02/07/2025
এমপি'র ভূমিকা: উন্নয়ন নাকি আইন প্রণয়ন? এক বিভ্রান্তির দুষ্টচক্র!
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এমপি (সংসদ সদস্য) সম্পর্কে একটি বদ্ধমূল ধারণা হলো, তাঁরা বুঝি স্থানীয় উন্নয়নের মূল কাণ্ডারি। অথচ, এমপির মূল কাজ কিন্তু উন্নয়ন করা নয়, আইন প্রণয়ন করা! আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক গভীর ক্ষত এটি, যা এমপির আসল ভূমিকাকে আড়াল করে রেখেছে।
প্রকৃতপক্ষে, স্থানীয় উন্নয়নের মূল দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এছাড়াও, জেলা ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ আমলারা তাঁদের নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এমপির কাজ হলো জাতীয় সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা এবং দেশের জন্য প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করা। প্রতি অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি এসেছে যাতে কোনো অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত না হয় এবং সকলের সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়। এমপির মূল ভিত্তি হওয়া উচিত আইন প্রণয়নের যোগ্যতা, কেবল উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি নয়।
গণতন্ত্রের সংকট ও সমাধানের অগ্রাধিকার
বর্তমানে আমাদের সরকার ব্যবস্থার মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। আশা করি, আমরা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করব যে, আমাদের মূল সমস্যা হলো স্বৈরাচারী প্রবণতা। এর পরেই আসে নির্বাচনী দুর্নীতির মতো গুরুতর সব সমস্যা। আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় এই মুখ্য বিষয়গুলোই সবার আগে থাকা উচিত।
আমাদের চলমান নির্বাচনী পদ্ধতি যে এসব সমস্যার সমাধানে দুর্বল, তা তো বারবার প্রমাণিত। ফ্যাসিবাদমুক্তির জন্য যে রক্ত ঝরেছে, তার দাগ এখনো দগদগে। তাই, আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানের মূল সফলতা হবে ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনোই কায়েম না হয় তা নিশ্চিত করা। নতুন করে ফ্যাসিবাদ জন্ম নিলে, তা নিঃসন্দেহে জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ প্রমাণিত করবে।
পিআর পদ্ধতি: বাংলাদেশের বর্তমান সংকটের সর্বোত্তম সমাধান?
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন পূরণে যে নির্বাচনী পদ্ধতি সর্বাপেক্ষা উত্তম, সেটাই আমাদের একমাত্র সমাধান। অগ্রাধিকার তালিকার নিচে থাকা কোনো বিষয় যদি কোনো কারণে সেই পদ্ধতির মাধ্যমে পূরণ নাও হয়, তবুও এর বিপরীত কিছু চিন্তা করার অবকাশ নেই।
তাই, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপাপটে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সমাধান। এটি নিশ্চিত করতে পারে যে জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটবে এবং কোনো একক গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হবে না, যা গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অপরিহার্য।