়ের কেনাকাটা হোক বা ঈদের কেনাকাটা, সব ক্ষেত্রেই পছন্দের গন্তব্য ভারত!
ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে পেঁয়াজের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে বাৎসরিক পেঁয়াজের চাহিদার ৪০ শতাংশ আমদানি করতে হয়, যার ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। একই ঘটনা ঘটে চিনি, গম, ভুট্টা, মসুর ডাল কিংবা মসলার ক্ষেত্রেও। ভারত থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাদ্যপণ্য আমদানি হয়। যার মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সূর্যমুখী, ডাল ও সয়াবিন তেলসহ ভোজ্য-তেল, চিনি, মধু, কোমল পানীয়, চিপস, বিস্কুট, চকলেট ও ক্যান্ডি জাতীয় খাবার।
প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ভারতের ওপর এত আস্থা ও নির্ভরশিলতা তারপরও কেন এত তীব্র বিদ্বেষ। কেন এমনটা হয়? কারা এরা? কি কারণে এত বিদ্বেষ?