মনিশা

মনিশা জীবন বড়ই বিচিত্র
সন্ধা কাটে না’হ
অথচ বছর কেটে যাচ্ছে
(16)

মা তার ছেলেকে ১০০ টাকা দিয়ে বললেন,"যাও বাবা বাজার থেকে একটা মুরগি নিয়ে এসো!!"ছেলে বাজার থেকে মুরগি কিনে আনলে মা মুরগি ...
17/07/2025

মা তার ছেলেকে ১০০ টাকা দিয়ে বললেন,"যাও বাবা বাজার থেকে একটা মুরগি নিয়ে এসো!!"

ছেলে বাজার থেকে মুরগি কিনে আনলে মা মুরগি দেখে বললেন,"এতো রোগা পটকা মুরগি! রোগা পটকা মুরগি আমি নিব না! যাও ফেরত দিয়ে এসো!!"

ছেলে মুরগি ফেরত দিতে গিয়ে দেখে দোকানে লেখা,"বিক্রিত মাল ফেরত নেয়া হয় না।"

এখন সে কি করবে??
বাসায় গেলেতো মা আচ্ছা মত বকা দেবেন! ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনে হল, তার এক খালাতো বোন আছে! সে তাকে খুব আদর করেন, টাকা পয়সাও দেন! তার কাছে গেলে হয়তো একটা ব্যবস্থা হবে নিশ্চয়ই!

বোনের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দেখে ড্রয়িং রুমে খুব অ/ন্তর/ঙ্গ অবস্থায় একটি ছেলের সাথে তার খালতো বোন বসে আছে!! ছেলে লজ্জা পেয়ে সেখানে না গিয়ে চুপচাপ স্টোর রুমে বসে রইল!!

একটু পর গাড়ির হর্ন এর শব্দ! অর্থাৎ খালু এসেছেন! ড্রয়িং রুমের সেই ছেলেটিও তারাহুরা করে সেই স্টোর রুমে ঢুকে তার বরাবর বসল!!

অন্ধকার ঘর, কেউ কারো মুখ দেখছে না! শুধু উপস্থিতি টের পাচ্ছে দুজনই! একটু পর ছেলেটি বললো,"ভাই, মুরগি নেবেন? মাত্র ১০০টাকা!!

ধুর,আছি বিপদে আর ইনি আসছে মুরগি বিক্রি করতে! না না মুরগি কিনব না!

ভাই,আপনি যদি মুরগিটা না নেন তবে আমি চিৎকার দেব! ভাল মুসিবতে ফেললো ছেলেটা! বাধ্য হয়ে মুরগি কিনতে হল ভদ্র লোকের!

তার ঠিক ৫ মিনিট পর ছেলেটি বলছে,"ভাই মুরগিটা ফেরত দেন, নইলে আমি চিৎকার দেব! কপাল খারাপ হলে যা হয়!! কি আর করা মুরগি ফেরত দিতে হল!!

তার কিছুক্ষণ পর ছেলেটি আবার বললো,"ভাই, মুরগি নেবেন? মাত্র ১০০ টাকা!!"

এইভাবে সে মুরগিটি ৫ বার বিক্রি করে মুরগি সহ ৫০০ টাকা নিয়ে বেড়িয়ে গেল! এলিফ্যন্ট রোড ধরে যখন সে আসছিলো তখন দেখল শো-রুমে একটা সুন্দর জিন্স প্যন্ট ঝোলান আছে! দাম লেখা ৬০০ টাকা! কিন্তু, তার কাছে আছে ৫০০ টাকা! অর্থাৎ ১০০ টাকা কম আছে! এখন এই ১০০ টাকা কোথায় পায়?? ভাবতে ভাবতে চলে গেল নিজের বাড়িতে। ঘরে গিয়ে দেখল তার বড় ভাই ড্রয়িং রুমে বসে মনযোগ সহকারে পেপার পড়ছেন, চুপচাপ তার কাছে গিয়ে বললো,"ভাইয়া মুরগি নেবে? মাত্র ১০০ টাকা।"

ভাইয়া: হা/রা/মজাদা বাটে ফালাইয়া ৫ বার বিক্রি করছিস। এখন আবার আসছিস? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন!! 🤣🤣

゚ #বিদায়

ছোট বেলার বান্ধবীর বিয়ে হয়ে দুই বাচ্চার মা হয়ে গেছে।এখন যদি বাসায় জানতে পারে কলেজের বান্ধবীরও বিয়ে ঠিক তাহলে বাসায় হরতাল...
16/07/2025

ছোট বেলার বান্ধবীর বিয়ে হয়ে দুই বাচ্চার মা হয়ে গেছে।এখন যদি বাসায় জানতে পারে কলেজের বান্ধবীরও বিয়ে ঠিক তাহলে বাসায় হরতাল কেউ বন্ধ করতে পারবে না। পাত্র খুঁজতে শুরু করবে।

কোনো ভাবেই আম্মুকে জানতে দেয়া যাবে না বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। বান্ধবীর বাসার নাম্বারে কল করতেই তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে রিসিভ করলাম।

কিরে আন্টি কই! আন্টিকে ফোনটা দে বিয়ের দাওয়াত দিবো।

রাগে কটমট করলেও শান্ত ভাবে একটা হাসি দিয়ে বললাম,
“আরে তোর আন্টিকে বলাও যা আমাকে বলাও তো তাই।আমি বলে দিবো আম্মু একটু রান্না ঘরে ব্যস্ত আছে।”

তারপরও পরে যদি আন্টি মাইন্ড করে!

আরে রাখ তোর মাইন্ড।

কি হইছে তোর?

কিছু না রাখ আমি আম্মুকে বলে দিবো দাওয়াতের কথা।

এ যাত্রায় তো বেঁচে গেলাম। এবার কি বলে বিয়ের দিন বের হবো তা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম।

বিয়ের দিন সকাল সকাল স্পেশাল এক্সামের কথা বলে বাসা থেকে বের হলাম। আরেক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে বিয়ে এ্যাটেন্ড করলাম।

সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর আম্মু গম্ভীর গলায় বলল,“কিরে এক্সাম কেমন হলো তোর?”

আমি হাই তুলতে তুলতে ভাব নিয়ে বললাম,“দারুন হয়েছে সবচেয়ে বেশি মার্ক আমিই পাবো।”

আম্মু সন্দেহ নজরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,“তোর বান্ধবীর বিয়েতে গেলি আজকে কই আমাকে তো বললি না! বাসায় তো দাওয়াতের কার্ডও পেলাম না।”

আমি হতোভম্ব হয়ে বললাম,“আমার কোনো বান্ধবী নেই আম্মু। কার কথা বলতেছো??”

আম্মু রাগি গলায় বললো,“মিথ্যা বলার একটা সীমা আছে।ঘটক আমাদের বাসায় এসেছিলো তোকে সারাদিন বিয়ে বাড়িতে দেখেছে। সেখান থেকে এক ছেলে তোকে পছন্দ করেছে। ঘটককে বলেছি ছেলে পক্ষ নিয়ে কাল তোকে দেখতে আসতে।”

কি আজব দুনিয়া! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।

©
Zannatul Eva

বৃষ্টিতে রুপন্তীর আম্মুর কাছে খিচুড়ি আবদার করেছিলাম, সে পাতলা ডাল নিয়ে আসছে। আর বলে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে তো তাই খিচুড়ি ডাল ...
16/07/2025

বৃষ্টিতে রুপন্তীর আম্মুর কাছে খিচুড়ি আবদার করেছিলাম, সে পাতলা ডাল নিয়ে আসছে। আর বলে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে তো তাই খিচুড়ি ডাল হয়ে গেছে। যেটাকে বলে ওয়েদার ডিমান্ড!
আমি জানি সে ইচ্ছে করে করেছে!

রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালা সেই কবে থেকে বিরক্ত করছে সী ওয়ার্ল্ড দেখবে বলে। তাই ভাবছি সী ওয়ার্ল্ডটা দেখিয়ে নিয়ে আসি।

এতক্ষণ বৃষ্টির দেখা নাই। যে মাত্র বের হলাম তখনই ঝুম বৃষ্টি। বেচারী রুপন্তীর আম্মুর টানা দু'ঘন্টার মেকাপ বিগড়ে দিয়ে চলে গেলো। এদিকে বেরুতে গিয়ে জরিনা খালা চেচ্চেরি (হোঁচট) খেয়ে পড়ে গেলো। তাই আবার কাপড় পাল্টাতে গেছে।

রাস্তায় হাঁটছিলাম। রুপন্তীর আম্মু ভিজতেছে আপন মনে।

এই যে রুপন্তীর পাপ্পা আসেন না একটা রোমান্টিক টিকটক বানাই!

যুগ পুরাটা খারাপ! অফলাইনে ঘরে জামাইরে ধরি পিটাই আর অনলাইনে টিকটকে তাগো ভালোবাসা উতলায়া পড়ে।
যাক, শো অফের জন্য হলেও রোমান্টিক টিকটক করা যায়। দুজনে রাস্তায় দাড়াইয়া দাড়াইয়া বেকুবের মতো টিকটক করলাম কিছুক্ষন। এদিকে জরিনা খালাও চলে আসছে, আফা আই ও করুম টিকটক!

হ করো, তোমাগো জন্মও হয়েছে এগুলার জন্য!

গাড়ির দেখা মিলে না।
অনেকক্ষণ পর একটা মিলছে। পঞ্চাশ টাকার ভাড়া পাঁচশো টাকা চায়। কি সাংঘাতিক!
এক হাঁটু পরিমাণ পানি। অর্ধেক তো ভিজে গেছি বাকিটাও প্যান্ট উঠাইয়া যাওয়া যাবে।
হাঁটু পানিতে হাঁটছিলাম,

স্যার কই যাইবেন?

কেডা?

স্যার, আমি পানির নিচে! কই যাইবেন?

সাবমেরিনের মতো মাথা একটা বের করছে পানির নিচ থেকে।

বহদ্দারহাট!

হ যামু! পঞ্চাশ টাহা! আন্ডারগ্রাউন্ড ভ্যান সার্ভিস! মাথা থাকবো পানির উপ্রে আর বডি থাকবো পানির নিচে। লাইফ জ্যাকেট সার্ভিসও আছে।

যাক রওনা দিলাম। এক ব্রীজের নিচে এসে যখন থামলাম তখন উপর পানি পড়তে দেখে জরিনা খালা চিক্কুর দিয়ে উঠলো, আফা ঝরণা ঝরণা!!

রুপন্তীর পাপ্পা চলেন না ঝরনায় ভিজবো।

আরে মাথা খারাপ! ব্রীজ ফুটা হয়েছে।

আর অর্ধেক যাইতে বড়সড় একটা ঢেউ এসে গায়ে পড়লো। জরিনা খালা আর রুপন্তীর আম্মু দিলো এক্কান লাফ।

কি সমস্যা তোমাদের?

আমি কক্সবাজার মনে করছিলাম।

আচ্ছা জরিনা খালা কোথায়?

জরিনা খালারে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ডুব দিয়ে খুঁজলাম। আশপাশ থেকে ডুবুরি আসলো তারাও খুঁজলো কিন্তু খোঁজ পাওয়া যায়নি জরিনা খালারে। পুলিশে জিডিও করলাম। রাস্তাঘাটে পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছি। আমি আর রুপন্তীর আম্মু মনের দুঃখে বাসায় চলে এলাম।

রাতে একটা কল আসে।

হ্যালো ভাইজান! আই জরিনা।

কিরে জরিনা খালা তুমি কোথায়?

ভাইজান, আমি তো মিরপুর!

কি! চট্টগ্রাম থেকে মিরপুর কেমনে পৌছাইলা?

লাফ দিতো গিয়া এক্কান গর্তে হরি গেছিলাম। গর্ত থেইকা উঠি দেহি ঢাহা মিরপুর চলি আইসি!

হ! এবার বলো কেমনে লাগলো গরীবের সী ওয়ার্ল্ড! ওইখান থেকে আরেকটা গর্তে পড়ি যাও বাসায় চলি আইবা।

লেখা: Md. Naim Uddin

লিফট নষ্ট হয়ে আছে এক সপ্তাহ।বান্ধবী থাকে ছয়তলায়। আজকে একসাথে পড়ার পর বান্ধবী জিজ্ঞেস করতেছে,“কিরে তোর কি ছয় তলায় উঠতে না...
16/07/2025

লিফট নষ্ট হয়ে আছে এক সপ্তাহ।
বান্ধবী থাকে ছয়তলায়। আজকে একসাথে পড়ার পর বান্ধবী জিজ্ঞেস করতেছে,“কিরে তোর কি ছয় তলায় উঠতে নামতে কষ্ট হয়?”
আমি বললাম, কষ্ট তো একটু হয়ই!
বান্ধবী বললো, তুই আয় তোকে একটা জিনিস শিখায়া দেই, তাহলে আর বেশি কষ্ট হবে না।
বান্ধবী আমার সাথে সাথেই আসলো।

চারতলায় আসার পর একটা ফ্লাটের কলিং বেল টিপেই বান্ধবী দৌড় দিলো নিচের দিকে!
আমিও কোন উপায়ন্তর না দেখে বান্ধবীর সাথে দৌড়াতে বাধ্য হইলাম!

নামার পর বান্ধবী বলে, কিরে দেখ এখন একটু কষ্ট হইলেও মজা পাইছচ না..?
এখন থেকে নামার সময় চারতলায় আর উঠার সময় দু-তলায় কলিংবেল টিপে দৌড় দিবি, তাহলে মজাও পাইবি আর সময়ও কম লাগবে! আর মজা পাইলে আসলে কষ্টকে কষ্ট মনে হয় না।

আমি পুরাই হতভম্ব! 🙂

মাথা ভরা কোকড়ানো চুল, চোখে হালকা নীল ফ্রেমের চশমা; তাহসানের কনসার্টে বসে যে একটা মেয়ে ফিজিক্স বই পড়তে পারে সেটা আমি অবন্...
16/07/2025

মাথা ভরা কোকড়ানো চুল, চোখে হালকা নীল ফ্রেমের চশমা; তাহসানের কনসার্টে বসে যে একটা মেয়ে ফিজিক্স বই পড়তে পারে সেটা আমি অবন্তিকে না দেখলে কোনদিন বিশ্বাস করতাম না। লেজার লাইটের গাড় সবুজ আলো এসে পড়েছে ওর চোখে-মুখে। কী অদ্ভূত সুন্দরই না দেখাচ্ছে! এতো মিষ্টি চেহারা এর আগে আমি কোনদিন দেখিনি। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যায় না, বুকের বা' পাশটায় চিনচিনে ব্যাথা হয়! নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে!

কনসার্ট শেষ হলে আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো টিএসসি থেকে বের হয়ে আসলাম। চারিদিকে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে, আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা। আজ বসন্তের প্রথম দিন, হালকা শীত পড়েছে। হোস্টেলে ফিরে এসে দেখি সবাই ঘুমিয়ে গেছে। বিছানার পাশে আমার খাবার ঢাকা দেওয়া, মুরগির মাংস, আলু ভাজি আর ডাল।আমি খাবারটা স্পর্শ করেও দেখলাম না, খাইতে গিয়ে যদি মন অন্যদিকে চলে যায়?
যদি কল্পনার পাতা থেকে ওর মুখটা মুছে যায়?
সারারাত আমার এক ফোটা ঘুম হলো না, বিছানার উপরে জেগে বসে রইলাম। অসম্ভব কষ্ট হতে লাগলো।
ফজরের আযান শুনে আমি বাস্তবে ফিরে এলাম। অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম,'আমি প্রেমে পড়েছি।'

এক রাতের প্রেম আমাকে একদম বদলে দিলো। এখন আর মোড়ের চায়ের দোকানে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতে ভালো লাগে না। নতুন নতুন মুভিগুলো জমা হতে থাকে, দেখা হয় না। এখন আমি নিয়মিত ক্লাসে যাই। আজমল স্যারের লেকচার মন দিয়ে শুনি। তারচেয়েও মন দিয়ে অবন্তিকে দেখি। জানতে পারলাম মেয়েটা কারো সাথে তেমন কথা বলে না। সারাদিন লেখাপড়া করে। ক্লাসের বেস্ট স্টুডেন্ট। যে কোন পরীক্ষায় সবথেকে বেশি নাম্বার পায়। কে বলেছে?
একদম মিথ্যা কথা। যাস্ট পরীক্ষার টপিকটা চেঞ্জ করে 'অবন্তী' দেওয়া হোক নির্ঘাত আমি ফাস্ট আসবো। গত শনিবারে ও লাল ফুল দেওয়া একটা ঘিয়ে রঙের থ্রিপিচ পরে এসেছিলো, তার আগের শনিবারে গোলাপি কুর্তা। আগের ক্লাসে ও সাতবার নখ কামড়েছে, চোখ পিটপিট করেছে একশত তের বার। অবন্তীকে পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।

মারুফ স্যার বেশ মজার মানুষ। উনার ক্লাসে লেখাপড়ার চেয়ে আড্ডাই বেশি হয়। সেদিন স্যার সবার কাছে তার এইম ইন লাইফ জানতে চাচ্ছিলেন। আমার কী হয়ে গেলো আমি জানি না, আমাকে যখন জিজ্ঞেস করলো আমি উঠে দাড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললাম, আমার লাইফের এইম হইলো অবন্তীকে বিয়ে করা। পুরো ক্লাস ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য চুপ হয়ে গেলো। অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি মাথা নিচু করে আছে। মুখটা লজ্জায় লাল, পাতলা ঠোটদুটো কাপছে অল্প অল্প করে। মারুফ স্যার মুচকি হাসলেন। তারপর রাগি রাগি গলায় বললেন,'বিকাল চারটায় তোমরা দুজন আমার সাথে ছবি হাটের পেছনে দেখা করবা।'

আমি গিয়ে দেখি স্যার এখনো আসেন নি। অবন্তি একা একা বসে আছে। কাঁচা পেয়ারা রঙের শাড়িতে ওকে দেখাচ্ছে ইন্দ্রানীর মতো। এতো মিষ্টি চেহারা যে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে রক্তে সুগার লেভেল বেড়ে যায়। ডায়াবেটিকস কে খুব ভয় লাগে আমার, আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। তারপর হঠাত্‍ করেই বুঝতে পারলাম স্যার আসলে আজকে এখানে আসবেন না।

কৃঞ্চচুড়া গাছের নিচে বাধানো জায়গাটাতে আমি আর অবন্তি বসে আছি। দুজনই চুপ, কথা বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আমি একটা ছোট কাগজে,'তোমার চুল স্ট্রেইট হলে আমার আরো ভালো লাগতো।' লিখে ওকে দিলাম। চিরকুটটা পড়ে ও মুচকি হাসলো। তারপর আরেকটা কাগজে কি জানি লিখে আমাকে ধরিয়ে দিলো। খুলে দেখি তাতে লিখা,'আপনার গা থেকে সি*গা*রেটের গন্ধ না আসলে আমার আরো ভালো লাগতো।'
আমি হেসে ফেললাম। খুব মজার মেয়ে তো! তারপর অনেক কথা হলো। ও বাবা মার একমাত্র মেয়ে। বাবা ব্যাংকে চাকুরী করে মা ডাক্তার। সারাদিন বাসায় একা একা থাকে বলে লেখাপড়া ছাড়া করার মতো আর কিছু খুঁজে পায় না। আরো বললো পরীক্ষার আর মাত্র পাঁচ মাস আছে এই টাইমে আমার নাকি লেখাপড়ায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। এখন অন্য কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করা ঠিক না।

আমি শুধু চুপচাপ শুনে গেলাম। পাঁচ মাস তো অনেক দুরের কথা আমি যে পরীক্ষার আগে শুধু একদিনের জায়গায় দুইদিন বন্ধ থাকলে সেলিব্রেট করতে ফ্রেন্ডদের নিয়ে কেএফসিতে চলে যাই, সেটা আর ওকে বলা হলো না। আরো বলা হলো না আমি বেনসনের ফিল্টার, সিওসি'র জেমস অথবা মুস্তাফিজের কাটারের থেকেও ওকে কতটা বেশি ভালোবাসি! :-P

পরদিন সকালে ভার্সিটির ক্যান্টিন থেকে ভরপেট ব্রেকফাস্ট করার পর জ্বলন্ত গোল্ডলিফে ঠোঁট রেখে প্রথম টান দিয়েছি, এমন সময় দেখি অবন্তি আসছে। সেদিকে তাকিয়ে আমার হার্টটা পরপর দুইবার বিট মিস করলো। ওই মেয়ে সত্যি সত্যি একদিনে রিবন্ডিং করে চুলের কার্লি ঠিক করে ফেলছে! সিল্কি স্ট্রেইট চুলগুলো ছড়িয়ে আছে সারা পিঠ জুড়ে। সেইটা দেখার পর আমি আর হাতের সিগারেটে দ্বিতীয় টান দেওয়ার সাহস বা আগ্রহ কোনটাই খুঁজে পেলাম না।

সত্যিই ভালোবাসি কথাটা সবসময় মুখ দিয়ে বলা লাগে না।

মরিয়ম নামের একটা মেয়ে পোস্ট দিছে,"আমার মাকে খুঁজে পাচ্ছি না!"একটি মেয়ে ওর মাকে খুঁজে পাচ্ছে না। এটা মানুষকে খুব আহত করলো...
16/07/2025

মরিয়ম নামের একটা মেয়ে পোস্ট দিছে,"আমার মাকে খুঁজে পাচ্ছি না!"

একটি মেয়ে ওর মাকে খুঁজে পাচ্ছে না। এটা মানুষকে খুব আহত করলো। মানুষ মেয়েটার মাকে খুঁজতে সাহায্য করার জন্য পোস্ট শেয়ার করা শুরু করলো।

মরিয়ম রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেলো। হাজার হাজার মানুষ মরিয়মের মায়ের খবর জানতে চায়। আহারে, মেয়েটা তার মায়ের জন্য কী আকুতি করছে! আহারে!

হাজার হাজার মানুষের সাড়া পেয়ে মরিয়মও ঘন্টায় ঘন্টায় মায়ের খোঁজের জন্য পোস্ট দিতে থাকে। সব পোস্ট হাজার হাজার শেয়ার হয়! অজানা অচেনা একটা মেয়ে এখন সারা দেশের মানুষের পরিচিত! সবখানে মরিয়মকে নিয়ে আলোচনা। মরিয়ম ভাবলো ভালোই তো পোস্টে রিয়াকশন পাওয়া যাচ্ছে। পোস্ট করতেই থাকলো।

ভালো ফলোয়ার পাওয়া গেছে এবার খুঁজাখুজি বন্ধ করতে হবে। একটা মহিলার লাশ পাওয়া গেলো। মরিয়ম ভাবলো এটাই সুযোগ। পোস্ট করে জানিয়ে দিলো আমার মায়ের লাশ পাওয়া গেছে। লাশের ছবি দিয়ে পোস্ট করে জানিয়ে দিলো। ঘটনা এখানে শেষ হলো না! আরেকটা মেয়ে ঘোষণা দিলো লাশটি তার মায়ের!

মরিয়ম তো জানেই এটা তার মায়ের লাশ না! তাই সে সরে আসলো। কিন্তু ওর মা কোথায়?

হাজার মানুষ থেকে এখন লাখ মানুষের প্রশ্ন মরিয়মের মা কোথায়?
এত মানুষের চাপে পুলিশ চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। ওনারা মাঠে নেমে পড়লো। মরিয়মের মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!

পুলিশ কিছুতেই মরিয়মের মাকে খুঁজে বের করতে পারলো না! এত মানুষের চাপে কেসটা হস্তান্তর করা হলো এফবিআই কে।

গোয়েন্দা এস পি মামুন খুবই সৎ মানুষ। উনি এখন পর্যন্ত কোন কেসে ব্যর্থ হয়নি। মরিয়মকে গোয়েন্দা অফিসে আনা হলো। জানা গেলো ওর মায়ের নাম রহিমা। বয়স পয়ত্রিশ। মায়ের কোন ছবি ওর কাছে নেই! কাজেই ওর কাছ থেকে বর্ণনা নিয়ে স্কেচ করা হলো।

এস পি মামুন মাঠে নেমে পড়লেন। কয়েকদিনের মধ্যে ওনার দল মরিয়মের বর্ণনা দেয়া রহিমাকে খুঁজে বের করে ফেললো।

অফিসে বসে আছেন মামুন। ওনার সামনে বসে আছে গোয়েন্দা অফিসার রায়হান। রায়হান বললো,"স্যার, রহিমাকে পাওয়া গেছে।"

"গুড জব!"

"কিন্তু স্যার একটা বিরাট সমস্যা হয়েছে!"

"কী সমস্যা রায়হান?"

"রহিমা অবিবাহিত! মরিয়ম নামের কাউকে চিনে না!"

"বলো কী! তাহলে এ মেয়ের মা কে?"

"খুঁজে বের করতে হবে স্যার।"

মরিয়ামকে আবার গোয়েন্দা অফিসে আনা হলো। এবার ওর কথা শুনলো না। ওর ন্যাশনাল আইডি কার্ড, সার্টিফিকেট চেক করে বের করা হলো। দেখা গেলো ওর মায়ের নাম আনোয়ারা। বাড়ি ঢাকায়।

রায়হান এখন বসে আছে। আনোয়ারা বেগমের সামনে। মরিয়মের ছবিটা দেখিয়ে রায়হান বললো,"এটা আপনার মেয়ে?"

আনোয়ার বেগম ছবিটা অনেকটা সময় ধরে দেখে বললো, "আমার কোন মেয়ে নাই! একটা মাত্র ছেলে।"

রায়হান হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
"এটা আপনার মেয়ে না?"

"বললাম তো আমার কোন মেয়েই নাই!"

"আইডি কার্ডে আপনার নাম কেন?"

আনোয়ার বেগম কিছুটা সময় ভাবলেন। তারপর হঠাৎ বললেন,"মনে পড়েছে! এনজিও এর এক আপা আমাকে অনুরোধ করেছিলো, একটা মেয়ের মা সেজে মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করে দিতে। মনে হয় সেই মেয়েটাই হবে।"

"কোন এনজিও মনে আছে?"

"এনজিওর নাম তো মনে নেই বাবা! আমাদের এলাকায় অফিস ছিলো। আপার নামটা মনে আছে।"

"কী নাম বলেন তো?"

"আয়শা বেগম।"

"ধন্যবাদ।"

রায়হান আনোয়ারা বেগমের বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। সারাজীবনে এমন কেস পায়নি! ছেলে মেয়ের বাপ খুঁজে পাওয়া যায় না! এই মেয়ের বাপ তো দূরের কথা মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!

পুরো এলাকা খুঁজে আয়শা নামের একজন এনজিও কর্মির খোঁজ পাওয়া গেলো। আয়শা বেগম এখন আর চাকরি করে না। অফিস থেকে আয়শা বেগমের বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করলো রায়হান।

জয়পুরহাট একটা বাড়িতে বসে আছে রায়হান। এই বাড়িতে আয়শা নামের মেয়েটি থাকে। সম্ভবত আয়শা এ বাড়ির বউ। বাড়ির গেটে আইডি কার্ড দেখিয়ে ভিতরে আসতে হয়েছে। একজন বয়স্ক মহিলা বললেন,"বসুন আমি বউমাকে পাঠাচ্ছি।"

একজন মহিলা আসলো। বয়স ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। মহিলাটি খুবই সুন্দরী!

"আপনি?"

রায়হান সালাম দিলো,"আমি রায়হান। একজন গোয়েন্দা অফিসার।"

"আমার কাছে হঠাৎ!"

"আপনি আয়শা বেগম?"

"জি।"

"আপনি এনজিও চাকরি করতেন?"

"জি।"

আয়শা বেগম রায়হানের সামনে সোফায় বসলো। এ সময় একটা মেয়ে দুই কাপ চা আর কয়েক প্রকার বিস্কুট দিয়ে গেলো। আয়শা বেগম নাশতা নেয়ার অনুরোধ করলো।

রায়হান চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে বললো,"মরিয়ম নামের কোনো মেয়েকে চিনেন?"

"না তো!"

"আপনি একটা মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। আনোয়ারা বেগমকে মা সাজিয়ে। মনে পড়ে?"

"হ্যাঁ, মনে পড়েছে। মেয়েটা পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো। একজন মহিলা আমাকে বলেছিলো মেয়েটার পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিতে।"

"কোন মহিলা?"

"সালমা।"

"ওনার ঠিকানাটা দিতে পারবেন?"

"আমার যতটুকু মনে আছে সালমা উত্তরার একটা বাড়িতে থাকতো। আমার ডায়েরিতে লেখা থাকতে পারে।"

"একটু দেখুন প্লিজ।"

"এতদিন পরে এ সব খোঁজ করছেন কেন আপনারা?"

"একটা কেসের জন্য দরকার।"

"আচ্ছা, আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি খুঁজে দেখি।"

আয়শা বেগম একটা ডায়েরি হাতে ফিরে আসলেন। রায়হানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।

"আপনার ভাগ্য খুব ভালো! ঠিকানাটা পাওয়া গেছে।"

রায়হান একটু হেসে বললো,"অসংখ্য ধন্যবাদ।"

ডায়রি থেকে ঠিকানাটা লিখে নিলো রায়হান। উত্তরার ঠিকানায় সালমাকে পাওয়া গেলো না! অনেক বছর এ ঠিকানায় সালমা নামের মহিলা ছিলেন। এখন কোথায় আছে কেউ জানে না! বাড়ির মালিক কে জিজ্ঞেস করেও কোন লাভ হলো না! রায়হান কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না! এ সময় একজন লোক এসে রায়হানকে বললো, "ভাই তিনতলার সালমাকে খুঁজেন?"

সালমা কয়তলায় ছিলো এটা ঠিক জানে না রায়হান।

"আপনি চিনেন নাকি?"

"সবাই চিনে কিন্তু কেউ বলবে না।"

"কেন!"

লোকটা বাঁকা একটা হাসি দিলো।

"আপনি যাবেন কিনা বলেন?"

"হ্যাঁ, চলেন।"

ধানমন্ডির একটা বাড়িতে রায়হানকে নিয়ে এলো লোকটা। বাড়ির সামনে এসে বললো,"সোজা চারতলায় চলে যাবেন। চারতলার চার নাম্বার বাসা। জিজ্ঞেস করলে বলবেন,
"রাজিব পাঠাইছে।"

চারতলায় উঠে চার নাম্বার বাসার বেল বাজালো রায়হান। একটা সুন্দরী মেয়ে গেট খুললো। রায়হানকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,"কাকে চান?"

"রাজিব পাঠাইছে।"

মেয়েটা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,"আসুন।"

রায়হান ভিতরে ঢুকে একটা সোফায় বসলো। মেয়েটা বললো,"প্রথম আসলেন?"

রায়হান কি বলবে বুঝতে পারছে না। কোন বাসায় আসলে এরকম প্রশ্ন করে আজই প্রথম শুনলো।

"না, আমি সালমার কাছে এসেছি।"

"ও আচ্ছা। ডেকে দিচ্ছি।"

একজন মহিলা আসলো কিছুক্ষন পরে। মহিলাটিকে দেখে বেশ স্মার্ট মনে হচ্ছে। মহিলার বয়স পঞ্চাশের কম হবে না। এ বয়সের একজন মহিলা শার্ট, প্যান্ট পড়েছে! অবশ্য দেখতে খারাপ লাগছে না!

মহিলাটি রায়হানের সামনের সোফায় বসলো। রায়হানের দিকে তাকিয়ে বললো,"তোমাকে ঠিক চিনতে পারছি না! এর আগে কখনো এসেছিলে?"

"না।"

"তোমার ভাগ্য ভালো! আজই নতুন একজন এসেছে। ভালো ঘরের মেয়ে। দেখতেও বেশ সুন্দরী!"

"আমি সালমার কাছে এসেছি।"

মহিলাটি হা হা হা করে হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতে বললেন,"এখনো আমাকে কেউ চায়!"

"না, মানে। সালমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।"

রায়হান নিজের পরিচয় দিলো। পরিচয় শোনার পর মহিলাটির চেহারা কেমন পরিবর্তন হয়ে গেলো!

একটু ভারি গলায় বললো,"আমার এখানে কেন!"

একটা ছবি বের করে দেখালো,"এই মেয়েটাকে চিনেন?"

ছবিটা নিয়ে ভালো করে দেখলো। "আমি ঠিক চিনতে পারছি না!"

"আপনি এই মেয়েটির মা?"

"কী সব কথা বলছেন! আমি কোনো মেয়ের মা না। আমার কোনো মেয়েটেয়ে নাই।"

রায়হানের এতো রাগ লাগছে! এটা কেমন মেয়েরে বাবা! এর মায়ের কোন হদিশ নেই! যার কাছে যায় সেই বলে আমার মেয়ে নাই!

"আয়শা বেগমকে বলেননি একটা মেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা করার জন্য?"

"কোন আয়শা বেগম?"

"এনজিও তে চাকরি করতো।"

অনেকটা সময় চুপ করে বসে রইলো সালমা। রায়হান সিদ্ধান্ত নিলো। এবার একটু শক্ত হবে। মনে হয় না সহজে মুখ খুলবে মহিলা। সালমা বুঝতে চেষ্টা করলো কেসটা কী?

"মনে পড়েছে স্যার। একটা মেয়ে পড়াশোনায় ভালো ছিলো। তাই এনজিওর ম্যাডাম ওর পড়ার দায়িত্ব নিয়েছিলো। সেখানে আমার কোনো হাত নেই।"

"এই মেয়ের মা কে?"

"ছবি দেখে মনে হচ্ছে এটা রুজিনার মেয়ে।"

"রুজিনাটা আবার কে?"

"আছে একজন।"

"কোথায় পাওয়া যাবে?"

একটা ঠিকানা লিখে দিলো রায়হানকে। বাসা থেকে বের হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রায়হান। আর কতজনে কাছে যেতে হবে কে জানে! যাক ঠিকানা পাওয়া গেছে!

মামুন কে কল দিলো রায়হান,"স্যার, কোন কেসে পড়লাম! কে যে এই মেয়ের মা?"

কী করবা রায়হান! এমন আজব কেস আমিও আগে পাইনি। মানুষের যন্ত্রণা নেয়া যাচ্ছে না। সারা দেশে এখন একটাই আলোচনা,"কে মরিয়মের মা!"

"দেখি স্যার রুজিনা কি বলে!"

একটা পুরানো বিল্ডিং। দেয়ালে শ্যাওলা জমে আছে। এসব বাড়িতে ভুতের ছবি করা হয়। বাইরে থেকে দেখতে খারাপ লাগলেও ভিতরটা সুন্দর করে সাজান। রায়হান বসে আছে একটা বেতের সোফায়। এখনো রুজিনা নামের মেয়ের সাথে দেখা হয়নি। একটা পনেরো ষোলো বছরের মেয়ে রায়হানকে বসতে বলেছে।

একজন অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে আসলো। মনে হয় কোনো সিনেমার নায়িকা। কিছু সময় ধরে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো রায়হান। মেয়েটি মিষ্টি হেসে বললো,"আপনি?"

"আমি রায়হান। গোয়েন্দা অফিসার।"

"আমার কাছে কেন!"

"একটা মেয়ের সম্পর্কে কিছু ইনফরমেশন জানতে।"

"বলুন।"

রায়হান ছবিটা বের করে দেখালো। "দেখুন তো মেয়েটাকে চিনেন কিনা?"

"ঠিক চিনতে পারছি না!"

"নিজের মেয়েকে চিনতে পারছেন না!"

"আমার মেয়ে মানে! কী বলছেন আপনি?"

"মরিয়ম আপনার মেয়ে না?"

রুজিনা ছবিটা অনেকটা সময় ধরে দেখলো। তারপর একটা ছোট শ্বাস নিয়ে বললো,"ঠ্যাং ছড়ানো ছবিটা দেখে তো মনে হচ্ছে আমারই মেয়ে।"

রায়হান একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো! "এই মেয়ের বাবা কে?"

রুজিনা একটু লাজুক হাসি দিলো। "কী যে বলেন স্যার!"

"এই মেয়ের বাবার নাম জানতে চাচ্ছি।"

"সম্ভবত ওর বাপ শাকিব খান! ঠিক মনে নেই। শাকিব খানের একটা মেয়ে হয়েছিলো! এটা সেই মেয়ে কি-না বলতে পারছি না। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এটাই সেই মেয়ে।"

"হোয়াট! কী বলছেন আপনি?
শাকিব খানের সাথে আপনার সম্পর্ক কী?"

রুজিনা সেই লাজুক হাসিটা দিয়ে বললো,"স্যার তো বুঝতেই পারছেন আমার কি করি! দুই হাজার দুই সালের দিকে সিনেমা জগতে আমাদের ডাক পড়তো কিছু ছবিতে স্পেশাল দৃশ্য বানানোর জন্য। অল্প সময়ে ভালো টাকা পেতাম। সেই সময়ে দেখতে খুব ভালো ছিলাম।"

রায়হান রুজিনার দিকে তাকালো। রুজিনা এখনো দেখতে বেশ সুন্দরী!

"স্যার, তখন শাকিব খানের সাথে একটা সম্পর্ক হয়। উনি তো খুব নরম মনের মানুষ। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই প্রমে পড়ে যায়! আমার প্রেমেও পড়েছিলো। অবশ্য বাচ্চা হওয়ার পর প্রেম আর থাকলো না! সিনেমাতে স্পেশাল দৃশ্য হয় না। এফডিসিতে আর যাওয়া হয় না। আমি আমার জগতে ফিরে আসি। তবে স্যার শাকিব খান মানুষ ভালো! মেয়েটার পড়ালেখা করানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। আমার সাথে মেয়ের কোনো যোগাযোগ নেই স্যার!"

রায়হান রুজিনার বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো। শাকিবের আর কতজন ছেলে মেয়ে আছে কে জানে?

Nabil Mahmud

ডাকাত পরিবারে বিয়ে (শেষ পর্ব)——————————————––গত দুদিন আগে আমি বউ এর ভয়ে পালিয়ে কক্সবাজার চলে এসেছি। গতকাল ঢাকায় আমার বউ ...
16/07/2025

ডাকাত পরিবারে বিয়ে (শেষ পর্ব)
——————————————––

গত দুদিন আগে আমি বউ এর ভয়ে পালিয়ে কক্সবাজার চলে এসেছি। গতকাল ঢাকায় আমার বউ ভাত হওয়ার কথা ছিলো। অনুষ্ঠানটি হয়েছে কিনা তাও আমি জানি না। কারণ আমার সাথে ঢাকার কারও কোন যোগাযোগ নেই। কেউ যেন আমাকে ট্রেস করতে না পারে সে কারণে এখানে এসেই আমি ফোনের সিম খুলে ফেলেছি। মা ছাড়া আর কেউ জানে না আমি এখন কোথায় আছি।

নির্ধারিত দিনের দুই দিন আগে চলে আসায় প্রথমে আমি একটি সাধারণ হোটেলে উঠেছিলাম। আজ দুপুরের দিকে আমি আমার হানিমুনের জন্য বুক করা নির্দিষ্ট রিসোটে উঠেছি।

রিসোর্ট কতৃপক্ষ পুরো রুম সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন। বিছানার উপর গোলাপের পাপড়ি ছিটানো। আর ফুল দিয়ে সেখানে লেখা ‘জাস্ট ম্যারেড’। লেখাটা দেখে কেন জানি বুক থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো।

ঢাকা থেকে এক কাপড়ে পালিয়ে এসেছিলাম। গতকাল কক্সবাজার বার্মিজ মার্কেট থেকে দুটো বার্মিজ লুঙ্গি আর কিছু শামুক, ঝিনুকের মালা কিনেছি। ঠিক করেছি লুঙ্গি পড়ে, শামুক-ঝিনুকের মালা গলায় দিয়ে বাউলের মতো সেজে সৈকতে ঘুরবো। যে কয়দিন এখানে থাকি, বাউলদের মতো জীবন অতিবাহিত করবো। হানিমুনের যেহেতু পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তাই বুঝতে পারছি না হানিমুন কতটা মজার হয়। তবে একা একা হানিমুনটা খুব একটা খারাপ লাগছে না।

বিকেল বেলা বাউল সাজে বের হলাম। সাজটা খারাপ হয়নি, তবে হাতে একটা একতারা থাকলে ভালো হতো।অনেক রাত পর্যন্ত সৈকতে আর পথে পথে ঘুরলাম। রিসোর্টে যখন ফিরলাম, তখন রাত প্রায় এগারোটা। রুমে ঢুকেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ভাবলাম কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে একটু রেস্ট করি। এরপর উঠে গোসল করবো। শুয়ে পড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ পেলাম। দ্রুত চোখ খুললাম। দেখলাম কুংফু গার্ল কনা বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসছে। মাথায় সুন্দর করে তোয়ালে পেঁচানো। সম্ভবত সে এতক্ষণ বাথরুমে গোসল করছিলো। তাকে দেখেই আমি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে দরজার দিকে দৌড় দিলাম। দরজার লক খোলার জন্য হাত বাড়াতেই কনা ধমকের সুরে বললো,

- দরজা খুললে একেবারে খু*ন করে ফেলবো। পাগলামি অনেক করেছো আর না। চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বস।

আমি মলিন মুখ করে ধীর ধীরে বিছানায় গিয়ে বসলাম। কনা এসে আমার সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসলো। মানুষের কাছ থেকে শুনেছি মেয়েরা গোসল করে আসার পর শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু গন্ধটা যে এতোটা মিষ্টি সেটা আমার জানা ছিলো না। কনা সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে মোলায়েম সুরে প্রশ্ন করলো,

- আমি এখন তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো। প্রতিটা প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেবে। ঠিক আছে?

- জি, ঠিক আছে।

- তোমার সমস্যা কি?

- আমার তো কোনো সমস্যা নাই।

- অবশ্যই সমস্যা আছে। না হলে বারবার পালাচ্ছো কেন?

- ভয়ে পালাচ্ছি।

- কিসের ভয়ে?

- জীবনের ভয়ে।

- মানে কি! এসব কি উল্টা-পাল্টা বলছো!

- আমি উল্টা-পাল্টা বলছি না। বিয়ের দিন রাতে আপনার ভাবি বললেন, উনি আর উনার স্বামী দা-বটি নিয়ে বাইরে বসে থাকবেন। এ কথা শোনার পর শুধু আমি কেন, সিনেমার ভিলেন মিশা সওদাগরও ভয় পাবে।

- আরে ভাবি তো তোমার সাথে একটু মজা করেছে। তুমি কি মজাটাও বুঝবে না?
শোনো এই দুনিয়ায় এমন কেউ নেই যে আমি বেঁচে থাকতে আমার স্বামীর গায়ে হাত দেয়।

- অন্য কারও হাত দেবার দরকার কি?
আমাকে মারার জন্য আপনিই তো যথেষ্ট।

- এ কথা কেন বললে?

- কারণ আমি দেখেছি আপনি বালিশের নিচে হাতুড়ি লুকিয়ে রেখেছেন। এ হাতুড়ি কার জন্য রেখেছেন?
অবশ্যই আমার জন্য।

- মাইগড তুমি ঐ হাতুড়ি দেখে পালিয়েছো?
তোমার ধারণা ওটা আমি তোমাকে মারার জন্য রেখেছি?
শোনো ছোটবেলা থেকে আমি তেলাপোকা আর টিকটিকি প্রচণ্ড ভয় পাই। সে কারণে সেই ছোটবেলা থেকেই সবসময় ঐ হাতুরি আমার বালিশের নিচে থাকে।

- তেলাপোকার জন্য হাতুড়ি রাখতে হবে কেন?
আপনি তো মার্শাল আর্ট জানেন।

- তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি টিকটিকি আর তেলাপোকার সাথে কুংফু করবো?

- সেটা অবশ্য ঠিক। তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন ঐ হাতুড়ি আমার উপর ব্যবহারের জন্য রাখেন নি?

- অবশ্যই না। তবে এই দুই দিন তুমি যে সব কান্ড ঘটিয়েছো, তাতে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে ওটা তোমার উপরও ব্যবহার করতে হতে পারে।

- আমি আবার কি করলাম?

- প্রথমে বাসর ঘর থেকে পালালে। তারপর তোমার বাড়িতে আমাকে একা রেখে পালালে। তোমার এবং আমার দুই পরিবারের সামনে আমাকে হাসির পাত্র বানালে। তারপরও বলছো আমি কি করলাম?

- এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি। আচ্ছা আমি যে এখানে এসেছি, এটা আপনি জানলেন কিভাবে?
এটা তো মা ছাড়া কেউ জানে না। মা আবার রিসোর্টের ঠিকানা জানে না। তাহলে আপনি এখানে এলেন কিভাবে?

- মা ই আমাকে বলেছেন। তবে রিসোর্টের ঠিকানা পেয়েছি তোমার দুলাভাই এর কাছ থেকে। সেদিন তুমি পালানোর পর পরই মা বললেন তুমি কক্সবাজারে পালিয়ে যাচ্ছো। তখনই তোমার পিছনে পিছনে রওয়ানা দিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তো তোমার মতো দায়িত্বহীন নই। তাই গত কালকের বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে এসেছি। মামা আমার সাথে আসতে চেয়েছিলেন। আমি আনি নি। তুমি জানো, গতকাল কমিউনিটি সেন্টারে বৌভাতের অনুষ্ঠানে সবাই তোমাকে খুঁজছিলো।

- তা সবাইকে কি বললেন?

- কি আর বলবো? সত্য তো আর বলতে পারবো না। তাই মায়ের সাথে যুক্তি করে সবাইকে বলেছি তোমার ডেঙ্গু পজিটিভ হয়েছে। তুমি বিশ্রামে আছো। এভাবে পরিবারের সবাইকে বিব্রত না করলেও পারতে।

- সরি।

- তুমি সরি বলছো কেন?
তোমার চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না তুমি সরি। আমি জানি তুমি সুযোগ পেলে আবার পালাবে। কে জানে হয়তো এখনও মনে মনে পালানোর প্লান করছো।

বলেই কনা খিলখিল করে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতেই কনা তার ব্যাগ থেকে কাগজে মোড়ানো ছোট একটি প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিলো।

- এটা কি?

- তোমার ঘটক তোমার জন্য এই গিফটটি পাঠিয়েছেন। বউ ভাতের অনুষ্ঠানে প্যাকেটটি গোপনে আমার হাতে দিয়ে বললেন তোমাকে দিতে। খুউব নাকি জরুরি জিনিস।

- মাই গড এই বেটা তো আসলেই একটা ব*দমাশ, একটা খ*চ্চর।

- ছি, তুমি মুখ খারাপ করছো কেন?
একজন মানুষ ভালোবেসে তোমাকে একটা গিফট দিলো আর তুমি তাকে গাল মন্দ করছো?

- করছি, তার কারণ আছে। আপনি জানেন এর মধ্যে কি আছে?

- অবশ্যই জানি। হারবাল ঔষধ। তোমার নাকি শারীরিক দূর্বলতা আছে?
উনি বলেছেন প্রতিদিন তিনবেলা মধু দিয়ে খেতে। তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।

- মাইগড ঐ বেটা এগুলো আপনাকে বলেছে!

- না আমাকে বলেনি। ঐ প্যাকেটের সাথে একটি চিঠি ছিলো। কিভাবে খেতে হবে সেখানে লেখা ছিলো। সরি, সেটা আমি খুলে পড়েছি।

- বেটা একটা ফা*জিল। শোনেন, আমি ঐদিন রাতে বাসস্টেশনে বসে ঐ বেটারে ফোন দিছিলাম। আমি বাসস্টেশনে বসে আছি বলতেই বললো, ভাইজান বাসর রাতে আপনি ঘরের বাইরে?
তারমানে আপনার শারীরিক দূর্বলতা আছে, হারবাল ঔষধ খান। বেটার ধারণা আমি শারীরিক দূর্বলতার কারণে বাসর ঘর থেকে পালিয়েছি।

- তুমি শুধু উনাকে দোষ দিচ্ছো কেন?
আমারও তো একই ধারণা।

বলেই কনা উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।

- সিরিয়াসলি! আপনিও ঐ বেটার মতো মজা নিচ্ছেন?
আপনি হাসছেন?

- সরি আর হাসবো না। আচ্ছা, তুমি দেখি এখনও আমাকে আপনি করে বলছো?

- ঠিক আছে আর বলবো না। আচ্ছা আমি কি এখন একটু বাথরুমে যেতে পারি?

- প্রশ্নই আসে না। তোমাকে বাথরুমে একা পাঠানোর রিস্ক আমি আর নিচ্ছি না। তোমার কোনো বিশ্বাস নাই।

- দেখুন আমার সারাটা শরীর ঘামে ভিজে আছে। আমাকে গোসল করতে হবে।

- তুমি গোসল করো আর যাই করো, একা বাথরুমে যেতে পারবে না। যদি যেতে হয়, আমিও তোমার সাথে যাবো।

- তুমি আমার সাথে যাবে মানে!

- তোমার সাথে যাবো মানে তোমার সাথে যাবো। প্রয়োজনে আমিও তোমার সাথে গোসল করবো।

- ছি ছি, এটা তুমি কি বলছো?
তুমি তো এখন নির্লজ্জের মতো কথা বলছো।

- শোনো, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কমপক্ষে একজনকে একটু নির্লজ্জ হতে হয়। তা না হলে সমস্যা। তোমার তো লজ্জা বেশি। এখন আমিও যদি তোমার মতো লজ্জা পাই, তাহলে তো সমস্যা। এভাবে তো আমি জীবনেও মা হতে পারবো না। কিন্তু আমাকে তো এ জীবনে অনেকগুলো বাচ্চার মা হতে হবে।

- তুমি কি বলছো এসব!

- শোনো এতো বুঝতে হবে না। তার চেয়ে চলো এখন দুজনে গোসল করি।

- কিন্তু আপনি তো এইমাত্র গোসল করে বের হলেন!

- সেটা কোনো সমস্যা না। তোমার সাথে আমি আবার গোসল করবো। আচ্ছা শোনো গোসলে যাওয়ার আগে ঘটকের পাঠানো হারবাল ঔষধের এক ডোজ কি খেয়ে নেবে?
আমি কিন্তু সাথে করে মধু নিয়ে এসেছি। চাইলে খেতে পারো।

বলেই কনা খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে এই পাগলী মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

- এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
শোনো এভাবে তাকিয়ে থেকে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। এমনিতে তুমি আমার চার দিন সময় নষ্ট করেছো।এখন বোকার মতো এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে চলো।

বলেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।আমি মনে মনে বললাম, হে মাবুদ এই ডাকাত বউ এর হাত থেকে তুমি আমাকে রক্ষা কইরো।

বি.দ্রষ্টব্য :
স্বামী বা স্ত্রী দুজনের একজন একটু পাগলাটে হওয়া ভালো।কারণ ছোট-খাট পাগলামি সংসার জীবনকে অনেক মধুর করে তোলে।
(সমাপ্ত)

©
ইমদাদ বাবু
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

ডাকাত পরিবারে বিয়ে এবং তারপর———————————————–––না, এভাবে চুপচাপ বসে থেকে স্ত্রীর হাতে খু*ন হওয়ার কোনো মানে হয় না। যেভাবে ...
16/07/2025

ডাকাত পরিবারে বিয়ে এবং তারপর
———————————————–––
না, এভাবে চুপচাপ বসে থেকে স্ত্রীর হাতে খু*ন হওয়ার কোনো মানে হয় না। যেভাবে হোক এ বাসা থেকে আমাকে পালাতে হবে। কিন্তু কিভাবে পালাবো, বুঝতে পারছি না।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম এখন সময় রাত বারোটা সতেরো।মফস্বল শহরে এটা অনেক রাত। বিয়ে বাড়ির সবাই সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমার ধারণা তারা সবাই হয়তো এতক্ষণে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঠিক করলাম, কনা বাথরুম থেকে আসার আগেই আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে। ওই মেয়ের সামনে দিয়ে কোনভাবেই যাওয়া যাবে না। কারণ ঐ মেয়ে কুংফু-কারাতে জানে। হয়তো দেখা যাবে ফ্লাইং কিক মেরে দিয়েছে। তাই যা করার এখনই করতে হবে।

ঠিক করলাম আস্তে আস্তে দরজা খুলে বের হবো। তারপর দ্রুত কনার ভাই এর নাকে একটা, আর ভাবির নাকে একটা ঘুষি মারবো। না, ঐ মহিলা বড়ই বজ্জাত। উনাকে দুইটা ঘুষি মারতে হবে, একটায় কাজ হবে না। ঘুষি মেরে আর কোন দিকে তাকাবো না। যাস্ট চোখ বন্ধ করে একটা দৌড় দিবো।

প্রথমে শরীর থেকে শেরওয়ানি খুলে ফেললাম। কারণ এভাবে পালালে রাস্তার সব লোক তাকিয়ে থাকবে। পা টিপে টিপে হেঁটে দরজার কাছে আসলাম। আস্তে আস্তে দরজাটা একটু খুলে বাইরে তাকালাম। না কেউ নেই। হতে পারে ভাই-ভাবি বাথরুম বা অন্য কোথাও গিয়েছে। অবশ্য কোথায় গিয়েছে সেটা আমার চিন্তার বিষয় না। আমি আস্তে আস্তে রুমের বাইরে এলাম। তারপর ড্রইংরুমের ভেতর দিয়ে বাসার মূল দরজার দিকে অগ্রসর হলাম। কিন্তু ড্রইংরুমের মাঝামাঝি গিয়ে আমার পা ভয়ে জমে গেলো। কারণ দেখলাম সোফার উপর কনার দৈত্য মামা শুয়ে আছেন। তবে ভাগ্য ভালো তিনি জেগে নেই। তিনি রীতিমত নাক ডাকছেন। একবার মনে হলো বেটার ভুঁড়িতে একটা ঘুষি মারি। কারণ এই দৈত্যের জন্যই আজ আমাকে এই বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে। অনেক কষ্টে ঘুষি মারার ইচ্ছেটাকে দমন করলাম। কারণ উনার ভুঁড়ির যে সাইজ, আমার মতো মানুষ হাজারটা ঘুষি মারলেও এই দৈত্যের কিছুই হবে না।সময় নষ্ট না করে খুবই সতর্কতার সাথে দরজার ছিটকিনি খুলে বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম।

বাইরে বের হয়ে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাসস্টেশনে চলে এলাম। বাসস্টেশনে এসে খোঁজ নিয়ে জানলাম রাতে আর কোনো বাস নেই। ভোর ছয়টা থেকে আবার বাস চালু হবে।বুঝলাম বাকি রাতটা এখানেই কাটাতে হবে।
বাসস্টেশনের একটা দোকানে বসে এক কাপ চা আর একটি সিগারেট নিলাম। আমি সাধারণত ধুমপান করি না। কিন্তু এখন কেন জানি মনে হলো সিগারেট ধরালে মনে সাহস বাড়বে। আমার ধারণা এতক্ষণে আমার খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেছে। আমি সিওর একটু পর খুঁজতে খুঁজতে ওরা এখানেও চলে আসবে। তবে যেই আসুক আমি আর ঐ বাড়িতে যাচ্ছি না। আমাকে খু*ন করতে হলে, এখানে সবার সামনেই করতে হবে।

বাসর রাতে বাসস্টেশনে বসে চা খেতে হবে তা কখনো ভাবিনি। রাগে ইচ্ছে হচ্ছে ঘটক বেটারে ধরে একটা আছাড় মারি। হঠাৎ মনে হলো, ঘটককে ফোন করে একটু গালাগাল করি। তাহলে হয়তো মনের রাগটা একটু কমবে। ফোন বের করে ঘটককে একটা ফোন দিলাম। কিন্তু ঘটক বেটা ফোন ধরলো না। বেশ কয়েকবার ফোন দেবার পর উনি ফোন ধরলেন। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন,

- কে ভাই এত রাতে ফোন করতেছেন?

- আমি তোর যম। আমার নাম রনি, আজ যারে তুই বিয়া দিছিস, আমি সেই লোক।

- হে হে হে...। ভাইজান কেমন আছেন? আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম।

- বেটা বদ*মাশ আমার জীবনের বারোটা বাজায়ে তুমি এখন বউ এর পাশে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো!

- হে হে হে..। কি যে কন ভাইজান, আমি তো অহনও বিয়াই করি নাই।

- ঐ তুই বিয়া করস নাই! সমস্যা নাই, শোন তোর বিয়া আমি করামু। আমারে তুই কুংফু জানা মেয়ের সাথে বিয়া দিছোস না? আমি তোরে সুমু কুস্তিগীর মাইয়ার সাথে বিয়া দিমু।

- হে হে হে...। তা দিয়েন। হেতি যদি বাংলা বুঝে তাইলে আমার কোন সমস্যা নাই। কারণ ভাইজান আমি আবার জাপানি ভাষা জানি না। আর জাপানি ভাষা এখন শিখতেও পারুম না। ছোটবেলা থেকেই আমার মেধা একটু কম আছে। হে হে হে...।

- খবরদার হে হে করবি না। আমি তোর সাথে মজা করছি না।

- হে হে হে....। ভাইজান সমস্যা কি?
আমনে মনে হয় খুউব রাইগা আছেন। যার কারণে আমনে আমারে তুই তুই করতেছেন।

- সমস্যা শুনতে চাস?
আজ আমার বাসর রাত, কোথায় বউ এর সাথে গল্প করবো, তা না আমি এখন বাসস্যান্ডে বসে চা খাচ্ছি।

- কেন ভাইজান! নতুন বউ কি আপনারে ঘর থাইক্যা বাইর কইরা দিসে?

- তোর কি মনে হয়?

ঘটক গলার আওয়াজ নিচু করে প্রায় ফিসফিস করে বললেন,

- ভাইজান, আমনের কি শারিরীক কোনো সমস্যা আছে?
তা সেটা আমারে আগে কইতেন, এক ডোজ হোমিওপ্যাথি ঔষধ বা হারবাল ঔষধ খাওয়ায় দিতাম। তারপর দেখতেন হে হে হে...।

- তোরে হাতের কাছে পাইলে, হোমিওপ্যাথি আর হারবাল আমি তোর...... (অপ্রকাশ যোগ্য) দিতাম।

- ভাইজান, আমনের মুখ তো খুবই খারাপ। হে হে হে...।

- খবরদার হে হে করবি না। বেটা ফাজিল ফোন রাখ।

- ভাইজান রাগ করেন কেন?
রাগ করলে তো আর সমস্যার সমাধান হইবে না। আমনের যে সমস্যা সেটার জন্য ঔষধ লাগবে। না হইলে তো বউ এর মন পাইবেন না। হে হে হে...।

- ঐ বদমাস বেটা তোরে আমি ফোন রাখতে কইছি। তুই ফোন রাখ। তু-ই-ই ফোওওন রাখ।

বলেই ফোনের লাইন কেটে দিলাম। ভেবেছিলাম ঘটকরে গালাগাল করলে রাগ কমবে। কিন্তু ঐ বেটা ঔষধের কথা বলে মেজাজটা আরও খারাপ করে দিলো। কত বড় ফা*জিল, বেটা আমারে রুগী বানায়ে দিলো!

ভাগ্য ভালো কেউই আমার খোঁজে রাতে আর বাসস্ট্যান্ডে এলো না। ভোর বেলা প্রথম বাসেই ঢাকা যাওয়ার টিকেট কেটে উঠে পড়লাম। বসলাম জানালার পাশে। আমিই বাসের প্রথম যাত্রী। অতি অল্প সময়ে পুরোটা বাসই ভরে গেলো। কেন জানি বাসে উঠলেই আমার ঘুম পায়। এখনও পাচ্ছে। কিন্তু ঘুমাতে পারছি না। কারণ আমি ঘুমালে আমার কোনো হুঁশ থাকে না। হয়তো দেখা যাবে ঘুমের মধ্যে পাশের যাত্রীর উপর ঢলে পড়েছি। পাশের যাত্রী পুরুষ হলে হয়তো সমস্যা হতো না। কিন্তু আমার পাশের সিটে বোরকা পরিহিত একজন ভদ্র মহিলা বসেছেন।
ঘন্টা খানিক অনেক কষ্টে চোখ খুলে রেখেছিলাম। এরপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবো না। ঘুম ভাঙার পর বুঝলাম আমি এতক্ষণ পাশে বসা মহিলার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলাম। পুরোটা বাস ফাঁকা। সবাই নেমে গেছে। সম্ভবত মহিলা আমার জন্য নামতে পারেনি। আমি ভীষণ লজ্জিত হয়ে বললাম,

- চাচী আমি সত্যিই লজ্জিত। আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম।

ভদ্র মহিলা কোনো কিছু না বলেই বাস থেকে নেমে গেলেন।

প্রচণ্ড ক্ষিদে পেয়েছে। বাস থেকে নেমে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। তারপর গরুর মাংস দিয়ে পরোটা খেলাম। এরপর আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিলাম। এখন নিজেকে খুবই হাল্কা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি এক মুক্ত বিহঙ্গ।

বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজাতেই মা দরজা খুলে দিলেন। ভেবেছিলাম এভাবে আমাকে দেখে মা হয়তো অবাক হবেন। কিন্তু তার চেহারায় অবাক হওয়ার কোন লক্ষণ খুঁজে পেলাম না। আমি ঘরে ঢুকেই বললাম,

- মা শোনো, আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। আচ্ছা মা, তোমরা শেষ পর্যন্ত আমাকে একটা ডাকাত পরিবারে বিয়ে দিলে?

- কি যা তা বলছিস?

- না মা, আমা যা-তা বলছি না। ইহা একশত ভাগ সত্য।

- কিন্তু ঘটক তো বলল, ওরা খুবই বড় বংশ।

- অবশ্যই বড় বংশ, তবে ডাকাত বংশ। তুমি জানো, মেয়ে বালিশের নিচে হাতুড়ি রাখে।

- তাই নাকি!

- তাহলে আর কি বলছি। আমি না পালালে ঐ মেয়ে গতরাতে হাতুড়ি দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে ফেলতো। তুমি আমার জানের সদকায় দশজন ফকির খাইয়ে দিও। শোনো বিয়ের বাকি আয়োজন ক্যানসেল। আগামীকালের বৌ-ভাতে আমি নাই। আর একটি কথা,আমি একটু পরেই ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে পালাচ্ছি।

- মানে কি! তুই কই পালাবি?

- ভাবছি কক্সবাজার চলে যাবো। ওখানে তো পরশুদিন হানিমুনে যাওয়ার কথা ছিলো। হোটেল যেহেতু বুক করা আছে, সমস্যা হবে না। তবে একটা কথা, আমি যে কক্সবাজার যাচ্ছি তুমি সেটা কাউকে বলবে না। আমার শ্বশুর বাড়ির কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে, পাশের বাসার এক মেয়েকে নিয়ে আমি পালিয়েছি। দেখবে এই কথা শুনলে আমার বউ এমনিতেই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে।

মা কিছুই বললেন না। শুধু রহস্যময় একটা হাসি দিলেন। মায়ের রহস্যভরা হাসি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আমার নেই। রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে এখনই পালাতে হবে। আমি আমার রুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকেই আমি ভয়ে পাথর হয়ে গেলাম। দেখলাম আমার বিছানার উপর একটা বোরকা পড়ে আছে। আমি ভয়ার্ত কন্ঠে মা মা বলে ডাকলাম। কিন্তু মা কোনো সাড়া দিলেন না বা আমার রুমেও এলেন না। আমি আবার মাকে ডাকতে মুখ খুলবো, ঠিক তখনই কনা বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো। বুঝলাম এ কারণেই মা আমাকে দেখে অবাক হননি। কনা বের হয়েই বললো,

- মা, মা করছো কেনো?

আমি কনাকে দেখেই মনে হলো ভুত দেখলাম। আমি ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললাম,

- আ-আপনি !

- জি, আমি। তোমার চাচী। বাসে যার কাঁধে মাথা রেখে সারা রাস্তা ঘুমিয়েছিলে। শোনো বোরকা শুধু চাচী-খালারা পড়ে না। বোরকা যে কেউ পড়তে পারে। খবরদার জীবনে আর কখনো বোরকা পড়া কাউকে, না জেনে চাচী ডাকবে না।

- মাইগড, ওটা আপনি ছিলেন! আপনি তো ভয়ঙ্কর মেয়ে। আপনি আমার পিছন পিছন চলে এসেছেন?

- তুমি কি ভেবেছো, তোমাকে আমি এতো সহজে ছেড়ে দেবো? শোনো তোমার জন্য আমার বাসর রাত মিস হয়েছে।এই কথা আমি জীবনেও ভুলবো না। এর খেসারত তোমাকে সারাজীবন দিতে হবে।

নতুন বউ এর হুমকিতে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটা মেয়ে তার নতুন স্বামীকে এইভাবে থ্রেট করতে পারে তা আমার জানা ছিলো না।

বোকার মত দাঁড়িয়ে থেকো না। জার্নি করে এসেছো, যাও গোসল করে এসো। আর আসার সময় ওজু করে আসবে একসাথে নামাজ পড়বো। কাল রাতে বিয়ের শোকরানা নফল নামাজ না পড়েই তুমি পালিয়েছো।

আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হলো না। শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম। বাথরুমে ঢুকতে যাবো এসময় হঠাৎ করেই কনা এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো। আমি ভাবলাম, হয়তো ভালোবেসে একটু জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু তা না করে, সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

- তোমার মাস্ক কই? তোমাকে না বলেছি সব সময় মাস্ক পড়ে থাকতে? ইতালিয়ান ভাষা বুঝো, বাংলা ভাষা বোঝো না?

এবারও মুখে কিছু বললাম না। তবে মনে মনে বললাম-
সন্ত্রাসী মহিলা, তুই তো আমারে মরার আগেই হাতুড়ি দিয়া খু*ন করবি। তাহলে আমার মাস্ক পড়ার দরকার টা কি?

- চুপ করে আছো কেন? কথা বলছো না কেন?

- শোনেন, কুংফু জানা বউ এর সামনে স্বামীদের চুপ করে থাকাই সমীচীন। না হলে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

আমার কথা শুনে কনা খিলখিল করে হেসে উঠলো। মনে মনে বললাম, ডাকাত মেয়ে তুমি যতই হাসো, আমি তোমার মিষ্টি হাসিতে ভুলছি না।

আমি বাথরুমে ঢুকতে যাবো, সে সময় পিছন থেকে আবার বলে উঠলো,

- শোনো আবার পালানোর চিন্তা মাথায় এনো না। আর আনলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ আমি মাকে বলে দিয়েছি তুমি ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই মেইন দরজায় তালা দিয়ে দিতে। সম্ভবত সেটা এতক্ষণে দেওয়া হয়ে গেছে।

আমি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে হতাশ, ক্লান্ত পদক্ষেপে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।

না, এ মেয়ের সাথে কোনো ভাবেই সারাজীবন থাকা সম্ভব না। নতুন অবস্থায় সে যেভাবে খবরদারি করছে, তাতে তো আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমাকে আবার পালাতে হবে।মূল দরজায় তালা লাগিয়ে আমাকে আটকানো যাবে না।সপ্তম শ্রেণী থেকে এ পর্যন্ত জীবনে বহুবার, আমি আমার বাথরুমের জানালা খুলে বাসা থেকে পালিয়েছি। এটা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না। বাথরুমে ঢুকে প্রথমেই বাথরুমের সবগুলো পানির নল ছেড়ে দিলাম। তারপর বাথরুমে লুকিয়ে রাখা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে একে একে বাথরুমের জানালার সবগুলো স্ক্রু খুলে ফেললাম।
(চলবে)

ইমদাদ বাবু

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মনিশা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মনিশা:

Share