Lost Time Found

Lost Time Found বিশ্বাস রাখুন রবের প্রতি, একদিন আপনার চাওয়া গুলো পূর্ণতা পাবে!💝

বিয়ে বাড়িতে গিয়ে যখন জানতে পারলাম আমার হবু স্ত্রী আমার থেকে বয়সে পাঁচ বছরের বড়৷ তখন আব্বু দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি অসহায় ...
11/12/2025

বিয়ে বাড়িতে গিয়ে যখন জানতে পারলাম আমার হবু স্ত্রী আমার থেকে বয়সে পাঁচ বছরের বড়৷ তখন আব্বু দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে এটা স্পষ্ট যে আমাকে বিয়েটা করতেই হবে। এমন সময় আসে পাশের লোকের নানান কথা আমার কানে এলো৷

-- আরে ভাই ছেলের মনে হয় দোষ আছে। না হলে কি কেউ নিজের থেকে বড় মেয়েকে বিয়ে করে নাকি?

-- হুম দোষ ছেলের আছে কিনা জানি না তবে মেয়েটার তো আছে। তাতো সকলেই জানে। দোষ আছে বলেই তো এমন সুন্দরী মেয়ের বিয়ে হয় না।

-- আরে ভাই সব কিছু টাকা। মেয়ের বাপ ছেলে পক্ষকে বিশলাখ টাকা দিয়েছে তাই তো ওমন মেয়েকে বিয়ে করছে।

-- টাকার জন্য মানুষ কতো কিছুই না করে। আজ তা নিজের চোখে দেখলাম। না হলে কেউ কি এই মেয়ে বিয়ে করো নাকি?

এমন সময় আমার এক বন্ধু আমার কাছে এসে বললো ঃ- কিরে কতটাকায় বিক্রি হলি তুই? আমাদের তো জানতেই দিলি না। গভীর পানির মাছ কিন্তু তুই!

সকলের কথা শুনে আমার চোখ থেকে পানি পড়ছে। আসলেই তো আমাকে কেন আমার থেকে বড় মেয়েকে বিয়ে করতে হবে? শুধু কি টাকার জন্য? আসলেই কি মেয়ের বাড়ি থেকে আমাদের টাকা দিয়েছি। নিজের বাবা শেষ পর্যন্ত টাকার জন্য রক্তের ছেলেকে বিক্রি করে দিলো৷ নাহ আর কিছু ভাবতে পারছি না। চোখ থেকে পানি পড়ছে। কি করে এসব হয়ে গেলো।

আমি আকাশ। সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। এই বয়সে মানুষের কত স্বপ্ন থাকে আমারও ছিলো৷ কিন্তু আজ সবকিছু শেষ মনে হচ্ছে। বাবা মা আর আমি। তিনজনের ছোট পরিবার আমাদের। বাবা সামান্য বেতনের চাকরি করে তাই দিয়ে আমাদের খুব ভালো চলে যায়৷ বলতে গেলে সুখী পরিবার আমরা৷ সকলের মতো আমারও ইচ্ছে ছিলো কলেজ শেষ করে একটা চাকরি পাওয়ার পর মিষ্টি একটা মেয়েকে বিয়ে করবো কিন্তু নাহ তার আগেই কি থেকে কি হয়ে গেলো।

বিয়ের সকল পর্ব শেষ করে বিদায় নেওয়ার সময় মেয়ের বাবা আমার হাত ধরে বললো ঃ- আমার মেয়েটাকে সুখী রেখো বাবা। ও খুব ভালো।

তার কথার কোনো উত্তর আমি দিলাম না। আব্বু বিয়ের আগে যে মেয়ের ছবি দেখিয়ে ছিলেন তাকে দেখে আমি এতোটাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে নিজের চোখে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি। হয়তো নিজের চোখে দেখলে এমনটা হতো না। যেখানে নিজের বাবা মেয়ের সকল খোঁজ খবর নেয় সেখানে আমার নাকগলানোটা প্রয়োজন মনে করিনি।

বাড়ি ফিরে সকলের কথায় আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো। এমন সময় মা আর বাবার কিছু কথা কনে ভেসে এলো-

-- ছেলেটা কে কি এমন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়া উচিত কাজ হলো? ( বাবা)

-- আরে তুমি চুপ করো। সাথে যে বিশলাখ টাকা পাচ্ছো সেইটাও তো দেখো। কে কি বললো তাতে আমাদের কি?

-- ছেলেটার জীবনটা শেষ করে দিলাম মনে হয়!

-- আরে কিসের জীবন শেষ? ওকে বাঁচাতেই তো..............................

আমাকে দেখে মা বাবা দুইজনই চুপ হয়ে গেলো। মা আমাকে রাগী গলায় ঘরে যেতে বললো। কিন্তু আমার ঘরে যেতে ইচ্ছা করছে না। এখনও আমার ওই মেয়ের মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না। কি নির্লজ্জ মেয়ে যে নিজের ছোট ভাইয়ের বয়সের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়।


মা বাবার কথায় জোর করে একবার ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখলাম মাথায় ঘোমটা দিয়ে একটি মেয়ে বসে আছে। মানুষের মনে নানান আবেগ অনুভূতি হয় কিন্তু আমার শুধু ঘৃণা আর রাগ হচ্ছে৷ শব্দ করে দরজা লাগাতেই সে কেঁপে উঠলো। আমার ওকে ছোঁয়ার বা ওর সাথে ঘুমানোর কোনো ইচ্ছাই নেই। তাই ওর পাশে রাখা বালিশ আর কাঁথাটা আনতে গেলে সে আর্তনাদ করে বলে উঠল

-- আমার পিরিয়ড চলছে। প্লিজ আমাকে জোর করবেন না।

-- আমার আপনাকে ছোঁয়ার কোনো ইচ্ছা নেই৷ সবাইকে নিজের মতো ছোট মনে করবেন না৷ আমি নিচে ঘুমাচ্ছি আপনি খাটে ঘুমিয়ে পড়ুন। ( বেশ রেগে রেগে কথাগুলো বললাম)

মেয়েটা আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো৷ আমি বালিশ আর কাঁথা নিয়ে নিচে ঘুমিয়ে পড়লাম। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে আমার একটু ঘুম দরকার। মেয়েটার মুখ দেখতেই ইচ্ছে করলো না। যাকে দেখে মায়ায় পড়েছিলাম সে কিছুতেই এই বুড়ি হতে পারে না৷ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলতেই দেখলাম কেউ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে। কেউ জানালাটা বন্ধ করার চেষ্টা করছে। আমি অবাক হয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম

-- এতো রাতে জানালা বন্ধ করছেন কেন?

-- আপনাকে দেখলাম বাতাস আসার জন্য ঘুমাতে পারছেন না। তাই বন্ধ করতে দিতে চাইলাম। কিন্তু পারছি না।

-- চুপচাপ নিজের কাজ করেন। আমার ঘরের জিনিস বা আমাকে নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা করতে হবে না আপনাকে,। নিজের ছেলের বয়সি ছেলেকে বিয়ে করেন লজ্জা করে না আপনার?

-- আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি৷ যেখানে আমি কোনোদিন মা হতে পারবো না সেখানে কাউকে কেন বিয়ে করবো? আব্বু আমার জোর করে নিজের সম্মান বাঁচাতে বিয়ে দিয়েছেন৷ আমি কারো ক্ষতি করতে চাইনি। ( কিছুটা ভেজা গলায়)

-- বিয়ে করার ইচ্ছে নেই হা হা হা। আরে যদি এতো ভালো হন আপনি তাহলে নিজের হাত কেটে মরে যেতেন৷ আমার জীবনটা শেষ করে দিয়ে এখন নাটক না করলেই হয়। ( কড়া গলায় কথাগুলো বললাম)

-- আমি সত্যি নাটক করছি না।

-- আরে তুই তো একটা বাজারের মেয়ের মতো যে শরীরের সুখের জন্য কোনো ছেলের গলায় ঝুলে যায়। তোর তো কাউকে বাবা ডাক শোনানোর ক্ষমতাও নেই। নিজের মুখ দেখাতে লজ্জা করে না? আমি হলে কবেই মরে যেতাম।

মেয়েটা আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ঘাটের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লো। স্পষ্ট কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম কিন্তু মনে কোনো মায়া দয়া আসলো না। তাই চুপচাপ ঘুমাতে গেলাম। পরের পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে ফলো দিয়ে রাখুন আমাকে ফলো দিয়ে রাখলে পরের পর্ব পোস্ট করার সাথে সাথে নোটিফিকেশন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে আমাকে ফলো না দিলে পরের পর্ব পড়তে পারবেন না খুঁজে পাবেন না।

সকালে উঠে দেখলাম সারাঘর রক্তে ভেসে আছে। তাহলে কি মেয়েটা সত্যি আত্মহত্যা করেছে? না না এমন কিছু হলে আমি সহ আমার পরিবার জেলের ভাত খাবে। তাড়াতাড়ি উঠে মেয়েটার কাছে গেলাম। মুখের সারা জায়গাতে কালি লেপটে আছে। হাত দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম বেশ গভীর করে হাত কাটা। ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে সকলে ডাকলাম। এখন কি হবে? আমার সামান্য কথায় মেয়েটা এমন করে বসবে আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি। আপনারা বলেন পরের পর্ব পাই না পাবেন কি ভাবে আমাকে ফলো না দিলে আমার গল্প আপনাদের সামনে যাবে না আমাকে ফলো দিয়ে রাখলে পরের পর্ব পোস্ট করার সাথে সাথে নোটিফিকেশন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে আমাকে ফলো না দিলে পরের পর্ব পড়তে পারবেন না খুঁজে পাবেন না
*

পার্ট -১
#হয়তো_তুমিই_আমায়
#ফারহানা_কবীর_মানাল

হ্যাপি রিডিং ❤️

 ুঠো_রোদ্দুর [ ১৮ ও শেষ পর্ব ]লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজআদনানের তাকানো দেখে আদিবা অনেকটায় ভয় পেয়ে যায়। আদনান কি আদিবাকে চিন...
10/12/2025

ুঠো_রোদ্দুর
[ ১৮ ও শেষ পর্ব ]
লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদনানের তাকানো দেখে আদিবা অনেকটায় ভয় পেয়ে যায়। আদনান কি আদিবাকে চিনতে পারবে?

-- স্যার আমাকে চিনতে পারছেন? আমি আদিবা।

আদনান নিশ্চুপ,,

-- স্যার কথা বলছেন না কেন?

-- আমার মা-বাবা কোথায়? ওনারা ঠিক আছে তো?

আদনানের কথাটা শুনে আদিবা একটু অস্থির নিশ্বাস ফেলে। কিন্তু আদনানের প্রশ্ন টা শুনে আদিবার মন খারাপ হয়ে যায়৷

-- আদিবা, আমার আব্বু আম্মু কোথায়? ওনাদের দেখতে পারছিনা কেন? আর আমি এখানে কীভাবে আসলাম?

-- স্যার আপনি একটু শান্ত হোন। আপনাকে আমি পরে সব বলব।

-- তুমি দেশে চলে আসলে কেন? তোমার পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেশে কেন আসলে? আমাদের এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে চলে আসলে নাকি? আমাদের জন্য কেন তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ না করে চলে আসলে। তোমাকে যে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

আদনানের কথা শুনে আদিবার কান্না বেড়ে যেতে থাকে। একটা মানুষ অসুস্থ থেকেও অন্যের কথা ভাবে। আদিবা এবার চোখের পানি মুছে আদনানের কাছে গিয়ে বলল।

-- স্যার আমি ডাক্তার হবে ফিরে এসেছি। আর আমি এই হাসপাতালে একজন ডাক্তার। আর আপনি দুই বছর তিন মাস পরে কোমা থেকে ফিরে আসছেন।

আদিবার কথা শুনে আদনান হতবাক হয়ে গেলো।

-- কি বলছ এসব?

-- জি স্যার।

-- কংগ্রাচুলেশনস।

-- ধন্যবাদ স্যার। আপনি এখন একটু রেস্ট করুন প্লিজ।

-- কিন্তু আমার আব্বু আম্মু কোথায়? তাদের কেন দেখতে পাচ্ছিনা। সেদিন আমার একটা ভুলের জন্য সব এলোমেলো হয়ে গেলো।

-- স্যার। আপনি আগে রেস্ট করুন।

নার্স এসে আদনানকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দেয়। তারপর আদনান ঘুমিয়ে পড়ে। আদিবা অনেক খুশি হয়। আদিবার মনে যে ভয় ছিল সেটা দূর হয়ে যায়। কিন্তু সে আপনাকে কীভাবে বলবে তার মা-বাবা আর বেঁচে নেই? আদনান কি এই অবস্থায় এমন খবর নিতে পারবে? আদিবা কি করবে বুঝতে পারছেনা। আদিবা এবার সব চিন্তা বাদ দিয়ে আদনানের জন্য খাবার রেডি করে। অনেক্ক্ষণ পরে আদনানের ঘুম ভেঙে যায়।
আদিবা আদনানকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আদনান আবার জিজ্ঞেস করে।

-- আদিবা বলছ না কেন আমার মা-বাবা কোথায়? তারা ঠিক আছে তো?

-- স্যার কীভাবে যে বলি। আসলে সেদিনের এক্সিডেন্টে আংকেল আর আন্টি দু'জনেই মারা যায়।

কথাটা শুনে আদনান স্তব্ধ হয়ে যায়। আদনানের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। আর তার চোখে ভেশে উঠে সেই দৃশ্যটা।

-- স্যার।

-- আদিবা, আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

আদিবা আর কোনো কথা না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আর আদনান কান্না করতে থাকে। নিজের মা-বাবার মৃত্যুর জন্য আদনান নিজেকে দ্বায়ী করতে শুরু করে।

কিছুক্ষণ পরে আদিবা আবার ভিতরে চলে আসে।

-- স্যার মন খারাপ করবেন না। ওনাদের জন্য দোয়া করুন।

-- জানো আদিবা সেদিন যদি আমি বেখেয়ালি হয়ে গাড়ি না চালাতাম আজ আমার আব্বু আম্মু আমার কাছেই থাকতো। আমি তাদের মৃত্যুর কারণ।

-- স্যার এসব বলবেন না। এখানে আপনার কোনো হাত নেই। ওনাদের হায়াত শেষ হয়ে গিয়েছে। আর এটা তো একটা এক্সিডেন্টে।

আদনানের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। আদিবা এবার আদনানের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল -- স্যার কান্না করবেন না। যখন আমি আমার পরিবারের মানুষ এক মাত্র বাবাকে হারালাম তখন তো আপনি আমার পাশে ছিলেন। আমাকে বোঝালেন। তাহলে আজ আপনি কেন ভেঙে পড়ছেন স্যার?

-- আমি এমন হতভাগা সন্তান যে নিজের মা-বাবার কবরের মাটি অব্দি দিতে পারিনি। শেষ বারের মতো তাদের মুখ অব্দি দেখলাম না। কেমন সন্তান আমি?

এসব বলছে আর আদনান কান্না করছে। আদনানের কান্না দেখে আদিবা নিজের কান্না লুকাতে পারছেনা।

-- স্যার প্লিজ এভাবে ভেঙে পড়বেন না।

-- জানো আদিবা সেদিন যদি আব্বু আম্মুর সাথে আমার মৃত্যুটাও হয়ে যেতো তাহলে আজ আর এতো কষ্ট হতোনা।

-- স্যার প্লিজ এসব বলবেন না।

-- আম্মু শেষ বার তোমার কথা বলছিল। বলছিল আদিবাকে যদি একবার দেখতে পেতাম। মেয়েটাকে খুব মিস করছি।

আদিবা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। সে আপনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আদনান ও আদিবাকে জড়িয়ে ধরে।

কিছুক্ষণ পরে আদনান নিজেকে সামলে আদিবাকে বলল -- আদিবা, শান্ত হও।

তারপর দু'জন চুপচাপ হয়ে যায়। এর মধ্যে কেটে যায় আরো দু'দিন। আদনান অনেক টাই সুস্থ হয়ে উঠে। আদিবা ঠিক করে আদনানকে নিয়ে তার বাসায় চলে যাবে। তাই সেই কথা বলার জন্য আদিবা আদনানের কাছে আসে।

-- স্যার এখন আপনাকে নিয়ে আমার বাসায় চলে যাবো। আপনি আগের থেকে অনেক টাই সুস্থ হয়েছেন।

-- তোমার বাসায় কেন? তোমার হাসবেন্ড কিছু বলবেনা?

আদনানের কথা শুনে আদিবা রাগী একটা ভাব নিয়ে দুই হাত কোমরে দিয়ে বলল -- হাসবেন্ড কই থেকে আসল?

-- কেন তুমি এখনো বিয়ে করোনি?

-- না তবে এবার করব। চলুন এখন আমার সাথে।

-- কোথায়?

-- আমার বাসায়।

তারপর আদিবা আদনানকে সাথে নিয়ে বাসার দিকে চলে যায়। আদনান আদিবার রুমের দিকে যেতেই দেখে দেওয়ালে আদনানের ছবি লাগানো।

-- আমার ছবি এখানে কেন?

-- এসব আপনার না জানলেও চলবে। এখন রেস্ট করুন আমি আপনার জন্য রান্না করে আসি।

আদিবা রান্না করতে চলে যায়। রান্না শেষ করে আদনানকে খাবার খাইয়ে দেয়। এভাবে কিছুদিন কেটে যায়। আদনান এখন অনেকটাই সুস্থ। আদনান আদিবাকে বলল।

-- আদিবা আমি আবার হাসপাতালে টা চালু করব৷

-- ঠিক আছে। আমিও আপনার সাথেই থাকব।

-- তোমার হাসপাতাল?

-- সমস্যা নাই আমি ওখানে না করে দেব। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই স্যার।

-- আদিবা আমি চলে যাবো। এখন তো আমি ঠিক আছি। তাই বলছিলাম আমি আরেকটা বাসা নেব।

-- বাসা নিতে হবে কেন? এই বাসায় কি আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে থাকতে?

-- আমার না হলেও তোমার সমস্যা হবে। মানুষ তো অনেক রকম কথা বলবে। একটা মেয়ের বাসায় একটা ছেলে থাকা মানে বুঝতে পারছো? এটা কখনও মানুষ ভালো চোখে দেখবেনা।

-- কে কি ভাবে এসব আমি ভাবিনা স্যার। আপনি এখানেই থাকবেন। আমি আপনাকে দূরে থাকতে দেবনা। অনেক কষ্ট করে আমি আপনাকে ফিরে পেয়েছি।

আদনান আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে।

-- স্যার আপনাকে একটা কথা বলার ছিল। এই কথা আপনাকে বলা খুব দরকার। অনেক বার বলতে গিয়েও বলা হয়নি।

-- হুম বলো।

-- স্যার আপনাকে আমি অনেক আগে থেকেই একটা কথা বলতে গিয়েও বলতে পারিনি। যে কথা আপনাকে বলা খুব প্রয়োজন আমার। স্যার আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আপনার বুকে মাথা রেখে আমি আমার বাকি জীবন কাটাতে চাই।আপনার বুকে একটু কি ঠাঁই দিবেন আমায়?

-- তুমি তো আমার অন্ধকার জীবনে রোদ্দুর হয়ে এসেছো। আদিবা, তোমাকেও যে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। যে কথা তোমাকে কখনও হয়নি। তুমি যখন চলে গিয়েছিলে। তোমার অভাব আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছিলাম। তখনই বুঝতে পারছি তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি।

আদনানের কথা শুনে আদিবা আদনানকে জড়িয়ে ধরে। আদনানও আদিবাকে জড়িয়ে ধরে।

পরের দিন আদনান আর আদিবার বিয়ে হয়ে যায়। আদিবা বাসর ঘরে আদনানের জন্য অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আদনান বাসর ঘরে প্রবেশ করে। আদিবা আদনানের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। আদনান আদিবার কপালে একটা চুমু খেয়ে আদিবাকে কোলে তুলে খাটের উপরে নিয়ে যায়।

-- স্যার!

আদিবা স্যার কথাটা বলতেই আদনান আদিবার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল -- আজ থেকে আমি তোমার হাসবেন্ড। ডোন্ট কল মি স্যার। ওকে?

-- ইশশ! আমি তো স্যার বলেই ডাকব। জীবনের শেষ নিশ্বাস অব্দি আপনাকে আমি স্যার বলেই ডাকব। এই ডাক যা আমার খুব প্রিয়।

-- ঠিক আছে।

-- স্যার। একটা কথা মনে পড়ে?

-- কোন কথা?

-- আমি আপনাকে কি নামে ডাকতাম?

-- কি নাম?

-- গুড নাইট স্যার। হিহিহি।

এই কথা বলে দুজনেই হাসতে শুরু করে। আদনান এবার আদিবার কপালে একটা চুমু খায়। কিছুক্ষণ পরে আদনান আদিবার ঠোঁট নিজের দিন দখলে নিয়ে নেই। তারপর রুমের লাইট অফ করে দেয় আদনান। অন্ধকারে কি হচ্ছে আমি জানি না। তাই আপনাদের ও বলতে পারলাম না। হিহিহি। আর বেশি জানার আগ্রহ থাকলে বিয়ে করে নিন। তারপর থেকে শুরু হয় আদনান আদিবার নতুন জীবন। দু'জন হ্যাপি লাইফ কাটাতে থাকে। এভাবেই দু'জন দু'জনের পাশে থাকুক। এই বলেই গল্পটা শেষ করালাম।

সমাপ্ত।

আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা কেমন লেগেছে কমেন্ট জানাবেন। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত পাশে থাকার জন্য। নতুন গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসব ইনশাআল্লাহ। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। সবাই কিন্তু অবশ্যই জানাবেন কেমন লেগেছে। তাহলে নতুন কিছু লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। ধন্যবাদ সবাইকে, আল্লাহ হাফেজ

 ুঠো_রোদ্দুর [পর্ব - ১৭]লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজআদিবা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে দিকে চলে যেতে থাকে। আদিবার মা...
10/12/2025

ুঠো_রোদ্দুর
[পর্ব - ১৭]
লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদিবা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে দিকে চলে যেতে থাকে। আদিবার মাথায় অন্য একটা প্ল্যান কাজ করতে শুরু করে। আদিবার আত্মবিশ্বাস যে এটাই তার আদনান স্যার। আদিবা হাসপাতালের ভিতরে চলে যায়। আর আদনানের কেবিনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তখন সেই ডাক্তার আদিবাকে দেখে আদিবার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

-- আদিবা আপনি আবার ফিরে এলেন যে?

-- আদনান স্যারকে এখানে এভাবে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।

-- কিন্তু এখনও তো প্রমাণ হয়নি যে এটা আদনান।

-- প্রমাণ এক্ষনি হবে। যে মহিলা স্যারকে ওনার ছেলে বলছে ওই মহিলাকে আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। ওনাকে আমি কোথাও যেনো দেখেছি।

-- কি বলছেন?

-- হ্যাঁ প্লিজ আপনি আমার সাথে চলুন। আর আমাকে একটু সাপোর্ট করবেন। আমি আমার স্যারকে পেয়েও আর হারাতে চাইনা।

তখনই হাসপাতালের একজন নার্স দৌড়ে এসে ডাক্তারকে বলল।

-- ডাক্তার কোমায় থাকা রোগীকে তার পরিবার এখান থেকে নিয়ে যেতে চাইছে।

কথা টা শুনে ডাক্তার আর আদিবা দু'জন হতবাক হয়ে যায়। এবার আদিবা বলল,

-- দেখেছেন? এনারা পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছে। তাড়াতাড়ি চলুন।

ডাক্তার এবার আদিবার কথা বুঝতে পারে। ডাক্তার আর আদিবা আদনানের কেবিনের দিকে চলে যায়।

-- কি ব্যপার আপনি রোগী কে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? (আদিবা কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে)

-- এই হাসপাতালে আমার ছেলের চিকিৎসা হবে না। তাই আমরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাবো।

-- আমাদের এখানে যদি চিকিৎসা না হয় তাহলে আর কোথাও এই রোগীর চিকিৎসা হবে না। আমাদের এখানেই চিকিৎসা হবে। আর উনি সুস্থ হবেন। কারণ আমাদের এখানে বড় বড় ডাক্তার আছে।

-- কিন্তু!

আদিবা এবার ভিতরে আসতে আসতে বলল,

-- কিন্তু ওনারা তো ধরা খেয়ে যাবে এই হাসপাতালে থাকলে। তাইনা?

-- কি বলছেন আপনি এসব? আমরা কীসের ধরা খাবো? আমরা কি চোর নাকি? আপনি যাবে বলছে মনে হচ্ছে আমার এখানে চুরি করতে এসেছি?

-- তাহলে যখন শুনলেন আমি বাসায় চলে গেছি তখন কেন পালাতে চাইছেন? নিজেদের অনেক চালাক মনে করেন তাইনা? আমি পুলিশে ফোন দিচ্ছি সত্যি মিথ্যে তারা বের করবে। যদি প্রমাণ হয় এটাই ডাক্তার আদনান তাহলে তো বুঝতেই পারছেন আপনাদের কি হতে পারে?

আদিবার কথা শুনে এবার মহিলা আর লোকটা ভয়ে চুপসে যায়। আদিবা ব্যপার টা বুঝতে পেরে তাদের আরো ছেপে ধরে সত্যি কথা বের করার জন্য।

-- আপনার তো অপহরণ মামলা খাবেন। আর এই মামলার শাস্তি সম্পর্কে ধারণা আছে? এখন কি সত্যি কথা বলবেন নাকি আমি পুলিশকে কল দেব?দেখুন পুলিশ আসলে অনেক ঝামেলা হতে পারে। তাই বলছি আসল ঘটনা খুলে বলুন। এখনও সময় আছে।

মহিলা টা কান্না করতে করতে আদিবার পা জড়িয়ে ধরে।

-- পা ছাড়ুন।

-- প্লিজ পুলিশকে কল দিবেন না। আমি সব সত্যি কথা বলছি।

সেদিন আমি কাজ শেষ করে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছি। হঠাৎ দেখলাম একটা গাড়ি এক্সিডেন্টে হয়ে পড়ে আছে। তখন রাত ১১ টা বাজে। আশেপাশে কোনো লোক ছিলনা। তাই আমি গাড়িটাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। গাড়িটাও পরিচিত মনে হচ্ছে। আমি আর দেরি না করে গাড়ির কাছে চলে গেলাম। গাড়ির কাছে যেতেই আমার চোখ আকাশে উঠে যায়। গাড়ির ভিতরে পড়ে আছে ডাক্তার আদনান আর তার পুরো পরিবার। আমি খুব ভয়ে পেয়ে যায়। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি সবার নিশ্বাস পরিক্ষা করে দেখি সবাই মারা গিয়েছে। বেঁচে আছে শুধুই আদনান স্যার। তখনই তিনি জ্ঞানহীন। আমি তাড়াতাড়ি করে আমার হাসবেন্ড কে কল দেয়। উনি তাড়াতাড়ি করে চলে আসে। আমরা আর দেরি না করে ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম। ডাক্তার বলল উনি কোমা চলে গেছে। তখন আমাদের মাথায় খারাপ একটা মতলব চলে আসে। যদি স্যারের সব টাকা পয়সা দখল করে নেওয়া যায়। তবে আমরা বেশি খুশি হয়ে ছিলাম যখন ডাক্তার বলল আদনান কোমা থেকে ফিরে আসলেও উনি আগের সব স্মৃতি ভুলে যাবে। এটা ছিল আমাদের প্লাস পয়েন্ট। তাই আমরা ওনাকে ভালো একটা হাসপাতালে নিয়ে যাই। আর ওনার চিকিৎসা করতে থাকি। কিন্তু উনি কোমা থেকে ঠিক হচ্ছেনা দেখে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। আর এখানেই আসার পরে সব তো আপনারা জানেন। আমি দুই বছর ওনার সেবাযত্ন করছি। আসিবা আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেন নি। আমি আদনান স্যারের হাসপাতালে আগে ক্লিনারের কাজ করতাম।

-- এই জন্যই আপনাকে আমার খুব পরিচিত মনে হইছে। যাইহোক আপনি তাহলে আমাদের সাথে মিথ্যা কথা কেন বলছেন প্রথমে?

-- আমরা টাকায় লোভে অন্ধ হয়ে গেছিলাম। ভাবছিলাম উনি ঠিক হলে তো সব কিছুই ভুলে যেই পাকে ওনার সব আমাদের নামে হয়ে যাবে। ওনার কখনও অযত্ন করিনি। প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দিন এবারের মতো।

-- আপনাদের আমি ক্ষমা করে দিলাম। আপনাদের কারনেই আমি আমার স্যারকে ফিরে পেয়েছি। সেদিন যদি আপনারা স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে না যেতেন তাহলে খারাপ কিছু হতে পারতো। তবে আমার সাথে প্রথমে সত্যিটা বললে ভালো হতো।

-- আমরা আমাদের ভুলের জন্য অনুতপ্ত।

-- ঠিক আছে আপনারা এবার আসতে পারেন আজ থেকে ওনার দেখাশোনা আমি করব। এখানে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে এগুলো নিয়ে যান।

-- এসব আমাদের লাগবেনা।

এই কথা বলে ওনারা চলে যায়। আদিবা এবার সব সময় আদনানের পাশে থাকতে শুরু করে। সে আদনানকে সুস্থ করার জন্য সব চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু আদিবার মনে একটা ভয় কাজ করতে শুরু করে। যদি আদনান কোমা থেকে ফিরে আদিবাকে চিনতে না পারে? যদি সত্যিই আদিনানের মেমোরি লস হয়ে যায় তাহলে! আদিবা সব চিন্তা বাদ দিয়ে আদনানের চিকিৎসা করতে থাকে।

দেখতে দেখতে দুই মাস পার হয়ে যায়। আদনানের কোনো পরিবর্তন নেই।

আদিবা আদনানের হাত ধরে বলতে থাকে,,

-- স্যার আমি তো আর পারছিনা। আমার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে আপনাকে এভাবে দেখে। কতো স্ব নিয়ে দেশে ফিরে এসেছি। সব আপন মানুষকে হারিয়ে ফেলছি। শেষমেশ আপনাকে খুঁজে পেলাম। আমার না বলা কথা গুলো যে আপনাকে বলতে খুব ইচ্ছে করে। জানেন স্যার সব সময় ইচ্ছে করে আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। আপনাকে কখনো বলা হয়নি আমি যে আপনাকে কতটা ভালোবাসি। স্যার আপনার সাথে কথা বলার খুব ইচ্ছে আমার। স্যার! একটু কথা বলেন প্লিজ৷

তখনই কেবিনে প্রবেশ করে নীল।

-- ম্যাম! আপনি এসব কি করছেন?

আদিবা নীলের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেই।

-- আপনি একজন ডাক্তার হয়ে এমন করলে রোগীর কি হবে? চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। লান্স টাইম হয়েছে খেতে আসুন।

তারপর আদিবা চলে যায়। হঠাৎ করে আদনান নড়াচড়া করতে শুরু করে। এটা নার্স দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি করে আদিবার কাছে চলে যায়।

-- ম্যাম, স্যার নড়াচড়া করছে। তাড়াতাড়ি আসুন।

আদিবা খাবার শেষ না করে হাত ধুয়ে আদনানের কেবিনে চলে যায়। আদিবা কেবিনে গিয়ে দেখে আদিনান কোমা থেকে ফিরে এসেছে। আর সে বসে আছে। আদিবা ভিতরে যেতেই হতবাক হয়ে যায়। আদিবা এভার আদনানের কাছে চলে যায়।

-- স্যার! এখন আপনি কেমন আছেন?

-- আদনান আদিবার কথা শুনে আদিবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আদনানের তাকানো দেখে আদিবা খুশি হলেও মনে মনে ভয় পেয়ে যায়। আদনান কি আদিবাকে চিনতে পারবে নাকি চিনবেনা?

চলবে?

 ুঠো_রোদ্দুর [পর্ব - ১৬]লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ আদিবা আদনানের মতো কাওকে দেখে তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থামাতে বলে। ড্রাইভার দেরি...
10/12/2025

ুঠো_রোদ্দুর
[পর্ব - ১৬]
লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদিবা আদনানের মতো কাওকে দেখে তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থামাতে বলে। ড্রাইভার দেরি না করে গাড়ি থামিয়ে দেয়। আদিবা এক মিনিট ও দেরি করেনি। তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে লোকটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। যতই সে এগুচ্ছে ততই তার হার্ট বিট ক্রমশ বাড়তে থাকে। আদিবা খুব দ্রুত লোকটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

আদিবা যখনই স্যার বলে ডাক দিবে তখনই লোকটা পিছনের দিকে তাকায়। সাথে সাথে আদিবার ভাবনা গুলো এক নিমিষেই হারিয়ে যায়। কারণ সামনে যে আছে সে আদনান নই। অন্য কেউ। আদিবা লোকটাকে কিছু না বলে মাথা নিছু করে গাড়িতে এসে বসে। গাড়িতে বসে কান্না করতে শুরু করে। তারপর সে হাসপাতালে চলে যায়। হাসপাতালে এসে আদিবার কোনো কিছুই ভালো লাগছেনা। আদিবা মন খারাপ করে বসে থাকে। আদিবার মন খারাপ দেখে নীল এসে বলল।

-- ম্যাম কি হয়েছে আপনার? তখন থেকেই দেখছি আপনার মন খারাপ।

-- কিছু হয়নি তো।

-- ওহ আচ্ছা। পাশের কেবিনে একটা রোগী আসছে। ছেলেটার সাথে মনে হয় খারাপ কিছু হইছে দেখতে যাবেন?

-- নতুন আসছে নাকি?

-- জি অন্য একটা হাসপাতাল থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। অবস্থা তেমন বেশি ভালো নই। সব থেকে বড় কথা ছেলেটা কোমায় চলে গিয়েছে।

-- ওহ। অন্য কোনো ডাক্তার কি দেখেনি?

-- জি দেখেছে।

-- ওহ তাহলে তো আমার না গেলেও হবে। আমার জন্য একটা চা নিয়ে আসুন।

নীল এবার আদিবার জন্য চা করে নিয়ে আসে। আদিবা চা খাওয়া শেষ করে উঠে অন্য রোগীদের দেখতে যায়।

অন্যদিকে কোমায় থাকা ছেলেটার অবস্থা খুব খারাপের দিকে যেতে থাকে। হঠাৎ করে ছেলেটার নিশ্বাস ভারী হতে থাকে। তখন কেবিনের ভিতরে চিৎকার শুরু হয়ে যায়। ছেলেটার বাবা ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করতে থাকে। সাথে সাথে একটা ডাক্তার চলে আসে।

-- ডাক্তার আমার ছেলেকে দেখুন ও কেমন জানি করছে।

-- দাড়ান আমি দেখছি।

সাথে সাথে ডাক্তার ছেলেটাকে পরিক্ষা করতে থাকে। কিন্তু ডাক্তার ভালো ভাবে কোনো কিছুই ধরতে পারছেনা। ডাক্তার হতাশ হয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে আদিবার কাছে চলে গেলো।

-- ম্যাম আসবো?

-- জি।

-- ম্যাম আমার সাথে একটু চলুন। সাত নাম্বার কেবিনের রোগীর অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।

-- চলুন তাড়াতাড়ি।

এই কথা বলে দু'জন ছেলেটার কেবিনে প্রবেশ করে। আদিবা ছেলেটার পরিক্ষা করতে শুরু করে। কিন্তু আদিবা একবার ও এখনও ছেলেটার মুখের দিকে তাকায়নি। আদিবা ছেলেটার মেডিক্যাল রিপোর্ট গুলো ভালো ভাবে চেক করতে থাকে। চেক করে এবার আদিবা ছেলেটার দিকে তাকাতেই হতবাক হয়ে গেলো। আদিবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। কারণ বেডের মধ্যে শুয়ে থাকা লোকটা আর কেউ না। এটাই আদনান চৌধুরী।

আদিবা একটা চিৎকার দিয়ে আদনানের কাছে চলে গেলো।

-- আর আপনাকে আমি কতো যায়গায় খুজেছি। কোথাও আপনাকে পায়নি। আমার বিশ্বাস ছিল আমি আপনাকে একদিন ঠিক খুঁজে পাবো। আজ আমি আপনাকে খুঁজে পেয়েছি। তাও এই অবস্থায়।

আদিবা এই কথা বলে আদনানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে। আদিবার এসব কথা শুনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডাক্তার এ চুপচাপ হয়ে গেলো। সে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। সে হতবাক হয়ে আদিবার দিকেই তাকিয়ে আছে। আদিবার চিৎকার শুনে ছেলেটার বাবা ভিতরে চলে আসে কিছুক্ষণের মধ্যেই।

-- ডাক্তার আমার ছেলে ঠিক আছে তো?

লোকটা আদনানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল। আদনান বলে ফেললাম। কারণ ওর নাম এখনো আমরা জানিনা। আদিবা আদনান মনে করছে তাই আমিও বললাম। যাইহোক।

আদিবা এবার লোকটাকে জিজ্ঞেস করল,

-- উনি আপনার কে হয়?

-- ও আমার ছেলে।

-- কিহ! উনি আপনার ছেলে হয় কীভাবে? উনি তো ডাক্তার আদনান চৌধুরীর।

আদিবার কথা শুনে ভদ্রলোক বলল -- কি বলছেন এসব? ও তো আমার ছেলে আদিল।

-- দেখুন মিথ্যে কথা বলবেন না।

পাশে থাকা ডাক্তার বলে উঠলো -- এখানে এভাবে কথা বলা ঠিক হবে না। রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। আপনারা বাহিরে গিয়ে কথা বলুন।

আদিবা আদনানের কাছে গিয়ে কান্না করতে করতে বলল -- স্যার আপনার কিছু হবেনা। আপনি ঠিক হয়ে যাবেন।

ডাক্তার আর পাশে থাকা ভদ্রলোকটা অবাক হয়ে আছে। এবার সবাই বের হয়ে আসে।

-- আংকেল প্লিজ সত্যি কথা বলুন। আপনি আদনান স্যারকে কোথাও পেয়েছেন।

-- আপনি একজন ডাক্তার হয়ে কীসব বলছেন আমি তো আপনার কথা বুঝতেই পারছিনা। ও আমার ছেলে আদিল।

-- না, এটা হতে পারেনা। উনি আদনান চৌধুরী। আমার এতো বড় ভুল কখনও হতে পারেনা। আপনি আমার সাথে মিথ্যে বলছেন। আমি আদনান স্যারকে খুব ভালো করেই চিনি।

-- আজব মেয়ে তো তুমি। আমি বলছি ও আমার ছেলে আদিল। আর তুমি কি আবল তাবল বলেই যাচ্ছ।

-- আংকেল বিশ্বাস করুন। আদনান স্যারের পুরো পরিবার একটা এক্সিডেন্টে প্রাণ হারায়। আমার বিশ্বাস ছিল আদনান স্যার যেখানেই থাকুক উনি বেঁচে আছেন।

-- দেখো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।

আদিবা নিজের ফোন বের করে আদনানের আগের ছবি গুলো বের করে লোকটাকে দেখাতে থাকে। কিন্তু সে কিছুতেই বিশ্বাস করছেনা যে এটা আদনান। পাশে থাকে ডাক্তার ও ছবি গুলো দেখে অবাক হয়ে গেলো। কারণ এই ছবি আর রোগীর চেহারা হুবহু এক।

ডাক্তার এবার আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-- ম্যাম এক চেহারার মানুষ থাকতে পারে। হয়তো আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। উনি তো বলছে এটা ওনার ছেলে। আপনি বলছেন আদনান। প্রমাণ ছাড়া তো এগুলো বের করা সম্ভব নই।

-- আমার কাছে তো স্যারের ছবি আছে। আর কিসের প্রমাণ চাই আপনাদের? আদনান স্যারের পুরো পরিবারের ছবি তো আপনাদের দেখালাম।

-- ছবি তে তো সব প্রমাণ হয়ে যায়না। যাইহোক রোগীর মুখ থেকে তো জবানবন্দি নিতে হবে। আসলে সে কে?

-- কিন্তু আদনান স্যার তো এখন কথা বলার অবস্থায় নেই।

-- আমি জানি ম্যাম। এখন রোগী সুস্থ না হওয়া অব্দি আমাদের হাতে কিছু করার নেই।

-- যে ভাবেই হোক আমি ওনাকে সুস্থ করে তুলবো। দরকার হলে স্যারের দেখা শোনা আমি করব।

হঠাৎ করে একটা মহিলা এসে লোকটার কাছে বলল -- ওগো আমার আদিল এখন কেমন আছে?

মহিলাকে দেখে আদিবা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। কারণ মহিলাকে আদিবার কেন জানি পরিচিত মনে হচ্ছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা ঠিক মনে করতে পারছেনা।

মহিলা এবার ডাক্তারকে বলল -- ডাক্তার আমার ছেলে এখন কেমন আছে? আমার ছেলেটা কি ঠিক হবে না? সে কি আমাকে আর কখনও মা বলে ডাকবেনা?

মহিলা এসব বলছে আর কান্না করছে। আদিবা এবার মহিলাকে বলল -- আন্টি আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।

মহিলা আদিবার দিকে তাকিয়ে বলল - কি বলবেন বলেন?

-- আপনি কি আমাকে চিনেন? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি আপনাকে এর আগে কোথাও দেখেছি।

ভদ্রমহিলা কিছু বলতে যাবে তখনই তার স্বামী বলে উঠে -- আপনার সমস্যা কি? একবার বলেন আমার ছেলেকে চিনেন আরেকবার বলেন আমার স্ত্রীকে চিনেন। আপনার ব্যাপার টা তো ভালো মনে হচ্ছেনা। আপনি কি এখানকার ডাক্তার নাকি অন্য কিছু?

আদিবা কিছু বলতে যাবে তখনই ডাক্তার আদিবাকে বলল -- ম্যাম আপনি আমার সাথে চলুন।

এই কথা বলে ডাক্তার আদিবাকে নিয়ে তার কেবিনে চলে যায়। আদিবা বলল,

-- বিশ্বাস করুন আমি রোগীকে খুব ভালো ভাবে চিনি। ওড়না আমাদের সাথে মিথ্যা কথা বলছে।

-- মিথ্যা বললেও তো আমাদের কিছু করার নেই। কারণ উপযুক্ত কোনো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। সব কিছুর প্রমাণ হচ্ছে এই রোগী। রোগী যদি নিজের মুখে শিখার করে তাহলে প্রমাণ হবে এটা আদনান নাকি আদিল! এখন আপনি কিছু বলতে গেলে তারা আপনাকে অপমান করে কথা বলবে। তার চেয়ে ভালো আমরা অপেক্ষা করি। রোগী সুস্থ হওয়া পর্যন্ত। দেখুন ম্যাম আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু কিছু তো করার নেই। তারা তো আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার ও করতে পারে।

আদিবার চোঝ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আদিবা কোনো কথা বলছেনা।

ডাক্তার এবার নীলকে ডাক দিতেই নীল তাড়াতাড়ি করে চলে আসে। নীল এসে দেখে আদিবার চোখে পানি।

-- ম্যাম আপনি কান্না করছেন কেন কি হয়েছে আপনার?

আদিবা কান্না করেই যাচ্ছে।

-- ম্যাম কি হয়েছে?

ডাক্তার বলল -- নীল ম্যাম কে বাসায় নিয়ে যাও।

-- ডাক্তার সাহেব ম্যামের কি হইছে?

-- তেমন কিছু হয়নি। তুমি নিয়ে যাও। আর আদিবা আমি এখানে আছি চিন্তা করবেন না। হয়তো আপনার ও ভুল হচ্ছে।

নীল এবার আদিবাকে নিয়ে গাড়ির সামনে চলে যায়।

-- তোমাকে আসতে হবে না আমি একাই যেতে পারবো।

-- ঠিক আছে ম্যাম।

এই কথা বলে নীল চলে গেলো। আদিবা এবার গাড়িতে উঠে বসে। আদিবার হঠাৎ মনে হলো আপনাকে এভাবে একা ছেড়ে দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আদিবা এবার গাড়ি থেকে নেমে আবার হাসপাতালের দিকে চলে যেতে থাকে।

চলবে?

 ুঠো_রোদ্দুর [পর্ব - ১৫]লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ আদিবা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা যে আদনানের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। আদ...
09/12/2025

ুঠো_রোদ্দুর
[পর্ব - ১৫]
লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদিবা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা যে আদনানের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। আদিবার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। তখন লোকটা বলল,

-- এই হাসপাতালে যে ডাক্তার ছিল। সে অনেক ভালো মানুষ ছিল। হাসপাতালের মালিক আর ওনার স্ত্রীর লাশ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ওনার ছেলে মানে ডাক্তার আদনান চৌধুরীর লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। সবাই ধারণা করে নিয়েছে হয়তো সেও মারা গিয়েছে। লাশ হয়তো পানিতে পড়ে গেছে। সেই জন্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে বেঁচে থাকলে তো অবশ্যই এখানে ফিরে আসতো এতো দিনে।

আদিবা তো কান্না করেই যাচ্ছে। আদিবা বুঝতে ও পারেনি একটা পরিবার এভাবে শেষ হয়ে গেলো। আদিবা কান্না করতে করতে সেখানেই বসে পড়ে। লোকটার কথা শুনে আদিবা ভাবে আদনান স্যারের কিছু হতে পারেনা। আদিবার বিশ্বাস আদনান বেঁচে আছে।

লোকটা আদিবার কাছে এসে বলল -- কে তুমি মা?

আদিবা লোকটার কাছে সব কিছুই বলল। কান্না করতে করতে।

-- তুমি আমার সাথে চলো। আমার বাসায় আমার স্ত্রী আর আমি থাকি। তোমার যেহেতু এখন থাকার কোনো যায়গা নেই তুমি কিছুদিন আমার বাসায় থাকতে পারবে।

আদিবাকে ভদ্রলোক সাথে করে তার বাসায় নিয়ে যায়। ভদ্রলোক যেমন ভালো ওনার স্ত্রী ও অনেক ভালো। আদিবার ব্যাপারে সব জানতে পেরে মহিলা রাজি হয় আদিবাকে রাখার জন্য। আসিবাকে একটা রুমে নিয়ে যায়৷ আদিবা গিয়ে সেই রুমে বসে থাকে। আদিবার বেগ থেকে আদনানের ছবিটা বের করে। আর ছবির মধ্যে হাত ভুলিয়ে কান্না করতে শুরু করে। স্যার আমি কি আপনাদের সবাইকে হারিয়ে ফেললাম? কেন বার বার আমার সাথে এমন হয়? কেন আমার ভালোবাসার মানুষ গুলো আমাকে ছেড়ে চলে যায়? জন্মের সময় মাকে হারালাম। তারপর বাবাকে হারালাম। আপনাদের একটা পরিবার পেয়েছি। এখন আমি তাদের ও হারিয়ে ফেলছি। আমার সাথেই কেন এমন হচ্ছে? কি দোষ করেছি আমি? যে আল্লাহ আমার এতো বড় শাস্তি দিচ্ছেন। কেন আমার ভালোবাসার মানুষ গুলো আমার কাছে থাকেনা? স্যার আমার বিশ্বাস আপনার কিছু হতে পারেনা। আমি আপনাকে খুজে বের করবই।

আদিবা আদনানের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে মহিলাটা এসে দেখে আদিবা আদনানের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আর আদিবার চোখের কোনে পানি জমে আছে। মহিলা এবার আদিবাকে ঘুম থেকে তুলে।

-- কাল থেকে তো কিছুই খেলেনা। এভাবে থাকলে তো তুমিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমার সাথে খাবার খেতে আসো।

-- আন্টি আমাকে বের হতে হবে। আদনান স্যারকে যে আমার খুঁজে বের করতে হবে।

-- কেন পাগলামি করছ? যে মানুষ মারা যায় তাকে খুঁজে বের করে?

-- আদনান স্যারের কিছু হতে পারেনা। আমি ওনাকে খুঁজে বের করবই।

এই কথা বলে আদিবা বাসা থেকে বের হতে চায়। কিন্তু অচেনা মহিলাটা আদিবাকে আটকে দেয়।

-- দেখো মা। তুমি কিছু একটু মুখে দিয়ে তারপর বের হও।

মহিলার জোরাজোরিতে আদিবা রাজী হয়। সে অল্প একটু খেয়ে বেরিয়ে পড়ে আদনানের খোঁজে। আদিবা পুরো শহর ঘুরে কিন্তু কোথাও আদনানের খোঁজ পায়না। তাও সে হাল ছাড়ে না। এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়। তারপর ও আদিবা আদনানের খোঁজ করতে থাকে। ইতিমধ্যে আদিবার একটা চাকরি হয়ে যায় একটা হাসপাতালে। আদিবা যাতায়াত করার সময় আশেপাশে দেখতে থাকে।

আজ আদিবার প্রথম দিন। তাই সে হাসপাতালে দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আর সে রাস্তার আশেপাশে চোখ ভুলিয়ে নেয়। যেতে যেতে আদিবা ভাবতে থাকে। আজ যদি মানুষ গুলো বেঁচে থাকতো তাহলে তারা কত-না খুশি হতেন। নিজের অজান্তেই আদিবার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা তার নতুন হাসপাতালে পৌছে যায়। আজ তার প্রথম দিন সেই সুবাদে হাসপাতালে ডাক্তার আর নার্স সবাই মিলে আদিবাকে ফুল দিয়ে স্বাগতম জানায়। তারপর একজন নার্স এসে আদিবাকে নিয়ে তার চেম্বারে নিয়ে যায়।

-- ম্যাম আজ থেকে এটা আপনার চেম্বার। আপনি এখানেই বসবেন।

-- ওহ আচ্ছা।

-- জি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার এসিস্ট্যান্ট চলে আসবে এখানে। আপনার কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তাকে বলবেন। সে সব কিছু ব্যবস্থা করে দিবে।

এসিস্ট্যান্ট কথাটা শুনে আদিবার আদনানের কথা মনে পড়ে যায়। আদনানের সেই রাগি চেহারা মনে পড়ে আদিবার। আগের বোকামি গুলো মনে পড়তেই আদিবা মুচকি একটা হাসি দেয়।

-- কি হলো ম্যাম?

-- কিছুনা। আচ্ছা ওনাকে পাঠিয়ে দেন।

-- ঠিক আছে ম্যাম।

এই কথা বলে নার্স বেরিয়ে আসে।

-- ম্যাম আসতে পারি?

কথাটা শুনে আদিবা এবার সামনের দিকে তাকায়। তাকেই সে দেখতে পায় একটা ছেলে।

-- আসুন।

এবার ছেলেটা আদিবার কাছে এসে বলল,

-- ম্যাম আমি আপনার এসিস্ট্যান্ট। আমার নাম নীল।

-- ওহ আচ্ছা গুড। আমার নাম আদিবা রহমান।

-- জ্বি ম্যাম আমি আপনার নাম আগে থেকেই জানি।

-- কীভাবে?

-- ম্যাম আমাকে যখন বলা হয়েছে আমাকে আপনার এসিস্ট্যান্ট করা হবে তখনই আমি আপনার সব ডিটেইলস আর আপনার ফেসবুক একাউন্ট ও বের করে ফেলছি।

-- এতো এডভান্স!

ছেলেটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে জি ম্যাম বলল।

-- যাইহোক, এখন আমাকে রোগী দেখতে যেতে হবে। চলুন আমার সাথে।

এই কথা বলে আদিবা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করে। নীল ও আদিবার পিছু করতে থাকে। আদিবা এবার কয়েকজন রোগীকে দেখে নিজের চেম্বারে ফিরে আসে।

-- ম্যাম আমাদের হাসপাতাল আপনার পছন্দ হইছে?

-- হ্যাঁ।

-- ম্যাম কি খাবেন বলুন।

-- কিছু লাগবেনা। আপনার অন্য কোনো কাজ থাকলে করতে পারেন। আপনি এখন আসুন।

-- ওকে ম্যাম।

নীল চেম্বার থেকে বের হয়ে যায়। এবার একটা মেয়ে ডাক্তার আদিবার চেম্বারে প্রবেশ করে।

-- আসতে পারি?

-- জ্বি আসুন।

-- আমার নাম কেয়া। আর আমিও এখানকার ডাক্তার।

-- আমি আদিবা রহমান।

-- আপনার নাম টা যেমন মিষ্টি আপনিও তেমন মিষ্টি দেখতে।

আদিবা একটা মুচকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানায়। মেয়েটার সাথে তার আরো কিছুক্ষণ কথা হয়। আর কিছু সময়ের মধ্যে তাদের মাঝে খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায়।

আজকের মতো হাসপাতালের কাজ শেষ করে আদিবা নিজের বাসার দিকে চলে যায়। আর আদিবা এখন আলাদা একটা বাসা নিয়ে থাকে। প্রতিদিনের মতো আজও খাওয়া দাওয়া শেষ করে আদিবা আদনানের ছবিটা বের করে। আর ছবির সাথে কথা বলতে শুরু করে।

-- স্যার! আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন? আমি কি আর কখনও আপনাকে ফিরে পাবো না? আমার যে আপনাকে অনেক কথা বলার ছিল! তাহলে আমার না বলা কথা গুলো কি কখনও আপনাকে বলা হবেনা?

এই কথা গুলো বলে আদিবা আদনানের ছবি বুকে জড়িয়ে কান্না করতে শুরু করে। কান্না করতে করতেই আদিবা ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আদিবা আদনানের ছবিটা হাতে নিয়ে একটা চুমু খায়। তারপর সে নাস্তা রেডি করে খাবার খেয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। আজকে ও আদিবা হাসপাতালের দিকে যেতে যেতে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। গাড়িটা কিছুদূর যেতেই আদিবার চোখ আটকে যায় ব্লেজার পড়া একটা লোকের দিকে। আদিবা লোকটার পিছনের দিক টাই দেখতে পাচ্ছে। কেন যানি আদিবার সন্দেহ হচ্ছে যে এটা তার আদনান। লোকটাকে দেখে আদিবার খুব অস্থির লাগতে শুরু করে। আদিবা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি ব্রেক করতে বলে। আদিবার কথা শুনে ড্রাইভার সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে। আদিবা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে লোকটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

চলবে?

ব্যস্ততার মাঝেও আজ আপনাদের জন্য এই পর্বটা লিখেছি। আমার খালাতো বোন এখনো নিখোঁজ তাকে পাওয়া যায়নি। সবাই দোয়া করবেন তার জন্য। যেখানেই থাকে যেনো সুস্থ থাকে।

Address

8/3 Khandaker Lane, Shankar
Dhaka
1209

Telephone

+966551369177

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Lost Time Found posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share