29/10/2025
ভয়ানক ঘৃণার ভাষাকে মঞ্চ দেওয়া যায় না।
হাসিনার ইন্টারভিউ আমি সুযোগ পেলেও করবো না, এমনকি কয়েক কোটি টাকা দিলেও না, খুনির সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে না তা না— সাংবাদিকতার এথিক্স এটা বলে না যে আপনি খুনির সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না। একজন খুনির সাক্ষাৎকার নেয়ার মধ্য দিয়ে যদি আমি সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থার ত্রুটি তুলে ধরতে পারি, যদি সেই সাক্ষাৎকার জনস্বার্থে অত্যাবশ্যক হয় (উদাহরণ: অপরাধের পেছনের নেটওয়ার্ক বুঝাতে বা ভবিষ্যৎ অপরাধ রোধে ভূমিকা রাখে) তাহলে তা নেয়া যায়।
তথ্য সাংবাদিকের কাছে খনি। কিন্তু এই খনি আহোরণ করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিক দেশের ক্ষতি করার রাইট রাখেন না।
একটা উদাহরণ দেই, নরওয়ের Anders Breivik — ২০১১ সালে ৭৭ জনকে হত্যা করে। তার বিচার চলাকালীন অনেক সংবাদমাধ্যম তার “ideology” বা বক্তব্য ছাপতে চেয়েছিল। কিন্তু নরওয়ের আদালত ও সাংবাদিকতার নীতি-সংস্থা নির্দেশ দেয়, “Breivik-এর বক্তব্য প্রচার করা মানে তার ঘৃণার ভাষাকে মঞ্চ দেওয়া।”ফলে, অধিকাংশ মিডিয়া তার সাক্ষাৎকার সরাসরি প্রচার করতে পারেনি।
তাইলে খুনি হাসিনার সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে না।নেয়া যাবে না মূলত: তিনটি কারনে, প্রথমত হাসিনা সম্পর্কে আমরা জানি যে সে কোনো অপরাধের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে খুন করে নাই, বরং নিজেই মাফিয়া ছিল। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়ে কোন বৃহৎ জনকল্যান সাধিত হবে না কিংবা সে এমন কোনো সত্য তুলে ধরবে না যা এড্রেস করার মধ্য দিয়ে সমাজে বা রাষ্ট্রে অব্যবস্থাপনা দূর হবে। তাহলে খুনি হাসিনার সাক্ষাৎকার আমি কেন নেবো? এথিক্যালি আমি তা করতে পারি না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হান্না আরেন্ট ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল নিয়ে লিখেছিলেন:
“When evil is given a stage, it should not be for sympathy, but for understanding its mechanism.”অর্থাৎ,অপরাধীর কণ্ঠ শোনা যেতে পারে বোঝার উদ্দেশ্যে,কিন্তু সহানুভূতির উদ্দেশ্যে নয়। হাসিনার কাছে বোঝার কিছু নাই যে কেন সে এতো মানুষকে এমনকি শিশুকে হত্যা করলো। সে এক রক্ত পিপাসু ক্ষমতালোভি ভয়ানক ফ্যসিস্ট!
১৯৩০-এর দশকে যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক George Ward Price হিটলারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।
এই সাক্ষাৎকার নেয়ার পর তিনি ভয়ানক ভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন, কারন এক ভয়ানক হত্যাকারীর অপরাধের ভয়াবহতার ব্যাখ্যা দিতে, নিজের ভালো (ভ্রান্ত) দিক তুলে ধরতে সেই সাক্ষাৎকার সহযোগিতা করেছিল। সেটাই করার কথা, কারণ একজন খুনীর সাক্ষাৎকার নেয়া মানেই আপনি তার অপকর্মের ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ দিচ্ছেন অথবা তাকে মিথ্যা বয়ানের সুযোগ হাজির করছেন।
এখন আসেন দ্বিতীয় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথায়, হাসিনার বিচারের আগে হত্যা সংক্রান্ত আলাপে তার দেয়া মিথ্যা তথ্য (যেহেতু সে সত্য বলে না) তার অনুসারীদের ভেতরে বিভ্রম সৃষ্টি করতে পারে, যাদের তিনি ইতিমধ্যে প্রতিপক্ষের উপর হামলার হুকুম দিয়েছেন, তাদের বাড়িঘরে আগুন দিতে বলেছেন। এইসব মতিভ্রম নেতাকর্মীরা আরও বিভ্রান্ত হয়ে ভবিষ্যতে কি করতে পারে অনুমান করে নেন। আমরা নিশ্চয়ই একটা সিভিল ওয়ার সিচুয়েশন চাই না! মাফিয়া, প্রতিশোধপরায়ন ও একজন খুনির সাক্ষাৎকার নিয়ে আমি নিশ্চয়ই দেশে কিছু বিপথগামী পরাজিত আওয়ামী শক্তি বাহিনীকে উস্কে গিয়ে আরও বিপথগামী করতে পারি না!
তৃতীয় যে কারনে তাঁর সাক্ষাৎকার আমি নেবো না তা হলো, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের আহত করুক এমন কোনো কাজ আমি করতে পারি না। পিরিয়ড।
-কাজী জেসিন
জনপ্রিয় উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব