মুফতি সাঈদ আহমাদ Mufti Saeed Ahmad

মুফতি সাঈদ আহমাদ Mufti Saeed Ahmad '' কুরআন ও হাদিসে' আছে সকল সমস্যার সমাধান

18/09/2024

ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন- বাস্তবায়ন কোন পথে
***********************************

আমরা যারা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছি আমরা কি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। অথবা এমন একটি কাফেলা তৈরি করতে পেরেছি যারা ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করতে পেরেছে। ব্যক্তি নির্মাণ ছাড়া রাষ্ট্রে ইসলাম কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

মক্কী জীবনে প্রিয় নবীর ব্যক্তি তৈরীর কর্মসূচি
**************************************
আমরা দেখতে পাই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কী জীবনে প্রথম কর্মসূচি ছিল ব্যক্তি তৈরি করা। তৌহিদের দাওয়াতের মাধ্যমে এমন কিছু মানুষ তিনি তৈরি করেছিলেন যারা ছিলেন আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রাণ। তারা প্রকৃত অর্থেই নিজেদেরকে আল্লাহর বান্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

প্রিয় নবীর আহবান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আসা বিধি-বিধানের সামনে তারা ছিলেন সমর্পিত। প্রিয় নবীর আদেশ তাদের কাছে নিজ পরিবার মাতৃভূমি অর্থ সম্পদ আপনজন সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল। হিজরত তাদের জন্য সহজ ছিল প্রিয় নবীর বিপরীত পথে চলাই তাদের জন্য কঠিন ছিল।

ঈমান ইসলাম রক্ষায় তারা হিজরতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আসা হুকুমগুলো বিনা দ্বিধার মানতে তারা প্রস্তুত ছিলেন। ইসলামের কোন বিধান নিয়ে তাদের মাঝে কোন সংশয় কোন প্রশ্ন ছিল না। তারা ছিলেন অতুলনীয় অসাধারণ কিছু মানুষ। এমন মানুষ পৃথিবী ইতিপূর্বে দেখেনি। অন্য কোন নবীও ঠিক এ ধরনের উম্মত পায়নি। নবীদের পর তারা ছিলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সবচাইতে প্রিয়, শ্রেষ্ঠ উম্মত।

প্রিয় নবী এই মানুষগুলোকে গড়ে তুলেছিলেন কুরআনে কারীমের শিক্ষায়। কুরআন এ মানুষগুলোর মাঝে এমন ঈমানের বীজ বপন করেছিল ঈমানের দাবি পূরণে পূর্ণ পৃথিবীর মোকাবেলা তাদের জন্য সহজ ছিল। আর ঈমানের বিপরীত পথে চলা তাদের জন্য কঠিন ছিল।

সমাজ রাষ্ট্র নির্মাণে নামার আগেই প্রিয় নবীজী এই ব্যক্তি নির্মাণের কাজটি করেছিলেন। আমরা আজ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে চাচ্ছি অথচ সমাজ রাষ্ট্র গঠনের পূর্বে ব্যক্তি পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ আমাদের কাছে গুরুত্বহীন। এমনকি আমাদের নিজেদের জীবনেই আমরা ইসলামকে ধারণ করতে প্রস্তুত নই।

আমাদের কাছে আছে ইসলামী কিতাব ভান্ডার। সাজানো গুছানো বক্তব্য। আমাদের আছে তিনি তালিম এর প্রতিষ্ঠান। বিলাসী এলেম চর্চা। আমাদের আছে আত্মশুদ্ধির খানকা।আমাদের আছে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগঠন। কিন্তু আমাদের জীবনে আমাদের পরিবারে আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের সংগঠনে আজকে সেই আদর্শ অনুপস্থিত যার সৌন্দর্যে এবং আকর্ষণে মানুষ ইসলামের দিকে ছুটে আসবে। আমাদের কিতাব লিখনি বক্তব্যের সাথে আমাদের নিজেদের জীবনের মিল নেই। বিষয়গুলো ভাবা প্রয়োজন।

প্রিয় নবীর প্রধান হাতিয়ার- কুরআন
*********************************
আমরা সমাজ রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাই কিন্তু আমাদের ব্যক্তি জীবনে কুরআনের অনুশীলন চর্চা নেই। কুরআন থেকে আমরা দূরে। অথচ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ছিল করআনময়। তিনি ছিলেন কুরআনে কারীমের বাস্তব প্রতিচ্ছবি জীবন্ত কুরআন। প্রিয় নবীর জীবন আলোচনা করতে যেয়ে চমৎকার বলেছিলেন হযরত আয়েশা "তার জীবন হল কুরআন"। তার জীবনকে জানতে চাইলে কুরআন দেখো। কুরআনের মাঝে প্রিয় নবীর জীবন তোমরা পেয়ে যাবে।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদেরও গড়েছিলেন কুরআনময় করে। কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে তাদের জীবনে বিপ্লব এসেছিল। অতিত জাহিলি জীবনকে তারা ছুড়ে মেরে ছিলেন।

প্রিয় নবীর দাওয়াত আহ্বান সম্পর্কে চমৎকার বলেছিলেন হযরত জাফর বিন আবু তালেব বাদশা নাজ্জাশীর সামনে-

হে মহান বাদশা পূর্বে আমরা ছিলাম চরম মূর্খ। মূর্তি পূজা করতাম। মৃত জানোয়ার আহার করতাম। অশীলতা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ও চরিত্রহীনতায় নিমগ্ন ছিলাম। দুর্বলদের উপর সবলদের অত্যাচার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। জাতির এমন চরম দুর্দিনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য একজন শান্তির দূত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করলেন।

তিনি আমাদেরকে মূর্তিপূজা ছেড়ে দিতে, সত্য কথা বলতে, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং প্রতিবেশীদের সাথে সদ্য ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও যাবতীয় হারাম কাজ খুন-খারাবি, মিথ্যাচার, এতিমের মাল আত্মসাৎ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তার এ সমস্ত কথা শুনেই আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি।

প্রিয় নবীর শিক্ষায় কুরআনের ছোঁয়ায় সাহাবায়ে কেরামদের জীবনের পরিবর্তনের গল্প এ বক্তব্য থেকে আমাদের সামনে চলে আসে।

আমাদের অনুধাবন করা প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন একটি গণবিপ্লব। আর গণ বিপ্লব তখন সম্ভব যখন জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিপ্লবিক পরিবর্তন আসে। আদর্শিক বিপ্লব স্থায়ী হয়। আর যে বিপ্লব কোন শিক্ষা বা আদর্শকে কেন্দ্র করে হয় না সেই বিপ্লব স্থায়ী হয় না। শুধুমাত্র যুদ্ধ আর অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে হওয়া বিপ্লব স্থায়ী হয় না। এটা এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা।

আমরা যদি দীর্ঘস্থায়ী টেকসই সফলতা অর্জন করতে চাই কুরআনকে বাদ দিয়ে কখনোই সম্ভব নয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে যে সফল সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল তা হয়েছিল কুরআনে কারীমের জ্ঞানের মাধ্যমেই। প্রিয় নবীর রেখে যাওয়া সে সমাজ ব্যবস্থা একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পূর্ণ পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছিল।

কুরআন সেই কিতাব যা প্রিয় নবীর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের কাফেলাকে আল্লাহদ্রোহী পৃথিবীর মোকাবেলায় দাঁড় করিয়েছিল। এই কুরআন জাহিলিয়াতের সমস্ত সংস্কৃতিকে খানখান করে একটি সোনালী সমাজ গড়ে তুলেছিল। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সুরক্ষায় নেতৃত্বদানকারী কিতাব এই কুরআন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া খেলাফাহ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইটি মূলত রাজনৈতিক মাঠে এবং রনাঙ্গনে হয় না। ইসলাম তরবারী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার মূল উৎস হলো ওহীর জ্ঞান কুরআন। ওহির জ্ঞানের মাধ্যমেই সমাজের মানুষের চিন্তা চেতনা এবং চরিত্রকে বিশুদ্ধ করার প্রধান কাজটি হয়ে থাকে। আমাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার হল কুরআন।

আমাদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখে কুরআনে কারীমের শিক্ষাকে ব্যাপক করতে হবে এবং পৃথিবীর সামনে কুরআনে কারীমের জ্ঞান এবং বিজ্ঞান দ্বারা বুদ্ধি ভিত্তিক লড়াই করে বিজয় অর্জন করতে হবে।

কুরআনই নতুন পৃথিবী গড়ার হাতিয়ার
********************************

মহাজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনের মাধ্যমে বুদ্ধিভিত্তিক লড়াইকে বড় লড়াই বলেছেন। রণাঙ্গনে অস্ত্রের জিহাদের উপর বুদ্ধিবৃত্তিক এই জেহাদকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

এই লড়াইয়ের নির্দেশ এসেছে পবিত্র কুর’আনে সুরা ফুরকানের ৫২ নম্বর আয়াতে। হুকুম দেয়া হয়েছে:

فَلَا تُطِعِ ٱلْكَـٰفِرِينَ وَجَـٰهِدْهُم بِهِۦ جِهَادًۭا كَبِيرًۭا

অর্থ: “অতঃপর তোমরা কাফিরদের (ধর্ম, মতবাদ, জীবন দর্শন, বিধান ও শিক্ষা-সংস্কৃতির) অনুসরণ করো না, তাদের বিরুদ্ধে বড় জিহাদটি করো কুর‌’আন দিয়ে।”

ইসলামের বিধান হলো, মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে যখন কোন হুকুম আসে -সে হুকুম পালন করা প্রত্যেকের উপর ফরজ হয়ে যায়। সে হুকুমটি নবীজী (সা:)’র উপর এলেও সেটির পালন করা ফরজ হয় প্রতিটি মুসলিমের উপর। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতসহ ইসলামের সকল বিধান এভাবেই ফরজ হয়েছে।

উপরিউক্ত আয়াতে যে জিহাদকে “জিহাদে কাবিরা” বড় জেহাদ বলা হয়েছে সেটি অস্ত্রের জিহাদ নয়। অস্ত্রের জিহাদ তো অস্ত্র দিয়ে লড়তে হয়। কিন্তু এখানে নির্দেশ এসেছে কুর’আন দিয়ে জিহাদ করো। এর অর্থ হলো এ জিহাদ লড়তে হবে কুর’আনের জ্ঞান দিয়ে।

সর্বপ্রথম কুরআনে কারীমের শিক্ষাদানের মাধ্যমে আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রাণ এক কাফেলা তৈরি করতে হবে। যারা তৌহিদের শিক্ষায় হবে বলিয়ান। কুরআনের আলো দ্বারা যাদের হৃদয়ের অন্ধকার দূর হবে। জাহেলিয়াত থেকে তারা মুক্ত হবে কুরআনের আলো দ্বারা।

কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে একটি আদর্শ পরিবার সমাজ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে একজন মুমিনকে সমাজ বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পারদর্শী হতে হবে। এটিই হলো মু’মিনের বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ।

মুমিনের উপর বুদ্ধিভিত্তিক জিহাদও ফরজ
************************************
যেহেতু বুদ্ধিবৃত্তিক এই জিহাদে অংশ নেয়া প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ -তাই কুর’আন বুঝা এবং কুর’আনের জ্ঞানার্জন করাটিও প্রতিটি মুসলিম নর ও নারীর উপর ফরজ। কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকাটি কবিরা গুনাহ। যে কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞ সে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ।

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজেকে মুসলিম পরিচয় দেয ইসলামকে মনে প্রানে ভালোবাসে কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে সহজ অজ্ঞ। ইসলাম সম্পর্কে জানি কিছু গল্প কিছু কাহিনী এ পর্যন্তই। এই মানুষগুলোর কাছে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা কুরআনের আহ্বান তুলে ধরা প্রয়োজন। অনেক কিছুই তারা সহজভাবে নিবে না তারপরও তাদের কাছে যেতে হবে। সাহস নিয়ে ইসলামের কথা বলতে হবে। সত্য বললে সমাজবিভক্ত হবে।

নবীজী (সা:)‌’র যুগে জিহাদ থেকে দূরে থাকা লোকদের মুনাফিক বলা হয়েছে -যা কাফিরদের চেয়েও অধিক ঘৃণীত ও নিকৃষ্ট। তাই মুসলিম জীবনে গুরুত্বপূর্ণ শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন নয়, অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো জিহাদে অংশ গ্রহণ করা। ইসলামকে আংশিকভাবে নয় পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করা। সর্বপ্রথম এ বিষয়ে তার কাছে সুস্পষ্ট হওয়া সে শুধুমাত্র আল্লাহর বান্দা। জীবনের সকল বিভাগ সকল অঙ্গনে।

নামাজ-রোজা পালন না করে যেমন মুসলিম হওয়া যায়না, তেমনি জিহাদে অংশ না নিয়ে কেউ মুসলিম হতে পারে না। তাই নবীজী (সা:)‌’র যুগে এমন কোন সাহাবী ছিলেন না যিনি জিহাদে অংশ নেননি। আমাদের সমাজে এমন অনেক আলেম আছেন যারা সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন না। যারা ভাবেন তাদেরকে অপছন্দ করেন। সমাজের এই শ্রেণীর জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাদের জীবনে আল্লাহ কে আংশিক মানেন আর জীবনের একটি অঙ্গনে আল্লাহর প্রভুক্ত কে অস্বীকার করেন। সামাজিক পরিচিতিতে তারা যদিও আলেম এবং ইসলামী পন্ডিত কিন্তু ইসলামকে তারা পূর্ণাঙ্গভাবে পাঠ করেননি। কুরআনকে তারা বুঝে পড়েননি।

ইসলামের প্রথম যুগ- বুদ্ধিভিত্তিক লড়াই
*****************************************
ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানদের মাঝে কুরআন শিক্ষার ব্যাপকতা দেখতে পাই।
সে সময় আরবী ভাষা সীমিত ছিল স্রেফ জাজিরাতুল আরব নামক উপদ্বীপে -যা ছিল পারস্য উপসাগর, ওমান সাগর ও লোহিত সাগর দিয়ে তিন দিকে ঘেরা। আধুনিক সৌদি আরব, কাতার, আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়ামেন নিয়ে হলো জাজিরাতুল আরব।

এ বাইরের অঞ্চলের জনগণের ছিল নিজস্ব ভৌগলিক পরিচিতি ও ভাষা ছিল। কুরআনী শিক্ষা অর্জন জিহাদে কবিরা’র ফরজ আদায় করার প্রয়োজনে ইরাক, সিরিয়া, মিশর, সুদান, লিবিয়া, আলজিরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, মৌরতানিয়ার মত দেশের নাগরিকগণ মাতৃভাষা পরিত্যাগ করে আরবী ভাষাকে গ্রহণ করেছিল। মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে আরবিতে তারা নিজেদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

ইরানী মুসলিম জনগণও সে পথে অগ্রসর হচ্ছিল, কিন্তু জাতীয়তাবাদী ইরানী রাজাগণ সে আরবীকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইরানীরাই হলো জাতীয়তাবাদের জনক। ফলে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মুসলিম উম্মাহর কেন্দ্র ভূমি থেকে।

মক্কী জীবনের ১৩ বছর
***********************
নবীজী (সা:) তাঁর নবুয়তের জীবনের প্রথম ১৩টি বছর বাস করেছেন মক্কার কাফির সমাজে। সেখানে তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে কোন অস্ত্রের যুদ্ধ লড়েননি, লড়েছেন বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে। এই লড়াইয়ে কোরআনের শিক্ষার মাধ্যমে তিনি নতুন কিছু মানুষ তৈরি করলেন।

তৌহিদের শিক্ষায় পাল্টে গিয়েছিল তাদের জীবন। তারা ছিলেন অন্ধকার সমাজের আলোকিত মানুষ। নবীজির শিক্ষায় তাদের চরিত্র আচরণ কর্ম দৃষ্টিভঙ্গি সব পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবগুলি সৃষ্টি হয়েছে নবীজী (সা:)’‌‌র হাতে তাঁর নবুয়তের প্রথম ১৩ বছরে। ব্যক্তি নির্মাণের এ কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সমস্যা সম্ভবনা
******************************************
আমাদের এদেশে আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রাণ এই ব্যক্তি নির্মাণের প্রথম কাজটি এখনো গুরুত্বহীন। এই কাজটি এদেশে অতীতেও হয়নি। সুলতানী আমলে যেমন হয়নি, তেমনি মোঘল ও নবাবী আমলেও হয়নি। পাকিস্তানী ও বাংলাদেশী আমলেও নয়। পরিতাপের বিষয় হলো এখনো সে কাজটি হচ্ছে না।

এটা আমাদের জন্য আফসোসের বিষয় আমাদের সমাজে কুরআনকে সরাসরি আরবিতে বুঝতে পারে এমন মুসলিমের সংখ্যা হাজারে কতজন। কুরআনে করিমের গুরুত্বপূর্ণ ছবক আল্লাহর নির্দেশ দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি লক্ষ কোটি মুসলমানের মাঝে কতজনের অনুভবে আছে।

আমাদের অনুভব করতে হবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যে গণ বিপ্লব প্রত্যাশা করি সেই বিপ্লবের ভিত্তি বা প্রথম ধাপ হল কুরআনের জ্ঞান। জ্ঞান এলেম অনেক শক্তিশালী বিষয়। এলেম দ্বারা একজন মানুষ যতটা শক্তিশালী হয় অস্ত্র জনবল অর্থপ্রযুক্তি তাকে এতটা শক্তিশালী করতে পারে না।

ভিত নির্মাণের কাজটি না করলে যেমন মজবুত দালান নির্মাণের কাজটি হয় না, তেমনি ব্যক্তি জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা না করে পরিশুদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের কাজটির স্বপ্ন দেখা উচিত না।

একটি দ্বীনি দাওয়াত
******************
আসুন আমরা কুরআনকে আঁকড়ে ধরি। কুরআনের আলোয় নিজেদেরকে আলোকিত করি। আমাদের ব্যক্তি জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করি। প্রিয় নবীর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যে বিধি-বিধান পাঠিয়েছেন তার সামনে আত্মসমর্পিত হই। কুরআনের শিক্ষায় আমার পরিবারকে গড়ে তুলি। দাওয়ার মাধ্যমে একটি আলোকিত কাফেলা গড়ে তুলি। ইনশাল্লাহ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আমাদের চূড়ান্ত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আল্লাহ সহায় হোন।

মুফতি সাঈদ আহমাদ M***i Saeed Ahmad
জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া

14/09/2024

কূরআনের বয়ানে বর্তমান পরিস্থিতি ও আমরা
***************************************

চলমান আন্দোলনের সফলতা কি চূড়ান্ত বিজয়
****************************************
চলমান ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনে দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের পতন আমাদের জন্য কি চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের ইসলামী অঙ্গনের অনেকের আচরণে এমনটাই মনে হচ্ছে। আমরা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি এবং বাস্তবায়ন করছি। আমরা ভাবছি না এর পরবর্তী ফলাফল কি?

আজকের আলোচনায় আমরা কুরআনের আলোকে বর্তমান সময়ে নিয়ে একটি পর্যালোচনা পেশ করব। এবং এই সময়ের করণীয় এবং আমাদের সম্ভাবনাকে তুলে ধরবো।

আমরা দেখতে পাই কুরআনের আলোকে বর্তমান সময় মুমিনদের জন্য বিজয় নয় বরং অনেক বড় এক পরীক্ষা সামনে নিয়ে এসেছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারিমে স্পষ্ট করেছেন তিনি তার প্রিয় বান্দাদের নানাভাবে পরীক্ষা নেন। এ পৃথিবীটা হলো এক পরীক্ষাস্থল।

{ أَحَسِبَ ٱلنَّاسُ أَن یُتۡرَكُوۤا۟ أَن یَقُولُوۤا۟ ءَامَنَّا وَهُمۡ لَا یُفۡتَنُونَ (2) وَلَقَدۡ فَتَنَّا ٱلَّذِینَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَلَیَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِینَ صَدَقُوا۟ وَلَیَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَـٰذِبِینَ (3) }
[Surah Al-ʿAnkabūt: 2-3]

আল্লাহ মানুষের জীবনে সফলতা রেখেছেন ব্যর্থতা রেখেছেন। মানুষের জন্য রয়েছে জান্নাতে জাহান্নাম। কর্মের মাধ্যমেই এ বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে কে জান্নাতি আর কে জাহান্নামী। কাজেই আমাদের কর্ম আমাদের সম্বল। ভালো কর্ম আমাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর মন্দ কর্ম আমাদেরকে জাহান্নামের অধিকারী করবে।

সুরা মুলক আয়াত ২
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এরশাদ করেন

ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًۭا ۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ

অর্থ: “তিনিই সেই (আল্লাহ) যিনি মউত ও হায়াতকে সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যে, তিনি পরীক্ষা করবেন তোমাদের মধ্যে কর্মে কে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল।”

মানুষের জীবনে আল্লাহর পরীক্ষা
**************************
মানুষের জীবনে এ কর্মের পরীক্ষাটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নানাভাবে নিয়ে থাকেন। কখনো বিপদ-আপদ, ক্ষয়-ক্ষতি, জেল-জুলুম ও পরাধীনতা দিয়ে তিনি পরীক্ষা নেন। আবার কখনো তিনি পরীক্ষা নেন বিপদমুক্ত এক স্বচ্ছল, নিরাপদ ও স্বাধীন জীবন দিয়ে। কখনো পরীক্ষাটি তিনি নেন জালিম শাসককে মাথার উপর চাপিয়ে দিয়ে।‌‌ কখনো তিনি পরীক্ষা নেন জালিম শাসকের পতনের মাধ্যমে।

ফেরাউন ছিল বনি ইসরাইলের জন্য পরীক্ষা
*********************************
কুরআনের আলোচিত গোত্র বনি ইসরাইলীদের উপর একসময় চাপানো হয়েছিল ফেরাউনের মতো অত্যাচারী শাসককে। এটা ছিল এক কঠিন পরীক্ষা।

জালেম শাসকের কাছে আত্মসমর্পণ করা রাব্বুল আলামিনের পরীক্ষায় ফেল করা। আর জালিমের মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। ইসলাম কোন জালিমের কাছে নতজানুনীতি অবলম্বনের সুযোগ রাখেনি।

বনি ইসরাইলের উপর চাপিয়ে দেওয়া হল ফেরাউনকে। ফিরাউনের আমলে মিশরে হাজার হাজার বনি ইসরাইলীদের বসবাস ছিল। বনি ইসরাইলীগণ ফিরাউনী রাষ্ট্রে ফেরাউনের প্রভাবের সামনে আত্মসমর্পণ করেছিল। ফলে রাব্বুল আলামিনের নেয়া পরীক্ষায় তারা ফেল করেছিল।

এর ফলাফল দুনিয়াতেই তারা পেয়েছিল। তাদের জীবন ছিল লাঞ্ছনার। ফেরাউন তাদের পুত্র সন্তানদের নির্বিচারে হ্ত্যা করছিল এবং মেয়েদের জীবিত রাখছিল।

বনি ইসরাইলের আল্লাহর সাথে আচরণ
********************************

এক সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হুকুমে ফেরাউনের পতন হলো। ফেরাউন পতনের পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বনী ইসরাইলীদের পরীক্ষা নিলেন ভিন্ন ভাবে। কিন্তু সে পরীক্ষাতেও তারা চরম ভাবে ফেল করল। ফেরাউন বনি ইসরাইল নির্মূলে নেমেছিল। তাদের বাঁচাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমুদ্রকে দুই ভাগ করে মাঝখান দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছেন। তারা পায়ে হেঁটে সমুদ্র অতিক্রম করেছে।

অপরদিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফিরাউন ও তার বাহিনীকে সে সাগরে ডুবিয়ে হত্যা করেছেন। ফেরাউনের পতনের মাধ্যমে বনী ইসরাইল দীর্ঘদিনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিল। এটা ছিল রাব্বুল আলামিনের অনেক বড় নেয়ামত।

মিসর থেকে হিজরত করে বনি ইসরাইল জনমানবশূণ্য সিনাই মরুভূমিতে পৌঁছল। মরুভূমিতে কোন খাদ্য-পানীয় ছিল না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বনী ইসরাইলীদের বাঁচিয়ে রাখতে আসমান থেকে মান্না ও সালওয়া পাঠিয়েছেন। তাদের পানির প্রয়োজন মেটাতে পাথরের বুক চিরে ঠান্ডা পানির ঝরণা প্রবাহিত করেছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এতসব নেয়ামত মূলত ছিল এক কঠিন পরীক্ষা। বনি ইসরাইল অকৃতজ্ঞতা দ্বারা আল্লাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। বরং তারা নিজেদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আল্লাহর নেয়া পরীক্ষায় ফেল করেছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারিমে বনি ইসরাইলের অকৃতজ্ঞতার ইতিহাস আলোচনা করেছেন। তাদের অকৃতজ্ঞতার নমুনা হলো, হযরত মুসা (আ:) অনুপস্থিতিতে গরুর মুর্তি বানিয়ে সেটির পূজা শুরু করেছিল।

ফেরাউনের পতনের পর বনী ইসরাইলের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ধর্মগ্রন্থ তাওরাত দেয়া হয়েছিল।‌ তাওরাতে ছিল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শরীয়তী আইন। যা বাস্তবায়ন করা তাদের উপর ফরজ ছিল।

শরিয়তী আইন কখনোই শুধু তেলাওয়াতের জন্য দেয়া হয়না বরং এ ব্যাপারে নীতিমালা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে তার রাসূল শরীয়তের যে নীতিমালা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছে মুমিনের উচিত মানব রচিত সমস্ত তন্ত্র মন্ত্রের মোকাবেলায় শরয়ী নেজামকে গ্রহণ করা।

ফেরাউন পতনের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে বনী ইসরাইলীদেরকে হুকুম দেয়া হয়েছিল কেনানে তথা আজকের ফিলিস্তিনকে জিহাদের মাধ্যমে বিজয় করে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার কিন্তু সে হুকুম তারা মানেনি। তারা বিদ্রোহ করেছিল। তারা সে যুদ্ধে রাজী হয়নি।

আল্লাহর নবীর সাথে তাদের আচরণ ছিল ভয়াবহ। তারা হযরত মুসা (আ:)কে বলেছিল, “তুমি এবং তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করো, আমরা এখানে বসে থাকলাম।

বনি ইসরাইলের অবাধ্যতার কারণে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে পারেননি। তার জীবদ্দশায় শরয়ী নেজাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে সুনিশ্চিত বিজয়ের ওয়াদা সত্ত্বেও বনি ইসরাইল অগ্রসর হয়নি। এর পরিণতিতে তাদের উপর আল্লাহর আযাব নেমে এসেছিল।

ফেরাউন পতনের পর আল্লাহ তাদের বনি ইসরাইল থেকে যে পরীক্ষা নিলেন সে পরীক্ষায় শোচনীয় ভাবে তারা ফেল করেছিল। এর ফলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ৪০ বছরের জন্য তাদের ফিলিস্তিনে প্রবেশ হারাম করে দিয়েছিলেন। ইজ্জত হীন নিরাপত্তাহীন স্বাধীনতাহীন জীবনে আবার তাদেরকে ফিরে যেতে হয়েছিল। সেই ইতিহাসের আলোচনা এসেছে কুরআনে।

বনি ইসরাইলের ইতিহাস আমাদের জন্য শিক্ষা
*************************************
বনী ইসরাইলীরা হলো ইসলামী ইতিহাসের নিন্দিত বিকৃত ব্যর্থ সম্প্রদায়। আল্লাহ কোরআনে তাদের আলোচনা করেছেন বিস্তারিতভাবে। তাদের ব্যর্থতা থেকে আমরা যেন শিক্ষা গ্রহণ করি। আমরা যেন তাদের পথের পথিক না হই।

দীর্ঘ 16 বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন আমাদের এদেশের অধিবাসী মুসলমানদের জন্য এক বড় ধরনের পরীক্ষা ছিল। আমাদের ইতিহাস আমাদের সামনে। এ পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ না ব্যর্থ এটা অবশ্য আমাদের কাছে পরিষ্কার।

ইসলাম বিধ্বংসী ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের মোকাবেলায় আলেম সমাজের একটি অংশ জীবন বাজি রেখে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। জেল জুলুম অত্যাচার তাদের ওপর নেমে এসেছিল। ‌ আলিম সমাজ ও মুসলিম জনসাধারণের এই অংশ কূরআনের দৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত নয় বরং তারাই বিজয়ী, সফল, পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ।

ফ্যাসিবাদী এ শাসন ব্যবস্থার মোকাবেলায় মুসলিম জনসাধারণের একটি অংশ নীরবতা পালন করেছে এবং নিষ্ক্রিয় থেকেছে। তারা সত্যের পক্ষে শক্তির মোকাবেলাকে বোকামি মনে করেছে। নিজেদেরকে তারা চতুর চালাক মনে করলেও কুরআনের দৃষ্টিতে এরা ক্ষতিগ্রস্ত।

চরম ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী জালিম শাসকের পতন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এক শ্রেষ্ঠতম উপহার। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে জালিমের এই বিস্ময়কর পতন আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। লড়াই ছাড়া বিজয় আসেনা। বিজয়ের জন্য লড়তে হয়। ছাত্র জনতার লড়াইয়ের পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিজয় দান করেছেন।

সুরা আনফালের ১০ নম্বর আয়াত
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এরশাদ করেন-

وَمَا ٱلنَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

অর্থ: “এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বিজয় ছাড়া আর কোন বিজয় নাই; নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।”

ঈমানদারের কাজ হলো, মহান আল্লাহতায়ালার এ বিশাল নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। শুকরিয়া আদায় এর মাধ্যমে আমরা আরো অনেক বেশি নেয়ামতের উপযুক্ত হব।

সুরা ইব্রাহীম আয়াত ৭
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এরশাদ করেন

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِى لَشَدِيدٌۭ

অর্থ: “এবং এটিই তোমাদের রবের ঘোষণা, যদি তোমরা তোমাদের রবের (দেয়া বিজয় বা রহমতের) শুকরিয়া আদায় করো, তবে তিনি অবশ্যই তা বাড়িয়ে দিবেন। এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে আমার আযাব বড়ই কঠিন।”

আজ বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ পতনে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করছে। দীর্ঘ ১৬ বছর এদেশে কথা বলা, লেখালেখি ও মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা ছিল না। এই স্বাধীনতা আমাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই পরীক্ষায় হেরে গেলে হতে হবে লাঞ্ছিত
*******************************
আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তোলার। ইসলামকে এদেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করার। পরীক্ষার প্রথম পর্বের পর পরীক্ষার এ দ্বিতীয় পর্বে আমাদের উত্তীর্ণ হতে হবে।

আমরা যদি ফেল করি তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উপরে হয়তো আবার আরেক জালিম শাসক চাপিয়ে দিবেন। অপদস্ততা লাঞ্ছনা আবারও আমাদের উপর চেপে বসবে।

২০০ বছর ব্রিটিশ দ্বারা আমরা জুলুম নির্যাতন ও শোষণের শিকার হয়েছি। তারা আমাদের গোলাম করে ২০০ বছর শাসন করেছে। আমাদের আইন আদালত সভ্যতা কালচার সব পরিবর্তন করেছে। তারপর ১৯৪৭ শরীয়ত প্রতিষ্ঠার নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে একটি পক্ষ দ্বীনের সাথে মুনাফেকি করেছে। এক পর্যায়ে ভেঙ্গে গেল পাকিস্তান।

১৯৭১ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবেশী হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী শক্তির সাথে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসকদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সুযোগে পার্শ্ববর্তী দেশ এদেশের উপর হিন্দুত্ববাদ চাপিয়ে দিয়েছিল।

একাত্তর পরবর্তী ৫৪ বছরের এদেশের সেক্যুলার শাসন ব্যবস্থা ও রাজনীতি দ্বীন প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় বাঁধা।
২০২৪ পতন হয়েছে হাসিনার। এটা ইসলামপন্থীদের বড় সুযোগ। শরীয়ত প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তুলতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবেশী আগ্রাসী শক্তির ধর্মীয় আগ্রাসন মোকাবেলার। ‌

আমাদেরকে আমাদের অবস্থান থেকে কথা বলতে হবে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের কাছে ধর্মীয় অনুশাসনের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। আমরা যদি সঠিকভাবে আমাদের দাওয়া তুলে ধরতে পারি আল্লাহ অবশ্যই বিজয় দিবেন। আসুন এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রবের নৈকট্য অর্জন করি।

মুফতি সাঈদ আহমাদ M***i Saeed Ahmad
মুদাররিস- জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া
খতিব- বাইতুল আতিক জামে মসজিদ কমপ্লেক্স

13/09/2024

প্রিয় নবীজির ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। আসুন প্রিয় নবীজিকে জানি। তার ভালোবাসায় জীবন গড়ে তুলি।

🌹 প্রিয় নবীজির নামের সৌন্দর্য

https://youtu.be/ov7NuTh3vfQ?feature=shared

🌹আমাদের প্রিয় নবী সৃষ্টি কুলের সেরা তিনি

https://youtu.be/8E2tN0joSIA?feature=shared

🌹শ্রেষ্ঠ যুগে প্রিয় নবীর আবির্ভাব

https://youtu.be/8QxjmMwm_3A?feature=shared

🌹প্রিয় নবীজির আবির্ভাবে পৃথিবীব্যাপী প্রতিক্রিয়া

https://youtu.be/-woTxYzJdoo?feature=shared

🌹শ্রেষ্ঠ নগরীতে প্রিয় নবীজির জন্ম

https://youtu.be/t2F3uy0uIkg?feature=shared

🌹তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠতম দুই ব্যক্তির বংশধর

https://youtu.be/EZvdmsTPDEQ?feature=shared

🌹বংশ নিয়ে প্রিয় নবীজির গৌরব

https://youtu.be/_bhHA8TI5OI?feature=shared

🌹প্রিয় নবীজির বংশীয় শ্রেষ্ঠত্ব

https://youtu.be/Zkh0G7Q4zxw?feature=shared

🌹সবকিছুর ঊর্ধ্বে প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/sRrH2ebHyZ8?feature=shared

🌹প্রিয় নবীজির অনুপম আখলাক

https://youtu.be/PVdXnraE7ak?feature=shared

🌹প্রিয় নবীজির বিনয়

https://youtu.be/BfHAf2pN6z4?feature=shared

🌹প্রিয় নবীজির সাহসিকতা

https://youtu.be/lZElAAiOuEg?feature=shared

🌹প্রিয় নবীজির দানশীলতা

https://youtu.be/_ToCKNGVsOg?feature=shared

🌹প্রিয় নবীজির সমাজ ব্যবস্থা মানুষের অধিকার

https://youtu.be/qh0Iva71Bqg?feature=shared

🌹প্রিয় নবীজির সমাজ ব্যবস্থা পারস্পরিক সহযোগিতা

https://youtu.be/a2Pi4plo5RU?feature=shared

🌹বাবা মার প্রতি প্রিয় নবীর অনুরাগ

https://youtu.be/ol32YEczffA?feature=shared

🌹সন্তানদের প্রতি প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/sKfh2nJX_qY?feature=shared

🌹স্ত্রীদের প্রতি প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/RMkIgAMC_FA?feature=shared

🌹নাতি-নাতনিদের প্রতি প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/UoCmRiYgZpU?feature=shared

🌹শিশুদের প্রতি প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/fdYTtZW0QI8?feature=shared

🌹বৃদ্ধদের প্রতি প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/Zu27XbrzE5Q?feature=shared

🌹দাসদের প্রতি প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/NQJp7R-yzBU?feature=shared

🌹দরিদ্র সমাজের প্রতি প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/GyA25K92KAI?feature=shared

🌹শত্রুর প্রতি প্রিয় নবীর মহানুভবতা

https://youtu.be/K6EMg4vnwWA?feature=shared

🌹অসুস্থদের প্রতি প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/5J318f84GSs?feature=shared

🌹নামাজ প্রতিষ্ঠায় প্রিয় নবীজির ভালোবাসা

https://youtu.be/dfN6T3EQ6WI?feature=shared

🌹দান সদকায় প্রিয় নবীজির নীতিমালা

https://youtu.be/egEGJcSr4vA?feature=shared

🌹মূর্খদের প্রতি প্রিয় নবীজির নমনীয়তা

https://youtu.be/8wiMtetSoUg?feature=shared

🌹সন্ত্রাস নির্মূলে প্রিয় নবী

https://youtu.be/_-uwxW9WHfc?feature=shared

🌹দারিদ্রতা বেকারত্ব নির্মূলে প্রিয় নবী

https://youtu.be/h6JuRPQIEAA?feature=shared

🌹প্রিয় নবীর শিক্ষায় গড়ে তুলি সুন্দর পরিবার

https://youtu.be/PvaYKE4_YSU?feature=shared

মুফতি সাঈদ আহমাদ M***i Saeed Ahmad
জামিয়া রহমানিয়া আজিজিয়া

05/09/2024

৫ই আগস্ট ২০২৪।
ছাত্র জনতার বিজয়ের দিন।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের
আজ একমাস পূর্তি।

আলহামদুলিল্লাহ।
আজ ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ
আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত
মানুষ পাবে মর্যাদা।
সকলের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশাআল্লাহ

ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে আগামীর দিনগুলোতে ইসলাম নিয়ে এগিয়ে চলার সুযোগ তৈরি হলো। ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। আমরা আগামীতে ইসলামী গণ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি। আমরা আশাবাদী কোন একদিন এদেশের আকাশ কালেমার পতাকা উড়বেই উড়বে ইনশাআল্লাহ।

30/08/2024

আজকের জুমার খুতবার সারাংশ
বাইতুল আতিক জামে মসজিদ কমপ্লেক্স
৩০/৮/২০২৪

ইসলামে খিলাফাহ রাষ্ট্র নির্মাণের গুরুত্ব
*****************************

🎤 প্রিয় নবীজির নেতৃত্বে ইসলামী খিলাফাহ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। খেলাফাহ বলা হয় এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে যা আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা জনগণের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জিম্মাদারী পালন করে এবং রাষ্ট্রের আনাচে-কানাচ থেকে জুলুম ও বিচারের ময়লা আবর্জনা দূর করে। ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচাইতে ইনসাফপূর্ণ সোনালী সমাজ গড়ে তুলেছিল প্রিয় নবীজির এই খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল পুর্ন বৈষম্য মুক্ত। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সর্বকালের সেরা রাষ্ট্র ব্যবস্থা খেলাফাহ রাষ্ট্র ব্যবস্থা। খেলাফাহ রাষ্ট্র ব্যবস্থা জনগণের জন্য দুনিয়ার জান্নাত।

🎤নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত সে রাষ্ট্রের আয়তন তাঁর জীবদ্দশাতেই বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বৃহৎ ছিল। সাহাবীগণ সে রাষ্ট্রকে বাংলাদেশের চেয়ে ৮০ গুণেরও বেশি বৃহৎ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। ফলে মুসলিমগণ পরিণত হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিশ্বশক্তিতে।

🎤আমাদের উপলব্ধি করতে হবে মুসলমানদের মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন এই খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছাড়া মুসলমানদের মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকাও কঠিন।

আজ আমাদের দুর্ভাগ্য প্রিয় নবীজীর খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থার রূপরেখা সামনে থাকা সত্ত্বেও আজকের মুসলমান ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা না দিয়ে দেশে দেশে প্রতিষ্ঠা দিচ্ছে সেক্যুলার জাতীয়তাবাদী, ফ্যাসিবাদী ও রাজতন্ত্রী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আর এ রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে প্রকৃত ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার কাজটি শুধু কঠিনই হয় না, বরং অসম্ভব হচ্ছে।

🎤আমাদেরকে আগামী দিনে মানব রচিত কাল্পনিক রাষ্ট্রচিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত খিলাফাহ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষিত সুন্দর পৃথিবী দেখতে পাবো।

মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খিলাফাহ-
জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ম রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়-
************************************

একটি রাষ্ট্রের হাতে শুধু একটি ভৌগলিক মানচিত্র ও পতাকা থাকে না, থাকে প্রশাসন, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সেনাবাহিনী।

প্রতিটি রাষ্ট্রের বুকে সে রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠিই জনগণের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক চিন্তাধারা তৈরি করে থাকে। রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির মোকাবেলা করার সাধ্য সকলের থাকে না। এক পর্যায়ে জনগণ রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই গড়ে উঠে।

👉রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন যখন খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে তখন সে রাজ্যের প্রজাগণ তাদের পূর্বের ধর্মে স্থির থাকতে পারেনি। বরং বাস্তবতা হলো, রাজকীয় শক্তির বলে প্রজাদের নিজ ধর্মে স্থির থাকতে দেয়া হয়নি। সবাইকে রাজার ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়।
👉একই কারণে ফিরাউনের রাজ্যের সবাইকে বাধ্য করা হয় দুর্বৃত্ত ফিরাউনকে খোদা বলতে।
👉কম্যুনিস্টদের হাতে রাশিয়া অধিকৃত হওয়ার পর সে দেশের মুসলিমদেরও বাধ্য করা হয় কম্যুনিজমের স্রোতে ভেসে যেতে। তাদেরকে নাস্তিক হতে বাধ্য করা হয়।

কাজেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা দ্বারা মানুষ ধর্ম কতটুকু পালন করবে তা নির্ধারিত হয়। রাষ্ট্র যতটুকু অনুমোদন করে ততটুকু ধর্ম পালনের সুযোগ থাকে রাষ্ট্র যার অনুমতি দেয় না তা পালন করার সুযোগ হয়ে ওঠেনা।

অনৈসলামিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা-
প্রধান সমস্যা শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত না থাকায়
আংশিক ইসলাম পালন পালন করা হয়-
**************************************
রাষ্ট্র পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা না করার সবচেয়ে ভয়ানক বিপদ হলো, এমন রাষ্ট্রে মুসলিমদেরকে বাস করতে হয় র্শরিয়তী আইনকে বাদ দিয়ে এবং এ রাষ্ট্রে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জিহাদ বাদ দিয়ে একজন মুসলিমকে প্রতি মুহূর্ত যুদ্ধ করতে হয় শয়তানী শক্তির শাসন বাঁচাতে।

ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ یُقَـٰتِلُونَ فِی سَبِیلِ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ یُقَـٰتِلُونَ فِی سَبِیلِ ٱلطَّـٰغُوتِ
[Surah An-Nisāʾ: 76]

যেমন বৃটিশ শাসনামলে বহু লক্ষ ভারতীয় মুসলিম যুদ্ধ করেছে ব্রিটিশ শাসন বাঁচাতে। তাদেরকে ব্রিটিশের অধীনে যুদ্ধ করতে হয়েছে উসমানিয়া খলিফার বিরুদ্ধেও। অথচ সেটি তাদের জন্য হারাম ছিল। মুসলিম হওয়ার জন্য শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়া-দরুদ পালন করাই যথেষ্ট নয়, বরং বাঁচতে হয় হারাম কাজ থেকেও।

এই ব্যবস্থাপনায় অল্প কিছু মানুষ অন্য রাষ্ট্রের জনগণকে জিম্মি করে নিজে চিন্তা ধারাকে বাস্তবায়ন করে। প্রশাসন বিভাগ সেই চিন্তা ধারা বাস্তবায়নে জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

এই ব্যবস্থাপনার অধীনে একজন নাগরিকের শাসকের চিন্তাধারার বিপরীত নিজ ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ থাকে না। রাষ্ট্রের পরিষ্কার মেসেজ থাকে এ চিন্তাধারার বাইরে রাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ থাকবে না

যেমন দীর্ঘ 16 বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে একটি নতুন ধর্ম হিসেবে অন্য দেশের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর বিরোধিতা করা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ। রাষ্ট্রের প্রশাসন গুলো এর বিপরীত চিন্তা নির্মূলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছিল।

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের অজুহাতে যারা এ চেতনা প্রতিষ্ঠায় ধার্মিকদের উপর অত্যাচার চালিয়েছিল এরা কি জানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে তারা নিজ ধর্মের সাথে বিদ্রোহ করছিল।

শরীয়ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা মুসলমানদের ফরজ এবাদত
*******************************************

🎤প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ হলো শরিয়তী আইন অনুযায়ী বিচার ব্যবস্থা করে তোলা। শরিয়তী আইনের পূর্ণ পালন ছাড়া মহান আল্লাহ তায়ালার নিরঙ্কুশ ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণহয়না। আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ হয়।

পবিত্র কুর’আনে তাদেরকে কাফির, জালিম ও ফাসিক বলা হয়েছে। সে ঘোষণাটি এসেছে সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ আয়াতে। অথচ আদালতে শরিয়ত পালনের কাজটি একমাত্র তখনই সম্ভব হয় যখন প্রতিষ্ঠা পায় ইসলামী রাষ্ট্র।

وَمَن لَّمۡ یَحۡكُم بِمَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡكَـٰفِرُونَ (44)
وَمَن لَّمۡ یَحۡكُم بِمَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ (45
وَمَن لَّمۡ یَحۡكُم بِمَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡفَـٰسِقُونَ (47)

🎤 ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছাড়া শরিয়তী আইন শুধু কিতাবেই থেকে যায়। তখন ইসলাম শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠের মাঝে সীমিত হয়ে যায় -যেমন দেখা যায় আজকের মুসলিমদের মাঝে। এরা বাঁচছে পূর্ণ ইসলাম পালন না করেই। অথচ ইসলামের এরূপ আংশিক পালন মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আদৌ গ্রহনযোগ্য নয়।

{ یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ ٱدۡخُلُوا۟ فِی ٱلسِّلۡمِ كَاۤفَّةࣰ
[Surah Al-Baqarah: 208]

তিনি চান পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত প্রতিটি বিধানের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ। যে কোন একটি আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তথা সে আইনের প্রয়োগ না করাটি ইসলামে গুরুতর অপরাধ।

🎤শরিয়তী আইনে বিচারের কাজটি মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার মোহাদ্দেস বা কোন পীর সাহেবের নয়। লক্ষ লক্ষ মসজিদ এবং হাজার হাজার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে সে কাজটি হয়না। কারণ মসজিদ-মাদ্রাসার হাতে ইসলামী বিধান শিক্ষাদানের সামর্থ্য থাকলেও সেগুলির হাতে সে বিধানগুলিকে কার্যকর করার সামর্থ্য থাকে না। এমন কি নামাজী, রোজাদার ও হাজীদের সংখ্যা বিপুল বাড়লেও সে লক্ষ্য সাধিত হয়না। এ লক্ষ সাধিত হয় খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে। এজন্যই দ্বীন প্রতিষ্ঠা ফরজ।

🎤আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় নবী (সা:)কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার জন্য দোয়া করতে শিখিয়েছেন। নবীজী (সা:)কে সে বিশেষ দোয়াটি শিখিয়েছেন সুরা বনি ইসরাইলের (সুরা ইসরা’র) ৮০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

وَقُل رَّبِّ أَدْخِلْنِى مُدْخَلَ صِدْقٍۢ وَأَخْرِجْنِى مُخْرَجَ صِدْقٍۢ وَٱجْعَل لِّى مِن لَّدُنكَ سُلْطَـٰنًۭا نَّصِيرًۭا

অর্থ: “(হে রাসূল!) বলুন, হে আমার রব, আমাকে (মদিনায়) প্রবেশ করান সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে এবং আমাকে (মক্কা থেকে) বের করুন সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে এবং আপনার নিকটি থেকে আমাকে দান করুন সাহায্যকারী নির্বাহী (রাষ্ট্রীয়) শক্তি।”

নবীজী (সা:) উপরিউক্ত দোয়াটি পাঠ করেছেন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময়। নবীজী (সা:)‌’র সে বিশেষ আমলটি হলো, মদিনায় প্রবেশের সাথে সাথে তিনি প্রতিষ্ঠা দেন ইসলামী রাষ্ট্রের।

অনৈসলামিক রাষ্ট্র জাহান্নামের বাহন
****************************
অনৈসলামিক রাষ্ট্র জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার বাহন। রাষ্ট্রই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এবং প্রতিটি রাষ্ট্রে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হলো তার শাসক।

শাসকের হাতে থাকে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষাব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, আইনপ্রণয়ন, মিডিয়া, পুলিশ ও সেনাবাহিনী -তথা রাষ্ট্রকে ও রাষ্ট্রের জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সকল হাতিয়ার। এজন্যই রাষ্ট্রকে জাহান্নামের বাহনে পরিণত করা শাসকশক্তির জন্য সহজ হয়ে যায়। রাষ্ট্র তখন শয়তানের হাতিয়ারে পরিণত হয়।

রাষ্ট্রীয় শক্তি হাতে থাকায় ফিরাউন ও নমরুদের ন্যায় জালেম শাসকগণও নিজেদেরকে খোদা রূপে প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছিল। এজন্যই ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ এবাদত হল শয়তানী শক্তির দখলদারি থেকে দেশকে মুক্ত করা এবং সে ভূমিতে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। ইসলামে এটি পবিত্র জিহাদ।

খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা জান্নাতের বাহন
********************************
খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা জনগণকে জান্নাতে নেয়ার বাহন। এই ব্যবস্থাপনা দ্বারা দেশের কোটি কোটি মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর কাজটি সহজ হয়ে যায়। এর চেয়ে অধিক কল্যাণকর্ম এ পৃথিবী পৃষ্ঠে দ্বিতীয়টি নাই।

আজকের বাংলাদেশ কোন পথে
**************************
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনগণের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের ফিকির না করা হলে মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা-ঘাট ও কল-কারখানায় দেশ ভরে ফেললেও কোন লাভ হয়না। কারণ, সে রাষ্ট্রে জান্নাতের উপযোগী মানুষ গড়ার কাজটি হয়না। বরং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় জাহান্নামের উপযোগী বিপুল সংখ্যক মানুষ।

ফলে এমন দেশে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, ব্যাংক লুট, ট্রেজারী লুট,গণহত্যা ও দুর্বৃত্তিতে প্লাবন আনতে লোকের অভাব হয়না। সেটির জাজ্বল্যমান প্রমাণ হলো আজকের বাংলাদেশ।

এদেশটিতে যেরূপ বিপুল সংখ্যক মসজিদ-মাদ্রাসা, তা বিশ্বের আর কোন দেশে নাই। তাবলিগ জামায়াতের এতো অনুসারীও অন্য কোন দেশে নাই। দেশটিতে রয়েছে লক্ষাধিক হাফিজে কুর’আন। কিন্তু দেশটি দুর্নীতিতে এ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়েছে।

অতএব এতো মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে আমরা সফল হতে পারিনি। দেশবাসীকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হলো ইসলামী রাষ্ট্র। কারণ, এ কাজে রাষ্ট্রের হাতে থাকে শিক্ষানীতি, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রশাসনসহ প্রয়োজনীয় সকল সামর্থ্য।

নবীজির সাহাবায়ে কেরাম - বিপরীতে আজকের পৃথিবী
******************************************

🎤নবীজী (সা:) ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধভাবে প্রিয় নবীজির দাফর কাফনের আগে নিজেদের খলিফা নির্ধারণ করেছেন খেলাফত রক্ষার্থে। আজ ৫০টির বেশি রাষ্ট্রে বিভক্ত মুসলিম ভূমির কোথাও ইসলামী খিলাফাহ নেই। বরং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, ফ্যাসিবাদী, রাজতন্ত্রী ও সেক্যুলার রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রগুলো মুসলিম জনসাধারণের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জিম্মাদারী বহন করছে না।

🎤আজ মুসলমানের সন্তান তার ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ধর্ম থেকে দূরে সরানোর সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ারটি কোন মন্দির-মন্ডপ বা গীর্জা নয়; কোন ধর্মগুরুও নয়। সেটি হলো রাষ্ট্র। কারণ রাষ্ট্রের হাতে আছে জনগণকে প্রভাবিত করার সকল সামর্থ্য। এজন্যই শয়তানের চিরাচরিত স্ট্র্যাটিজি হলো, রাষ্ট্রকে ইসলামের বিরুদ্ধে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা।

🎤পৌত্তলিক গ্রীক ও রোমানদের শাসনামলে রাষ্ট্রের সে ষড়যন্ত্র ও নাশকতা দেখা গেছে ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের বিরুদ্ধে। সেসব জালেম শাসকদের হাত থেকে তাওরাত ও ইঞ্জিলের বিশুদ্ধতা বাঁচেনি। এবং কোন রাষ্ট্রেই প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়নি তাওরাতে প্রদত্ত শরিয়তী আইন।

আজ মুসলিম নামধারী জালেম শাসকদের হাতে ইসলাম বন্দী। তারা কোরআন পরিবর্তনের সুযোগ পাচ্ছে না। তবে ইসলামের খন্ডিত অংশ প্রচারের সুযোগ দিচ্ছে আর বাকি অংশের ব্যাপারে জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। নামধারী মুসলিম শাসক ও রাষ্ট্র দ্বারা ধর্ম সম্পর্কে বিভ্রান্ত হচ্ছে মুসলমান।

পরিবর্তন জন্যই লড়তে হবে
*********************
একটি পরিবর্তনের জন্য লড়তে হবে। লড়াই দ্বারা অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। প্রথম লড়াইটা বুদ্ধিবৃত্তিক। ইসলাম বিজয়ী হবে। এটা আল্লাহর ওয়াদা। আমাদেরকে সহ অথবা আমাদের ছাড়া। সকল প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে ইসলামের খেদমতে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হবে নিজেদের স্বার্থে।

M***i Saeed Ahmad

Address

মিরপুর
Dhaka

Telephone

+8801921537070

Website

https://muftisaeedahmad.blogspot.com/

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মুফতি সাঈদ আহমাদ Mufti Saeed Ahmad posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মুফতি সাঈদ আহমাদ Mufti Saeed Ahmad:

Share