12/06/2025
গ্রামে কাটানো ঈদের কয়েকটা দিন যেন স্বপ্নের মতো কেটেছিল। মায়ের হাতের রান্না, বাবার মুখে প্রশান্তির হাসি, ভাই-বোনের আড্ডা, আর স্ত্রীর চোখের সেই শান্ত দৃষ্টি—সবকিছু মিলে একটা আলাদা জগৎ।
কিন্তু আজ সকালে যখন ব্যাগ গুছিয়ে আবার ঢাকার পথে রওনা হলাম, মনটা যেন হুহু করে উঠল।
বাস ছাড়ার আগমুহূর্তে মা বলল,
“ভালো করে থেকো বাবা, নিজের শরীরের খেয়াল রেখো।”
আর আমি জোর করে হেসে বললাম, “মা, কিছু হবে না... আবার ঈদের আগেই আসব।”
কিন্তু ভিতরে ভিতরে বুকের ভিতরটা ফাঁকা হয়ে গেল।
আমার ছোট বোনটা চুপ করে ছিল—একদম কিছু বলল না। শুধু শেষ মুহূর্তে গলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল,
“ভাইয়া, তুমি গেলে বাড়িটা একদম ফাঁকা হয়ে যায়…”
আমি বাসে উঠে জানালার পাশে বসি। গ্রামের রাস্তা ধীরে ধীরে পিছনে পড়ে যেতে থাকে। গাছগুলো, পুকুরপাড়, দোকান, মাঠ—সব যেন বিদায় জানাচ্ছে আমায়। মনে হচ্ছিল আমি শুধু জায়গা ছেড়ে আসছি না, ছেড়ে আসছি একটা টুকরো শান্তি।
ঢাকায় ঢুকতেই কেমন একটা ভারী বাতাস—চেনা গলি, চেনা ধোঁয়া, ক্লান্ত মুখ।
চোখে একটা ঘোর। মনে হচ্ছিল গ্রামে আমার শরীরটা পড়ে আছে, আমি শুধু একটা খোলস নিয়ে ফিরে এসেছি।
অফিসে ঢুকেই বোঝা গেল, সব আগের মতোই আছে—চাপ, হিসাব, কল, রিপোর্ট। কিন্তু আমি আর আগের মতো নেই।
কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ মায়ের মুখ মনে পড়ে যায়। কানে বাজে বাবার সেই ডাকে—
“চা খেয়ে যা বাবা…”
আর মনে পড়ে, সেই রাতে স্ত্রীর কাঁধে মাথা রেখে বলেছিলাম—
“আবার কবে ফিরতে পারব জানি না…”
হ্যাঁ, আমি ফিরে এসেছি।
কিন্তু ফেরা মানে কি সবকিছু ফেলে রেখে আসা?
এই শহরে আমি রোজ স্বপ্ন দেখি, রোজ যুদ্ধ করি—তবু মনটা পড়ে থাকে সেই মাটির ঘরে, যেখানে মানুষগুলো টাকায় না, ভালোবাসায় বাঁচে।