23/08/2024
ইন্টারনেটের জগতে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা সত্যিই লোমহর্ষক এবং রহস্যময়। নিচে এমন কিছু ঘটনা উল্লেখ করা হলো:
১. "ইউনাবোম্বার" ও টেড কাচিনস্কির সন্ত্রাসী কার্যক্রম:
টেড কাচিনস্কি, যিনি "ইউনাবোম্বার" নামে পরিচিত, ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে ১৬টি বোমা পাঠান, যার ফলে তিনজন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের মতবাদ প্রচার করতে চাইলে FBI তার ম্যানিফেস্টো অনলাইনে প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে তার ভাই তাকে চিনে ফেলেন এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্তকরণের একটি নজির স্থাপন করে।
২. "দ্য সিল্ক রোড" ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস:
"দ্য সিল্ক রোড" ছিল একটি ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস যেখানে অবৈধ ড্রাগ, অস্ত্র, এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ পণ্য কেনাবেচা করা হতো। এটি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৩ সালে FBI এটি বন্ধ করে দেয়। এর প্রতিষ্ঠাতা রস উলব্রিক্ট ("ড্রেড পাইরেট রবার্টস" নামেও পরিচিত) গ্রেফতার হন এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনা ইন্টারনেটের অপরাধমূলক ব্যবহারের একটি ভয়ানক দৃষ্টান্ত।
৩. "ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ":
"ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ" ছিল একটি অনলাইন গেম, যা ৫০ দিনের চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে পরিচালিত করত। এই গেমটি ২০১৬-২০১৭ সালের দিকে প্রচুর কিশোরের আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে এবং ইন্টারনেটে কীভাবে বিপজ্জনক গেম ছড়িয়ে পড়তে পারে, তা প্রমাণ করে।
৪. "মাইক্রোসফট টেই" - AI বটের দানবীয় রূপ:
২০১৬ সালে মাইক্রোসফট "টেই" নামে একটি AI চ্যাটবট চালু করে যা মানুষের সাথে কথোপকথন শিখত। কিন্তু, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এর মধ্যে বর্ণবাদী এবং আক্রমণাত্মক কন্টেন্ট ঢুকিয়ে সেটিকে দানবীয় রূপ দেয়। এই ঘটনা AI এবং ইন্টারনেটের অন্ধকার দিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
৫. "মোমো চ্যালেঞ্জ":
"মোমো চ্যালেঞ্জ" ছিল একটি ভুয়া অনলাইন গেম যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ প্রচার করত এবং ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যা করার নির্দেশ দিত। যদিও এটি সত্যি ছিল না, তবুও এই গুজব প্রচুর মানুষকে আতঙ্কিত করেছিল এবং এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের ভয়ানক গুজব কীভাবে ছড়াতে পারে তা বোঝা যায়।
৬. "কিকি চ্যালেঞ্জ" - বিপজ্জনক ট্রেন্ড:
"কিকি চ্যালেঞ্জ" একটি ভাইরাল ইন্টারনেট চ্যালেঞ্জ যেখানে লোকেরা চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে নাচত। এটি বেশ বিপজ্জনক ছিল এবং এর কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা ইন্টারনেটের ভাইরাল ট্রেন্ডগুলোর বিপদকে চিহ্নিত করে।
৭. "ফেসবুক লাইভে খুন":
২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে সরাসরি খুনের ঘটনা সম্প্রচার করেন। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচারের নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
৮. "জিপসি ব্ল্যানচার্ড হত্যা":
ডি ডি ব্ল্যানচার্ড তার মেয়ে জিপসিকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং তার নামে অনলাইনে সহানুভূতি আদায় করেন। কিন্তু জিপসি তার মায়ের অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য প্রেমিকের সাহায্যে তাকে হত্যা করে। এই ঘটনা ইন্টারনেটে ছদ্মবেশ ও প্রতারণার একটি চরম উদাহরণ।
এই ঘটনাগুলো ইন্টারনেটের শক্তিশালী এবং অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরে। ইন্টারনেট যেমন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে, তেমনি এর নেতিবাচক প্রভাবও কম নয়। সচেতনতা ও সতর্কতা এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।