
06/05/2025
ফিরে পেতে চাই শৈশবটা...
রাস্তার ধারে হাঁটছিলাম—চেনা শহর, অচেনা ব্যস্ততা।
মনে হচ্ছিল, এই শহরের প্রতিটা ইট-পাথর যেন আমাকে কেবল বড় করে তুলেছে, কিন্তু ছোট করে তুলতে পারেনি আর একটুও। ছোট হতে ইচ্ছে করছিল খুব... খুব বেশি।
হঠাৎ পাশেই দাঁড়াল এক রিকশাওয়ালা।
চোখে ক্লান্তি, তবু ঠোঁটে এক অদ্ভুত শান্ত হাসি।
— মামা, কোথায় যাবেন? চলেন, নামিয়ে দেই।
আমি একটু হেসে বললাম,
— চলো, আমাকে নামিয়ে দাও।
রিকশায় উঠে বসলাম। শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে সামনে এগোতে থাকলো আমাদের দু’জনের চাকা—একজন জানে গন্তব্য, আর অন্যজন খুঁজছে তার হারানো গন্তব্য।
অনেক দূর যাওয়ার পর হঠাৎ রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করল,
— মামা, বলেন নাই তো কোথায় নামাবো?
আমি একটু চুপ করে থাকলাম। তারপর ধীরে বললাম,
— সেই জায়গায় নামিয়ে দিও, যেখানে আমি আমার ছোটবেলাকে খুঁজে পাবো।
সে থমকে গেলো।
— মানে?
আমি চোখ বন্ধ করে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেললাম মনে মনে—
— যেখানে গেলে আমি আবার হতে পারি সাত-আট বছরের একটা পিচ্চি। হাতে পট্টি বাঁধা একটা ক্রিকেট ব্যাট, মুখে ঝাল মুড়ির স্বাদ। যেখানে বিকেলে মাঠে ছুটে যেতাম শুধু আনন্দ পেতে—not to win. যেখানে মা একটা কলা আর বিস্কুট দিয়ে বলতো, ‘তাড়াতাড়ি আসিস।’ স্কুলের টিফিনে ভাগ করে খাওয়া শিঙাড়া, বন্ধুরা মিলে লুকিয়ে দেখা সিনেমা পোস্টার, আর রাত্রে টিভির সামনে চোখ কচলে ঘুমানোর লড়াই... ওইখানে আমাকে নামিয়ে দিও ভাই।”
রিকশাওয়ালা গভীরভাবে আমার দিকে তাকাল। তারপর ধীরে বলল,
— “মামা, তাহলে আমিও যাব আজ সেদিকে। আজ আপনার কাছ থেকে ভাড়া নিব না। আজ আমরা একসাথে ফিরবো—ছোটবেলায়।”
শহর তখনও ছুটছে, মানুষ ছুটছে...
কিন্তু আমি আর সেই রিকশাওয়ালা ছুটছিলাম এক ভিন্ন পথে—সময়ের গলি ধরে, স্মৃতির মোড়ে মোড়ে, শৈশবের অলিগলি ঘুরে...
হয়তো কারও কাছে এটা শুধুই একটা গল্প,
কিন্তু যারা হারানো শৈশবের গন্ধ পায় বিকেলের হাওয়ায়, তারা জানে—শৈশব কখনো মরে না।
ওটা রিকশার মতো—ঠিক একদিন এসে দাঁড়ায় পাশে, জিজ্ঞেস করে...
মামা, কোথায় যাবেন?
✍️ লেখা: জামিল আহম্মেদ