18/09/2024
ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন- বাস্তবায়ন কোন পথে
***********************************
আমরা যারা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছি আমরা কি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। অথবা এমন একটি কাফেলা তৈরি করতে পেরেছি যারা ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করতে পেরেছে। ব্যক্তি নির্মাণ ছাড়া রাষ্ট্রে ইসলাম কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
মক্কী জীবনে প্রিয় নবীর ব্যক্তি তৈরীর কর্মসূচি
**************************************
আমরা দেখতে পাই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কী জীবনে প্রথম কর্মসূচি ছিল ব্যক্তি তৈরি করা। তৌহিদের দাওয়াতের মাধ্যমে এমন কিছু মানুষ তিনি তৈরি করেছিলেন যারা ছিলেন আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রাণ। তারা প্রকৃত অর্থেই নিজেদেরকে আল্লাহর বান্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
প্রিয় নবীর আহবান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আসা বিধি-বিধানের সামনে তারা ছিলেন সমর্পিত। প্রিয় নবীর আদেশ তাদের কাছে নিজ পরিবার মাতৃভূমি অর্থ সম্পদ আপনজন সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল। হিজরত তাদের জন্য সহজ ছিল প্রিয় নবীর বিপরীত পথে চলাই তাদের জন্য কঠিন ছিল।
ঈমান ইসলাম রক্ষায় তারা হিজরতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আসা হুকুমগুলো বিনা দ্বিধার মানতে তারা প্রস্তুত ছিলেন। ইসলামের কোন বিধান নিয়ে তাদের মাঝে কোন সংশয় কোন প্রশ্ন ছিল না। তারা ছিলেন অতুলনীয় অসাধারণ কিছু মানুষ। এমন মানুষ পৃথিবী ইতিপূর্বে দেখেনি। অন্য কোন নবীও ঠিক এ ধরনের উম্মত পায়নি। নবীদের পর তারা ছিলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সবচাইতে প্রিয়, শ্রেষ্ঠ উম্মত।
প্রিয় নবী এই মানুষগুলোকে গড়ে তুলেছিলেন কুরআনে কারীমের শিক্ষায়। কুরআন এ মানুষগুলোর মাঝে এমন ঈমানের বীজ বপন করেছিল ঈমানের দাবি পূরণে পূর্ণ পৃথিবীর মোকাবেলা তাদের জন্য সহজ ছিল। আর ঈমানের বিপরীত পথে চলা তাদের জন্য কঠিন ছিল।
সমাজ রাষ্ট্র নির্মাণে নামার আগেই প্রিয় নবীজী এই ব্যক্তি নির্মাণের কাজটি করেছিলেন। আমরা আজ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে চাচ্ছি অথচ সমাজ রাষ্ট্র গঠনের পূর্বে ব্যক্তি পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ আমাদের কাছে গুরুত্বহীন। এমনকি আমাদের নিজেদের জীবনেই আমরা ইসলামকে ধারণ করতে প্রস্তুত নই।
আমাদের কাছে আছে ইসলামী কিতাব ভান্ডার। সাজানো গুছানো বক্তব্য। আমাদের আছে তিনি তালিম এর প্রতিষ্ঠান। বিলাসী এলেম চর্চা। আমাদের আছে আত্মশুদ্ধির খানকা।আমাদের আছে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগঠন। কিন্তু আমাদের জীবনে আমাদের পরিবারে আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের সংগঠনে আজকে সেই আদর্শ অনুপস্থিত যার সৌন্দর্যে এবং আকর্ষণে মানুষ ইসলামের দিকে ছুটে আসবে। আমাদের কিতাব লিখনি বক্তব্যের সাথে আমাদের নিজেদের জীবনের মিল নেই। বিষয়গুলো ভাবা প্রয়োজন।
প্রিয় নবীর প্রধান হাতিয়ার- কুরআন
*********************************
আমরা সমাজ রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাই কিন্তু আমাদের ব্যক্তি জীবনে কুরআনের অনুশীলন চর্চা নেই। কুরআন থেকে আমরা দূরে। অথচ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ছিল করআনময়। তিনি ছিলেন কুরআনে কারীমের বাস্তব প্রতিচ্ছবি জীবন্ত কুরআন। প্রিয় নবীর জীবন আলোচনা করতে যেয়ে চমৎকার বলেছিলেন হযরত আয়েশা "তার জীবন হল কুরআন"। তার জীবনকে জানতে চাইলে কুরআন দেখো। কুরআনের মাঝে প্রিয় নবীর জীবন তোমরা পেয়ে যাবে।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদেরও গড়েছিলেন কুরআনময় করে। কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে তাদের জীবনে বিপ্লব এসেছিল। অতিত জাহিলি জীবনকে তারা ছুড়ে মেরে ছিলেন।
প্রিয় নবীর দাওয়াত আহ্বান সম্পর্কে চমৎকার বলেছিলেন হযরত জাফর বিন আবু তালেব বাদশা নাজ্জাশীর সামনে-
হে মহান বাদশা পূর্বে আমরা ছিলাম চরম মূর্খ। মূর্তি পূজা করতাম। মৃত জানোয়ার আহার করতাম। অশীলতা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ও চরিত্রহীনতায় নিমগ্ন ছিলাম। দুর্বলদের উপর সবলদের অত্যাচার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। জাতির এমন চরম দুর্দিনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য একজন শান্তির দূত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করলেন।
তিনি আমাদেরকে মূর্তিপূজা ছেড়ে দিতে, সত্য কথা বলতে, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং প্রতিবেশীদের সাথে সদ্য ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও যাবতীয় হারাম কাজ খুন-খারাবি, মিথ্যাচার, এতিমের মাল আত্মসাৎ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তার এ সমস্ত কথা শুনেই আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি।
প্রিয় নবীর শিক্ষায় কুরআনের ছোঁয়ায় সাহাবায়ে কেরামদের জীবনের পরিবর্তনের গল্প এ বক্তব্য থেকে আমাদের সামনে চলে আসে।
আমাদের অনুধাবন করা প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন একটি গণবিপ্লব। আর গণ বিপ্লব তখন সম্ভব যখন জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিপ্লবিক পরিবর্তন আসে। আদর্শিক বিপ্লব স্থায়ী হয়। আর যে বিপ্লব কোন শিক্ষা বা আদর্শকে কেন্দ্র করে হয় না সেই বিপ্লব স্থায়ী হয় না। শুধুমাত্র যুদ্ধ আর অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে হওয়া বিপ্লব স্থায়ী হয় না। এটা এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা।
আমরা যদি দীর্ঘস্থায়ী টেকসই সফলতা অর্জন করতে চাই কুরআনকে বাদ দিয়ে কখনোই সম্ভব নয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে যে সফল সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল তা হয়েছিল কুরআনে কারীমের জ্ঞানের মাধ্যমেই। প্রিয় নবীর রেখে যাওয়া সে সমাজ ব্যবস্থা একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পূর্ণ পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
কুরআন সেই কিতাব যা প্রিয় নবীর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের কাফেলাকে আল্লাহদ্রোহী পৃথিবীর মোকাবেলায় দাঁড় করিয়েছিল। এই কুরআন জাহিলিয়াতের সমস্ত সংস্কৃতিকে খানখান করে একটি সোনালী সমাজ গড়ে তুলেছিল। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সুরক্ষায় নেতৃত্বদানকারী কিতাব এই কুরআন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া খেলাফাহ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইটি মূলত রাজনৈতিক মাঠে এবং রনাঙ্গনে হয় না। ইসলাম তরবারী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার মূল উৎস হলো ওহীর জ্ঞান কুরআন। ওহির জ্ঞানের মাধ্যমেই সমাজের মানুষের চিন্তা চেতনা এবং চরিত্রকে বিশুদ্ধ করার প্রধান কাজটি হয়ে থাকে। আমাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার হল কুরআন।
আমাদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখে কুরআনে কারীমের শিক্ষাকে ব্যাপক করতে হবে এবং পৃথিবীর সামনে কুরআনে কারীমের জ্ঞান এবং বিজ্ঞান দ্বারা বুদ্ধি ভিত্তিক লড়াই করে বিজয় অর্জন করতে হবে।
কুরআনই নতুন পৃথিবী গড়ার হাতিয়ার
********************************
মহাজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনের মাধ্যমে বুদ্ধিভিত্তিক লড়াইকে বড় লড়াই বলেছেন। রণাঙ্গনে অস্ত্রের জিহাদের উপর বুদ্ধিবৃত্তিক এই জেহাদকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
এই লড়াইয়ের নির্দেশ এসেছে পবিত্র কুর’আনে সুরা ফুরকানের ৫২ নম্বর আয়াতে। হুকুম দেয়া হয়েছে:
فَلَا تُطِعِ ٱلْكَـٰفِرِينَ وَجَـٰهِدْهُم بِهِۦ جِهَادًۭا كَبِيرًۭا
অর্থ: “অতঃপর তোমরা কাফিরদের (ধর্ম, মতবাদ, জীবন দর্শন, বিধান ও শিক্ষা-সংস্কৃতির) অনুসরণ করো না, তাদের বিরুদ্ধে বড় জিহাদটি করো কুর’আন দিয়ে।”
ইসলামের বিধান হলো, মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে যখন কোন হুকুম আসে -সে হুকুম পালন করা প্রত্যেকের উপর ফরজ হয়ে যায়। সে হুকুমটি নবীজী (সা:)’র উপর এলেও সেটির পালন করা ফরজ হয় প্রতিটি মুসলিমের উপর। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতসহ ইসলামের সকল বিধান এভাবেই ফরজ হয়েছে।
উপরিউক্ত আয়াতে যে জিহাদকে “জিহাদে কাবিরা” বড় জেহাদ বলা হয়েছে সেটি অস্ত্রের জিহাদ নয়। অস্ত্রের জিহাদ তো অস্ত্র দিয়ে লড়তে হয়। কিন্তু এখানে নির্দেশ এসেছে কুর’আন দিয়ে জিহাদ করো। এর অর্থ হলো এ জিহাদ লড়তে হবে কুর’আনের জ্ঞান দিয়ে।
সর্বপ্রথম কুরআনে কারীমের শিক্ষাদানের মাধ্যমে আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রাণ এক কাফেলা তৈরি করতে হবে। যারা তৌহিদের শিক্ষায় হবে বলিয়ান। কুরআনের আলো দ্বারা যাদের হৃদয়ের অন্ধকার দূর হবে। জাহেলিয়াত থেকে তারা মুক্ত হবে কুরআনের আলো দ্বারা।
কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে একটি আদর্শ পরিবার সমাজ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে একজন মুমিনকে সমাজ বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পারদর্শী হতে হবে। এটিই হলো মু’মিনের বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ।
মুমিনের উপর বুদ্ধিভিত্তিক জিহাদও ফরজ
************************************
যেহেতু বুদ্ধিবৃত্তিক এই জিহাদে অংশ নেয়া প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ -তাই কুর’আন বুঝা এবং কুর’আনের জ্ঞানার্জন করাটিও প্রতিটি মুসলিম নর ও নারীর উপর ফরজ। কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকাটি কবিরা গুনাহ। যে কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞ সে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজেকে মুসলিম পরিচয় দেয ইসলামকে মনে প্রানে ভালোবাসে কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে সহজ অজ্ঞ। ইসলাম সম্পর্কে জানি কিছু গল্প কিছু কাহিনী এ পর্যন্তই। এই মানুষগুলোর কাছে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা কুরআনের আহ্বান তুলে ধরা প্রয়োজন। অনেক কিছুই তারা সহজভাবে নিবে না তারপরও তাদের কাছে যেতে হবে। সাহস নিয়ে ইসলামের কথা বলতে হবে। সত্য বললে সমাজবিভক্ত হবে।
নবীজী (সা:)’র যুগে জিহাদ থেকে দূরে থাকা লোকদের মুনাফিক বলা হয়েছে -যা কাফিরদের চেয়েও অধিক ঘৃণীত ও নিকৃষ্ট। তাই মুসলিম জীবনে গুরুত্বপূর্ণ শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন নয়, অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো জিহাদে অংশ গ্রহণ করা। ইসলামকে আংশিকভাবে নয় পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করা। সর্বপ্রথম এ বিষয়ে তার কাছে সুস্পষ্ট হওয়া সে শুধুমাত্র আল্লাহর বান্দা। জীবনের সকল বিভাগ সকল অঙ্গনে।
নামাজ-রোজা পালন না করে যেমন মুসলিম হওয়া যায়না, তেমনি জিহাদে অংশ না নিয়ে কেউ মুসলিম হতে পারে না। তাই নবীজী (সা:)’র যুগে এমন কোন সাহাবী ছিলেন না যিনি জিহাদে অংশ নেননি। আমাদের সমাজে এমন অনেক আলেম আছেন যারা সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন না। যারা ভাবেন তাদেরকে অপছন্দ করেন। সমাজের এই শ্রেণীর জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাদের জীবনে আল্লাহ কে আংশিক মানেন আর জীবনের একটি অঙ্গনে আল্লাহর প্রভুক্ত কে অস্বীকার করেন। সামাজিক পরিচিতিতে তারা যদিও আলেম এবং ইসলামী পন্ডিত কিন্তু ইসলামকে তারা পূর্ণাঙ্গভাবে পাঠ করেননি। কুরআনকে তারা বুঝে পড়েননি।
ইসলামের প্রথম যুগ- বুদ্ধিভিত্তিক লড়াই
*****************************************
ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানদের মাঝে কুরআন শিক্ষার ব্যাপকতা দেখতে পাই।
সে সময় আরবী ভাষা সীমিত ছিল স্রেফ জাজিরাতুল আরব নামক উপদ্বীপে -যা ছিল পারস্য উপসাগর, ওমান সাগর ও লোহিত সাগর দিয়ে তিন দিকে ঘেরা। আধুনিক সৌদি আরব, কাতার, আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়ামেন নিয়ে হলো জাজিরাতুল আরব।
এ বাইরের অঞ্চলের জনগণের ছিল নিজস্ব ভৌগলিক পরিচিতি ও ভাষা ছিল। কুরআনী শিক্ষা অর্জন জিহাদে কবিরা’র ফরজ আদায় করার প্রয়োজনে ইরাক, সিরিয়া, মিশর, সুদান, লিবিয়া, আলজিরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, মৌরতানিয়ার মত দেশের নাগরিকগণ মাতৃভাষা পরিত্যাগ করে আরবী ভাষাকে গ্রহণ করেছিল। মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে আরবিতে তারা নিজেদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
ইরানী মুসলিম জনগণও সে পথে অগ্রসর হচ্ছিল, কিন্তু জাতীয়তাবাদী ইরানী রাজাগণ সে আরবীকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইরানীরাই হলো জাতীয়তাবাদের জনক। ফলে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মুসলিম উম্মাহর কেন্দ্র ভূমি থেকে।
মক্কী জীবনের ১৩ বছর
***********************
নবীজী (সা:) তাঁর নবুয়তের জীবনের প্রথম ১৩টি বছর বাস করেছেন মক্কার কাফির সমাজে। সেখানে তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে কোন অস্ত্রের যুদ্ধ লড়েননি, লড়েছেন বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে। এই লড়াইয়ে কোরআনের শিক্ষার মাধ্যমে তিনি নতুন কিছু মানুষ তৈরি করলেন।
তৌহিদের শিক্ষায় পাল্টে গিয়েছিল তাদের জীবন। তারা ছিলেন অন্ধকার সমাজের আলোকিত মানুষ। নবীজির শিক্ষায় তাদের চরিত্র আচরণ কর্ম দৃষ্টিভঙ্গি সব পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবগুলি সৃষ্টি হয়েছে নবীজী (সা:)’র হাতে তাঁর নবুয়তের প্রথম ১৩ বছরে। ব্যক্তি নির্মাণের এ কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সমস্যা সম্ভবনা
******************************************
আমাদের এদেশে আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রাণ এই ব্যক্তি নির্মাণের প্রথম কাজটি এখনো গুরুত্বহীন। এই কাজটি এদেশে অতীতেও হয়নি। সুলতানী আমলে যেমন হয়নি, তেমনি মোঘল ও নবাবী আমলেও হয়নি। পাকিস্তানী ও বাংলাদেশী আমলেও নয়। পরিতাপের বিষয় হলো এখনো সে কাজটি হচ্ছে না।
এটা আমাদের জন্য আফসোসের বিষয় আমাদের সমাজে কুরআনকে সরাসরি আরবিতে বুঝতে পারে এমন মুসলিমের সংখ্যা হাজারে কতজন। কুরআনে করিমের গুরুত্বপূর্ণ ছবক আল্লাহর নির্দেশ দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি লক্ষ কোটি মুসলমানের মাঝে কতজনের অনুভবে আছে।
আমাদের অনুভব করতে হবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যে গণ বিপ্লব প্রত্যাশা করি সেই বিপ্লবের ভিত্তি বা প্রথম ধাপ হল কুরআনের জ্ঞান। জ্ঞান এলেম অনেক শক্তিশালী বিষয়। এলেম দ্বারা একজন মানুষ যতটা শক্তিশালী হয় অস্ত্র জনবল অর্থপ্রযুক্তি তাকে এতটা শক্তিশালী করতে পারে না।
ভিত নির্মাণের কাজটি না করলে যেমন মজবুত দালান নির্মাণের কাজটি হয় না, তেমনি ব্যক্তি জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা না করে পরিশুদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের কাজটির স্বপ্ন দেখা উচিত না।
একটি দ্বীনি দাওয়াত
******************
আসুন আমরা কুরআনকে আঁকড়ে ধরি। কুরআনের আলোয় নিজেদেরকে আলোকিত করি। আমাদের ব্যক্তি জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করি। প্রিয় নবীর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যে বিধি-বিধান পাঠিয়েছেন তার সামনে আত্মসমর্পিত হই। কুরআনের শিক্ষায় আমার পরিবারকে গড়ে তুলি। দাওয়ার মাধ্যমে একটি আলোকিত কাফেলা গড়ে তুলি। ইনশাল্লাহ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আমাদের চূড়ান্ত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আল্লাহ সহায় হোন।
মুফতি সাঈদ আহমাদ M***i Saeed Ahmad
জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া