Sanzid Ahmmed Redoy

Sanzid Ahmmed Redoy নিজের স্বম্বন্ধে কিছু বলার নাই ।

গ্রামটা খুবই  সাধারণ—। কিন্তু এখানে ছিল এক অসাধারণ ভয়।আর তার নাম ছিল শেফালী বেগম।তার কোনো জমি-জিরাত ছিল না, নিজের বলতে ছ...
11/05/2025

গ্রামটা খুবই সাধারণ—। কিন্তু এখানে ছিল এক অসাধারণ ভয়।
আর তার নাম ছিল শেফালী বেগম।

তার কোনো জমি-জিরাত ছিল না, নিজের বলতে ছিল একটা টিনের ছাউনি দেওয়া কুড়ে ঘর আর তার একমাত্র মেয়ে—সাবিনা। পেশায় ভিক্ষুক, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষা করতেন। কিন্তু লোকেরা তাকে ভিক্ষা দিতেও ভয় পেত।

কারণ?

তাঁর চোখ।
একটা নীলাভ সাদা ঘোলাটে চোখ, যা দেখে লোকজন কাঁপত। কেউ বলত বেড়ালের চোখ, কেউ বলত অভিশপ্ত চাহনি।

গ্রামের লোকজন বলতো, “শেফালির চোখে যদি চোখ পড়ে, গোটা দিন খারাপ যাবে।”

সেই ভয় এমনই গভীর ছিল যে, কেউ তার দিকে তাকাত না—না ভয়ে, না ঘৃণায়।

তাঁর মেয়েও একই অভিশাপের ভাগিদার হয়ে পড়েছিল—সাবিনা, একটি শান্তশিষ্ট মেয়ে, কম কথা বলত, কারো সঙ্গে বেশি মিশত না। চেহারায় ছিল অস্পষ্ট গ্লানি, চোখে দীর্ঘ একাকিত্বের ছাপ।

বিয়ের বয়স হলেও কেউ তাকে বিয়ে করতে চাইত না। সবাই বলত,
— “এই মেয়েকে বিয়ে করলে ঘরে অমঙ্গল নেমে আসবে।”

এইসব কথা দিনে দিনে তাদের জীবনের গায়ে গ্লানি আর বিষিয়ে তুলেছিল। এমন এক গ্রীষ্মের দুপুরে, যখন ঈদের বাজার জমজমাট, এক গরুর ব্যবসায়ী তার গরু নিয়ে গ্রাম পার হচ্ছিল।

সেই সময় সে দেখে শেফালী বেগম আর সাবিনা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে।

ব্যবসায়ীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, “আজ তো গেল দিনটা। যাক, দেখি গরুর বাজারে কি হয়।”

বাজারে গিয়ে ঘটে সেই ভয়াবহ ঘটনা—তার সবচেয়ে দামী গরুটি হঠাৎ করেই পড়ে যায়। হাঁ করে দেখে সবাই, গরুটির মুখ থেকে ফেনা উঠছে, চোখ স্থির, নিথর দেহ।

সে চিন্তা করল , “ওই মহিলার ছায়া পড়েছে!”

ব্যবসায়ী ফিরে এসে ঝাঁঝিয়ে উঠল শেফালীর ওপর।

— “তুই আমার সর্বনাশ করলি? তোর মেয়েটাকে নিয়ে এভাবে চলাফেরা করিস কেন? তোদের চোখেই অমঙ্গল আছে।”

লোকজনও দলে দলে এসে গালাগাল করতে লাগল , ছুড়ে দিল অপবাদ।

শেফালী শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, তার নীল চোখে কান্না জমে ছিল, কিন্তু গড়িয়ে পড়ল না।
সবাই বলল ," তোদের যেন রাস্তায় না দেখি "

সেই রাতেই ঘর গুটিয়ে তারা গ্রামের বাইরে চলে গেল। কেউ জানে না কোথায়, কিভাবে।

এক সপ্তাহ পরে, কেউ নদীর ধারে শোনে কান্নার শব্দ।
খুব নিঃশব্দ কান্না, যেন কেউ গলা চেপে কাঁদছে।

পরদিন খবর এল—সাবিনা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আ*ত্মহ*ত্যা করেছে।
লোকজন নদীর পাড়ে দেখতে পেল একটা লাল জামা পড়া মেয়ে ভাসছে , আর কচুরিপানার মাঝে তার মাথাটা নিচের দিকে মুখ করা ছিল ।

আর শেফালী?

সে কোথায় যেন হারিয়ে গেল, কিন্তু যাওয়ার আগে শোনা গেল তার একটা অভিশাপ—
“তোমরা সবাই আমার চোখকে ভয় পেলে? এখন দেখবা, সেই চোখই তোমাদের ঘুম কেড়ে নেবে।”

তাঁর একটা গুণ ছিল, গ্রামের ভাষায় বলে "গাছ দেওয়া"।
ভয়ের চিকিৎসা করতেন—ফেন কচুর শেকড় তুলে লাল সুতা দিয়ে বেঁধে দিতেন হাতে।
বলত, "যার ভিতরে ভয় আছে, তার শরীরেই এটা কাজ করে।"

লোকজন হাসত, কিন্তু যারা গাছ নিয়েছিল, তারা জানত—সেই গাছ রাতে একা একা সরে যেত।

এখন অনেকেই শেফালীকে দেখে না, কিন্তু রাতের বেলায় তার ঝাঁটার শব্দ, কান্না, আর ঘরে আলো দেখা যায়—যেখানে সে নেই বহু বছর ধরে।
[4:42 pm, 11/05/2025] Sanzid Ahmed:
শেফালী বেগম আর সাবিনার গল্প মনে রাখে গ্রামের সবাই, কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলে না।
তবে রাত হলে অনেকেই সেই রাস্তা, সেই কুঁড়ে ঘর, সেই জাম গাছটা এড়িয়ে চলে।

এক রাতে, আফজাল নামে এক ছেলে তার বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছিল। বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গিয়েছিল, চাঁদের আলো হালকা, বাতাস থেমে গিয়েছিল।

রাস্তাটা পেরোতে গিয়েই কুঁড়ে ঘরের সামনে এসে সে থমকে দাঁড়ায়।

কেউ যেন কাঁদছে।

চুপচাপ কান পাততেই শোনা গেল সেই ফুঁপিয়ে কাঁদা—না খুব জোরে, না খুব ধীরে, কিন্তু ঠিক এমন যে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়।

আফজাল ভয় পায়নি। সে ভাবল, কেউ হয়ত কষ্টে আছে।

এগিয়ে গেল জাম গাছটার নিচে—
সেখানে বসে আছে একটা মেয়ে। মুখ ঢেকে আছে চুলে, মাথা নিচু।

সে ধীরে ধীরে বলে উঠল,
— “এই... তুমি কাঁদছো কেন? এত রাতে এখানে একা কী করছো?”

মেয়েটা কিছু বলল না।
সে শুধুই কাঁদতে লাগল।
©️Sanzid Ahmmed Redoy
আফজাল আবার প্রশ্ন করল, এবার একটু জোরে,
— “তুমি কে? বাড়ি কোথায় তোমার?”

হঠাৎ মেয়েটা মাথা তোলে।

চাঁদের আলোয় সে দেখে,
মেয়েটার মুখ ভয়ংকর বিকৃত—চোখ গুলো বড়, একেবারে ফাঁপা, নীলাভ আলো ছড়াচ্ছে। মুখের একপাশ থেতলে গেছে, যেন কেউ পাথর দিয়ে আঘাত করেছিল।

আফজালের চিৎকার গলায় আটকে গেল। পা চলছিল না।

সে কোনো মতে ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড় দিল। পেছনে তাকায়নি, কিন্তু একটা অনুভূতি হচ্ছিল—
কেউ পেছন থেকে তাকিয়ে আছে, তাকিয়ে আছে ঠিক তার ঘাড় বরাবর।
✦ একই সময়ে, অন্য এক ঘটনা...

মোবারক নামে এক লোক, যিনি এক বিয়েতে গিয়েছিলেন, সাইকেল চালিয়ে রাতের বেলা ফিরছিলেন। রাস্তার মাঝখানে দেখতে পেল একটা বাঁশ পড়ে আছে।

ভাবল হয়ত বাতাসে পড়ে গেছে। তাই সাইকেল থেকে নেমে বাঁশটা সরাতে গেল।

হাত দিয়ে বাঁশ ধরতেই...
এক ঝটকায় বাঁশটা লাফ দিয়ে উঠে গেল আকাশে!

মোবারক ছিটকে পড়ে যায়। বাঁশ তার হাতে এক ধারালো কোণে লাগায়,
রক্ত ঝরতে শুরু করে।

হাত কাঁপছিল, ভয় চেপে ধরছিল বুকে।
হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল গ্রামের এক পুরনো ঘরের দিকে—সেই শেফালীর কুঁড়ে ঘর, যেখানে এখন কেউ থাকে না, কিন্তু আলো দেখা যায় মাঝেমধ্যে।

ভেতরে ঢুকে দেখতে পেল, উঠোনে বসে আছে একটা মেয়ে। তার পেছন ঘেঁষে একটা পুরোনো গামছা শুকোচ্ছে।

মোবারক বলল,
— “মা, একটু জল দিবেন? হাতটা কেটে গেছে। কাপড়ের একটা টুকরো লাগবে...”

মেয়েটা ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল।

তাকানোর পর... কিছুই মনে নেই।

পরদিন ভোরে লোকজন দেখতে পেল মোবারক সেই কুঁড়ে ঘরের পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। হাত থেকে রক্ত ঝরছে, চোখ ফাঁকা, আর ঠোঁটের কোণে কেবল একটাই শব্দ ফিসফিস করে বের হচ্ছে—

“চোখ... চোখ... তার চোখ...”
সেই কুঁড়ে ঘরটা এখনো আছে।
চোখে পড়লে মনে হয় সময় থেমে গেছে সেখানে।
ঘরের চাল ছেঁড়া, দেয়াল ছোপ ছোপ ধুলা-মাটি-জীবনের দাগে ভরা। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো—রাতে মাঝেমধ্যে সেখানে আলো জ্বলে।
©️Sanzid Ahmmed Redoy
আর তখন... ভেতরে কেউ থাকে না।
✦ সাবিনার অভিশাপ?

লোকমুখে একটা কথা প্রচলিত,
সাবিনা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরেনি।
কেউ কেউ বলত, গহীন রাতে কেউ একজন তাকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিল নদীর পাড়ে।

আর শেষবার কেউ দেখেছিল তাকে কুঁড়ে ঘরের উঠোনে বসে থাকতে—চোখে জল, ঠোঁটে ফিসফিস করে কিছু বলছিল। কেউ শুনতে পায়নি। শুধু অনুভব করেছিল, চারপাশে বাতাস থেমে গেছে।

তারপর থেকেই ঘটতে থাকে আজব ঘটনাগুলো...
✦ জাহাঙ্গীরের কাহিনি

জাহাঙ্গীর, পাশের গ্রামের এক যুবক, কাজ শেষে রাতে ফিরছিল। রাস্তায় এল এক জায়গায়—যেখানে গাছ নুয়ে পড়ে প্রায় রাস্তা ঢেকে রেখেছে। সে বাঁ দিক দিয়ে ঘুরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

এমন সময় একটা কণ্ঠ ভেসে এলো—

“ভাই... একটু দাঁড়াও তো...”

সে থমকে দাঁড়ালো। অন্ধকারে একটা মেয়ের ছায়া দেখতে পেল, বেশ তরুণী।

সে বলল,
— “তোমার সমস্যা কী? এত রাতে এখানে?”
মেয়েটি বলল,
— “আমার মা নেই। কেউ আমাকে ঘরে নেয় না। তোমার বাসা কোথায়?”

জাহাঙ্গীর ভয় পায়নি। মেয়েটি তার সামনে এসে দাঁড়ালো। চেহারায় ক্লান্তি, চোখ দুটো যেন কুয়াশা ঢাকা।

কিন্তু সে মুহূর্তেই খেয়াল করল...

মেয়েটার পা নেই।

সে মাটি স্পর্শ না করে ভেসে আছে।

আর তার কণ্ঠটা... হঠাৎ করেই পাল্টে গেল—
কর্কশ, পুরুষালি কণ্ঠে বলল,
— “তুইও আমাকে তাড়াবি?”

জাহাঙ্গীর চিৎকার করে দৌড় দিল। পেছনে তাকাল না, শুধু ছুটতে থাকল যতক্ষণ না আলো দেখল।
✦ শেষবার...

এক ভোরে, হাট থেকে ফেরার সময় রহিম মিয়া নামের এক বয়স্ক লোক দেখল কুঁড়ে ঘরের দরজায় একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছিল সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে।

রহিম সাহস করে এগিয়ে গেল।

মেয়েটা বলল,
— “আমার একটা গাছ বাঁধা ছিল তোমার হাতে। তুমি খুলে ফেলেছিলে... কেন?”

রহিম স্তব্ধ। হঠাৎ করে তার চোখের সামনে ভেসে উঠল ১৫ বছর আগের এক রাত—
যখন সে ভয়ে ভয়ে শেফালী বেগমের কাছ থেকে একটা গাছ নিয়েছিল।

সে বলেছিল,
— “মা, আমার উপর কিছু হয়েছে, স্বপ্নে আগুন দেখি...”

শেফালী বেগম তার হাতে লাল সুতা দিয়ে ফেনকচুর শেকড় বেঁধে দিয়েছিলেন।

কিন্তু সে গাছটা খুলে ফেলে দিয়েছিল...
কারণ, লোকজন তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত।

আজ, সেই মেয়েটি তার সামনে।

রহিম কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞেস করল,
— “তুমি সাবিনা?”

মেয়েটা হাসল না, কাঁদল না। শুধু বলল,
— “আমরা কই যাওয়ার? যেখানে অপয়া বলেছে, ওখানেই থাকি...”

তারপর ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল।

রহিমও আর কখনো কথা বলেনি।
🔚 শেষ কথাঃ

আজ সেখানে ঘরবাড়ি উঠেছে, আলো জ্বলে, মানুষ ঘোরাফেরা করে।

কিন্তু মাঝেমধ্যে কেউ কেউ বলে—
রাতে যদি জাম গাছের নিচে একা থাকো, হঠাৎ একটা চুলে ঢাকা মেয়ে তোমার পাশে বসে।

সে কিছু চায় না।
শুধু... ফিসফিস করে বলে,
“আমাকে কেউ চাইনি...”

©️Sanzid Ahmmed Redoy

বাংলাদেশের এক ছোট্ট গ্রাম। সময়টা গ্রীষ্মকাল। প্রচণ্ড রোদ, হঠাৎ হঠাৎ দমকা ঝড়—আবহাওয়া যেন ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছিল। আর এই গ...
11/05/2025

বাংলাদেশের এক ছোট্ট গ্রাম। সময়টা গ্রীষ্মকাল। প্রচণ্ড রোদ, হঠাৎ হঠাৎ দমকা ঝড়—আবহাওয়া যেন ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছিল। আর এই গ্রামের ঠিক মাঝখানে ছিল একটি রহস্যময় জঙ্গল। খুব বড় না—কয়েকটা পুরনো কবর,কয়েকটি গাছ তার ভেতর এক বিশাল বটগাছ, আর বটগাছের ভেতরেই আশ্চর্যজনকভাবে বেড়ে উঠেছিল একটি খেজুর গাছ। দিনের আলোতেও জঙ্গলের ভেতর যাওয়ার সাহস হতো না। মনে হতো, গাছগুলো যেন চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।

সেই গ্রামেরই এক কিশোর, মনির। তখন ক্লাস নাইনে পড়ে, আর আমি তখন ক্লাস ফোরে। আমরা প্রতিবেশী। আমাদের স্কুলে যেতে হলে ওই জঙ্গলের পাশ দিয়েই যেতে হতো। দিনের বেলাতেও ভয় লেগে থাকত।

মনির মাঝে মাঝে বাড়ির পেছনে গাছের নিচে মাচায় বিশ্রাম নিত। আর গরমের কারনে সেখানেই পড়াশুনা করত । গ্রামের সাধারণ প্রথার মতো গরমে অনেকে মাচায় ঘুমাতো, বিশেষ করে যখন বিদ্যুৎ থাকত না। মাচাটা জঙ্গল থেকে খুব একটা দূরে না—মাত্র দুই–তিন মিনিটের পথ, চারদিকে ধানক্ষেত আর খোলা মাঠ।
©️Sanzid Ahmmed Redoy

এক রাতে, মনির সেই মাচায় ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল—আকাশে কোনো বিদ্যুৎ নেই, কিন্তু বাতাসে অদ্ভুত এক চাপা গর্জন। সে বুঝল ঝড় আসছে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো, ঝড় কেবল তার আশপাশের গাছগুলোকেই কাঁপাচ্ছিল। দুরের কোনো গাছ, এমনকি ধানের ক্ষেতেও বাতাসের ছোঁয়া নেই। যেন ঝড়টা শুধুই তাকে কেন্দ্র করে চলছে।

মনির ভয়ে ঘরে ঢোকার জন্য উঠে দাঁড়াল। তার হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসও যেন তার পেছনে পেছনে আসছে। গাছগুলো ঝাঁকাচ্ছে, পাতাগুলো শোঁ শোঁ শব্দে কাঁপছে, কিন্তু কেবল ওই নির্দিষ্ট জায়গাটুকুতে।

সেই ভয়ংকর মুহূর্তে মনির যেন বুঝে গিয়েছিল—এটা কোনো সাধারণ ঝড় নয়।

সে প্রাণপণে দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল। মুহূর্তেই সব স্তব্ধ হয়ে গেল। এক বিন্দু বাতাস নেই। চারদিক নিস্তব্ধ। এমন নিস্তব্ধতা গ্রামের জীবনে সাধারণত হয় না। কুকুর ডাকে, ঝিঁ ঝিঁ পোকার আওয়াজ থাকে। কিন্তু সেদিন কিছুই ছিল না।

এই ঘটনার পর মনির কয়েকদিন রাতে আর মাচায় যায়নি। পরিবারের কাউকেই প্রথমে কিছু বলেনি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার মধ্যে এক ভয় বাসা বাঁধছিল। ভয়, যার কোনো নাম নেই।
মনির আগের রাতের সেই ঝড়-দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে চাইছিল। পরিবারের কেউ জানত না, তার মনে কী চলছে। বাইরের মানুষ যেমনটা দেখে—মনির একদম স্বাভাবিক। কিন্তু তার ভেতরে যেন একটা অচেনা অন্ধকার বাসা বাঁধছিল।

প্রায় এক সপ্তাহ পর, এক সন্ধ্যায় সে আবার সেই পুরনো মাচায় বসেছিল—দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে। বাতাস ঠাণ্ডা আর নিস্তরঙ্গ। পাখির ডাক, দূরের হালকা কথাবার্তা—সবই ছিল। হঠাৎ করেই সব শব্দ থেমে গেল।

এক ঝলক শীতল হাওয়া তার গা ঘেঁষে গেল।

মনির ঘাড় ফিরিয়ে দেখল—মাচার পাশের একটা বাঁশগাছের ডালে বসে আছে একটা পাখি। কিন্তু সেটা কোনো সাধারণ পাখি না। বিশাল এক ছায়ামূর্তির মতো—পেচার মতো দেখতে, কিন্তু চোখ দুটো অস্বাভাবিক... নীল। গাঢ় নীল নয়, যেন আলো ছড়ানো নীল, জ্বলজ্বল করছে।

সে পাখিটিকে তাড়ানোর জন্য 'হুস হুস' করতে লাগল। কিন্তু পাখিটা যেন কোনো পাথরের মূর্তি। এক পলকও নাড়ল না, কেবল তাকিয়ে রইল মনিরের চোখের দিকে।

মনিরের গা কাঁপতে লাগল। আর অপেক্ষা না করে সে নিচে নেমে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। হাঁটতে হাঁটতে একবার পেছনে তাকাল—পাখিটা নেই। কোথাও নেই। বাতাসে মিশে গেছে।

সেই রাতে, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মনিরকে বাইরে যেতে হয়। গ্রামের টয়লেটগুলো তো ঘর থেকে একটু দূরে থাকে। ঘর থেকে বের হয়ে, ফসলের আইল ধরে হেঁটে যাচ্ছিল সে। চারদিক নিরব, শুধু মাঝে মাঝে কাঁচা ঘাসে পায়ের আওয়াজ।
©️Sanzid Ahmmed Redoy

ফেরার পথে দূরে কারো চলার শব্দ শুনতে পেল।

একটু এগিয়ে দেখে, তার ভাই রাসেল রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা অন্ধকারে মুখটা পরিষ্কার দেখা যায় না, কিন্তু সে নিশ্চিত ভাইই। মনির ডেকে উঠল, “রাসেল ভাই! এত রাতে কই যাইতেছো?”

কোনো উত্তর নেই।

মনির কাছে গিয়ে আরও একবার ডাকে। এবার রাসেল হেঁটে জঙ্গলের রাস্তার দিকে এগোতে থাকে।

মনির কাঁপতে কাঁপতে পেছনে পিছু নেয়। আবার ডাকে, “রাসেল ভাই... দাঁড়াও!”

হঠাৎ তার চোখ আটকে যায়—ভয়ের ঠাণ্ডা তরঙ্গ বয়ে যায় শরীর জুড়ে। রাসেলের পা নেই!

না, পা আছে—but জমির মাটির ওপর তার ছায়া নেই। এমনকি মনে হচ্ছে সে যেন হেঁটে নয়, ভেসে চলেছে।

মনির পেছনে দৌড় দিতে চাইল। কিন্তু জমির আইলে তার পা আটকে গেল। পড়ে গিয়ে উপরের দিকে তাকায়... আর তখনই...

চারপাশে যেন শত শত জোড়া চোখ জ্বলে উঠল।

সেই নীল চোখ। সেই বিকট পাখির মতো চোখ। তার উপর দিয়ে ঘুরছে, গাছের ডালে বসে আছে, মাটিতে নেমে হাঁটছে।

শব্দ নেই, শুধু ভয়, গা শিউরে ওঠা নীরবতা আর নীল আলো।

মনির উঠে দাঁড়াতে চাইলো, পারল না। হঠাৎ এক একটা পাখি যেন এক পা, এক পাখা দিয়ে তাকে ঘিরে ধরল। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

সে চিৎকার করতে চায়, গলা দিয়ে শব্দই বের হয় না।

তখনি সবকিছু ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে গেল।
পরদিন সকাল।

কৃষকেরা মাঠে আসে। আর এক কোণায় পড়ে থাকা অজ্ঞান মনিরকে দেখে সবাই ছুটে আসে।

সে কয়েক দিন জ্বরে কাতরায়। কখনো জেগে উঠে চিৎকার দেয়—"ভাইরে বলো, ওইখানে যাইও না!"—তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

চিকিৎসা চলে, কবিরাজ, ডাক্তার—সবকিছু। কিন্তু ভয় তার চোখ থেকে মুছতে পারে না কেউ। ধীরে ধীরে তার চোখে কেবল সেই নীল চোখের ছায়া, আর ভেসে যাওয়া সেই ছায়ামূর্তি।
©️Sanzid Ahmmed Redoy

তিন মাস পর, মনির একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

কিন্তু গ্রামের মানুষজন জানে না, জঙ্গলের ভেতরে কী আছে।

মনিরও জানে না, যেটা দেখা হয়েছে, সেটা শেষ না—শুধু শুরু।
মনির ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও তার জীবনে যেন কিছু বদলে গিয়েছিল। আগের মতো প্রাণখোলা কথা বলা, বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটা—এসব হারিয়ে গিয়েছিল। সে চুপচাপ থাকত, সবসময় কিছু একটা ভাবত, যেন কোনো অদৃশ্য ভয় তাকে তাড়া করে ফিরছে।

তিন মাস কেটে গেল। শরীর ঠিক হলেও মন ঠিক হয়নি।

একদিন বিকেলে গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব, যিনি হাফেজ ও ইসলামিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ, মনিরের বাবার অনুরোধে তাদের বাড়িতে আসলেন। মনির তাকে দেখে মাথা নিচু করে বসে রইল। ইমাম সাহেব চুপচাপ বসে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন:

— "মনির, তুমি কি জিনদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করো?"
মনির ধীরে মাথা নাড়ল—"হ্যাঁ।"

— "জিনেরাও আল্লাহর সৃষ্টি। তারা আগুন থেকে সৃষ্টি, আমাদের মতোই থাকে, চলে। কিন্তু যারা শয়তান হয়ে যায়, তারা মানুষকে ভয় দেখায়, ধোঁকা দেয়। তাদের চক্রান্ত থেকে বাঁচতে কুরআনের আয়াত ও নিয়মিত নামাজের কোনো বিকল্প নেই। তুমি কিছু দেখেছো, যেটা আমরা সবাই দেখি না। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, তারা তোমার উপর শক্তি অর্জন করেছে। তুমি যদি আল্লাহর জিকিরে থেকো, তারা কিছুই করতে পারবে না।"

ইমাম সাহেব মনিরের কানে সূরা বাকারার কিছু আয়াত, আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিলেন।

পরের কয়েক দিন, মনির সেই জঙ্গলের কথা আবার স্মরণ করতে থাকে। ভয় মিশ্রিত কৌতূহল তাকে টানতে থাকে।

এক সন্ধ্যায়, সে আমাকে—তখনো আমি ক্লাস ফোরে—বলল, “চল, একটু ওই বটগাছের কাছে যাই।”
আমি ভয় পেয়ে গেলাম। “না না, সন্ধ্যায় ওইখানে গেলে খারাপ কিছু হবে না?”

মনির হালকা হাসল। “আজ আর ভয় পাবি না, ভাইয়ের কসম।”

আমরা দুজন ধীরে ধীরে গেলাম। জঙ্গলটা আগের মতোই ঘন, চুপচাপ। বটগাছটা বিশাল দাঁড়িয়ে আছে, আর তার গায়ে জড়িয়ে আছে খেজুর গাছটা। এক অদ্ভুত দৃশ্য—দুই জাতের গাছ যেন এক হয়ে গেছে, আঁকড়ে আছে একে অপরকে। পেছনে কয়েকটা পুরনো কবর—খুবই ধ্বংসপ্রায়।

হঠাৎ করেই এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া বইল।

আমার পিঠ ঘেমে উঠল।

মনির বলল, “এই জায়গাটায় আমি দেখেছিলাম... ওই পাখিগুলো। ওই চোখ... আর রাসেল ভাইয়ের মতো দেখতে ছায়া।”

ঠিক তখনি, পেছন থেকে এক শব্দ এল—জোরে পাতার মচমচে আওয়াজ। আমরা ফিরে তাকালাম—কিছুই নেই।

হঠাৎ মনির একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সামনে।

আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম—সে আবার কিছু দেখছে।

আমার গলা শুকিয়ে গেল। “কি...কি দেখতেছো?”

সে আস্তে বলল, “ওই গাছের ডালে... আবার ওটাই। সেই পাখি।”

আমি তাকিয়ে কিছুই দেখলাম না।

কিন্তু তখনই, একটা শীতল গন্ধ ভেসে এলো বাতাসে—ধূপ আর পঁচা পাতার মিশ্র গন্ধ।
©️Sanzid Ahmmed Redoy

মনিরের হাত কাঁপতে লাগল। সে পকেট থেকে তসবি বের করে “আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজিম” বলতে থাকল।

আমি তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে পড়তে লাগলাম।

একসময় হাওয়ার গতি কমে এলো। সব আওয়াজ থেমে গেল। আমরা ধীরে ধীরে পেছন দিকে হাটতে লাগলাম।

এরপর আমরা আর কখনো সন্ধ্যায় বা রাতে সেই জায়গায় যাইনি।
এই ঘটনার পর, গ্রামের আরও কিছু বৃদ্ধ বললেন—এই জায়গায় এর আগেও অনেকে এমন অদ্ভুত অভিজ্ঞতা পেয়েছে। অনেকেই রাতের বেলা কবরের পাশে কারো হাঁটার শব্দ, বা গাছের ফাঁকে অদ্ভুত আলো দেখতে পেয়েছে।

কিন্তু কেউ কখনো নিশ্চিত হতে পারেনি, ঠিক কী আছে ওখানে।

ইসলাম বলে—জিন জাতি আছে, তারা আমাদের চেয়ে আলাদা সৃষ্ট, অদৃশ্য। আল্লাহ কুরআনে বলেন:

"আর আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল যেন তারা আমার ইবাদত করে।"
— সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৫৬

তবে, যারা আল্লাহর জিকিরে থাকে, যারা নামাজ পড়ে, সূরা ফালাক-নাস পড়ে রাতে ঘুমায়, তাদের কাছে এইসব অদৃশ্য শক্তির কোনো ক্ষমতা নেই।

সেই জঙ্গল এখনো আছে। কবরগুলোও আছে। গাছগুলোও। হয়তো কেউ সাহস করে আবার সেখানে যাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে—জিন মানুষকে ভয় দেখাতে পারে, কিন্তু ঈমানদারকে পরাস্ত করতে পারে না।

আবির এখন বুঝতে পারছিল, মেসের ঘরটা শুধু একটা থাকার জায়গা নয়—এখানে কিছু আছে। কিছু এমন, যার অস্তিত্ব চোখে দেখা যায় না, কিন্...
11/05/2025

আবির এখন বুঝতে পারছিল, মেসের ঘরটা শুধু একটা থাকার জায়গা নয়—এখানে কিছু আছে। কিছু এমন, যার অস্তিত্ব চোখে দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায় প্রতিটি নিঃশ্বাসে।

হাসিব সেদিন বাড়ি থেকে ফিরেছিল ঠিক রাত ১২টার কিছু পর। দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দে আবির বুক ধড়ফড় করে উঠেছিল। সে জানে হাসিব আসবে, তবুও দরজা খুলতে গিয়েছিল কাঁপা হাতে। দরজা খুলে দেখে, হাসিব আগের মতোই ঠান্ডা মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তবে চোখের নিচে হালকা কালচে দাগ, ক্লান্ত নয়, বরং শীতল।
১ম পর্ব : https://www.facebook.com/share/p/16aWamjyT5/

"তুমি কিছু চিন্তা করছো নাকি?" – জিজ্ঞেস করল হাসিব, ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি।

আবির চুপ করে থাকল। বলতে চাইল অনেক কিছু, কিন্তু শব্দ আটকে গেল গলায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে শুধু বলল,
"ভাই, কাল রাতে কিছু অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছিল। মনে হলো আপনি রুমেই ছিলেন... কিন্তু আপনি তো ছিলেন না?"

হাসিব এবার হাসল, তবে সে হাসি ছিল যেন... শীতল, প্রাণহীন।
"তুই স্বপ্ন দেখছিলি মনে হয়। নাহলে এমন ভাবছিস কেন?"
©️Sanzid Ahmmed Redoy

আবির মাথা নিচু করে বলল, "মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।"

হাসিব তখন টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। ধীরে ধীরে ব্যাগ খুলল, বই বের করল। আবির খেয়াল করল—হাসিবের ব্যাগ থেকে একটা ভিজে কাপড়ের গন্ধ আসছে, খুব পরিচিত... পচা মাছের গন্ধ!

কিছু না বলেই সে উঠে পড়ল। বাইরে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। সোজা চলে গেল বারান্দায়, বুক ধড়ফড় করতে লাগল তার। মিনিট পাঁচেক পর আবার ঢুকল। রুমে ঢুকেই যা দেখল, তা দেখে তার হৃৎপিণ্ড যেন থেমে গেল।

হাসিব টেবিলে বসে আছে। সামনে একটা পত্রিকা বিছানো, আর তার ওপর একটা বড় কাঁচা মাছ। মাছটা রক্তমাখা, কিছু অংশ যেন কাটা। সে হাত দিয়ে সেটা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে।

আবির ভয় পেয়েও কিছু বলল না। টেবিলের পাশে রাখা ড্রিম লাইটের আলোয় দেখতে পেল হাসিব ধীরে ধীরে মাথা তুলে তার দিকে তাকালো।

চোখ... লাল। পুরোটাই লাল। যেন রক্ত ভরা দুইটা বল।

হাসিবের ঠোঁট নড়ল—"তুই আবার দেখছিস, না?"
সাথে সাথে আবির ছিটকে পিছনে সরে গেল।

"কে... কে তুমি?" – কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করল।

হাসিব এবার আস্তে আস্তে দাঁড়িয়ে বলল,
"আমি তোকে আগেই বলছিলাম, চিন্তা করিস না। কিন্তু তুই বুঝবি না। এই দেহটা শুধু আমার না, আরেকজনেরও।"

আবির আর দাঁড়াতে পারল না। সে ঘরের দরজা খুলে দৌড় দিল নিচে, কনকনে শীতে শরীর কাঁপছে, মাথা ঘুরছে। গেট পেরোতেই অন্ধকার দেখে গড়িয়ে পড়ল...
©️Sanzid Ahmmed Redoy

চোখ খুলল সকাল ৭টায়, বারান্দার বেঞ্চে, কেয়ারটেকার ভাই তাকে পানি খাওয়াচ্ছেন।

“ভাই, তুমি রাতে বারান্দায় কিভাবে ঘুমাইলা কেন?” – জিজ্ঞেস করল সে।

আবির বুঝে গেল—এই গল্পের ভয় এখানেই শেষ না... বরং এ তো সবে শুরু।
সেই রাতে বারান্দায় জ্ঞান ফেরার পর আবির আর এক মুহূর্তও দেরি করেনি। সকালে কেয়ারটেকারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তড়িঘড়ি সব গুছিয়ে মেস ছেড়ে দিল। পিঠের ব্যাগটা ভারি ছিল না, কিন্তু বুকটা ছিল পাথরের মতো ভার। ভয়, বিভ্রান্তি আর ক্লান্তির ভার।

সে সরাসরি ময়মনসিংহ শহরের এক পরিচিত হুজুরের কাছে গেল। তার সামনে গিয়ে সব খুলে বলল। আগাগোড়া ঘটনা শুনে হুজুর একবারও অবাক হলেন না। বরং ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে বললেন,
"তুই এমন এক কারো সাথে থেকেছিলি, যার শরীর শুধু মানুষের ছিল, মনটা আর আত্মাটা ছিল কারো আরেকজনের। ওর ভিতর কেউ বাস করত।"

হুজুর কিছু রুকিয়া পড়ে পানি পড়া দিলেন। বললেন,
"তুই যত দূরে যাস, ততই ভালো। কিন্তু মনে রাখিস, ভয় পাবি না। ভয় করলে ওরা জিতে যায়।"

আবির তখন সিদ্ধান্ত নেয়—এবার সে সব সত্যি বলে দেবে তার পরিবারকে।
বাবা-মায়ের সামনে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে সব বলল, প্রথমবারের মতো।

বাবা চুপচাপ শুনে বললেন,
"তুই যেদিন বলেছিলি শহরে পড়াশুনা করবি মেসে থাকবি, আমি না করেছিলাম। কিন্তু তোর জেদ ছিল বেশি। ঠিক আছে, যা হবার হয়ে গেছে। এখন চল, এক ভালো হুজুরের কাছে নিয়ে যাই।"

এইবার তারা এলাকার পরিচিত এক বড় হুজুরের কাছে যায়। হুজুর পানি পড়া ছিটিয়ে দেয় এবং হাতে দিয়ে বললেন,
"এইটা নিয়মিত ব্যবহার কর। আর ভয় না করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো, মন ঠিক রাখো। দেখবা—সব ঠিক হয়ে যাবে।"

আসলে ঠিক সেটাই ঘটল। সময়ের সাথে সাথে আবিরের দুঃস্বপ্ন কমে এলো। রাতে আর ঘুম ভেঙে ভয় লাগত না। পচা মাছের গন্ধও হারিয়ে গেল তার জীবন থেকে।
©️Sanzid Ahmmed Redoy

কিছুদিনের মধ্যেই সে কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়ায় মন বসাতে শুরু করে। আর জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে যায়।

বছর কয়েক পর আবির এখন দেশের এক নামকরা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার। নিজেই একটা ফ্ল্যাট নিয়েছে ঢাকায়। মা-বাবা তার সাথেই থাকেন। সংসারে আর অভাব নেই। জীবন শান্ত, স্থির।

তবে... মাঝে মাঝে রাতে ঘুমানোর আগে, আবির একবার মোমবাতি জ্বালায়। এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে।
তারপর ধীরে দরজার দিকে তাকিয়ে বলে,
"তুই তো আমাকে ছেড়ে গেছিস, তাই তো?"

চারপাশ নিঃস্তব্ধ... তারপর সে মোমটা নিভিয়ে দেয়।

শেষ।

(তবে কারও পেছন যদি অন্ধকার লেগে থাকে, সে আলোয় ফিরলেও ছায়া ফেলে যায়...)
১ম পর্ব : https://www.facebook.com/share/p/16aWamjyT5/

ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৫-৬ মাইল দূরের একটা পুরনো একতলা বাড়ি। জায়গাটা শহরের বাইরে হলেও ছাত্রদের জন্য ভাড়া সস্তা হওয়ায় অন...
09/05/2025

ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৫-৬ মাইল দূরের একটা পুরনো একতলা বাড়ি। জায়গাটা শহরের বাইরে হলেও ছাত্রদের জন্য ভাড়া সস্তা হওয়ায় অনেকেই সেখানে মেস করে থাকে। জায়গাটার চারপাশ নিরিবিলি, কিছুটা ফাঁকা আর দিনের বেলায়ও যেন একটা চাপা নিরবতা বিরাজ করে।

এই মেসেই উঠেছিল আবির নামের এক ছেলে, সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছে—HSC প্রথম বর্ষে পড়ে। শহরের বড় কলেজে চান্স পেয়েছে, কিন্তু হোস্টেলে জায়গা হয়নি। বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়—তিনি একজন পিয়ন, কষ্ট করে ছেলেকে শহরে পড়তে পাঠিয়েছেন। হোস্টেলের আশা বাদ দিয়ে আবির অনেক খোঁজাখুঁজি করে শেষমেশ এক রুম পেয়েছিল। রুমটা শেয়ার করতে হয়েছিল আরেক ছেলের সাথে—নাম হাসিব, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

আবিরের প্রথম দিন থেকেই হাসিবকে কিছুটা অদ্ভুত লেগেছিল। চুপচাপ, ভাবলেশহীন একটা ছেলে। চোখে মুখে কোনো অনুভূতি নেই বলেই মনে হয়। শুরুতেই আবির লক্ষ্য করে, হাসিব রাতে প্রায় সময় ঘরের লাইট নিভিয়ে এক কোণায় চুপ করে বসে থাকে। মাঝে মাঝে ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় দেখা যেত সে কিসের যেন সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলছে। আবার কখনো হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে চলে যেত—একটাও লাইট জ্বালাত না। যেন অন্ধকারই ওর জন্য স্বাভাবিক।

প্রথম দিকে আবির এসব বিষয় এড়িয়ে যেত, নিজে নিজে ভাবত—সবাই তো আলাদা হয়, হয়তো ওর অভ্যাস এমন। কিন্তু দিন যত যাচ্ছিল, হাসিবকে ঘিরে অস্বস্তি বাড়ছিল তার মনে।
এক রাতে এমনই এক পরিস্থিতিতে, যখন হাসিব একদম নিঃশব্দে পড়ার টেবিলে বসে, রুমে কোনো আলো নেই—শুধু ড্রিম লাইটে আবছা ছায়া পড়ছে, তখন সাহস করে আবির বলল,
"হাসিব ভাইয়া, আপনি কি পড়ছেন?"

কোনো উত্তর আসলো না। হাসিব মাথা নিচু করে বসে থাকল—নড়ল না, চমকাল না, এমনকি চোখও তুলল না। আবির ধাক্কা খেলো মনে মনে, কিন্তু আর কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে পাশের রুমের এক বড় ভাইকে এসব বললে সে জানাল, "ও তো বেশি দিন হয়নি এখানে এসেছে—৩/৪ মাস হবে। আর আমি তেমন কিছু খেয়াল করিনি..."
তবে সবাই এক বাক্যে সাজেস্ট করলো, “তুই ওর সাথে না থাকলেই ভালো করবি। চাইলে তোর জন্য অন্য রুম দেখে দিই।”

কিন্তু টাকার অভাব বড় বাধা। এই রুমে ভাড়া মাত্র ১৫০০ টাকা, আর অন্য কোথাও একা থাকলে কমপক্ষে ৩০০০ লাগবে। আবিরের পক্ষে সেটা সম্ভব ছিল না। তাই সে থেকে গেল—নিজেকে বোঝাল, "সব কিছু মাথার ভুল হতে পারে।"

কিছুদিন শান্তেই কেটে গেল।

একদিন সন্ধ্যায় হাসিব বাড়ি চলে গেল। আবির তখন রুমে একা। শীতকাল, হালকা কম্বলের নিচে আরাম করে শুয়ে আছে। হঠাৎ গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়।
চোখ মেলে আবির দেখে—রুমে কারও উপস্থিতি আছে। সে দেখে হাসিবের বিছানায় কেউ শুয়ে আছে, যেন কম্বলের নিচে শরীরের রেখা দেখা যাচ্ছে।
"কিন্তু হাসিব তো বাড়ি গেছে..."
অস্থির মনে টর্চ জ্বালালো। তাকিয়ে দেখে বিছানা ফাঁকা। একদম পরিপাটি করে গুছানো।
হঠাৎ ভয়ে শরীর হিম হয়ে গেল তার। মনে হল কিছু একটা ভুল দেখেছে ঘুমের ঘোরে।

পরের রাতে আবার... ঘুম ভাঙল প্রায় একই সময়। এবার ঘরে এক অদ্ভুত পঁচা মাছের গন্ধ! দম বন্ধ হয়ে আসে আবিরের। দেখে, হাসিব পড়ার টেবিলে বসে কিছু খাচ্ছে। মুখ নিচু, হাত চলছে।
আবির ফোন অন করতে গেল—চার্জ শেষ। ঘরের সুইচ বোর্ড হাসিবের পাশেই।

©️ Sanzid Ahmmed Redoy

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল—
"আপনি কে...?"
হাসিব ধীরে ধীরে ঘুরে তাকাল।

লাল চোখ... মুখে আধা খাওয়া কাঁচা মাছ।
আবির আর কিছু বলার আগেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।

পরদিন সকাল ১১টায় ঘুম ভাঙে তার। চারপাশ একদম স্বাভাবিক। বিছানা গোছানো, ঘরে কোনো গন্ধ নেই। কিন্তু তার পুরো শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা।

সে আর কিছু বলতে সাহস পেল না। বাবাকে জানাবে—তাও পারল না।
নিজেকে বোঝাল—"সবই স্বপ্ন... হয়তো দুঃস্বপ্ন।"

কিন্তু সেই রাতে আবার...
রাত তখন ১১টা পেরিয়েছে। আবির খুঁতখুঁত করছে মনে মনে—আজ তো হাসিব বাড়ি থেকে ফেরার কথা। কিন্তু একবারের জন্যও ফোন করে জানায়নি, কখন আসবে।
আবির দরজা আটকে, লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছে। মাথার ভেতর বারবার রাত দু’দিন আগের ঘটনাটা ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যিই কি স্বপ্ন ছিল? নাকি কিছু দেখেছিল সে? পুরো শরীর এখনো ব্যথা করছে।

ঠিক তখন—
“টোক টোক…”
কেউ দরজায় টোকা দিল।

আবির বুকটা যেন জমে বরফ হয়ে গেল মুহূর্তেই। আস্তে করে উঠে দাঁড়াল। কাঁপা হাতে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— “কে?”
বাইরের গলা আসলো,
— “আমি... হাসিব। দরজা খোল।”

অভ্যস্ত গলা, তবু ভেতরে একটা খচখচে অনুভূতি। ধীরে ধীরে দরজা খুলল আবির।
হাসিব দাঁড়িয়ে আছে—চেনা চেহারা, কাঁধে একটা ব্যাগ। কিন্তু চোখদুটো... যেন অস্বাভাবিক লাল, ক্লান্ত আর এক ধরনের স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

“তুমি ঠিক আছো?” — আবির কাঁপা কণ্ঠে বলল।

হাসিব হালকা হেসে বলল, “তুই চিন্তা করছিস নাকি কিছু?”
আবির উত্তর দিল না।

রুমে ঢুকে ব্যাগ নামিয়ে রেখে হাসিব বলল, “গতকাল রাতে কী হইছিল? কাউকে দেখছিলি নাকি?”

এই প্রশ্নে আবির স্তব্ধ হয়ে গেল। সে তো কিছু বলেনি এখনও হাসিবকে... তাহলে সে জানলো কীভাবে?

আবির কিছু না বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। ভয়ে ভেতরে ভেতরে তার গলা শুকিয়ে আসছে, কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছে না। ঘরের বাতাসটা হঠাৎ ভারী হয়ে গেছে, যেন নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

রাত গড়িয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ আবার সেই পঁচা গন্ধ... এবার আরও তীব্র।
আবির শুয়ে আছে, কিন্তু চোখ খুলে রেখেছে। সে দেখে, হাসিব পড়ার টেবিলে বসে একটা পুরনো ডায়েরি পড়ছে। রুমে কোনো আলো নেই, শুধু বাইরের স্ট্রিট লাইটের হালকা আলো জানালা দিয়ে এসে পড়ছে তার গায়ে।

আবির ধীরে ধীরে উঠে বসল। সাহস করে বলল,
— “ভাই, এই ডায়েরিটা কোথা থেকে পেলেন?”
হাসিব কিছু না বলে ডায়েরি বন্ধ করল। মুখটা আবিরের দিকে ফেরাল। এবার মুখে ছিল একটা অদ্ভুত হাঁসি—মিশ্র রাগ, কৌতূহল আর হিংস্রতা।

“তুই কি জানিস এই মেসে এর আগে কী হইছিল?”

আবির মাথা নাড়ল—না।

হাসিব ফিসফিস করে বলল,
“এই রুমে একজন আত্মহত্যা করছিল... চার বছর আগে। ঠিক ওই বিছানায়। যেখানে তুই শুইছিস।”

আবির চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে রইল হাসিবের দিকে। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না এটা মজা করছে নাকি সত্যি বলছে।

হাসিব আবার বলল,
“ওর ডায়েরিটা আমি পাইছিলাম এই রুমে এসে... প্রথম কিছুদিন আমার কিছুই হয় নাই। তারপর এক রাতে... ও আসছিল।”

“কে আসছিল?” — আবির গলায় কাঁপুনি নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

©️ Sanzid Ahmmed Redoy

“জিন...”
“ও আমার সাথে থাকে এখন। কথা কয়... খাইয়া নেয়... মাঝে মাঝে তোর কাছে আসে।”

আবির উঠে দাঁড়ালো। আর এক মুহূর্তও এই রুমে থাকতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু মাঝরাত—কোথাও যাবার উপায় নেই।

হাসিব ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, সামনে এসে দাঁড়াল একদম কাছে। তার লাল চোখ দুটো আবিরের চোখে আটকে আছে।

“তুই যদি এসব অন্য কাউরে বলিস... ও রাগ করে। আর ওর রাগ ভয়ংকর।”

আবির থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ল বিছানায়। চোখ বন্ধ করে মনে মনে দোয়া পড়তে লাগল।

রাতটা ভোর হল... কোনো শব্দ নেই, কোনো সাড়া নেই।
ভোরে ঘুম ভাঙল, আবির দেখল সে মেঝেতে পড়ে আছে। মাথায় ব্যথা, ঠোঁট কেটে গেছে। আর বিছানায় রক্তের দাগ...

কিন্তু হাসিব নেই রুমে।

ডায়েরি নেই।

সবকিছু আবার যেন আগের মতো স্বাভাবিক।

তবু, আবির বুঝে গেল—এই মেসটা স্বাভাবিক নয়। আর হাসিব... সে মানুষ তো নয়ই।
আবির ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারল—শরীর যেন ভেঙে গেছে। কপালে ব্যথা, ঠোঁটে কাটা দাগ। চারদিকে তাকিয়ে খেয়াল করল—রুমটা একদম স্বাভাবিক। বিছানা গুছানো, বাতাসে কোনো গন্ধ নেই, ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা ঝকঝকে পরিষ্কার, হাসিবের পড়ার টেবিলটাও খালি।
তবে কোথাও হাসিব নেই।

তাঁর ব্যাগটাও নেই। যেন ছিলই না।

সারাদিন কলেজে যাওয়ার মতো শক্তিও জোগাড় হলো না। ক্লান্ত শরীরে বারান্দায় বসে থেকেছে আবির। বারবার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে—সবটা কোনো দুঃস্বপ্ন, হ্যালুসিনেশন।

কিন্তু রাত হলেই বুকের ভেতর হিম ঠান্ডা ভয় জমে উঠতে লাগল।

সেই রাতে মেসে নতুন আরেকজন এল—রায়হান, অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। হাসিবের জায়গায় সে উঠে এল রুমে। আবির কিছু বলল না তাকে—হয়তো ও চলে গেছে, আর ফিরবে না।
রায়হান সহজ স্বভাবের ছেলে, একটু কথা বলল, জিজ্ঞেস করল হাসিব কেন চলে গেল।
আবির শুধু বলল—"জরুরি কারণে নাকি চলে গেছে।"

কিন্তু রাতে...
রুমে আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল দুইজন। আচমকা আবিরের ঘুম ভাঙল গভীর রাতে।
রুমে হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। জানালা বন্ধ থাকার কথা, কিন্তু এখন অল্প খোলা।

চোখ মেলে দেখে—রায়হান বিছানায় নেই।

আবির ধীরে ধীরে উঠে বসল। দেখল, রায়হান দাঁড়িয়ে আছে জানালার পাশে, নিঃশব্দে বাইরে তাকিয়ে।

আবির জিজ্ঞেস করল,
— “রায়হান ভাই, কী দেখছেন?”

রায়হান কিছু বলল না।

হঠাৎ ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে আবিরের দিকে তাকাল—চোখ লাল। একেবারে সেই একই দৃষ্টি... যেটা সে দেখেছিল হাসিবের চোখে।

আবির চিৎকার করে উঠতে গেল—কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না।

রায়হান বলল,
— “তোরে তো ও পছন্দ করছে...”
— “তুই থাকলে চলবে।”

আবির পেছনে হাঁটা শুরু করল। বিছানার কাছে গিয়ে মোবাইলটা ধরল। এবার লাইট আছে—আলো জ্বালাতেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল।

রায়হান তখনও দাঁড়িয়ে, কিন্তু এবার তার গলা অন্যরকম।
— “ও আমাকে বলে দিয়েছে—তুই যদি অন্য কাউরে সব বলিস, তোরে লাগবে... ও চুক্তি করেছে হাসিবের সাথে, এখন আমার সাথে।”

আবির চিৎকার করে বলল,
— “তোমরা কে? এই ‘ও’ টা কে?”

©️ Sanzid Ahmmed Redoy

রায়হান ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এল। বলল,
— “যার এই রুম ছিল... যে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল, জানিস? ওর নাম ছিল ফিরোজ। কলেজের সবচেয়ে ভালো ছাত্র, কিন্তু ওর প্রেমিকা ওরে ঠকায়। একদিন ওর চোখে জল ছিল, পরদিন ছাদ থেকে ঝুলছিল। কেউ জানে না, ও কী রেখে গেছে এই রুমে।”

“কিন্তু আমি জানি।
হাসিব জানতো।
এখন তুইও জানবি।”

হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। পুরো রুম অন্ধকার। বাইরে হালকা গুঞ্জন, যেন কারা ফিসফিস করছে।

আবির চোখ বন্ধ করেই ফ্যালফ্যাল করে চিৎকার করতে লাগল—
— “আল্লাহ! আমাকে বাঁচান! আমি আর থাকবো না এখানে!”

পরদিন সকাল।

রুমে ফিরে আসে মেস মালিক—একটা কাগজ হাতে।
আবির ঘরের দরজা খুলতেই মালিক বিস্মিত হয়ে বলে,
— “তুমি এখনো আছো? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি কালই চলে গেছো!”

আবির অবাক হয়ে বলল,
— “কেন?”
মালিক চুপচাপ কাগজটা হাতে ধরিয়ে দিল।

সেটা একটা আবেদনপত্র—রুম ছাড়ার নোটিশ।
সই করা, তারিখ দেওয়া—আবিরের নামে।

কিন্তু সে তো কিছুই লেখেনি!

পাশ থেকে অন্য ভাড়াটিয়া ছেলেটা বলল,
— “ভাই, হাসিব বা রায়হান নামে তো কাউকে আমরা চিনিই না। এই রুমে তুমি একাই ছিলে প্রথম থেকেই।”

আবির মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল।
সে চোখ বন্ধ করল—আর তখনই কানে ভেসে এল একটা ফিসফিসানি...

"তুই যদি যাস, ও তোর সাথে যাবে..."

চলমান ............।।

২য় পর্ব : https://www.facebook.com/share/p/1C7moBu8PC/

©️ Sanzid Ahmmed Redoy

25/04/2025

ইনশাল্লাহ আমাদের সব ঘটনা ভয়েস আকারে বা কনটেন্ট হিসেবে খুব শিগগিরই পাবলিশ করা হবে!
আপনাদের প্রতিক্রিয়া আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কমেন্টে জানান আপনাদের মতামত!
আপনাদের প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতা বা ভয়—সবই শুনতে চাই আমরা!

ভয়ংকর, অজানা ও রহস্যময় সব গল্প নিয়ে আসছি আমরা প্রতিদিন!
তাই চোখ রাখুন আমাদের পেজে এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না।

#ভুতের_গল্প #বাংলা_হরর #রহস্যময় #বাংলার_ভয়

Follow & Stay Tuned!

পুরান শহরের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা বিশাল তিনতলা দালান।সাদা রঙ উঠে গেছে, জানালার কাঁচ অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে, আর দেয়ালের গ...
17/04/2025

পুরান শহরের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা বিশাল তিনতলা দালান।
সাদা রঙ উঠে গেছে, জানালার কাঁচ অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে, আর দেয়ালের গা বেয়ে আগাছা বেড়ে উঠেছে পাথরের মতো শক্ত হয়ে।

এলাকাবাসীরা একে ডাকে—"শিবচরণ লজ"।
নামটা শুনলেই ছেলেরা সন্ধ্যার পর রাস্তা বদলায়।
কারণ—এই বাড়িটা ভাড়া হয় না। কখনো হয়নি।
তবু তার ইতিহাস একসময় ছিল গৌরবের।

১৯৪৭ সালের আগেই এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন ব্রিটিশ আমলের ব্যবসায়ী শিবচরণ সাহা।
বাড়িটিতে থাকত তার পরিবার, চাকর-বাকর, আর প্রায় ৮ জন নরসুন্দর-ঘরানার কর্মচারী।
দোতলায় ছিল লাইব্রেরি, তিনতলায় ছিল নারীকক্ষ, আর নিচতলায় শিবচরণের অফিস।

সবকিছু থেমে যায় এক রাতে।
১৯৬৪ সালের এক পূর্ণিমার রাতে।

তবে সেই ঘটনা এখন আর কেউ মনে রাখে না,
শুধু রাতে, যারা পাশ দিয়ে যায় তারা বলে—
“ওই দালানের ভেতরে নাকি সব ঘরেই বাতি জ্বলে একসাথে। অথচ ভিতরে কেউ নেই।”

২০০৯ সাল। শীত।
একটা দরিদ্র পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজির পরে এই দালানটিই ভাড়া নেয়—
একজন স্কুলশিক্ষক, তার স্ত্রী, এবং দুই ছেলে।

বাড়িটি এতটাই বড় আর পুরনো যে একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত কেউ থাকে না, শুধু তারা থাকে একতলায় ডানদিকের একটি রুমে।

প্রথম ২ সপ্তাহে কিছুই হয়নি।

তারপর শুরু হয় অদ্ভুত জিনিস।

প্রতিদিন রাত ১টা বাজলে, রান্নাঘরের টিনের ডেকচির মুখ খুলে পড়ে।
প্রথমে ভেবেছিল ইঁদুর।
কিন্তু যে ডেকচির ঢাকনা পড়ে, সেইটার নিচে ছিল ৩ লিটার পানি—কেউ না তুলে ফেলতে পারে না।
তবু সে পড়ে।
প্রতিদিন।

তারপর একদিন, ছোট ছেলে রিয়াদ ঘুম থেকে কেঁদে উঠে বলে—
"মা, ওই আপুটা আমার বিছানায় বসে ছিল, হাঁসছিল…"
বয়স তার ৪ বছর।
সেই রাতেই তার ১০৩ ডিগ্রি জ্বর উঠে যায়, ৩ দিন ধরে ঘুমায় না।

চতুর্থ দিন রাতে শিক্ষক নিজেই রুমের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকে—ঘড়িতে ১টা ৫ মিনিট।
দেখে—রান্নাঘরের দরজা এমনভাবে খুলে গেল যেন কেউ ভিতর থেকে ঠেলে দিল।
আর এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া এসে পুরো ঘরে ঢুকে পড়ে।

পরদিন সকালে তিনি দেখতে পান, রান্নাঘরের ছাঁদ থেকে একটা ছোট জুলন্ত পায়েল (নূপূর) পড়ে আছে—
একটা মাত্র।

এলাকার এক বৃদ্ধ তখন বলেন—
“এই বাড়ির নারীকক্ষে একসময় সাতজন কন্যা ছিল।
তাদের মধ্যে একজন অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনতলা থেকে লাফ দেয়।
তখন থেকেই—তিন তালা থেকে পায়েলের শব্দ নামে, আর নিচ তলার রান্নাঘরে তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।”

শিক্ষক তার পরিবার নিয়ে আর একরাতও কাটাননি।
তারা চলে যাওয়ার একদিন পর, পাশের দোকানের মানুষরা এক রাতে দেখতে পায়—

“পুরো দালানের তিনতলার সব জানালা দিয়ে যেন কেউ উঁকি দিচ্ছে—একসাথে, এক ছায়ায়…”
তাহলে চল ভাই, এবার শুরু হোক পার্ট ২—যেখানে সত্যি আর মিথ্যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকবে একটা পুরনো জানালা...
একটা ভুল করা হয়েছিল, আর তার পরিণতি ছিল ভয়ঙ্কর।

২০২১ সালের শুরু।

শিবচরণ লজের ঠিক পাশেই ভাড়া নেয়া একটা ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত মানিক নামে এক তরুণ।
বয়স ২২, সাহসী, আর ভূতের ভয় একদমই নেই—বরং এসব নিয়ে হাসি-তামাশা করাই ছিল তার নেশা।

এক সন্ধ্যায় বন্ধুরা মিলে পাশের চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে গল্প উঠল সেই পুরনো দালানটা নিয়ে।
কেউ বলল— “ওই তিনতলায় এখনও নাকি শব্দ আসে!”
কেউ আবার বলল— “উত্তর ঘরের জানালাটা একাই খুলে যায়!”

মানিক হেসে বলেছিল,
“দেখি তো কত বড় ভয়! আমি আজ রাতেই গিয়ে খুলে দেখি তিনতলা কেমন।”

সেই রাতেই, ৯টা নাগাদ,
সে একাই একটা মোবাইল আর টর্চলাইট নিয়ে ঢোকে শিবচরণ লজে।

নিচতলা, দোতলা—কিছুই হয় না।

তিনতলায় পা দিতেই
তাকে প্রথম ঠেকলো ছাঁদের গন্ধ—একটা পুরনো কাঠের গন্ধ, সাথে কাঁচা আগরবাতির মত ধোঁয়া।
চারদিক সুনসান।

সে হাঁটতে থাকে, ফোনের আলো ঘোরাতে ঘোরাতে।

ঠিক উত্তর পাশের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে যায় সে।
ঘরের দরজা অল্প খোলা, আর জানালাটা আসলেই খোলা!

মানিক দরজাটা ধীরে ধীরে ঠেলে দেয়।
ভিতরে ঢুকতেই হঠাৎ করে এক ঝাপটা হাওয়া—ফোনের আলো নিভে যায়।

আর সে শুনতে পায়…
“একটা মেয়ের শ্বাসের শব্দ। খুব কাছে। যেন ঘাড়ের ঠিক পেছনে।”

সে ফিরে তাকায়—কাউকে দেখে না।
আবার সামনে তাকায়—কিন্তু তখন ঘরের ভেতরে কেউ বসে।

একটা ফরসা রঙের মহিলা। চুল উঁচু খোঁপা করা, সাদা থান পরে বসে আছে জানালার পাশে।
মুখ তার দেখা যায় না।

মানিক ধীরে ধীরে পিছিয়ে আসে দরজা থেকে।

আর তখনই মহিলা মাথা ঘুরিয়ে বলে—

“তুমি জানালাটা বন্ধ করতে এসেছো?”

তার কণ্ঠটা যেন এক সাথে সাতজনের। ভারী, গম্ভীর, আর শিশুর মতো কুয়াশায় ঢাকা।

মানিক দৌড়ে বেরিয়ে আসে দালান থেকে।

---

সেই রাতের পর, মানিক আর স্বাভাবিক হয়নি।

তিনদিন কথা বলেনি।
চোখ খুলে থাকত, কিন্তু কারো সাথে চোখ মেলাত না।
তার মা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল—
“ছেলেটা রাতে ঘুমের ঘোরে বলে—‘জানালাটা খুলে রেখেছি মা… ওকে ঢুকতে দিয়েছি…’”

---

এরপরের মাসেই এলাকাবাসী দেখে—
বাড়ির তিনতলার সেই উত্তর ঘরের জানালা এখন সবসময় খোলা থাকে।
যখন ঝড়-বৃষ্টি, অন্য সব জানালা বন্ধ থাকে…
তবু ওটা খোলা।

আর রাতে, যারা পাশ দিয়ে যায়, তারা বলে—
“জানালার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে। কাঁধে একটা পুরনো লাল গামছা। আর পেছনে ধীরে ধীরে একটা হাত উঠে আসে…”

২০২২ সালের মাঝামাঝি।

বাড়িটি অনেকদিন ধরেই বন্ধ ছিল, কিন্তু হঠাৎ একদিন একজন নতুন মালিক এসে বলে—
“পুরো দালানটা ভেঙে নতুন মার্কেট বানানো হবে।”

লোকেরা অবাক হয়।
পুরান বাড়ির এত ইতিহাস, এত ভয়ানক ঘটনা—এই লোক কী করে সাহস পেল?

লোকটির নাম রুহুল আমিন, বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই।
সে বলে, “আমি এসব বিশ্বাস করি না। ভূত-প্রেত বলে কিছু নেই। এটা পুরোটাই গুজব।”

কাজ শুরু হয়।

দিনে ভাঙার কাজ, রাতে পাহারায় লোক।

তিনজন শ্রমিককে রাতে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রথম রাতেই তারা তিনজনের একজন হারিয়ে যায়।

তাকে পাওয়া যায় না কোথাও।
দ্বিতীয় দিন সকালে তার মোবাইল পাওয়া যায়—তিনতলার সেই উত্তর ঘরের জানালার পাশে,
আর পাশে খালি একটা পায়েল।
একটা মাত্র।

সিসিটিভি দেখায়—রাত ২টা ১৯ মিনিটে, সেই লোক তিনতলার দিকে উঠছে। কিন্তু আর নামেনি। কেউ দেখেওনি।

পরদিন বাকিদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলে—
“ও বলছিল, কোনো একটা বাচ্চা মেয়ের গলা শুনছে... ডাকছে… ‘ভাইয়া, জানালাটা বন্ধ করে দাও’।”
এখন প্রশ্ন জাগে—এই জানালাটা নিয়ে এত রহস্য কেন?
এই জানালার ওপাশে কী আছে?

একদিন এক সাংবাদিক আসে, সে পুরোনো ফাইল ঘেঁটে বের করে—

১৯৬৪ সালে, বাড়ির মালিক শিবচরণের মেয়েকে এক কাজের লোক ধর্ষণ করতে যায়।
মেয়েটি চিৎকার করে। কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে আসেনি।
তখন সে তিনতলার উত্তর ঘরের জানালা দিয়ে ঝাঁপ দেয়।

ঘটনাটি লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকে।
শিবচরণ পরিবার পরে দেশ ছেড়ে চলে যায়।
আর জানালাটা?
তারা কখনো বন্ধ করেনি।
কারণ...
সেই জানালা যদি বন্ধ করা হয়, কেউ একজন অন্যভাবে ফিরে আসে।

মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কারণ শেষ রাতটিতে, চারপাশে কেউ না থাকা সত্ত্বেও,
তিনতলার উত্তর জানালায় সাদা থান পরা এক নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়—
সে তাকিয়ে থাকে নিচে…
আর তার পেছনে ধীরে ধীরে এক শিশুর হাত উঠে আসে জানালার ফ্রেমে।

দুজন।
একটি নারী। একটি শিশু।
দুজনেই হারিয়েছিল জীবন… এক জানালার পাশে।

আজও জানালাটা খোলা থাকে।
ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক, কুয়াশা জমুক…
জানালাটা বন্ধ হয় না।
কারণ জানালা শুধু আলো আনে না—
কখনো কখনো, জানালা দিয়েই অন্ধকার ফিরে আসে।
আরও ঘটনা পড়তে নিচের লিংক গুলো ফলো করুন
অন্ধ পুকুরের ভৌতিক হাত : https://www.facebook.com/share/p/1AZ4R8Eu3b/

নানীবাড়িতে ভয়ংকর রাত: https://www.facebook.com/share/p/1BkDcyJBMe/

পাহাড়ের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা : https://www.facebook.com/share/p/1UF6AAxYts/

মায়ের সাথে ঘটা ভয়ংকর ঘটনা : https://www.facebook.com/share/15PcVx2sJV/

মরিয়মের বিয়ে হলো জিনের সাথে : https://www.facebook.com/share/1BqFqNwHQ4/
সেচ পাম্পের ভৌতিক অভিজ্ঞতা : https://www.facebook.com/share/1C7LWiSqwn/

ওমানে থাকা ভাইয়ের সাথে ভয়ংকর ঘটনা: https://www.facebook.com/share/1XM4wB5vUt/

আনিসের আ*ত্মহ*ত্যা এবং ভৌতিক পরিবেশ : https://www.facebook.com/share/161F5G149d/

#ভয়ংকর
শেষ



Address

Dhaka
1208

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sanzid Ahmmed Redoy posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category