মনিশা

মনিশা জীবন বড়ই বিচিত্র
সন্ধা কাটে না’হ
অথচ বছর কেটে যাচ্ছে
(16)

ছোটবেলায় একবার আমাদের বাসায় এক ভাই বেড়াতে এলেন। আমাদের কাছের সম্পর্কের কেউ না। আম্মার এলাকার মানুষ। আমি তখন স্রেফ ক্লাস ...
11/08/2025

ছোটবেলায় একবার আমাদের বাসায় এক ভাই বেড়াতে এলেন। আমাদের কাছের সম্পর্কের কেউ না। আম্মার এলাকার মানুষ। আমি তখন স্রেফ ক্লাস থ্রিতে পড়ি।

সেই সময়ে ঢাকাতে মহল্লা ভিত্তিক মাস্তানি, রংবাজি, গুণ্ডামির হেভি চল। বিভিন্ন মহল্লায় মহল্লায় অমুক ভাই আর তমুক ভাইদের রাজত্ব। তাঁরা হেভি ভাবে চলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে মহল্লার গলির মুখে লাউড স্পিকার বসিয়ে, উচ্চ ভলিউমে গান বাজান। এই গান স্রেফ গান না। এর ভিতর নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়ার একটা ব্যাপার আছে। আধিপত্য বজায় রাখার বিষয়।

তবে গুন্ডা মস্তানদের আবার বিভিন্ন পর্যায় আছে। বাঘের উপর টাগ থাকার মতো। সিনিয়ার মাস্তান ভাইদের আমরা খুব সমীহ করি। তাদের সাথে আমার মতো আধা আঙুল কিংবা তার ফ্রেন্ড সার্কেল, দেখা হবার চান্স অতি অল্প। এই গ্রুপের ভাইদের অনেকের লম্বা চুল। কেউ মাথায় ঝুঁটি বাঁধেন, কারো থাকে কোঁকড়া, কারো আউলা। বড় চুলের সাথে হোন্ডা সি ডি আই হান্ড্রেড নিয়ে ভোঁ ভোঁ। লেদাল কম্বিনেশন।

এরপর একটা মাঝামাঝি গ্রুপ। এই গ্রুপের ভাইদের দেখতাম খালি বিভিন্ন জায়গায় প্রেম করার অপারেশনে ব্যস্ত। রাস্তার পাশে থেকে সিটি বাজানো, নিজের এলাকার কোন মেয়েকে অন্য এলাকার কোন গুন্ডা ত্যাক্ত করলে দল বেঁধে গিয়ে মারপিট করা, এলাকায় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা, এই জাতীয় রাজ্যের হাবিজাবি কাজ করতো এরা। আর ছিলো এই মিডিয়াম গুন্ডা বাহিনীর চ্যালা -শিশু ফাপরবাজ দল। এরা বড় ভাই গুণ্ডাদের রেফারেন্সে বিভিন্ন ঝামেলা করতো। যেমন শবে বরাতের রাতে তারা বাত্তি কিংবা মরিচা ফাটানো এবং তা দিয়ে রাস্তা ঘাটে পাবলিককে বিরক্ত করা, বিভিন্ন সময়ে খেলার মাঝে আবোল তাবোল ডিসিসান দিয়ে আবার বড় ভাইদের রেফারেন্সে ফাঁপর দেয়া, অন্যের গাছের পেয়ারা বড়ই পারার নেতৃত্ব দেয়া ইত্যাদি। এই শেষের পার্টির সাথে প্রায়ই গ্যাঞ্জাম, মারামারি লেগে থাকতো। আম্মার কাছে বিচার আসা ছিলো কমন। দুনিয়ার দুষ্টু ছেলের দল।

যে সময়ে আম্মার সেই ময়মনসিংহ এলাকার ছেলে বাসায় এলো, তখন আমরা কমলাপুর জসিম উদ্দিন রোডে থাকি। এর আগের কিছু দিন ধরে খেলার মাঠে আমার অবস্থান খুব খারাপ। একটা ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে মারামারি হওয়াতে, ফাঁপর পার্টির হাতে আমি এবং আমার টিমের লোকজন হেনস্তা হয়েছি। হালকা চড় থাপ্পর ইনক্লুডেড। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাক ফুটে আছি। এর ভিতরে আম্মার এলাকার সেই তরুনের আগমন। আমি তাকে ভাই বলেই সম্বোধন করি।

তার কোন বিশেষত্ব নাই। শান্ত শিষ্ট চেহারা। কথা খুব কম বলেন। কিন্তু কাহিনী অন্য জায়গায়। তার কিছু একটা বড় মাপের অসুখের পর থেকে, কবিরাজের পরামর্শে মাথার চুল কাটা বারণ। সে কারণে চুল বড় হয়ে কোমরের একটু উপর পর্যন্ত। ভাই সে জন্য হাতে একটা ব্যাক আপ চুলের ব্যান্ড রাখেন আর একটা ব্যান্ড থাকে মাথার চুলে। ভাইকে দেখায় সেই রকম। তিনি সম্ভবত ডাক্তার দেখাতে এসেছেন এবং কিছুদিন ঢাকা থাকবেন।

প্রথম যেদিন সাজু ভাই বাসা থেকে বের হয়েছে, আমি সাথে গেলাম রিক্সা ঠিক করে দিতে। তিনি নিজেই পারবেন, তবুও গেস্ট এর জন্যে একটু করা আর কি! সাজু ভাই রিক্সাওয়ালা মামাকে ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই সে ১০ টাকার ভাড়া আট টাকা চাইলো। আমি তো অবাক। এই রিক্সাওয়ালাকে আমি ভালো ভাবেই চিনি। আম্মা প্রায় স্কুলে যান। সে তো এতো লিবারেল না। সাজু ভাই কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলেন। তখন আমি বাইরে খেলছিলাম। লক্ষ্য করলাম, আমাদের ভাড়া বাসার নীচের দারোয়ান মামা সাজু ভাইকে কঠিন জোরে একটা সেলাম দিলেন। অথচ এই দারোয়ান মামার নামে সবার অভিযোগ। তার আদব লেহাজের অভাব। আমার খটকা লাগলো।

রাতে দারোয়ান মামার পাশ দিয়ে ঘুরঘুর করতেই সে জিজ্ঞেস করে,"তোমার এই ভাইয়ের নাম কি?"

আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম,"ক্যান?"

দারোয়ান মামা: মানে আর কি, উনাকে দেখে খুব সম্মান আসলো মনে। খুব অমায়িক ব্যবহার। ঐ আমাগো এলাকার সানাউল ভাইয়ের মতো।

সাথে সাথে আমি ধরে ফেললাম। সানাউল ভাই হচ্ছেন ঐ সময়ে আমাদের দুইতিন মহল্লার ভিতরে সবচেয়ে নামকরা সিনিয়ার গুন্ডা। তার মানে, সাজু ভাইয়ের বেশভূষা দেখে দারোয়ান মামা এই ধারণা করেছে। আমি তো মনে মনে বেজায় খুশি। আমিও দারোয়ান মামাকে বললাম,"ঠিক বলছেন। সাজু ভাইয়ের তো ময়মনসিংহ এলাকায় সানাউল ভাইয়ের চেয়েও নামডাক।"

দারোয়ান মামার মুখে বিজয়ীর হাসি।

"আমি ঠিক জানতাম। তা ভাইজান থাকবে কতদিন?"

আমি গম্ভীর মুখে বললাম,“ঠিক নাই। একটা বিশেষ কাজে আসছেন। কাজের শেষ হওয়ার উপর নির্ভর করতেছে।”

আমি তো সত্যিই বলেছি। উনার চিকিৎসা শেষে চলে যাবে। কিন্তু দারোয়ান মামা বুঝলো না জানি না কি কাজ। তার মুখ শুকনা। আমি বাসায় চলে এলাম। আম্মা ডিম আনতে দোকানে পাঠিয়েছিলেন। আমি জানি দারোয়ান মামা, কাল দুপুরের ভিতরে এই নিউজ চাউর করে দিবে।

পরদিন বিকালে খেলার আয়োজন হয়েছে, আমাদের বাসার পিছনের গলিতে। ক্রিকেট খেলি। আমাদের টিমের সবাই আমাকে যাওয়া মাত্র ঘিরে ধরলো। "শুন শুন, তোদের বাসায় নাকি সানাউল ভাইয়ের চেয়েও বড় এক ভাই আসছে। অনেক লম্বা চুল। ভয়ংকর চেহারা!"

আমি কিছু বলি না। কেবল মুচকি মুচকি হাসি। ওদের কৌতূহল, ভয় আরও বাড়ে।

পরদিন সকালে আমি সাজু ভাইকে নিয়ে অযথাই গলিতে ঘোরাফেরা করি, ড্রাই রান দিই। আশেপাশে সবাই আড়চোখে তাকায় আর ফিসফিস করে কথা বলে।

সেদিন বিকালে আমাদের সেই রাইভাল পার্টি- ফাঁপর গ্রুপের সাথে ক্রিকেট খেলা। আমরা সবাই অন্য লেভেলের কনফিডেন্ট। আমি সাজু ভাইকে ইচ্ছা করেই খেলা দেখতে নিয়ে এসেছি।

সাজু ভাইকে দেখার পর থেকেই অন্য দলের পোলাপানের মুখ শুকনা। আর আমার দলের খেলোয়াড় পাজিগুলো গায়ে পরে কথা কাটাকাটি করছে। এক পর্যায়ে রান চুরি করা নিয়ে তুমুল ঝগড়া। ফলে মারামারি। আমার দলের পিচ্চিরা ঐ দলের সবগুলোকে রীতিমতো দৌড়ানী দিলো।

আমাদের আর পায় কে! আমি তো বন্ধুদের কাছে ভার্চুয়াল হিরো। আসল হিরো তো সাজু ভাই। তবে সাজু ভাই এই ব্যাকগ্রাউন্ড ঘটনার কিছুই ধরতে পারলেন না।

সাজু ভাই আরও দুই সপ্তাহ বাসায় ছিলেন। আমি সেই দুই সপ্তাহ হেভি পার্টে চলাফেরা করেছি। মাঝে মাঝেই সাজু ভাই সহ আজাইরা ঘুরাফেরা করতাম।

সাজু ভাই যেদিন চলে যাবেন, আমি রীতিমতো আপসেট। এক পর্যায়ে কেঁদে ফেললাম। সাজু ভাই ভাবলেন, মমতায় কাঁদছি। আম্মা তো অবাক। এমন কি মহব্বত হলো! আমি তো কাঁদছি ভয়ে। সাজু ভাই চলে গেলে পিটুনি না খাই।

যাহোক। সাজু ভাই যাবার পর কয়েকদিন খেলতে বের হই নাই। কিছুদিন পর যখন আবার বের হলাম, দেখলাম সবকিছুই আমাদের ফেভারে আছে। আমি আবারো সেই কনফিডেন্স নিয়ে ঘুরি, ক্রিকেট খেলি, পিচ্চি ফাঁপর দেয়া গ্রুপকে কাউন্টার ফাঁপর দিয়ে চলি। আমার বন্ধুদের কাছে তো আমি খুব সম্মান পাই। আর সুযোগ পেলেই ইনিয়ে বিনিয়ে সাজু ভাইকে নিয়ে ম্যালা কাল্পনিক গল্প ফাঁদি। সবার চোখে আমার প্রতি সমীহ আরও বেড়ে যায়।

মনে মনে সাজু ভাইকে ধন্যবাদ দিই, আমার ভার্চুয়াল হিরো। আর দোয়া করি,"হে আল্লাহ্‌, কবিরাজ আংকেল যেন কোনদিন সাজু ভাইকে তার এতো সুন্দর চুল কাটার ক্লিয়ারেন্স না দেয়। প্লিজ আল্লাহ্‌।"

(সাজু ভাইয়ের কাল্পনিক ফাঁপরে আমি আরও লম্বা সময়ে এলাকায় পার্টে চলেছি) 😎

#মানবজমিন
#বান্দরের_বাচ্চা_চার_কোনাইচ্চা

বস্ত্রমন্ত্রী.........সাহেব বিরাট কনফিউশনে আছেন।কনফিউশনের কারণ টেবিলের উপর রাখা একটা ফাইল। ফাইলের উপর বড় বড় করে লেখা 'জর...
11/08/2025

বস্ত্রমন্ত্রী.........সাহেব বিরাট কনফিউশনে আছেন।

কনফিউশনের কারণ টেবিলের উপর রাখা একটা ফাইল। ফাইলের উপর বড় বড় করে লেখা 'জরুরী'। ফাইলটি অনুমোদনের জন্য তার টেবিলে আনা হয়েছে।

ফাইলের বিষয়বস্তু,'আধুনিক পদ্ধতিতে লুঙ্গি সেলাই বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষনের জন্য বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের ১০০ কর্মকর্তাকে ফ্রান্সে প্রেরণ'।

বিষয়টা নিয়ে মন্ত্রী সাহেব কনফিউশনে আছেন। কনফিউশন দূর করার জন্য ফাইলটা যিনি পাঠিয়েছেন - তিনি তাকে ডেকে পাঠালেন।

মন্ত্রী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, লুঙ্গি সেলাই শেখার জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের কী দরকার, আমাকে একটু বুঝান তো?

স্যার, পোশাক মাত্রই পরিবর্তনশীল। আমরা চল্লিশ বছর আগে যে "গোড়া চিকন আগা মোটা স্টাইলের 'বেল বটম' প্যান্ট পড়তাম সেগুলা কি এখন পরি? পরি না।

কিন্তু লুঙ্গির ব্যাপারটা দেখেন স্যার। সেই লক্ষণ সেনের আমল থেকে একই ফ্যাশনের লুঙ্গি পড়ে চলছি আমরা। লুঙ্গির কোনো উন্নতি হয় নাই। এটা অবিচার।

বলেন কী, লক্ষণ সেন লুঙ্গি পড়তেন নাকি?

কর্মকর্তা এবার এক গাল হেসে বললেন, অবশ্যই পড়তেন স্যার। বাঙালি পুরুষ মানেই লুঙ্গি। এমন কি আমি নিশ্চিত বখতিয়ার খিলজির ধাওয়া খেয়ে উনি লুঙ্গি উঁচিয়েই প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। ইতিহাসে এই ব্যাপারটা আসে নাই, ভেরি স্যাড।

মন্ত্রী সাহেব এবার একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন, আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু লুঙ্গির উপর প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশেই যদি যেতে হবে, সেটা ফ্রান্স কেন?
লুঙ্গির জন্য বিখ্যাত মায়ানমার কিংবা তামিলনাড়ু নয় কেন?

কী যে বলেন না স্যার। মায়ানমার/ভারত এগুলা কি 'বিদেশ' হলো নাকি। আজকালকার জেনারেশন তো ব্যাংকক/বালিকেও বিদেশ মানতে নারাজ - এগুলোকে নিজেদের ঘর বারান্দা বানিয়ে ফেলেছে। আসল বিদেশ হলো ইউরোপ, স্যার, ইউরোপ। আর ফ্রান্স হলো ইউরোপের তথা দুনিয়ার ফ্যাশন রাজধানী। আমাদের লুঙ্গি নিয়ে রিসার্চ হলে তার জন্য 'প্যারিস'ই একমাত্র উপযুক্ত জায়গা।

মন্ত্রী সাহেবের কনফিউশন এবার পুরোই দূর হয়েছে। তিনি খুশিমনে ফাইলের উপর "এপ্রুভড" লিখে দিলেন।

কিছুদিনের মধ্যেই সেই কর্মকর্তা তার ১০০ কলিগকে সঙ্গে নিয়ে 'লুঙ্গি ড্যান্স' দিতে দিতে ট্রেনিং নিতে প্যারিস চলে গেলেন।

কয়েকমাস পর ট্রেনিং থেকে ফেরত আসার পর মন্ত্রী সাহেব সেই কর্মকর্তাকে আবার ডেকে পাঠালেন।

দেখান তো দেখি, কী শিখে এলেন আপনারা প্যারিস থেকে।

কর্মকর্তা খ্যাক খ্যাক করে হেসে বললেন, আমি জানতাম স্যার। আপনি আমাকে ঠিকই ডেকে পাঠাবেন। এই দেখেন স্যার, আমাদের রিসার্চের ফলাফল, আমাদের নতুন ডিজাইনের লুঙ্গি। আমাদের রিসার্চ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। এখানে দু পিছ লুঙ্গি আছে- আপনার জন্য। আপনাকে দিয়েই উদ্বোধন করতে চাই।

মন্ত্রী সাহেব নতুন ডিজাইনের লুঙ্গির একটা প্যাকেট হাতে নিলেন।

কর্মকর্তা বললেন,“স্যার, জেনে খুশি হবেন, এই লুঙ্গিতে আমরা এখন বেল্ট সংযোজন করেছি - লুঙ্গি এখন আগের চেয়েও বেশি নিরাপদ - হ্যাচকা টানে খুলে যাবার সম্ভাবনা আর নেই। আর সঙ্গে পকেটও যোগ করে দিয়েছি।”

বলেন কি?

জি স্যার। আরো একটা কাজ করেছি স্যার, প্যান্টের মতো লুঙ্গিতে চেইনও লাগিয়ে দিয়েছি একটা।

চেইন কেন?

ইয়ে..মানে.....হি*সু করার সুবিধা হবে তাই।

মন্ত্রী সাহেব আশ্চর্য হলেন। বললেন, এতদিন লুঙ্গি পড়ে যেভাবে হিসু করতাম সেটাই তো সবচেয়ে সুবিধাজনক ছিলো। তুলতাম আর মুততাম। না না। এই কাজটা ভালো হয় নাই।

কর্মকর্তা বিপদের গন্ধ পেলেন। বিপদ কাটাতে তিনি বলে উঠলেন,“অসুবিধা নাই তো স্যার। চেইন থাকলেও আপনি তো আগের মতোই কাজ সারতে পারবেন। এটা শুধু একটা ইমার্জেন্সি এগ্জিট হিসেবে থেকে গেলো, স্যার।”

মন্ত্রী সাহেব এবারো কনভিন্সড হলেন।

বললেন, ঠিক আছে আমি আজ বাসায় গিয়ে আপনার এই নতুন লুঙ্গি ট্রাই করে দেখবো। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় রিসার্চ - সেই রিসার্চের ফলাফল কেমন হলো - সেটা যাচাই করে দেখা তো আমার কর্তব্য।

রাতের বেলা মন্ত্রী সাহেব, নতুন ডিজাইনের লুঙ্গি পড়ে ড্রয়িং রুমে টিভি দেখতে বসলেন।

তাকে দেখে তার স্ত্রী আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, একি! তুমি মেয়েদের মতো স্কার্ট পরে বসে আছো কেনো?
তোমার কী হয়েছে??”

কার্টিসি
সংগৃহীত

চুলটানা রোগলেখা: অভিশপ্ত মানব (শাওন)ছোটবেলা থেকেই একটা বদ অভ্যাস ছিলো আমার। সেটা হচ্ছে কাউকে দিয়ে আমার মাথার চুল টানানো।...
11/08/2025

চুলটানা রোগ
লেখা: অভিশপ্ত মানব (শাওন)

ছোটবেলা থেকেই একটা বদ অভ্যাস ছিলো আমার। সেটা হচ্ছে কাউকে দিয়ে আমার মাথার চুল টানানো। ছোট কাউকে পেলে বা কোন কাজিনকে বা ভাগ্নে ভাগ্নীকে হাতের কাছে পেলেই বলতাম একটু চুল টেনে দে!!

এবার আমার পরিচয়টা একটু দেই।
আমি শাওন। এবার অনার্স ১ম বর্ষে। কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়ি। বাবা মায়ের একমাত্র আদুরে সন্তান।
আমার সম্পর্কে এটুকু ডিটেলস ই যথেষ্ঠ।
আমার এই মহান বদঅভ্যাসটা হয়েছিলো যখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। সেলুনে গিয়েছিলাম চুল কাটতে। নাপিত মহাশয় চুলটা এমন সুন্দর করে বানাইয়া দিলো!! আহা সুখের ঠেলায় ঘুম চলে আসছিলো। তারপর থেকে মাথার চুল টানানোর নেশা চেপে বসে।
বাসায় এসে প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ার পরপরই সোজা গিয়ে আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরতাম।
বলতাম,“আম্মু চুলটা একটু টেনে দিবা??”
আম্মু তখন মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে মাথার চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে দিতো। মাথার চুলগুলোয় বিলি কেটে দিতো। মায়ের কোলেই তখন ঘুমিয়ে পরতাম।
এভাবে ধীরে ধীরে চুল টানায় অভ্যস্ত হয়ে পরি। তারপর থেকে দুপুরে চুল টানা ছাড়া ঘুমাতেই পারতাম না।

একদিন আম্মু নানুবাড়ি গেলো আমি যাই নি।
দুপুর বেলা খেয়েদেয়ে ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু ঘুমবাবু কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাস করে, পাশের বাসা থেকে আমার পিচ্চি কাজিন সাদ কে আনলাম। সাদ আমার খুব ভক্ত।
তাই ডাকতেই লাফাতে লাফাতে চলে আসে।
আসার পরই ভক্তকে গুরুর সেবা যত্নে লাগিয়ে দেই।
মানে মাথার কাছে বসিয়ে বলি,“নে ভাই এবার আমার মাথার চুলটা একটু টেনে দে তো।”
সাদ চুল টেনে দিলো।
পরের দিন সাদকে ডাকালাম। পিচ্চি বলে,“চুল টেনে দিলে টাকা দিতে হবে।”
বলে কি??
একটুখানি পিচ্চি এখনি টাকার হিসাব বুঝে গেছে!!
বাধ্য হয়ে ওর কথাই মেনে নিলাম।
কয়েকদিন পর টের পেলাম আমার পকেট পুষ্টিহীনতায় ভুগতেছে।
হায় হায়!! জমিদারি করতে গিয়া তো পকেটের ডায়রিয়া হয়ে গেলো।
নাহ এবার নতুন সেবক আমদানি করতে হবে।
তারপর দিন আরেক কাজিন সাদিক রে ডাকলাম। সেই হা*রা*মীরেও দুদিন পর আর খুঁজে পাচ্ছি না!!
আমি ডাকলেই যে পিচ্চি গুলা দৌড়ে চলে আসতো!!
আর এখন সেই পিচ্চিরাই আমার ডাক শুনলে ইদুরের মতো গর্তে লুকায়!!
ক্ষনিকের জন্য তখন নিজেকে বিলাই মনে হয়!!
কিছুদিন পর আম্মু নানুবাড়ি থেকে চলে আসলো। আমি যেন সস্তির নিঃশাস ফেললাম!!
কিছুদিন পর মাও বললে,“তোকে প্রতিদিন এমন চুল টেনে দিতে পারবো না। বিয়া করে বউয়ের হাতে টানাইস।”
তখন আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরতাম। তখন কি আর বিয়া করা যায়??
তাই প্রতিদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম,“আল্লাহ আমাকে তাড়াতাড়ি বড় করে দাও, যাতে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে পারি!!”

সপ্তাহখানেক খুব কষ্ট করে চলতেছি!!
হঠাৎ একদিন পার্কে দেখলাম কিশোর (আমার বন্ধু) সীমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। সীমা ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর কথা বলতেছে!!
তখনই হঠাৎ মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। আররে বাস!!আমি কেন প্রেম করি না তাইলে??
তাইলে তো গার্লফ্রেন্ডের হাতে ডেইলি ফ্রি চুল টানাইতে পারবো!!
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!!
চিন্তা করলাম শোভাকে একসেপ্ট করবো!! মেয়েটা আমাকে ফার্স্ট ইয়ার থেকে ভালোবাসে। মেয়েটাকে অবশ্য আমারও ভালোই লাগে। কিন্তু ভাব দেখাইয়া বলি নাই।
যেই ভাবা সেই কাজ!!
পরদিন কলেজে গেলাম!!
শোভাকে বললাম,“কলেজের পিছনে একটা গাছের নিচে দেখা করতে। জরুরী কথা আছে।”
কিছুক্ষন পর শোভা আসলো।
-- বল কেন আসতে বললি?? (শোভা)
-- একটা খুব ইমপর্ট্যান্ট কথা আছে!! (আমি)
-- বলে ফেল!!
তখনি হাটু গেড়ে বসে, হাত দুটি ওর দিকে বাড়িয়ে বললাম
--“ভালোবাসবি আমায়!!”
হবি আমার স্বপ্নের রাজকন্যা??
তোকে তুমি ডাকার অধিকারটা দিবি??
কোনো এক পরন্ত বিকেলে আমার মাথাটা তোর কোলে নিয়ে চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে দিবি??”
তাকিয়ে দেখি শোভা কাদতেছে!!
-- কিরে উত্তর দিবি না??
-- একটা থাপ্পর দিবো যদি আর একবার আমাকে তুই বলে ডাকো!!
এখন থেকে তুমি বলেই ডাকবে কেমন??
-- আচ্ছা
আমি বিজয়ের হাসি দিয়ে বললাম,“কারন চুল টানার লোক পেয়ে গেছি!!”
এভাবে দুমাস কেটে গেলো!!
হঠাৎ একদিন পার্কে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। আর ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-- এই কি রকম করে চুল টানতেছো??
ভালো করে টানো!! (আমি)
-- আচ্ছা একটা কথা বলো তো। (শোভা)
-- বলো!!
-- তুমি কি আমার সাথে প্রেম করো শুধু চুল টানানোর জন্য?? (রেগে বললো)
-- আরে নাহ বাবু!! কি যে বলো!! আসলে তোমার হাতে যাদু আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে যেন সকল ক্লান্তি দুর হয়ে যায়!!
-- হ্যা, এজন্য প্রায় প্রতিদিনই আমার কোলে ঘুমিয়ে পরো!!
কত লাভ কাপল দেখলাম রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলে!! আর তুমি!! দেখা করলেই কোলে মাথা দিয়ে বলো চুলটা টেনে দাও!!
আমি বাসা থেকে কত কষ্ট করে সেজেগুজে আসি!! তা তো তোমার চোখেই বাজে না। সারাদিন শুধু একটা জিনিসই বুঝো চুল টানা।
আমারই হইছে কপাল!! (শোভা)
-- নিশ্চুপ (আমি)
-- এই তুমি আবার ঘুমাইতেছ?? (রেগে)
-- হু।
-- এই হু কি হ্যা!! প্রতিদিন আমি বসে থাকি আর তুমি আমার কোলে শুয়ে বলদের মত ঘুমাও!!$ ওঠ বলছি, ওঠ!!
-- হু!!
-- আবার হু!! আচ্ছা ঠিক আছে, মজা বুছাচ্ছি!!
-- হু!!
কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানি না!!
হঠাৎ শোভার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।
-- এই ওঠো। অনেক ঘুমিয়েছো। এবার বাসায় চল। যখন উঠে ওর সাথে হাটা ধরলাম খেয়াল করলাম সবাই কেমন যেন আমার দিকে অদ্ভুদভাবে তাকিয়ে হাসতেছে।
শোভার দিকে তাকালাম ও মুখ টিপে টিপে হাসতেছে।
কারনটা কি??
আমি কি জোকার হয়ে গেলাম??
নিচের দিকে তাকালাম সবই তো ঠিক আছে।
তাহলে??
ধুর যার ইচ্ছা হাসুক আমার কি??
পার্ক থেকে বেড়িয়ে সোজা বাসায় চলে গেলাম।
বাসায় গিয়েও একই কাহিনী সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসতেছে।
আম্মা বললো,“যাক আমার ছেলেটাকে এখন মানুষের মতো লাগছে। এদিন যা লাগছিলো না!!
আব্বু এত গম্ভীর মানুষ আব্বুও দেখি হাসে।
হঠাৎ আব্বু বললো,
-- কিরে কোথাও চুরি করতে গেছিলি নাকি?? (আব্বু)
-- না তো কেন?? (আমি)
-- তাহলে তোর এমন অবস্থা কেন??
-- কেমন অবস্থা বলেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চোখ গেলো।
মনে হচ্ছে ভূত দেখলাম।
--- একি এ কে!! এতো আমি না।
আমার মাথার চুল গুলা কই??
হায় হায়!!
তারমানে শোভা আমার এই সর্বনাশ করলো!!
আহারে এই চুলের পিছনে কত পেট্রোল ডিজেল খরচ করি মানে টাকা ব্যয় করি!! সেই চুলের কিনা এই হাল!!
এখন কি হবে??
হঠাৎ কষ্টটা দ্বিগুন বেড়ে গেলো। আল্লাহ চুল বড় হইতে তো কমপক্ষে দুইমাস লাগবে।
ইয়া মাবুদ তারমানে দুইমাস চুল টানাইতে পারবো না??
আর সহ্য করতে পারলাম না।
অজ্ঞান হয়ে পরলাম।

রাতে ঘুমানোর সময় নাসির মানিব্যাগে পাঁচটা একশ টাকার নোট রেখে ঘুমায় সকালে মানিব্যাগ খুলে দেখে চারটা! একটা নোট গায়েব হয়ে গে...
11/08/2025

রাতে ঘুমানোর সময় নাসির মানিব্যাগে পাঁচটা একশ টাকার নোট রেখে ঘুমায় সকালে মানিব্যাগ খুলে দেখে চারটা! একটা নোট গায়েব হয়ে গেছে। মানিব্যাগ বালিশের নিচেই ছিলো, বউ পাশের বালিশে ঘুমাচ্ছিলো। প্রথম দিন যখন এই ঘটনা ঘটে মনে করে নিজের মনের ভুল। হয়তো চারটা নোটই ছিলো। চড়া দ্রব্য মূল্যের বাজারে প্রায় সময় এমন ভুল হয়। কখন কী কিনে টাকা বেশী খরচ হয়ে যায় হিসাব থাকে না।
দিন দশেক পর আবারও একই ঘটনা ঘটে। এবার পাঁচশ টাকার নোট! রাতে তিনবার গুনে মানিব্যাগে রাখে পাঁচটা নোট, সকালে উঠে দেখে চারটা! এবার খানিকটা সন্দেহ জাগে নাসিরের মনে। ঘরে সদ্য বিবাহিতা একমাত্র স্ত্রী ছাড়া কেউ নেই। বাসায় একটা কাজের মেয়ে আসে, দিনে কাজ করে চলে যায়, রাতের বেলা বাসায় থাকে না। এতো ভালো বউ, সুন্দরী, সৎ... বউকে সন্দেহ করার আগে নিজের বি*ষ খেয়ে ম*রা উচিত বলে মনে হয় নাসিরের। সব চাইতে বড় ভয় প্রেমের বিয়ে। তার উপর বিয়ের বয়স ছয় মাস হয় নাই। সামান্য কয়টা টাকাই তো... হতেও তো পারে নিজেরই ভুল! এই নিয়ে কথা তুললে নিশ্চিত নাসিরের আদরের নতুন বউটা তাকে ছেড়ে চলে যাবে।
বউ মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি করে, এই কথা মনে আনতেও লজ্জা লাগে। বরং এটা ভাবলে বউয়ের সম্মান কিছুটা রক্ষা হয়, বউ টাকা মেরে দেয়। চুরি শব্দটা অসম্মানজনক কিন্তু মেরে দেওয়ার মধ্যে একটা অধিকার সংক্রান্ত ভাবগাম্ভীর্যের বিষয় আছে।

নাসির নিজে সতর্ক থেকে বিকল্প উপায় খুঁজতে চেষ্টা করে। তবে ঘটনা কিন্তু থেমে নেই, সপ্তাহে অন্তত এক দুই দিন টাকা গায়েব হওয়া চলমান আছে।

হঠাৎ একদিন অফিস থেকে বের হয়ে মতিঝিলের ফুটপাতে ভ্যান গাড়িতে এক জোড়া জুতার উপরে চোখ যায়। জুতার পিছন দিকে পকেট। মানে পিঠ পকেট ওয়ালা জুতা! টাকা পকেটে কিংবা মানিব্যাগে রাখার বিকল্প এর চাইতে উত্তম আর নিরাপদ আর কিছু হতে পারে না!
মনের আনন্দে জুতা কিনে ঘরে ফিরে। এরপর থেকে পকেট কিংবা মানিব্যাগে টাকা না রেখে প্রতিদিন বাসায় ফেরার আগেই জুতার পিঠ পকেটে টাকা রেখে ঘরে ঢুকে। যথারীতি জুতার তাকে জুতা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। মাস খানেক ধরে আর হিসাবে গন্ডগোল হয় না। বেশ ভালোই চলছিলো। অর্থ নাশের কষ্ট থেকে সস্থি ফিরে আসলো।

এমন সময় হঠাৎ করেই ঘটলো বড় ঘটনাটা। মাসের বেতন পেয়ে দরকারী খরচের টাকা ব্যাংকে জমা রেখে দশটা এক হাজার টাকার নোট জুতার পিঠ পকেটে রেখে ঘুমায়।
পরদিন সকালে অফিসে যাবে, জুতা পায়ে দিবে এমন সময় দেখে ইঁদুরে জুতার পকেট কেটে ফেলেছে। কিন্তু টাকা গুলো ইঁদুরে কাঁটাছেড়া জুতার পকেটে নাই!
সাথে সাথে বউকে ডাকে "নার্গিস, নার্গিস...!"
দুই ডাকে না আসায় আরো জোরে ডাকে "নার্গিস কই তুমি!" এবার একটু উত্তেজিত হয়ে ডাকে।
নার্গিস বাথরুম থেকে বের হয়ে আরেক ডিগ্রী বেশী উত্তেজিত হয়ে বলে 'কী হইছে? দিনের বেলা ডাকাত পড়ছে নাকি? এতো চিল্লাইতাছো ক্যান!"
'না মানে ঘরে ইদুরের উৎপাত বেড়ে গেছে তো, এই দেখো দেখো... আমার জুতা কেটে ফেলছে। ফেরার সময় ইঁদুর মারার কল কিনে আনতে হবে আরকি, এইজন্যই ডাকলাম।"
নমনীয় ভাষায় বউকে উত্তর দেয় নাসির।

আমার ছোটভাই রাতুল। ছোটবেলা থেকেই ওর একটা বদ অভ্যাস মন খারাপ বা রাগ করলে ও টয়লেটে গিয়ে বসে থাকে। যতক্ষণ না ওর মন খারাপ বা...
11/08/2025

আমার ছোটভাই রাতুল। ছোটবেলা থেকেই ওর একটা বদ অভ্যাস মন খারাপ বা রাগ করলে ও টয়লেটে গিয়ে বসে থাকে। যতক্ষণ না ওর মন খারাপ বা রাগের কারণ সলভ করা হয় ততক্ষণ বের হয় না।
প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় একবার পড়া না পারার কারণে স্কুলের ম্যাম ওর কান মলে দিয়েছিলো। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া, ড্রেস চেঞ্জ না করেই ও টয়লেটে গিয়ে বসে আছে। প্রথমে সবাই ভেবেছিলো হয়তো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তারাহুরো করে টয়লেটে গিয়েছে। ঘন্টাখানেক হওয়ার পরেও যখন বের হলোনা তখন সবাই বুঝে গেলো স্কুলে কিছু একটা হয়েছে। টয়লেটের দরজা অনেক ধাক্কাধাক্কি করার পরেও যখন খুললো না তখন স্কুলে ফোন দিয়ে ঘটনা শুনে সেই ম্যাম এসে সরি বলে তারপর ওরে টয়লেট থেকে বের করা হলো।
একবার ঈদে ও আবদার করলো এবার ছেলেদের পোশাক না কিনে মেয়েদের লেহেঙ্গা কিনবে। আমার বাবা রাগী মানুষ, এটা শুনেই তো উনি রেগেমেগে আগুন।
এমনিতেও আমরা দুই ভাই, চার বোন। মেয়েদের পোশাকের দাম বেশি হওয়ার চার বোনের ড্রেস কিনতেই বাবার পকেটের যায় যায় অবস্থা। তার উপর ওর জন্যেও মেয়েদের লেহেঙ্গা কেনার আবদার। বাবা বলে দিলো উনি কোনোভাবেই রাতুলকে লেহেঙ্গা কিনে দিবে না, এমনকি এই হুমকিও দিলো ঈদে ওর জন্য কিছুই কিনবে না।
রাতুল এই হুমকি শুনেই টয়লেটে ঢুকে পরলো। বাবা ছাড়া আমরা বাসার সবাই ওরে অনেক বোঝালাম। ছেলে হয়ে মেয়েদের ড্রেস পরলে তুইও মেয়ে হয়ে যাবি, মাইশা (ওর ক্লাসমেট) তোকে পাত্তা দিবে না, স্কুলের সবাই তোকে হিজরা বলে ডাকবে এসব অনেক কিছু বোঝানো হলো। কিন্তু সে ওর কথায় অনড়, লেহেঙ্গা না দেওয়া পর্যন্ত টয়লেট থেকে বের হবে না। শেষ পর্যন্ত রাতুলকে না বুঝিয়ে বাবাকে সবাই মিলে বুঝিয়ে ওর জন্য লেহেঙ্গা আনানো হলো।
ঈদের দিন ও লেহেঙ্গা পরেই আমাদের সাথে ঘুরতে বের হলো।বড়ো আপু মজা করে আবার ওর ঠোঁটে লিপিস্টিক ও দিয়ে দিলো। বাহিরে ঘুরতে ঘুরতে মাইশাদের সাথে আমাদের দেখা হলো। মাইশা রাতুলকে দেখে চিনতে না পেরে আমাকে এসে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া ওই আপুটা কে?
এই কথা আবার রাতুল শুনতে পেয়েছে। ও সঙ্গে সঙ্গে এসে মাইশাকে মাইর দেওয়া শুরু করলো ওরে আপু বলার কারণে। পরে অনেক কষ্টে ওদের ছাড়িয়ে আমরা বাসায় চলে আসলাম।ঈদের দিনের সব প্ল্যানই ভেস্তে গেলো।
বছর খানেক পরে, বড় আপুর বিয়ে হয়ে গেছে ততদিনে।একদিন কি যেনো একটা বিষয়ে রাগ করে রাতুল টয়লেটে গিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে বড় আপুর শ্বশুর আমাদের বাড়িতে আসলো। খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
কিছুক্ষণ পর বড় আপুর শ্বশুর আমাদের কিছু না বলেই উঠে টয়লেটের দিকে গেলো। একটু পরে উনি ফিরে আসলো, চোখমুখ লাল হয়ে আছে, মুখেও বিরক্তির ছাপ। আমাদের কিছু না বলে আবার বসে পরলো। কিছুক্ষণ পর আবার উঠে গিয়ে আগের মতোই চেহারা নিয়ে ফিরে আসলো। আমরা সবাই আড্ডায় মজে থাকায় ওনার এই ব্যাপারে কেউ গুরুত্ব দিলাম না।
কিছুক্ষণ পর আবার উনি টয়লেট থেকে ফিরে এসে রেগেমেগে আমাকে ডেকে বললো আর কোনোদিন তোমাদের বাড়িতে আসবো না। শুধু এটা বলেই উনি বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। পরে আপু ফোন দিয়ে জানালো উনি আমাদের বাসায় টয়লেট করতে না পেরে রাগে চলে গিয়েছিলেন। যেতে যেতে আর চেপে রাখতে না পেরে রাস্তার মাঝেই কাপড়চোপড় নষ্ট করে ফেলেছেন।
রাতুলের পড়ালেখা শেষ। মাইশা আর ওর এতদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। রাতুল বাসায় জানিয়ে দিলো ও মাইশাকে বিয়ে করতে চায়। আমরা সবাই রাজি হলেও বাবা কোনোভাবেই এই বিয়েতে রাজি না। ব্যবসায়িক কারণে বছরখানেক আগে মাইশার বাবার সাথে বাবার একটু ঝামেলা হয়েছিলো। সেটারই জের ধরে বাবা জানিয়ে দিলেন প্রয়োজনে ল্যাংড়া বউ নিয়ে আসবে তবুও মাইশার সাথে রাতুলের বিয়ে দিবে না।

রাতুল এই কথা শুনে রাগে, কষ্টে টয়লেটে ঢুকে পরলো। এদিকে বাবার সেদিন আগে থেকেই পেটে গন্ডগোল ছিলো। বাসার একমাত্র টয়লেটে রাতুল থাকায় বাবা আর টয়লেটে যেতে পারছিলো না। অনেক ছোটাছুটির পর অবশেষে সহ্য করতে না পেরে বলে দিলেন উনি বিয়েতে রাজি।
বিয়ের দিন আমরা বরযাত্রী নিয়ে মাইশাদের বাড়িতে আসলাম। মাইশার দাদু রাতুলের হাতে একটা স্মার্টফোন দিয়ে গাড়ি থেকে নামালো। রাতুল গাড়ি থেকে নেমেই আমার হাতে ফোনটা দিয়ে সোজা টয়লেটে চলে গেলো। এদিকে বরকে না পেয়ে বিয়ে বাড়িতে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। অনেকে বলাবলি করছিলো বর হয়তো বিয়ে করবে না বলে ভেগেছে।
কিছুক্ষণ পর মাইশা আমাকে ফোন দিয়ে জানালো ও নাকি কথার ছলে রাতুলকে বলে রেখেছিলো গাড়ি থেকে নামানোর সময় ওর হাতে আইফোন দিয়ে নামানো হবে। সেই কথাই হয়তো রাতুল সিরিয়াসলি নিয়েছে এবং আইফোন না পেয়ে টয়লেটে গিয়ে বসে আছে।
মাইশার সন্দেহই সত্যি, অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে সম্মানের কথা ভেবে কাউকে কিছু না জানিয়ে আমিই নিজে গিয়ে একটা আইফোন কিনে এনে ওরে দিলাম। রাতুলকেও জানালাম না ফোনটা আমি দিয়েছি। সে ফোন হাতে পেয়েই কবুল বলে বিয়ে করে ফেললো।
বিয়ের মাসখানেক পরের কথা, গভীর রাতে জোরে জোরে চিল্লানোর শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। বাহিরে এসে দেখি রাতুল আর মাইশা টয়লেটের সামনে ঝগড়া করছে। আমাকে আসতে দেখে দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম এতরাতে ওরা টয়লেটের সামনে ঝগড়া করছে কেনো?
রাতুল বললো,“এতদিন রাতুলের এই অভ্যাস দেখে মাইশাও শিখে গেছে, সেও এখন রাগ হলে টয়লেটে গিয়ে বসে থাকে।রাতে কি একটা বিষয়ে ঝগড়া হয়েছে, এখন দুজনের কে আগে টয়লেটে গিয়ে বসে থাকবে সেটা নিয়ে ঝগড়া করছে। আমি কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসলাম। পরেরদিন সকালে মিস্ত্রিকে ডেকে বললাম বাড়িতে আরও দুইটা টয়লেট বানিয়ে দেওয়ার জন্য। দুইটা ওদের দুজনের জন্য আর একটা আমাদের সবার জন্য।
Md Khairul Hasan

প্রায় আধঘন্টা হলো ভদ্রলোক হেডফোনের তারের প্যাঁচ খোলার চেষ্টা করছেন, আমি আগ্রহ নিয়ে দেখছি। তার জন্য বরাদ্দকৃত সময় ছিলো...
11/08/2025

প্রায় আধঘন্টা হলো ভদ্রলোক হেডফোনের তারের প্যাঁচ খোলার চেষ্টা করছেন, আমি আগ্রহ নিয়ে দেখছি। তার জন্য বরাদ্দকৃত সময় ছিলো দশ মিনিট, সেখানে সে বিশ মিনিট বেশি নিয়ে ফেলেছে। আমি অবশ্য এরপরও কিছু না বলে চুপচাপ আরও কিছু সময় পার করলাম।

: এই জীবনে তারের প্যাচ খুলতে পারবেন বলে তো মনে হচ্ছে না।

: খুলতেছি আর একটু বসো।

: আচ্ছা আর পাঁচ মিনিট। এর মধ্যে হলে হলো আর না হলে নাই, আমি আর থাকতে পারবো না, আমার কাজ আছে।

ভদ্রলোক আমাকে হেডফোনটা ফেরত দিতে আসছেন। ‌শুধু যে হেডফোন দিতে আসছেন তাই না, এর সাথে আরও আছে একটা ওয়ালেট, একটা চাবির রিং, একটা কলম আর একটা টুথপেস্টে।

টুথপেস্টের টিউবটা এমন চ্যাপ্টা হয়ে আছে যে এর মধ্যে কোন টুথপেস্ট অবশিষ্ট আছে বলে মনে হচ্ছে না। ‌কলমের কালিও হয়তো শেষ। ওয়ালেট আর চাবির রিং থেকে রঙের চলটা উঠে উঠে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে জিনিসগুলো সব ব্যবহার করা হয়েছে তবু এসব উনি আমাকে ফেরত দেবেন, কারণ এগুলো আমি ওনাকে গিফট করেছিলাম।

: আর দুই তিন মিনিট বস, এর মধ্যেই আমি প্যাচ খুলে ফেলবো।

: প্যাচ খোলার দরকারটা কি?
: প্যাচ না খুললে তো তুমি ফেরত নিবা না বললা।

: হ্যাঁ তা তো নেবোই না। আমি তো আপনাকে প্যাচ লাগানো অবস্থায় গিফট করিনি যে প্যাচ লাগানো অবস্থায় ফেরত নেবো। কিন্তু কথা হলো, আপনার ফেরত দেয়ার দরকারই বা কি?

: তুমি না বললা তোমার সাথে আমার ব্রেকআপ, আর কখনো কথা হবে না!

: হ্যাঁ হবে না, তাই বলে সব গিফট ফেরত দিয়ে দিতে হবে?
এসব কি ছেলেমানুষি!

: ছেলেমানুষি হোক আর যাই হোক, আমি তোমাকে এসব ফেরত দিবোই।

: শোনেন, আপনি আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়, ম্যাচিউরড, এইসব আপনাকে মোটেই মানাচ্ছে না। আপনি তো আর আমার মত স্টুডেন্ট না! আমি করলে তবু মানাতো।

: না মানাইলে নাই, তুমি চুপচাপ বসো আমি প্যাচ খুলতেছি।

আমি বিরক্ত হয়ে হেডফোনের প্যাঁচ খোলা দেখছি। বুঝাই যাচ্ছে সে জিনিসপত্র ফেরত না দিয়ে এখান থেকে উঠবে না।

অবশ্য সে প্যাচ খুলে ফেললে আমি রীতিমতো বিপদে পড়ে যাবো। কারণ নিয়ম অনুযায়ী সে যদি আমাকে গিফট গুলো ফেরত দিয়ে দেয়, তাইলে আমাকেও তো তার দেওয়া গিফট গুলো ফেরত দেয়ার কথা। আর এখানেই বিরাট ভেজাল।

সে প্রথম গিফট করেছিলো একটা শাড়ি। সেই শাড়ি কেটে অলরেডি আমি সালোয়ার কামিজ বানিয়ে ফেলেছি। এখন এই সালোয়ার কামিজ ফেরত দেই কেমনে!

শাড়িটা পড়ে যেদিন দেখা করতে গেলাম দেখি লোকটা ফুলবাবু সেজে বসে আছে। মাথায় তেল দিয়ে, সিঁথি কেটে, ফুল হাতা শার্ট পড়ে কেউ হবু গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসে, কোনদিন দেখিনি, শুনিও নি।

: তুমি আজকে প্রথম শাড়ি পড়লা?

: জী, বড় হবার পর প্রথম।

: সেজন্য আজকে আমি পাঁচ হাজার টাকা দামের শার্ট পড়েছি।

: এই শার্টের দাম 5000!

: হ্যা।

: আমার শাড়ির সাথে আপনার দামি শার্ট পড়ার কি সম্পর্ক!

: পড়লাম আর কি। তুমি প্রথম শাড়ি পরে আসবা, তাই।

: আমি যে জীবনে প্রথম শাড়ি পড়েছি এটা আপনাকে কে বললো? সামিউল?

: হ্যা।

সামিউল আমার চাচাতো ভাই। আমার চেয়ে মাত্র বছর খানেকের বড়, এজন্য বড় ভাই হিসেবে তেমন পাত্তা পায় না, একদম তুই তুকারি সম্পর্ক। মাত্র গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটা কোম্পানিতে জব নিয়েছে সামিউল। আর সেখানেই তার সিনিয়র অফিসার এই ভদ্রলোক।

ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয় পর্ব টা কিন্তু বেশ অদ্ভুত। সেদিন আমি গিয়েছিলাম বসুন্ধরা সিটিতে, বাবাকে জন্মদিনে সারপ্রাইজ গিফট দেবার জন্য একটা মোবাইল কিনতে। তো মোবাইল দেখলাম, পছন্দও করলাম। কিন্তু টাকা দিতে গিয়ে হলো যত বিপত্তি, আমার এটিএম কার্ড নাকি ব্যবহার করা যাচ্ছে না! এদিকে নতুন মোবাইলের বক্সও কেটে ফেলা হয়েছে, দোকানদার ফেরত নিবে না, টাকা দিতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই সামিউলকে ফোনটা করলাম।

: সামিউল, ভাই আমার, খুব বিপদে পড়েছি, আমাকে বাঁচা।

: বিপদ ছাড়া তো আর আমাকে তুই ফোন দিবি না, সেটা জানি। কি হয়েছে বল।

ঘটনা খুলে বললাম। আমার প্রায় বিশ হাজার টাকা দরকার, মোবাইলের বিল মেটাতে হবে।

: তোর মাথা খারাপ! আমার একাউন্টে ২০ টাকাও নাই, আর আমি তোরে দিবো ২০ হাজার!

: ভাই, আমি তোর পায়ে পড়ি, ম্যানেজ করে দে, আমার কার্ডটা ঠিক হলেই তোকে টাকাটা পাঠিয়ে দেবো, প্লিজ।

: পারবো না।

: ভাই, তুই না বাঁচালে আর কে বাঁচাবে আমাকে বল, টাকা ছাড়া দোকানদার আমাকে এক পাও নড়তে দিবে না।

: আচ্ছা দেখি।

এই বলে সামিউল ফোন কেটে দিলো। ‌অবশ্য এর প্রায় মিনিট বিশেক পর জানালো টাকা ম্যানেজ করা গেছে। কিন্তু টাকা দিতে সে নিজে আসতে পারবে না, তার খুব জরুরী মিটিং আছে। তার সিনিয়র ইসলাম সাহেব টাকাটা দিয়ে যাবেন। ইসলাম সাহেবের সাথে তার সম্পর্ক নাকি খুব ভালো।

: এই যে, তোমার নাম শান্ত?
: জি।

: শান্ত আবার কেমন নাম! ছেলে ছেলে।
: জি পুরো নাম শারমিন শান্ত।

: আচ্ছা, আমি মহিদুল ইসলাম, সামিউল আমার কলিগ।
: ও আচ্ছা।

: এই নাও টাকা, পরে সামিউলের কাছে দিও, তাইলেই হবে।
: আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো..

: ধন্যবাদ দিতে হবে না, কাজ শেষ কর।

আমি টাকা দিয়ে মোবাইল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। ভদ্রলোক তখনো দাঁড়িয়ে।

: চলো, তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।
: না লাগবে না, আমি একাই যেতে পারবো।

: আরে চলো, আমার সাথে গাড়ি আছে, সমস্যা হবে না।

ভদ্রলোকের সাথে গাড়িতে চড়লাম। বেশ চমৎকার একটা গাড়ি, দামি যে সেটাও বুঝা যায়। অথচ শুরুতে ভদ্রলোককে দেখে মোটেও এরকম দামী গাড়ির মালিক মনে হয়নি।‌ কেমন সাদামাটা একটা শার্ট, তার চেয়ে সাদামাটা একটা প্যান্ট আর স্যান্ডেল তার পড়নে। যেটা কিনা গাড়িটার সাথে একদমই বেমানান।

: কি দেখতেছো আমার দিকে?
: ইয়ে মানে, আপনার শার্ট, সুন্দর আছে।

: তোমার পছন্দ হয়েছে?
: জি।

: নিবা?
: আপনার শার্ট নিয়ে আমি কি করবো?

: পড়বা মাঝে মাঝে বাসায়, এইটা সুতি শার্ট, বাসায় পড়ে থাকতে বেশ আরাম লাগবে।

: দূর কি যে বলেন!

: দূর-টুর কিছু না, দাঁড়াও দিচ্ছি।

ভদ্রলোক ঘ্যাচাং করে মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে ফেললেন। ফার্মগেটের ওখানে রাস্তার ওপরের দোকান থেকে একটা টি শার্ট কিনে খুব দ্রুত শার্ট চেঞ্জও করে ফেললেন।

: এই নাও শার্ট।

আমি চোখ বড় বড় করে সেই অদ্ভুত লোকের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, এ লোকের মাথায় কি সমস্যা! শার্ট সুন্দর বললাম বলে খুলে দিয়ে দিলো। এখন যদি গাড়ি সুন্দর বলি তাইলে কি সেটাও দিয়ে দিবে! কি আশ্চর্য! আর এখন যদি সে জানে সেই শার্ট দিয়ে আমার আম্মা থালাবাসন মুছে, তাইলে যে কি করবে, আল্লাহ মালুম।

এই ঘটনার পর থেকে মাঝে মাঝেই সে মোবাইলে মেসেজ পাঠাতো। ছবি পাঠাতো। অল্প কিছু সময়ের জন্য দুই একবার কলও দিয়েছিলো। আর আমিও ভদ্রতার খাতিরে সেগুলো রিসিভ করেছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন দেখলাম আমার ভার্সিটির সামনে উনার গাড়ি।

: তোমার কি এখনো ক্লাস আছে?
: জী আছে তবে সেটা লাঞ্চের ব্রেকের পর।

: তো তুমিও লাঞ্চ করো, চলো।

একটু অস্বস্তি লাগলেও ওনাকে নিয়ে ভার্সিটির পাশের ক্যাফেটেরিয়ায় লাঞ্চ করতে গেলাম।‌ সেখানে ভদ্রলোক একগাদা খাবারের অর্ডার করলেন।

: নাও খাও।

: প্লিজ আমাকে দিবেন না, আমার যতটুকু লাগে আমি ততটুকু নিয়েছি।

: আরে কি বল, আরেকটু নাও।
: না প্লিজ, দিবেন না।

আমি না না করা সত্বেও লোকটা একগাদা খাবার আমার প্লেটের মধ্যে উঠিয়ে দিলো। আমাকে খেতেই হবে, আমার অসম্ভব বিরক্ত লাগলো, আমি কি ছোট বাচ্চা যে জোর করে উঠিয়ে দিতে হবে! পেটে ক্ষুধা যতক্ষণ আছে ততক্ষণ তো খাবোই।

খাওয়া শেষে ভদ্রলোক বিল মেটালেন। যদিও আমি শেয়ার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনি সেটাও করতে দিলেন না।

: আপনি এখানে কেন এসেছিলেন শুনি?
: এমনিতেই।

: ও, তাইলে এখন কি চলে যাবেন?
: হ্যা।

ভদ্রলোক উঠলেন। গাড়িতে ওঠার আগে আগে কি মনে করে আমার হাতের মধ্যে ১০০০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিলেন।‌ ঘটনাটা এতই দ্রুত ঘটলো যে আমি আটকানোর কোন সুযোগই পেলাম না।

: টাকা কিসের জন্য?
: তুমি ফুচকা কিনে খেও।

: আমার ফুচকার টাকা কি আপনাকে দিতে হবে নাকি! কি আশ্চর্য! নেন, আপনার টাকা আপনার কাছে রাখেন।

আমার কথা শেষ হবার আগেই উনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলাম। পরে অবশ্য সামিউলকে এসব বলাতে সে একগাল হেসেছিলো।

: আরে স্যার টাকা-পয়সার নষ্ট করার মনে হয় জায়গা পাচ্ছে না, এজন্য। তুই নে, নিয়ে খেয়ে ফেল, সাথে অর্ধেক ভাগ আমাকে দিস।

: চুপ থাক।

ভদ্রলোকের এরকম অদ্ভুত ব্যবহার দেখে আমি সত্যি সত্যিই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। উনি এরকম অস্বাভাবিক ব্যবহার করছেন কেন! সেটা কি আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য নাকি উনি আসলেই এরকম, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

এর মধ্যে কথা বলতে বলতে ওনার সাথে সম্পর্কটা একটু অন্যরকম হয়ে দাঁড়াল। কখনো কখনো মনে হয় যেন খুব রোমান্টিক আবার কখনো কখনো খুব ফরমাল। তবে কথা বলতে যে আমরা দুজনই পছন্দ করছি তা আমরা দুজনেই বেশ বুঝতে পারতাম।

: হ্যালো...

: হু, কে ফোন ধরেছে?
: আমি!

: তুমি কি আমার ঘুঘু পাখিটা?
: হু।

: তুমি কি আমার বুলবুলিটা?
: হু।

: তুমি কি আমার চড়ুই?
: হু।

: এখন আমার চড়ুইটা কি করবে?
: চড়ুইটা এখন আদর খাবে, আদর দেন..

: উমম...

এইরকম করে দুষ্টু মিষ্টি দিনকাল গুলো ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু এর মধ্যেই একদিন ঝামেলা লেগে গেলো।

: ফোনটা কে ধরেছে?
: আমি!

: তুমি কি আমার হরিণ ছানাটা?
: হু।

: তুমি কি আমার খরগোশের বাচ্চাটা?
: হু।

: তুমি কি আমার বিড়ালের বাচ্চাটা?
: হু।

: তুমি কি আমার কুকুরের বাচ্চাটা?
: এই কি বললি??

এই লেগে গেলো!

লোকটার সমস্যা ছিলো, সে কথা বলতে বলতে কোথায় গিয়ে থামতে হয়, কোনটুকু বলতে হয়, সেটুকু সে বুঝতে পারতো না। ‌আর আমিও রাগী, উল্টাপাল্টা কিছু শুনলে দুমদাম রিয়েক্ট করে বসতাম। কোন ছাড়াছাড়ি নাই।

এই করে করে আমরা প্রায় ৫-৬ বার দেখা করে ফেললাম। প্রতিবারই উনি হাতের মধ্যে ফুচকা খাবার টাকা গুঁজে দিতেন আর আমিও ওনাকে খুব ছোট ছোট কিছু গিফট করতাম। তবে কোন বারই ঝগড়া ছাড়া আমাদের সাক্ষাৎ পর্ব শেষ হতো না।

তো সেবার উনি ওনার দুজন বন্ধুসহ দেখা করতে এলেন। ‌তারপর পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আমরা গেলাম মুস্তাকিমের চাপ খেতে। ‌আর এই চাপ খেতে গিয়েই লাগলো আবার ভেজাল।

: মামা, সবাইকে বিশটা করে পুরি দেন।

: শোনেন, এত পুরি কিন্তু আমরা খেতে পারবো না, কম করে নেন।

: আরে কি বল, এগুলোর সাইজ ছোট, পারবা, মামা ২০ টা করেই দেন।

একটু পর দেখা গেলো আটটা, দশটার বেশি কেউই খেতে পারছে না। ‌তখন উনি দোকানদার মামাকে সেই পুরি গুলো ফেরত নেয়ার জন্য বললেন।

: এই পুরি ফেরত নিলে তো আমার লস হইয়া যাইবো।

: আরে কিছু হবে না মামা, নেন নেন।

দোকানদার নিবে না কিন্তু উনি জোর করে দিবেনই। ‌শেষমেষ উনার জেদের কাছে দোকানদার বেচারা হার মানলো। রাগ করে ফেরত নিলো পুরি। আর আমার হলো মেজাজটা খারাপ, আমি তো শুরুতেই বলছিলাম এতগুলো লাগবে না। ‌আমার কথা শুনলে কি হতো!

বাসায় নামার পথে উনাকে থামালাম।

: শুনেন, আপনার সাথে আমার ভালো লাগতেছে না, আমি আর আপনার সাথে কথা বলবো না। গেলাম, টাটা।

: কেন! টাটা কেন আর ভালো না লাগারই বা কি হলো??
: এমনি।

: না বলো, কি ভালো লাগছে না বলো শুনি?

: বলবো? রাগ করবেন না তো?
: না করবো না, বল।

: আপনার ব্যবহার ভালো লাগছে না! আপনি পাঁচ হাজার টাকার শার্ট পড়েন, ৩০ লাখ টাকার গাড়ি চালান আর ৩০ টাকার পুরির জন্য এরকম খ্যাচ খ্যাচ করেন, আপনার সাথে যায় না।

: গাড়ির দাম ৩৭ লাখ।

: এনিওয়ে, সাইত্রিশ, আমি গরিব, গাড়ি চিনি না।

: শোন, এই দোকানে আমরা বহুবার ঠান্ডা পুরি খাইছি, তো আজকে ও ফেরত নিবে না কেন?

: এটা কোন লজিক হলো! ‌আপনি ইচ্ছে করলেই কম অর্ডার করতে পারতেন। দরকার হলে পরে আরো নিতাম। সেটা না করে খামাখা তর্ক করলেন। এসব আমার ভালো লাগে না। আর গাড়িতে বসে আপনি অন্য মেয়েদের নিয়ে বন্ধুদের সাথে জোকস করছিলেন, সেটাও আমার ভালো লাগেনি।

: আমি কোথায় করলাম! জোকস তো করলো আমার বন্ধুরা।

: সায় তো আপনিও দিচ্ছিলেন।

: ও আচ্ছা আর তুমি যে পেছনের তিন সিটের মধ্যে আমার বন্ধুর সাথে বসে ছিলে? সেটার কি?

: তিন সিটে বসে ছিলাম মানে! আপনার বন্ধু এক পাশে ছিলো, আমি এক পাশে ছিলাম, মাঝখানে তো ফাঁকাই ছিলো!

: খবরদার এসব বলবা না, তুমি তো ইচ্ছা করলেই সামনে বসতে পারতা আমার অন্য বন্ধুকে সরিয়ে, তা না করে পেছনের তিন সিটের মধ্যে আমার ঐ সুন্দর বন্ধুর সাথে কেন বসলা, বল?? আমার বন্ধু দেখতে বেশি স্মার্ট, হ্যান্ডসাম এই জন্য তাই না? যাও, এখন থেকে আমার বন্ধুকেই বলবো তোমার সাথে ঘুরতে। আমি গেলাম।

আমি হতবাক! আমি কোথায় তার ওপর রাগ দেখাবো, উল্টো সে গাড়িতে তিন সিটে বসা নিয়ে আমার ওপর রাগ দেখিয়ে চলে গেলো! মনে মনে আমিও বললাম, দূর বা**ল, যা, ব্রেকআপ।

অবশ্য ব্রেকআপ হওয়ার তিনদিন পর থেকে উনি আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেন।

: কি হলো, আবার আমাকে ফোন করছেন যে? সেদিন না আমাকে রেখে চলে গেলেন?

: তোমার দেয়া গিফট গুলো ফেরত দিতে চাই। এজন্য, দেখা কর।

উনার জোরাজুরিতে দেখা করতে এলাম। এসে দেখি আমার গিফটের তো একদম যাচ্ছেতাই অবস্থা।

: আচ্ছা আপনি তারের প্যাচ খুলতে থাকুন, আমি একটু ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি।

ওয়াশরমের সামনের বেসিনে গিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম। ভদ্রলোক আসলে আমাকে ভালোই পছন্দ করেন। গিফট ফেরত দেওয়া তো একটা বাহানা মাত্র। আসলে তো উনি এসেছেন আমার সাথে দেখা করতে। ইশ কতই না ভালোবাসে আমাকে!

সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলবো কি ফেলবো না এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতে হুট করে দেখি ওয়াশরুমের দরজায় উনি।

: এই, তুমি এই পাশের ওয়াশরুমটাতে কেন এলে?
কাছের টাতে না এসে এই দূরেরটাতে কেন এলে?

: কারণ দূরের টাতে মানুষ কম যায় বলে পরিষ্কার থাকে, সেজন্য।

: না, তুমি আসলে আসছো এই ওয়াশরুমটা থেকে ওই পাশে ছেলেদের ওয়াশরুমটা দেখা যায়, সেই কারণে তাই না?

এই বলে লোকটা কেমন রাগ হয়ে কটমট করে আমার দিকে তাকালো। আমার এতক্ষণের যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব মনে ছিলো তা এক মুহূর্তেই উবে গেলো যেন। আমি কোন ছেলেকে একটু চেয়ে দেখি সেটাও সে চায় না!
আহা, একটা লোক কিভাবে এতো ভালোবাসতে পারে!

Ⓒ Sharmin Shanto

Address

Tejgaon Farm

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মনিশা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মনিশা:

Share