09/08/2025
বাংলাদেশে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ: লক্ষণ ও প্রতিকার
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময়। বর্তমানে ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এবং চিকুনগুনিয়ার মতো ভাইরাস জ্বরের পাশাপাশি জিকা ও হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সাধারণ লক্ষণসমূহ
বেশিরভাগ ভাইরাস জ্বরের লক্ষণগুলো প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি তাপমাত্রার জ্বর।
ঠান্ডা লাগা এবং ঘাম হওয়া।
মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা।
তীব্র ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
গলা ব্যথা, কাশি ও সর্দি।
বিভিন্ন প্রকারের ভাইরাস জ্বর ও তাদের বৈশিষ্ট্য
ডেঙ্গু: এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ানো এই জ্বরের প্রকোপ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর মধ্যে উচ্চ জ্বর, তীব্র শরীর ব্যথা, ফুসকুড়ি এবং জয়েন্টে ব্যথা অন্যতম। মারাত্মক পর্যায়ে গেলে রক্তক্ষরণও হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য কিট সরবরাহ করছে।
চিকুনগুনিয়া: এই রোগটিও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র জ্বর এবং হাড়ের জোড়ায় ব্যথা।
ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু): আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এই জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা এবং শরীর ব্যথা এর সাধারণ লক্ষণ।
জিকা ভাইরাস: এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ানো এই ভাইরাসের সংক্রমণও বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে। এর লক্ষণগুলো ডেঙ্গুর মতোই, তবে গর্ভবতী নারীরা আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশুর 'মাইক্রোসেফালি' বা মাথা ছোট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি): এটি একটি নতুন শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস যা বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে। এর লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট।
প্রতিকার ও চিকিৎসা:
ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসা মূলত লক্ষণভিত্তিক। প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
তরল গ্রহণ: জ্বর এবং ঘামের কারণে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণে প্রচুর পরিমাণে তরল, যেমন- খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি ও ফলের রস পান করা জরুরি।
ঔষধ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করা যেতে পারে। নিজে থেকে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়, কারণ ভাইরাসজনিত সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।
পুষ্টিকর খাবার: জ্বরের সময় সহজে হজম হয় এমন পুষ্টিকর খাবার, যেমন- স্যুপ, নরম খিচুড়ি ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
প্রতিরোধের উপায়:
ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলো অবলম্বন করা জরুরি:
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, বিশেষ করে খাবার আগে ও পরে।
মশা নিয়ন্ত্রণ: ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকার মতো মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে না দেওয়া এবং মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার করা অপরিহার্য।
মাস্ক ব্যবহার: হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ভিড়ের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
সচেতনতা: জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।