01/10/2024
শীতের রাতের হিমশীতল বাতাসে ঘুম আসছে না—জান্নাতও ঠিক তেমন এক রাতে শুয়ে ছিল। রুমের আলো বন্ধ, কেবল মোবাইলের আলোর ঝলকানিতে তার মুখের অবয়ব একটু একটু ফুটে উঠছিল।
কিছুদিন হলো জান্নাতের একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, যেন কেউ তাকে ফলো করছে। রাতের অন্ধকারে বাথরুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই মনে হয়, ঠিক পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সে অবশ্য এসব কথাকে এক সময় অবজ্ঞা করেছে, ভেবেছে হয়তো এটা তার নিজের মনের ভুল।
এক রাতে হঠাৎ করেই মোবাইলের আলো নিভে গেল। ঠিক সেই মুহূর্তেই জান্নাত বুঝতে পারলো, তার ঘরের বাথরুম থেকে কোনো একটা আওয়াজ আসছে। এমনকি বাথরুমের দরজা ফাঁকা হওয়ায় ভেতরে ঝাপসা একটা অবয়ব দেখা গেল। জান্নাত সাহস করে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল, কিন্তু যখন তার চোখ ধীরে ধীরে বাথরুমের দিকে গেল, তখন দেখলো—একটি কালো ছায়া তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছায়ার চোখ দুটি যেন আগুনের মতো লাল, আর মুখের অবয়বটাও ভীষণ ভয়ানক।
জান্নাত চিৎকার করতে গিয়েও পারলো না, যেন তার কণ্ঠস্বর আটকে গেল। কয়েক মুহূর্ত পর ছায়াটি মিলিয়ে গেল, কিন্তু জান্নাতের ভয় তখনো কাঁপতে কাঁপতে রুমে ফিরে এলো। প্রতিদিন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে লাগলো। বাথরুমের দরজা খোলামাত্র জান্নাত ওই ছায়াটিকে দেখতে পেতো। একদিন সাহস করে এক কবিরাজের কাছে গেল, তখনই জানতে পারলো যে, ওটা কোনো সাধারণ জ্বীন নয়—ওটা এক বাথরুমের খবিশ জ্বীন। সেই জ্বীন মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে ভয় ঢুকিয়ে দিতে ভালোবাসে।
এক রাতে, জান্নাতের সাহসের শেষ সীমা ভেঙে পড়লো। বাথরুম থেকে বের হতেই তার পেছনে হঠাৎ করেই এক ভয়ংকর শব্দ শুনলো। ফিরে তাকাতেই দেখলো, সেই জ্বীন তার সামনে! জান্নাতের মুখের দিকে এগিয়ে আসছে, আর তখনই তার সামনে ভয়ানক দৃশ্যটা ফুটে উঠলো। জান্নাতের চিৎকারে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলো, কিন্তু তার চিৎকারে কেউ সাড়া দিল না। সকালে জান্নাতের নিথর দেহ বাথরুমে পাওয়া গেল। মুখটি বিকৃত হয়ে পড়েছিল, চোখের মণি উঠে গিয়েছিল মাথার ভেতরে, হাত-পা গেঁথে গিয়েছিল দেয়ালের সাথে।
জান্নাতের মৃত্যুর পরও পরিবারের অন্য সদস্যরা বাথরুমের দরজা খোলার সময় অদ্ভুত এক ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা অনুভব করতে শুরু করলো। তারা শুনতে পায় জান্নাতের ফিসফিস আওয়াজ, যেন বলছে—“বাঁচাও আমাকে, ও আমার পিছু ছাড়ছে না!”
এখন প্রশ্ন হলো, জান্নাত কি আসলেই বাঁচতে পারতো? নাকি তারই কোনো ভুলের কারণে সে ওই জ্বীনের নজরে পড়েছিল? তোমার বাড়ির বাথরুমে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কি না, সেটা কিন্তু তুমি কখনোই জানো না...