09/12/2025
সুখী থাকার শ্রেষ্ঠ উপায় সাদাকা
সাদাকা দু’ধরনের
প্রথমত সাধারণ সাদাকা। যা করার পর তাৎক্ষণিক সাওয়াব পাওয়া গেলেও সেটা জারি থাকে না। যেমন কোনো অভাবীকে খাবার খাওয়ানো, অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এই সাদাকাও ইবাদত। এতে অনেক সাওয়াব হয়ে থাকে। সাধ্যমতো এতে অংশগ্রহণ করা উচিত।
দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া। যে কাজের উপকারিতা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দীর্ঘ সময় সময় পর্যন্ত চলমান থাকে। সাধারণত সাদাকায়ে জারিয়া সর্বক্ষণ চালু থাকে এবং এর সাওয়াবও সার্বক্ষণিক হতে থাকে। সাদাকাকারী মারা যাওয়ার পরও যে সাদাকার সাওয়াব পেতে থাকে সেটাই সাদাকায়ে জারিয়া।
আনাস রাযি. বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
سَبْعَةٌ يَجْرِي لِلْعَبْدِ أَجْرُهُنَّ وَهُوَ فِي قَبْرِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ: مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا، أَوْ كَرَى نَهَرًا، أَوْ حَفَرَ بِئْرًا، أَوْ غَرَسَ نَخْلًا، أَوْ بَنَى مَسْجِدًا، أَوْ وَرَّثَ مُصْحَفًا، أَوْ تَرَكَ وَلَدًا يَسْتَغْفِرُ لَهُ بَعْدَ مَوْتِهِ.
অর্থ : ‘মৃত্যুর পর কবরে থাকা অবস্থায় বান্দার সাতটি আমল জারি থাকে। (১) ইলম শিক্ষা দান, (২) নদী প্রবাহিতকরণ (৩) কূপ খনন, (৪) খেজুর (তথা ফলদার) গাছ রোপণ, (৫) মসজিদ নির্মাণ, (৬) কুরআন বিতরণ এবং (৭) এমন সন্তান রেখে যাওয়া, যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য ইসতিগফার করে।’
এই সাত ধরনের কাজকারী এমন, যারা মৃত্যুর পর কবরে গিয়েও নিজেদের কাজের সাওয়াব সবসময় পেতে থাকে।
দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাত চিরস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় অবস্থান করে আমাদের চিরস্থায়ী আখিরাত গড়তে হবে। এর পদ্ধতি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত, তিনি সন্তুষ্ট হন এমন কাজ করা এবং এমন কাজের চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করে এমন কাজের মাঝে নামাজ, রোজা, হজ, জিহাদ, নফল আমল এবং যিকির ইত্যাদির মতো সাদাকা করাও অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। এজন্য আল্লাহর রাস্তায় কেবল তার সন্তুষ্টির জন্য ইখলাসের সাথে আল্লাহর প্রদত্ত সম্পদ থেকে কিছু না কিছু কল্যাণমূলক কাজে খরচ করা উচিত।
সাদাকার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ব্যক্তির ইনকাম থেকে কিছু অংশ সাদাকার জন্য নির্ধারণ করে রাখা। সেটা এক শতাংশও হতে পারে। যেমন ১০০ টাকা থেকে ১ টাকা এবং ১০০০ টাকা থেকে ১০ টাকা নির্ধারণ করা। সাদাকার পরিমাণ এমন হওয়া দরকার, যা সহজে এবং নিয়মিত আদায় করা যায়। কারণ নিয়মিত নফল সাদাকা প্রদানের অভ্যাস করতে হবে।
সাদাকার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে হাদিসে নির্দেশনা পাওয়া যায়। যেমন এক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি মুসলিমের ওপর সাদাকা করা আবশ্যক। সাহাবিরা জানতে চাইলেন, যদি সাদাকা করার জন্য কিছু না পায় তাহলে সে কি করবে তিনি বললেন, তাহলে ব্যক্তি নিজ হাতে উপার্জন করবে। এতে সে নিজেও উপকৃত হবে আবার সাদাকাও করবে। সাহাবিরা পুনরায় জানতে চাইলেন, কেউ যদি এটাও না পারে তাহলে কী হবে তিনি বললেন, তাহলে সে অসহায় আর্ত মানুষকে সাহায্য করবে। আবার জানতে চাওয়া হলো, যদি কেউ এটাও না পারে তিনি বললেন, তাহলে সৎকাজ কিংবা কল্যাণের আদেশ করবে। আবারো জানতে চাওয়া হলো, যদি তা-ও করতে না পারে তিনি বললেন, তাহলে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা এটাও এক ধরনের সাদাকা।
প্রশান্ত অন্তর
লেখক : মাওলানা ইসহাক মুলতানী
উমেদ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত