প্রচ্ছদ প্রকাশন - Prossod Prokashon

প্রচ্ছদ প্রকাশন - Prossod Prokashon মননে ঐতিহ্যিক, প্রকাশে নতুনত্ব
(4)

বই : মাতৃত্বের সফর : মা হওয়ার প্রস্তুতি, পদক্ষেপ ও করণীয়লেখিকা : ড. সাজেদা হোমায়রাপৃষ্টা সংখ্যা : ১৬০মুদ্রিত মূল্য : ২৮০...
15/10/2025

বই : মাতৃত্বের সফর : মা হওয়ার প্রস্তুতি, পদক্ষেপ ও করণীয়
লেখিকা : ড. সাজেদা হোমায়রা
পৃষ্টা সংখ্যা : ১৬০
মুদ্রিত মূল্য : ২৮০৳

বই : ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মূলনীতিলেখক : আল্লামা মুহাম্মাদ আসাদঅনুবাদ : শাহেদ আলী
15/10/2025

বই : ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মূলনীতি
লেখক : আল্লামা মুহাম্মাদ আসাদ
অনুবাদ : শাহেদ আলী

চার বছর পর ২০২৯-এ ইংল্যান্ড থেকে যখন দেশে ফিরলাম, প্রত্যাশা ছিল এদেশে হয়তো ব্যাপক পরিবর্তন দেখব। যে ছেলেটি গলায় লেক্সাস ...
14/10/2025

চার বছর পর ২০২৯-এ ইংল্যান্ড থেকে যখন দেশে ফিরলাম, প্রত্যাশা ছিল এদেশে হয়তো ব্যাপক পরিবর্তন দেখব। যে ছেলেটি গলায় লেক্সাস বিস্কুটের প্যাকেট জড়িয়ে ছুটে গিয়ে আন্দোলনকারীদের হাতে বিস্কুটের প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছিল, তারপর ৫ আগস্টে শনির আখরায় স্নাইপারের গুলিতে শহীদ হয়, যে বোনেরা ভাইয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে মিছিল করেছিল, যে মা ছয় মাস পর্যন্ত ছেলের খোঁজে রাস্তায় বসে থাকত, তাদের স্বপ্ন বোধহয় কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে!

কিন্তু হতাশার সাগরে ডুবলাম।

মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে এদেশের মানুষ সব ভুলে গেল। অথবা ভুলিয়ে দেওয়া হলো। জুলাই যেন সবার গলার কাঁটা। জুলাইয়ের শহীদদের নাম কোথাও নেই। জুলাই যেটুকু টিকে আছে, তা ‘ব্যাবসা’র স্বার্থে। সত্যিকার স্পিরিট কারও মাঝে নেই।

আমি আলমগীরের বইপত্র ঘাঁটতে গিয়ে চার-পাঁচটি মোটা মোটা নোটবুক পাই। খুলে পড়তে পড়তে আমি মুগ্ধ থেকে মুগ্ধ হতে থাকি। প্রতিদিন ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি। সবগুলো গল্প পড়তে প্রায় এক মাস লেগে যায়। গুণে দেখি, মোট ৬৬টি গল্প। সবগুলো গল্পই অসাধারণ।

একদম শেষ গল্পের সাথে একটা চিরকুট পাই। হলুদ কালারের একটা কাগজ স্ট্যাপলিং করে লাগানো। মোটা কালিতে লেখা-

“ভাইয়া, আমার এ জীবনের জন্য আমি তোমার কাছে ঋণী। তোমাকে আমি শুধু কষ্টই দিয়েছি। তোমার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। আমার এ গল্পগুলো আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য ছোট্ট উপহার। আমি যদি ফিরে না আসি, এ গল্পগুলো তুমি তোমার নামে ছাপাবে। এটা আমার শেষ অসিয়ত।”

ভাবনার অতল তলে তালিয়ে যাই। আমার ভাই। আমার ভাই। একা একাই চিৎকার করে উঠি। হাউমাউ করে কাঁদি।

প্রতিজ্ঞা করলাম, আমি তার শেষ ইচ্ছে পূরণ করব। তবে এমনভাবে করব, যাতে একদিন জুলাই ফিরে আসে। রক্তাক্ত জুলাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এক যুগ দুই যুগ পরে হলেও জুলাইকে আবার জাগিয়ে তুলব। জুলাইয়ের সব শহীদ পরিবারের মর্যাদা ফিরিয়ে আনব।
স্বপ্ন দেখলাম, একদিন শুধু আমার ভাই নয়, জুলাইয়ের সব বীরদের মানুষ আবার শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। যে স্বপ্ন আর যে সাহস নিয়ে তারা লড়াইয়ে নেমেছিলেন, সেই স্বপ্নের কথা এদেশের তরুণরা আবার জানবে। আবার উদ্বুদ্ধ হবে।

মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিলাম।

অবশ্য নিজের নামে বই ছাপাতে গিয়ে কিছুটা দ্বিধাও লাগছিল। নিজেকে প্রতারক মনে হচ্ছিল। মনকে সান্ত্বনা দিলাম, নিয়তের ব্যাপারে তো আল্লাহই ভালো জানেন। সারা পৃথিবীর মানুষ ভুল বুঝলেও আল্লাহ মানুষকে ভুল বোঝেন না।

অধ্যাপক জুবায়েরের পরিচিত এক প্রকাশক ছিল। তার মাধ্যমে ছাপিয়ে দিলাম প্রথম বই। প্রতি বইয়ে তিনটির বেশি গল্প না ছাপানোর পরিকল্পনা করলাম।

বই ছাপানোর পর প্রতিদিন খোঁজ নিতাম। নাহ, কেউ বই কেনেনি। কেনে না।
দেড় মাস পার হলো। একদিন লেখক পরিচিতিতে আমার নাম দেখে ডিপার্টমেন্টের এক ছেলে ক্লাসের সবাইকে বইয়ের কথা জানায়।

এরপরের ইতিহাস সবার জানা। নতুন করে কিছু বলার নেই।

আমি সফল হলাম কি না, তা জানার সুযোগ আমার নেই। কারণ, যেদিন সফলতা বা ব্যর্থতার হিশাব হবে, সেদিন আমি দুনিয়াতে থাকব না।

তরুণ প্রজন্মকে বলব, ২৫ বছর আগে জুলাইয়ে কেন একদল ‘পাগল’ সব পিছুটান ভুলে এভাবে রাস্তায় নেমে এসেছিল, একবার জানার চেষ্টা করো।

বয়স্কদের বলব, তোমরা শহীদদের সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ, তোমাদের ক্ষমা নেই। মরেও তোমরা শান্তি পাবে না।

ডায়েরি পড়া শেষ হলো। সবাই বাক্রুদ্ধ হয়ে রইল। কারও মুখে রা নেই। যে যেখানে ছিল, সেখানেই বসে রইল। কী থেকে কী হয়ে গেল কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না। রুমের ভেতর পিনপতন নীরবতা। সবাই সবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। কিন্তু কারও মুখ হতে কোনো শব্দ বেরুল না।

এ বছরই জুলাইয়ে ‘অবিশ্বাস্য ইতিহাস’ নামে তিনটি গল্প নিয়ে একটি বই বেরুলো। লেখকের নামের স্থলে লালকালিতে লেখা আছে-
শহীদ আওরঙ্গজেব মুহাম্মদ আলমগীর।

প্রচ্ছদে ছাপা হলো সেই চিঠি। ৫ তারিখ সকালে যে চিঠি লিখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন লেখক

“ভাইয়া,
তুমি আমাকে ভুল বোঝো না। শাহানা বড়ো দুঃখী মেয়ে। এই দুনিয়াতে ওর কেউ নেই। আমি ওর দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমি যদি না ফিরি, ওকে দেখো। ভালো ছেলে দেখে ওকে বিয়ে দিয়ে দিয়ো। আমার অনাগত সন্তানের সব দায়িত্ব তোমাকে দিয়ে গেলাম।

শাহানা,
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমার দুঃখ ঘোচাতে পারলাম না। যে ভরসা নিয়ে তুমি আমার হাত ধরেছিলে, তোমার সে আশা পূরণ করতে পারলাম না। ভাইয়ার কথামতো চলো।

সন্তানের উদ্দেশে-
(ফাঁকা, কিছুই লেখা নেই। কে জানে! হয়তো লিখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু লেখার ভাষা খুঁজে পাননি। কিংবা নীরবতা দিয়েই বুঝিয়ে গেছেন সব কথা।)”

বই : সূর্যগ্রহণ
লেখক : কাউসার আলম
ধরণ : জুলাই উপন্যাস

14/10/2025

ইসলামি বইমেলার সময় বাড়লো আরও ৫ দিন।

মেলা চলবে ১৮ অক্টোবর, শনিবার পর্যন্ত।

এই গ্রন্থের যাত্রাপথবাংলাদেশের ইসলাম, রাজনীতি ও সমাজের ওপর একটি সারগর্ভ পটভূমি উল্লেখের পর এই গ্রন্থে যে মূল বিষয়বস্তু ত...
14/10/2025

এই গ্রন্থের যাত্রাপথ

বাংলাদেশের ইসলাম, রাজনীতি ও সমাজের ওপর একটি সারগর্ভ পটভূমি উল্লেখের পর এই গ্রন্থে যে মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে, তা হলো- ‘জামায়াত প্রশ্ন’ : শাসকগোষ্ঠীর প্রচণ্ড নিপীড়ন, বৈষম্য ও কঠোর নজরদারির পরেও কেন জামায়াত এতটা স্থিতিশীল? ১৯৭১ সালের বিতর্কিত অতীত এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনের আহ্বান-এই দুটি বিষয়ের মধ্যে জামায়াত কীভাবে মধ্যস্থতা করে? উদার গণতন্ত্র ও নব-উদারবাদী বিশ্বব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে আমরা জামায়াতকে কোথায় এবং কীভাবে স্থাপন করব? আমাদের সময়ের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই বইটি একটি পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে এবং বিশ্লেষণমূলক দক্ষতার সাথে তা উপস্থাপন করেছে, যা একাধারে অ্যাকাডেমিক পাঠক ও সাধারণ পাঠক-উভয়ের জন্য উপযোগী। এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘জামায়াত প্রশ্ন’-কে একটি বিস্তৃত বয়ান ও বিশ্লেষণমূলক আখ্যানের মধ্যে নিয়ে এসেছে, যাতে এই আলোচনাকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়া যায়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, জামায়াতের ওপর নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের ভিত্তিতে পরিচালিত কোনো অ্যাকাডেমিক কাজ নেই বললেই চলে; তাই এই ইসলামপন্থি দলটি নিয়ে একটি গবেষণাভিত্তিক সুলিখিত অ্যাকাডেমিক গ্রন্থ বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই সাহিত্যিক শূন্যতা উপলব্ধি করে গত পাঁচ বছর ধরে এই গ্রন্থের সম্পাদকগণ এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত সারা বিশ্বের কয়েক ডজন স্কলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং এই বিশেষ প্রকল্পটি দাঁড় করিয়েছেন। ফলে এই সংকলনটি এই ক্ষেত্রে একটি নতুন, গুরুত্বপূর্ণ, দীর্ঘস্থায়ী, বুদ্ধিবৃত্তিক ও অ্যাকাডেমিক অবদান রাখার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।

গভর্নমেন্টালিটি ও ওরিয়েন্টালিজম-বিষয়ক সাহিত্য থেকে শক্তিশালী অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে এই সংকলনটি জামায়াতকে ঘিরে দশকের পর দশক ধরে গড়ে ওঠা বয়ান ও প্রচলিত স্টেরিওটাইপগুলোকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে চায় এবং বিশ্লেষণ করে দেখতে চায়। যেহেতু ‘জামায়াত প্রশ্ন’টি সাহিত্যে তুলনামূলকভাবে নতুন, তাই এই সংকলনটি বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং এখান থেকে সম্ভাব্য কিছু প্রতিক্রিয়া আসার ঝুঁকিও রয়েছে। কিছু পাঠক এই সংকলনের উপাদানগুলোকে ‘রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে মনে করতে পারেন। এটি অস্বাভাবিক নয়। কারণ, দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রচারণা ও রাজনৈতিক নিপীড়নের (আল মামুন ২০২০; ফাহিম ২০২২) পরে বাংলাদেশে ‘জামায়াত প্রশ্ন’টি অত্যন্ত বিতর্কিত ও ভুল বোঝাবুঝির শিকারে পরিণত হয়েছে। ৯/১১-পরবর্তী তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে এই গ্রন্থের সম্পাদকগণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, এই সংকলনের উদ্দেশ্য হলো-‘বহুবিধ শাখার অন্তর্দৃষ্টি ও দৃষ্টিকোণ’ ব্যবহার করে কল্পনার মধ্য থেকে বাস্তবতাকে বের করে আনা। তবে যেখানে জনগণ ও বুদ্ধিজীবীরা কোনো বিষয়ে তীব্রভাবে বিভক্ত, সেখানে পক্ষপাতহীনতা প্রদর্শন করা নিঃসন্দেহে একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ।

যেহেতু জামায়াত ইস্যুটি বিতর্কিত ও ভুল বোঝাবুঝির শিকার এবং যেহেতু এ বিষয়ে জনমত তীব্র ও বৈরীভাবে বিভক্ত, সেহেতু ‘বস্তুনিষ্ঠতা’র প্রশ্নটি একটি স্থায়ী বিষয় হিসেবে থেকে যেতে পারে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান)-এর মধ্যকার বিচ্ছেদের বিরোধিতার কারণে জামায়াতের বিতর্কিত ভূমিকা দলটিকে রাজনৈতিক নিপীড়ন ও নেতিবাচক প্রচারণার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এর পরিণতিতে যা হয়েছে তা হলো-মানুষ সাধারণত দলটিকে ১৯৭১ সালের পশ্চাদমুখী ও সরলীকৃত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ঘৃণার রাজনীতির সাথে ৯/১১-পরবর্তী ভূরাজনীতির মিথস্ক্রিয়ার কারণে শাসকগোষ্ঠী এবং এর সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মিত্ররা একটি শক্তিশালী জামায়াতবিরোধী বয়ান গড়ে তুলেছে। যেহেতু জামায়াত প্রশ্নে জনগণ ও বুদ্ধিজীবীরা তীব্রভাবে বিভক্ত, তাই এই প্রকল্পের স্পষ্ট লক্ষ্য হলো-বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা এবং সামাজিক বিজ্ঞানের কিছু প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি (মেথডোলজি) যেমন-বয়ান বিশ্লেষণ (ডিসকোর্স অ্যানালাইসিস) ও বিনির্মাণতত্ত্ব (ডিকনসট্রাকশন) ব্যবহার করে কল্পনার মধ্য থেকে বাস্তবতাকে বের করে আনা। সম্পাদকদের অ্যাকাডেমিক কঠোরতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতির কারণে বইটিকে কখনও প্রো-জামায়াত এবং কখনও অ্যান্টি-জামায়াত বলে মনে হতে পারে। তবে এ গ্রন্থের মূল লক্ষ্য হলো-বিষয়টিকে পক্ষপাতহীন ও নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করা, যাতে পাঠকগণ নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বইটি যেন রাজনৈতিক প্রচারণার পরিবর্তে মুক্তমনা অনুসন্ধানের দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্মিত হয়, সেজন্য সম্পাদকগণ সারা বিশ্ব থেকে এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত স্কলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের একেকটি অধ্যায় লেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান। অ্যাকাডেমিক কঠোরতা ও পক্ষপাতহীনতা বজায় রাখার স্বার্থে সম্পাদকগণ প্রতিটি অধ্যায়ের পিয়ার রিভিউ নিশ্চিত করেছেন এবং চূড়ান্ত জমার পূর্বে এগুলো পুনরায় যাচাই (ক্রসচেক) করেছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত প্রশ্ন : একটি গণতন্ত্র-উত্তর দেশে ইসলাম, রাজনীতি ও সমাজ

সম্পাদনা
সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম
মুহাম্মাদ সাইদুল ইসলাম

অনুবাদ : রোকন উদ্দিন খান

একজনের চোখে যা অপছন্দের, অন্যজনের চোখে তা কর্তব্যসারা ডিমের সাথে মরিচের গুঁড়া খেতে পছন্দ করে। আর আমার মরিচের গুঁড়া খেতে ...
14/10/2025

একজনের চোখে যা অপছন্দের, অন্যজনের চোখে তা কর্তব্য

সারা ডিমের সাথে মরিচের গুঁড়া খেতে পছন্দ করে। আর আমার মরিচের গুঁড়া খেতে একটুও ভালো লাগে না। সারার মতে, ডিম ভাজার সময় ডিমের কুসুমের অংশকে ওপরে রেখে এর ওপর ততক্ষণ পর্যন্ত মরিচের গুঁড়া ছেটাতে হবে, যতক্ষণ না কুসুমটি কালো রং ধারণ করে। আমাদের বিবাহিত জীবনে সারা আমাকে শত শত ডিমভাজা খাইয়েছে। প্রতিবার ডিম ভাজার সময় সে ডিমের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিত; যদিও সে জানত, আমি মরিচের গুঁড়া ছেটানো ডিমভাজা খেতে পছন্দ করি না। কিন্তু আমি বুঝতাম, সারা আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এ কাজ করত না। সে এ কাজ এজন্যও করত না যে, আমি ওর কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ। আমি ওর মন বুঝতাম। এমনকি ডিমে ভালো করে মরিচের গুঁড়া ছেটানোর পর সারা বিড়বিড় করে বলত, ‘মরিচ ছেটানো বোধহয় কম হয়ে গেছে, মরিচ কম হলে ডিমের মজাই থাকে না।’

সারা বারবার ডিমে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে গেলেও আমি কখনো মনে করতাম না যে, সে আমাকে বিরক্ত করতে এটা করছে। কারণ আমি জানি, সে ডিম ভাজার সময় আসলে অন্য কিছু ভাবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে মরিচ ছিটিয়ে দেয়। অথচ উলটোটাই হওয়ার কথা ছিল। আমি ওকে হাজারবার বলেছি, ডিমে যেন মরিচ না দেয়। কিন্তু এরপরও মরিচ দিলে আমার তো রাগে ফেটে পড়ার কথা। ভেবে নেওয়ার কথা, সে আমার প্রতি যত্নশীল নয়। কিন্তু আমি সারার এ কাজকে নেতিবাচকভাবে নিইনি। কারণ, আমি জানতাম, সে কখনও ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দেবে না। মনের গভীর থেকে আমাকে কখনও অপমান করবে না। একজন স্বামী আমার এ কৌশল প্রয়োগ করে সফল হয়েছিলেন। তাঁর কথায় শুনুন-
যে মুহূর্তে আমার প্রতি স্ত্রীর সহানুভূতির দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে সক্ষম হলাম, সেই মুহূর্তটি ছিল অনিন্দ্য আনন্দের। দুঃখজনক বিষয় হলো, আমি আগে ওকে ভুল বুঝতাম। ওর মনের ভেতরের অনেক খবরই ছিল আমার কাছে অজানা। যেমনঃ আমি বুঝতেই পারিনি, সে প্রসবপরবর্তী ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এ রকম কিছু বিষয় অনুধাবন করার পর ওর প্রতি আমার মনটা মমতায় ভরে গেল। চিন্তা করলাম, সেও নিশ্চয়ই ওর প্রতি আমার ভালোবাসার বিষয়গুলো ঠিকমতো অনুভব করতে পারছে না; যদিও আমার মন ওর প্রতি ভালোবাসায় কাতর হয়ে থাকত।

এই ভদ্রলোক সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। দেখুন, আপনিও পারেন কি না!

বই : লাভ এন্ড রেসপেক্ট : দাম্পত্য সুখের অজানা রহস্য
লেখক : ড. এমারসন এগারিচেস
রূপান্তর : রোকন উদ্দিন খান

নামাজ শেষ করে বসে বসে জিকিরগুলো পড়ছি। সুরা নাস, সুরা ফালাক পড়ছি এবং আল্লাহর কাছে দুআ করছি। বিভিন্ন রকম তাসবিহ-তাহলিল করছ...
13/10/2025

নামাজ শেষ করে বসে বসে জিকিরগুলো পড়ছি। সুরা নাস, সুরা ফালাক পড়ছি এবং আল্লাহর কাছে দুআ করছি। বিভিন্ন রকম তাসবিহ-তাহলিল করছি আর ভাবছি, ভালো কেউ একজন আসে কি না। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দুআ-দরুদ পড়লাম।

এরপর শুরু হলো পেটে প্রচণ্ড মোচড়। অনুভব করলাম, প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে। রাতে ঘরে ফিরে তো খেতেও পারিনি! খাওয়ার আগেই ওরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসেছে। এই প্রথমবারের মতো প্রচণ্ড ক্ষুধা টের পেলাম। এমন সময় আবার পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। লোকটি এসে আবার চোখের বাঁধনটা হালকা করে দিলো, যেমন বাথরুমে নেওয়ার সময় করেছিল। আমার সামনে একটি মামের দেড় লিটারের বোতল রাখল। এই মামের বোতলের পানি হচ্ছে আমার খাওয়ার পানি। বোতলটি অতি পুরাতন এবং খুবই ময়লাযুক্ত। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই খাবার পানি কি ওই টয়লেট থেকে নিয়ে এসেছেন?’
‘হ্যাঁ, এই পানি ওই বাথরুমের ট্যাপ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।’ সে উত্তর দিলো।

ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, পুরো বোতলের খাঁজগুলোতে কালো ময়লা জমে আছে। মুখটা হলুদ রঙের হয়ে গেছে। এই মুখ দিয়ে কতদিন ধরে যে কতজন পানি খেয়েছে, কে জানে! বোতলের মুখের কাছে প্রতিটি খাঁজে ময়লা জমে আছে। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম।

এরপর আরেকটি বোতল দিলো, সেই বোতলের পেটের কাছে কাটা। দেখে মনে হলো-এটিতে হলুদ রাখা হয়েছিল কখনো। পুরো বোতলটা হলুদ রঙের হয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, এটা কীসের বোতল?’

সে এবার ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’-তে নেমে এলো। বলল, ‘তোর যদি রাতে কখনো পেশাব করার প্রয়োজন হয়, আমাদের ডাকবি না; এর মধ্যে পেশাব করবি।’

এবার বুঝতে পারলাম, বোতলটি কেন হলুদ রং ধারণ করেছে। এই বোতলে কতজন যে কতবার পেশাব করেছে, তার হয়তো কোনো ইয়ত্তা নেই। বেচারা বোতল বাধ্য হয়ে হলুদ রং ধারণ করে বসেছে!

লোকটি বলল, ‘কেবল টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হলেই আমাদের ডাকবি। হাতকড়া দিয়ে গ্রিলে তিনবার জোরে জোরে আওয়াজ দিবি। তারপর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে দেখবি কেউ আসে কি না। যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে কেউ না আসে, তাহলে আবার তিনবার শব্দ করে অপেক্ষা করবি। কিন্তু মনে রাখবি, পানির জন্য আর পেশাবের জন্য ডাকবি না, শুধু টয়লেটের প্রয়োজন হলে ডাক দিবি।’

এরপর লোকটি চলে যেতে উদ্যত হলে অত্যন্ত বিনয়ী ভঙ্গিতে বললাম, ‘ভাই, আমি তো একটু আগেই এশার নামাজ পড়েছি। এখন কত রাত, সেটা বুঝতে পারছি না। আমি একটু তাহাজ্জুদের নামাজও পড়তে চাই। এখন কয়টা বাজে, যদি একটু বলতেন! আর সকাল হয়ে থাকলে ফজরের নামাজ পড়ব।’

লোকটি কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে গম্ভীর গলায় বলল, ‘এখানে সময় বলা নিষেধ। পরে আর কখনো সময় জিজ্ঞেস করবি না।’ এ কথা বলে জোরে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি খুবই হতভম্ব হয়ে গেলাম। এটা কেমন কথা-সময় বলা যাবে না!

বই : আয়নাঘরের সাক্ষী : গুম জীবনের আট বছর
লেখক : ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)

ইসলাম ও রাজনীতিইসলামে ধর্ম ও রাজনীতি একই মুদ্রার দুই পিঠ হিসেবে বিবেচিত হয় না; বরং ইসলাম একটি সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা, যেখ...
12/10/2025

ইসলাম ও রাজনীতি

ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতি একই মুদ্রার দুই পিঠ হিসেবে বিবেচিত হয় না; বরং ইসলাম একটি সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা, যেখানে ধর্ম ও রাজনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কিত। জন এসপোসিটো বলেছেন-“প্রচলিত ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি একটি সামগ্রিক জীবনের নির্দেশনা দেয়, যেখানে ধর্ম রাজনীতি, আইন ও সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত” (মোটেন ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ২০)। অনুরূপভাবে কাব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন-“ইসলাম, সরকার ও জনগণ হলো একটি তাঁবুর খুঁটি, দড়ি ও খিলের মতো। তাঁবু হলো ইসলাম; খুঁটি হলো সরকার; দড়ি ও খিল হলো জনগণ। একটির অভাবে অন্যটি টিকে থাকতে পারে না” (মোটেন ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ২০)।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্র হলো ইসলামের মৌলিক নীতিমালা বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান। ইসলামে কাউকে নিজস্ব ক্ষমতায় আইন প্রণয়নের অধিকার দেওয়া হয়নি এবং কাউকে তা মানতে বাধ্যও করা হয়নি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-“ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই, তিনি নির্দেশ দেন তোমরা তিনি ব্যতীত অন্য কারও কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। এটাই সঠিক পথ” (সূরা ইউসুফ ১২:৪০)। “তারা বলে, আমাদেরও কি ক্ষমতা আছে? বলুন, সব ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই” (সূরা আলে ইমরান ৩:১৫৪)। “যারা আল্লাহ কর্তৃক প্রকাশিত আইন অনুযায়ী বিচার করে না, তারা কাফির” (সূরা আল মায়িদা ৫:৪৪) (মোটেন ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ২০)।

ইসলামী রাষ্ট্র সব ধরনের বর্ণবাদ ও জাতীয়তাবাদ থেকে মুক্ত থাকার কথা। এটি একমাত্র ইসলামী নীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্র। আবুল আ’লা মওদূদীর মতে-“প্রত্যেক সদস্য তার দায়িত্ব পালন করে আল্লাহর কাছে, যিনি সামাজিক ন্যায়বিচারের আদেশ করেন এবং সব ধরনের শোষণ, অন্যায়, বিশৃঙ্খলা ও অসমতা নিষিদ্ধ করেন” (মোটেন ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ২১)। ফলে এমন সমাজ যেখানে মুসলিমদের আধিক্য রয়েছে, সেখানে শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে ইসলামের মূল্যবোধ উপেক্ষা করা বা ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা কঠিন, দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষিত না হলেও। ইতিহাসের কোনো পর্যায়ে কিছু মুসলিম দেশ ধর্ম ও রাজনীতিকে পৃথক করার উদ্যোগ নিয়েছিল, তবে একটি মুসলিম-অধ্যুষিত দেশে রাজনৈতিক জীবন সাধারণত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবনের বৃহত্তর কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হয়। ইসলামের মৌলিক নীতিমালা থেকে গুরুতর বিচ্যুতি একটি শাসনব্যবস্থার অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশ সত্ত্বেও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ঐতিহ্যবাদের গভীর প্রভাব লক্ষ করা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গ্রামে বসবাস করে, আর সংখ্যালঘু অংশটি উপনিবেশবাদী শাসনের কারণে শাসকশ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। গুনার মিরডাল উল্লেখ করেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্ম এতটাই গভীরভাবে প্রোথিত যে “এমনকি কমিউনিস্টরাও ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না” (মিরডাল ১৯৭৭, পৃষ্ঠা ১৪১)। এমনকি কিছু জাতীয়তাবাদী নেতা, যেমন মহাত্মা গান্ধি বলেছেনÑ“আমার কাছে রাজনীতি ও ধর্মের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই” (মিরডাল ১৯৭৭, পৃষ্ঠা ১৪২)। সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রশিদুজ্জামান মন্তব্য করেছেন-
“যখন পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়, তখন অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়া অপরিবর্তনীয়ভাবে ধর্মীয় গোষ্ঠীবদ্ধতা ও সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের পথে অগ্রসর হচ্ছে, যা ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তির পটভূমি ছিল। তবে পরবর্তী ঘটনাবলি প্রমাণ করে দেয়, তারা ভুল ধারণা পোষণ করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইসলামী ঐতিহ্য ও অনুভূতিকে উপেক্ষা করেছিল, যা পরে নতুন বাংলাদেশের সরকার দ্বারা সচেতনভাবে চর্চা করা হয়। এটি পরে একটি দৃঢ় ও ব্যাপক রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে ফিরে আসে” (রশিদুজ্জামান ১৯৯৪, পৃষ্ঠা ৫৫)।

এই প্রেক্ষাপটে এই অধ্যায়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্রতিটি শাসনামলে ইসলামকে কীভাবে এবং কেন একটি বৈধতার মূল্যবোধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে; আর এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী কী ভূমিকা পালন করেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত প্রশ্ন : একটি গণতন্ত্র-উত্তর দেশে
ইসলাম, রাজনীতি ও সমাজ

সম্পাদনা
সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম
মুহাম্মাদ সাইদুল ইসলাম

অনুবাদ : রোকন উদ্দিন খান

কেবল সুদমুক্ত ব্যাংকই কি ইসলামী ব্যাংককারও কারও ধারণা হলো-কোনো ব্যাংকের কার্যক্রম কেবল সুদমুক্ত হলেই ‘ইসলামী ব্যাংক’ হয়ে...
11/10/2025

কেবল সুদমুক্ত ব্যাংকই কি ইসলামী ব্যাংক

কারও কারও ধারণা হলো-কোনো ব্যাংকের কার্যক্রম কেবল সুদমুক্ত হলেই ‘ইসলামী ব্যাংক’ হয়ে যায়। যেমন-ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের একটি প্রধান মূলনীতি হলো সুদি লেনদেন থেকে বিরত থাকা। এ ধারণা থেকে সর্বসাধারণের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ‘সুদবিহীন ব্যাংক’ নামেও পরিচিত।
এরূপ ধারণা সর্বার্থে সঠিক নয়; বরং কোনো ব্যাংক ‘ইসলামী ব্যাংক’ নামে পরিচিত হওয়ার জন্য তার আমানত গ্রহণ, বিনিয়োগ প্রদান, মুনাফা অর্জন ও বণ্টনসহ সকল কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া শরীয়াভিত্তিক পরিচালিত হতে হবে। একটি ব্যাংকের নামের সাথে কেবল ‘ইসলামী’ শব্দ যোগ করলেই সেই ব্যাংককে ‘ইসলামী ব্যাংক’ বলা যায় না; বরং যে ব্যাংক সুদবর্জনসহ ইসলামী শরীয়তের যাবতীয় আর্থিক নীতিমালা অনুসরণকরত পূর্ণ স্বচ্ছতা, সততা, বিশ্বস্ততা ও ন্যায়-ইনসাফের সাথে পরিচালিত হয়, তাকে ‘ইসলামী ব্যাংক’ বলা হয়।
সুদমুক্ত ব্যাংকিং একটি সংকীর্ণ ধারণা, যা নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া মেনে চলে এবং সুদ বর্জন করে। পক্ষান্তরে ইসলামী ব্যাংক তার সকল কার্যক্রমে সুদ এড়িয়ে চলে, চাই তা তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে হোক কিংবা তা বরাদ্দের ক্ষেত্রে হোক; তবে কেবল সুদ এড়িয়ে চললে এবং ব্যবসায় লিপ্ত হলেই তাকে ‘ইসলামী ব্যাংক’ বলা যায় না। একে বড়োজোর ‘সুদমুক্ত ব্যাংকিং’, ‘মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক’ বা ‘ইসলামিক বাণিজ্যিক ব্যাংক’ বলা যায়।
উল্লেখ্য, ইসলামী ব্যাংক কেবল সুদকেই এড়িয়ে চলে না; বরং ইসলামী শরীয়া ও ইসলামী অর্থনীতির সুমহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কাজ করে এবং সকল অনৈতিক ও অকল্যাণকর কর্মকাণ্ড ও কারসাজি থেকে বিরত থাকে। এটি এমন একটি ব্যাংক, যা লেনদেনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শরীয়তের মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামী ব্যাংক যেমন কোনোরূপ সুদি লেনদেনে অংশ নেয় না, তেমনি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয় কিংবা সমাজ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর-এরূপ কোনো খাতে লেনদেন থেকেও বিরত থাকে। কেবল মুনাফা অর্জন নয়, উচ্চহারে মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতা নয়; অর্থনৈতিক সুবিচার ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, সামাজিক কল্যাণসাধন ও পরিবেশের উন্নয়নের দিকটিকেই ইসলামী ব্যাংক তার বিনিয়োগ কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেয়। আর্থিকভাবে লাভজনক কোনো ব্যবসায় পরিবেশ ও সামাজিক বিবেচনায় অকল্যাণকর হলেও এথিক্যাল ব্যাংকিং উদ্যোগের প্রেরণায় উজ্জীবিত ইসলামী ব্যাংক তাতে অংশ নেয় না।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সুদবিহীন নিছক লেনদেন ইসলামিক কার্যক্রম হতে পারে না, যে যাবৎ না তাতে ইসলামের অন্য নিদের্শনাগুলো অনুসৃত হয়। পশ্চিমা বাজারভিত্তিক সমাজগুলোতেও অনেক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান লাভ-লোকসান ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে আসছে। কেউ লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে শূকরের খামার পরিচালনা করছে, কেউ মদের ব্যাবসা করছে বা মদের কারখানা স্থাপন কিংবা নাইট ক্লাব প্রতিষ্ঠা করছে। লাভ-লোকসান ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে চললেও এ ধরনের কার্যক্রম ইসলামিক হতে পারে না। ইসলাম শরীয়া-নির্ধারিত হারাম খাতে অর্থায়ন নিষিদ্ধ করেছে।
মোটকথা, অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সুদের কৌশলগত পরিবর্তন ইসলামের সঠিক চেতনাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে না, যদি তা সঞ্চয়কারী, বিনিয়োগকারী, উৎপাদক ও ভোক্তাদের মধ্যে ইসলামী চেতনাসংবলিত একটি ন্যায়নিষ্ঠ অংশীদারত্বের প্রেরণা সঞ্চার করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে না পারে। ইসলামী ব্যাংককে শরীয়তসম্মত পন্থায় সম্পদ আহরণ করতে হবে; অন্যায্য কোনো পন্থায় নয়, যে পন্থায় কপটতা, দুরভিসন্ধি, চাতুর্য ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থোপার্জন ও পুঁজি বৃদ্ধির বৈধতা দেওয়া হয়েছে। সুদবিহীন ব্যাংকিং বা মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বাস ও কাজে ইসলামী জীবনাদর্শ ও নীতির সম্পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে না। পূর্বনির্ধারিত (প্রাক্কলিত) লাভে আমানত গ্রহণের প্রসঙ্গটিই এ ক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে পূর্বনির্ধারিত থাকায় এসব লাভকে অনেকেই সন্দেহমূলক লেনদেন ও সুদের অবিকল দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরে নেয়।

বই : ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শরীয়া পরিপালন ও লঙ্ঘন : সমস্যা ও উত্তরণ ভাবনা
লেখক : ড. আহমদ আলী

বাই ঈনা‘ঈনা’ নগদ অর্থকে বোঝায়। এ পদ্ধতিতে লেনদেনের মূল উদ্দেশ্য ক্রয়-বিক্রয় নয়; নগদ অর্থ। সেজন্য একে ‘বাই ঈনা’ বলা হয়। ব...
09/10/2025

বাই ঈনা

‘ঈনা’ নগদ অর্থকে বোঝায়। এ পদ্ধতিতে লেনদেনের মূল উদ্দেশ্য ক্রয়-বিক্রয় নয়; নগদ অর্থ। সেজন্য একে ‘বাই ঈনা’ বলা হয়। বলা হয়, এটির মূল শব্দ এসেছে ‘আউন’ (عون) থেকে, যার অর্থ সাহায্য; বিক্রেতা তার আসল উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ক্রেতার সাহায্য সহযোগিতা নেয়, সেজন্য একে বাইউল ঈনা বলে। কারও কারও মতে, এটি ‘আনা’ (عناء) থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ কষ্ট স্বীকার করা। অনেক কষ্টে এ ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে আসল উদ্দেশ্য সাধিত হয় বলে একে বাই ঈনা বলা হয়। এর অর্থ ঋণও হয়। এর অর্থ চোখে দেখা যাচ্ছে এমন পণ্যও হয়।

শরীয়তের পরিভাষায় বাই ঈনা (ইুঁ ইধপশ) হচ্ছে এমন দুটি ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনের নাম, যার প্রথমটিতে যিনি বিক্রেতা থাকবেন, পরেরটিতে তিনি ক্রেতা হয়ে যান। একইভাবে প্রথমটিতে যিনি ক্রেতা থাকেন, পরেরটিতে তিনি বিক্রেতা হয়ে যান। আর পণ্যের মূল্যের দিক থেকে প্রথমটিতে বাকি মূল্যে বেশি দামে বিক্রয় হয় এবং দ্বিতীয়টিতে তা থেকে কম মূল্যে নগদে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। যেমনÑপ্রথম ক্রয়-বিক্রয় : ক্রেতা ‘ক’, বিক্রেতা ‘খ’, ও পণ্য ‘গ’ যার মূল্য বাকিতে এক হাজার টাকা; দ্বিতীয় ক্রয়-বিক্রয় : ক্রেতা ‘খ’, বিক্রেতা ‘ক’, ও পূর্বেরই ‘গ’ পণ্যকে নগদ আটশত টাকা মূল্যে বিক্রয় করল। অর্থাৎ ‘ক’-এর নিকট ‘খ’ প্রথম ‘গ’ (ধরুন) এক মন চাউল বিক্রয় করল বাকিতে এক হাজার টাকায়। পরে ‘খ’-এর নিকট ‘ক’ ওই একই পণ্য নগদে বিক্রয় করল আটশত টাকায়। সুতরাং প্রথম ক্রয়-বিক্রয়ে ‘ক’ পণ্যের মূল্য পরে পরিশোধ করবে বিধায় তা ক্রয় করল এক হাজার টাকায় আর দ্বিতীয় ক্রয়-বিক্রয়ে ‘খ’ পণ্যের মূল্য নগদে পরিশোধ করার কারণে ‘ক’-কে দিলো আটশত টাকা। বাস্তবে ‘খ’ প্রথম থেকেই পণ্যের মালিক ছিল, এখনও মালিকই থাকল। মাঝখানে টাকার বিনিময়ে টাকা লেনদেন হলো মাত্র। সেখানে যে দুইশত টাকা বেশি নেওয়া হলো তা মূলত সুদ (ربا النسيئة)। এখানে ‘খ’ হলো সুদগ্রহীতা আর ‘ক’ হলো সুদদাতা।

ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর নিকট এই ক্রয়-বিক্রয়ের লেনদেনটি ফাসিদ; প্রথমটি শুদ্ধ। ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ রাহ. প্রমুখের নিকট উভয় লেনদেনই বাতিল। তবে ইমাম শাফিয়ী রাহ. একে মাকরূহ বলেছেন। ড. ওয়াহবা আয যুহাইলী রাহ. বলেছেন, ইমাম শাফিয়ী রাহ.-এর এ মত প্রত্যাখ্যাত। কেননা, এটি স্পষ্টত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। এ কারণে ইমাম শাফিয়ী রাহ.-এর মতটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মোটকথা, বাই ঈনা ইসলামে নিষিদ্ধ একটি লেনদেন। অনেক সময় এ লেনদেন কেবল কাগুজে চুক্তি হয়। বাস্তবে ওই দ্রব্য ক্লায়েন্টের কাছেও থাকে না। কেবল কাগজপত্রে চুক্তি করে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে কর্মচারী ইত্যাদির বিল পরিশোধ করা হয়। এটিও বৈধ হবে না।

বই : ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শরীয়া পরিপালন ও লঙ্ঘন : সমস্যা ও উত্তরণ ভাবনা
লেখক : ড. আহমদ আলী

সূচিপত্র”ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শরীয়া পরিপালন ও লঙ্ঘন : সমস্যা ও উত্তরণ ভাবনা”লেখক : ড. আহমদ আলী
08/10/2025

সূচিপত্র
”ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শরীয়া পরিপালন ও লঙ্ঘন : সমস্যা ও উত্তরণ ভাবনা”
লেখক : ড. আহমদ আলী

আব্বা তাঁর মেয়েদের খুব ভালোবাসতেন। যখন বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আব্বাজান বিদেশ সফর শুরু করেছেন, তখন আমাদের জন্য জুতা নিয়ে আসতেন...
08/10/2025

আব্বা তাঁর মেয়েদের খুব ভালোবাসতেন। যখন বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আব্বাজান বিদেশ সফর শুরু করেছেন, তখন আমাদের জন্য জুতা নিয়ে আসতেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো-সেগুলো পারফেক্ট সাইজের হতো এবং পায়ে লেগে যেত। একইভাবে আমাদের জন্য শীতের পোশাক, ঘড়ি এবং অন্যান্য ভালো জিনিস নিয়ে আসতেন। আমার ভাই প্রায়ই মজা করে বলতেন, ‘এ বাড়িতে মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি আনন্দে থাকে।’

আমরা সত্যিই গর্বিত ছিলাম, আব্বা আমাদের অনেক ভালোবাসতেন। আমরা অসুস্থ হলে আব্বা সারা রাত আমাদের দেখাশোনা করতেন। এমনকি ওষুধপত্র খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব বিষয়েই খেয়াল রাখতেন।

একবার আব্বার গ্রেপ্তারের সময় আমার এক বোন প্রচণ্ড অসুস্থ ছিল। আব্বা তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন। তার মাথা ছিল আব্বার কাঁধের ওপর। একপর্যায়ে সে আব্বার কাঁধেই বমি করে দিলো। আর ঠিক এমন সময় আমাদের ঘরের দরজার কড়া নড়ে উঠল। পুলিশ এসেছে গ্রেপ্তার করার জন্য। পুলিশের এসপি সাহেব ঘরের মধ্যে ঢুকে আব্বাকে এমন অবস্থায় দেখলেন-তাঁর মেয়েটি তাঁর কাঁধে চেপে আছে, আর তাঁর পিঠে বমির চিহ্ন। আব্বা এসপি সাহেবের কাছে কিছুটা সময় চাইলেন। অতঃপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে জামাকাপড় পালটে তাদের সাথে রওনা হলেন। তিনি শিশুদের প্রতি এতটাই স্নেহভাজন ছিলেন।

বই : স্মৃতির দর্পণে বাবা : সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী স্মরণে
মূল : সাইয়েদা হুমায়রা মওদূদী
অনুবাদ : মুহাম্মদ ইউনুস

Address

34, Northbrook Hall Road, Bangla Bazar, Madrasah Market (2nd Floor) Dhaka-1100
Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when প্রচ্ছদ প্রকাশন - Prossod Prokashon posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to প্রচ্ছদ প্রকাশন - Prossod Prokashon:

Share

Category