
22/08/2025
🌿 পেরুর জঙ্গলে এক কন্যার অসাধারণ বেঁচে থাকার গল্প (১৯৭১)
সেদিন সকালে আকাশটা শান্ত দেখাচ্ছিল। ১৭ বছর বয়সী জুলিয়ান কোপকে excited-এ ভরা, পেরুর অভ্যন্তরীণ ছোট একটি বিমান ধরেছিলেন। যাত্রীরা হাসিখুশি, জানালার বাইরে পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করছিল। কেউ গল্প করছিল, কেউ গান গাইছিল—মুহূর্তটা যেন স্বপ্নের মতো।
কিন্তু ভাগ্যের খেলা কে জানত—হঠাৎ আকাশে গর্জনের মতো বাতাস আর ঘন কুয়াশা। বিমানটি দুলতে লাগল, পাইলট সব চেষ্টা করেও বিমানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। এবং মুহূর্তের মধ্যে বিমানটি পাহাড়ের ওপর ধ্বংসস্তূপে ভেঙে পড়ল।
বিমানের ৯২ জন যাত্রী—সবাই এক ঝলকে হারিয়ে গেল। কিন্তু এক মেয়েটি—জুলিয়ান—বেঁচে রইলেন। চারপাশে ছিন্নভিন্ন লাশ, ভেঙে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ, আর নিরবতা। প্রথম কয়েক মিনিটে তাকে মনে হলো, “এবারই শেষ।” শীত, ভয়, ক্ষুধা—সবই মিলিয়ে তার চারপাশকে মৃত্যুর গহ্বরে পরিণত করেছিল।
কিন্তু জুলিয়ান হাল ছাড়েননি। তিনি নিজেকে বললেন, “যদি এখনই আমি হাল ছাড়ি, আমি মারা যাব।” তারপর শুরু হলো এক ভয়াবহ, কিন্তু অবিশ্বাস্য বেঁচে থাকার লড়াই।
প্রথমেই তিনি খাবার ও পানি খুঁজলেন। কিছুই নেই। হাত-পা কেটে ঝোপঝাড় সরালেন, পাহাড়ের ছোট ছোট নদী খুঁজে পানির জন্য ভাঙালেন বরফ। রাতে শীতের তীব্রতা অতিক্রম করতে গাছের মধ্যে ভিড়লেন, ভিজে ভেজে কাঁপতে কাঁপতে রাত পার করলেন।
দিন কেটে দিন, রাত কেটে রাত। ক্ষুধার যন্ত্রণা এত তীব্র যে, কখনও কখনও মনে হতো মৃত্যুই প্রার্থনা। কিন্তু আশা হারালেন না। তিনি নিজের মনের শক্তি দিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা বজায় রাখলেন। ঝড়, পাহাড়ি জীবজন্তু, স্লিপারি বরফ—সবই যেন তাকে পরীক্ষা করছিল।
এক সপ্তাহের মতো সময় কেটে যাওয়ার পর, তিনি গ্রামের দিকে হেঁটে চলার সিদ্ধান্ত নিলেন। জঙ্গলের ভেতর পথ ভাঙা, শিকড় কেটে, পাথর ও পাহাড় অতিক্রম করে চললেন। তার শরীর ক্ষতবিক্ষত, পায়ে রক্ত, কিন্তু চোখে অদম্য ইচ্ছা। অবশেষে তিনি পৌঁছালেন এক ছোট গ্রামে। গ্রামের মানুষ তাঁকে দেখে হতবাক—শরীর ক্ষতবিক্ষত, কিন্তু বেঁচে থাকা মানুষটির সাহস চোখে ঝলমল করছে।
তার এই বেঁচে থাকার কাহিনি আজও ইতিহাসে অদম্য সাহসের প্রতীক। একজন মানুষ প্রমাণ করলেন, জীবনকে বাঁচানোর ইচ্ছা আর মানসিক শক্তি যদি থাকে, তবে মৃত্যুই তাকে থামাতে পারে না।
জুলিয়ান কোপকে-এর এই কাহিনি শুধু বেঁচে থাকার গল্প নয়, এটি মানব জীবনের শক্তি, সাহস, এবং আশা নিয়ে এক চিরন্তন শিক্ষা।