Ghorial Bangla

Ghorial Bangla Ghorial Bangla (also known as Ghorial Bangla BD on various social media) is a complete Bengali language online media house on animal life.
(1)

GHORIAL BANGLA আপনাকে নিয়ে যাবে প্রকৃতির বুনো, অজানা জগতে। তথ্যবহুল কন্টেন্ট এবং ছোট ছোট ভিডিওর মাধ্যমে আমরা তুলে ধরছি বাংলাদেশের বনে-জঙ্গলে, নদী-নালায় আর পাহাড়-সমতলে লুকিয়ে থাকা বন্যপ্রাণীদের রহস্যময় জীবন।

আজই ফলো করুন GHORIAL BANGLA ফেসবুক পেজ It is a Bangladesh based company owned by Ghorial Bangla Pvt Ltd. Gharial Bangla was established in January 2018. This media channel broadcasts all

kinds of educational information on animal life in Bengali language as well as social media activities. At present, the number of followers of Ghorial Bangla's social media page is about 404K+ followers Bangladeshis and the YouTube subscribers of this channel are about 30,000 Bangladeshis. Ghorial Bangla Media House launches full-fledged animal information and video documentaries in Bengali as there is no informational media or channel on social media in Bangladesh before 2018 or on blogs or websites and on the YouTube platform. Ghorial Bangla won the hearts of a large number of interested followers and is now recognized as an established media house in Bangladesh.

বনের নীরব বাসিন্দা: মুখপোড়া হনুমানের আশ্চর্য জীবনবাংলাদেশের চিরসবুজ বনের গভীরে যে শান্ত ও লাজুক হনুমানটি বাস করে, তার নি...
07/09/2025

বনের নীরব বাসিন্দা: মুখপোড়া হনুমানের আশ্চর্য জীবন

বাংলাদেশের চিরসবুজ বনের গভীরে যে শান্ত ও লাজুক হনুমানটি বাস করে, তার নিরীহ চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য জৈব-রাসায়নিক কারখানা। মুখপোড়া হনুমান এমন সব গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে, যা অন্যান্য বহু প্রাণীর জন্য বিষাক্ত এবং অপাচ্য। এর রহস্য লুকিয়ে আছে তার পাকস্থলীর জটিল গঠনে। গরুর মতো এদেরও রয়েছে বহু-প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট এক বিশাল পাকস্থলী, যা মূলত এক জীবন্ত গাঁজন বা ফারমেন্টেশন চেম্বার হিসেবে কাজ করে। এই প্রকোষ্ঠগুলোতে বাস করে কোটি কোটি বিশেষায়িত ব্যাকটেরিয়া, যারা সেলুলোজের মতো কঠিন আঁশকে ভেঙে ফেলে এবং পাতার মধ্যে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এক কথায়, এই হনুমানটি নিজের ভেতরে এক বিশাল জীবাণু বাহিনী পুষে রাখে, যারা বিষকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে, যা এই প্রাণীকে বনের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাতাভোজী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

এই আকর্ষণীয় প্রাইমেটটির বৈজ্ঞানিক নাম Trachypithecus pileatus। এর ইংরেজি নাম ক্যাপড ল্যাঙ্গুর (Capped Langur), যা এর মাথার উপরে থাকা টুপি বা ‘ক্যাপ’-এর মতো দেখতে ঘন ও খাড়া চুলের ঝুঁটির কারণে দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এরা ‘মুখপোড়া হনুমান’ নামেই বেশি পরিচিত। এর কারণ হলো, এদের ধূসর বা বাদামী রঙের দেহের বিপরীতে মুখমণ্ডলটি থাকে সম্পূর্ণ কালো, যা দেখে মনে হয় যেন তা পুড়ে গেছে। এদের লম্বা, শক্তিশালী লেজটি দেহের চেয়েও দীর্ঘ হয়, যা গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে পড়ার সময় অসাধারণ ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। এরা মূলত বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং মিয়ানমারের চিরসবুজ ও মিশ্র-চিরসবুজ বনাঞ্চলে বসবাস করে।

মুখপোড়া হনুমান সম্পূর্ণরূপে বৃক্ষবাসী এবং এদের জীবনযাত্রা গাছের চূড়া বা ক্যানোপি কেন্দ্রিক। এরা খুব কমই মাটিতে নামে এবং জীবনের প্রায় সকল প্রয়োজন—খাদ্য, আশ্রয় এবং বিশ্রাম—গাছের উপরেই সম্পন্ন করে। এরা অত্যন্ত সামাজিক প্রাণী এবং সাধারণত ৫ থেকে ১৫ সদস্যের দলে বাস করে। এদের দলগত কাঠামো সাধারণত ‘হারেম’ প্রকৃতির হয়, যেখানে একজন প্রভাবশালী পুরুষ কয়েকটি স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে একটি একক পরিবার গঠন করে। পুরুষটির প্রধান কাজ হলো দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অন্য দলের পুরুষদের থেকে নিজের এলাকা রক্ষা করা। অন্যদিকে, স্ত্রী হনুমানেরা সম্মিলিতভাবে শাবকদের যত্ন নেয়।

এদের প্রজনন এবং শাবক প্রতিপালনের পদ্ধতি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। একটি স্ত্রী হনুমান প্রায় ছয় মাস গর্ভধারণের পর একটিমাত্র বাচ্চার জন্ম দেয়। সদ্যজাত শাবকটির রঙ প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ধূসর হয় না, বরং এটি হয় উজ্জ্বল কমলা বা প্রায় সোনালি বর্ণের। এই উজ্জ্বল রঙটি শাবকটিকে দলের অন্য সদস্যদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং দলের সকল স্ত্রী সদস্যই শিশুটির প্রতি যত্নশীল হয়ে ওঠে। এই আচরণটি ‘অ্যালোম্যাটার্নাল কেয়ার’ বা সম্মিলিত মাতৃত্ব নামে পরিচিত, যেখানে মা ছাড়াও দলের অন্য স্ত্রীরা শাবককে কোলে নেওয়া, পরিষ্কার করা এবং আগলে রাখার দায়িত্ব পালন করে। এই সম্মিলিত যত্ন একদিকে যেমন মায়ের উপর থেকে চাপ কমায়, তেমনই শাবকটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকেও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। প্রায় ছয় মাস পর এই উজ্জ্বল রঙ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ধূসর হতে শুরু করে।

খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে এরা কঠোরভাবে পাতাভোজী। এদের খাদ্য তালিকার প্রায় ৭০-৮০ শতাংশই হলো কচি পাতা। পাতা ছাড়াও এরা ফুল, ফল, কুঁড়ি এবং গাছের ছাল খেয়ে থাকে। এই বিশেষায়িত খাদ্যাভ্যাসের কারণে এরা বনের বাস্তুতন্ত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা ফল খাওয়ার পর তাদের মলের মাধ্যমে বনের বিভিন্ন স্থানে বীজ ছড়িয়ে দেয়, যা বনের পুনর্জন্মে সহায়তা করে। এছাড়াও, পাতা খাওয়ার মাধ্যমে এরা গাছের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং বনের ক্যানোপির স্বাস্থ্য রক্ষায় পরোক্ষভাবে অবদান রাখে।

বাংলাদেশের এই অনন্য প্রাইমেটটি আজ বিশ্বজুড়ে ‘সংকটাপন্ন’ বা ‘Vulnerable’ হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং এর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। এর প্রধান এবং সর্বাপেক্ষা বড় হুমকি হলো বাসস্থান ধ্বংস। চা বাগান ও কৃষিজমির সম্প্রসারণ, অবৈধভাবে গাছ কাটা এবং মানব বসতি স্থাপনের কারণে এদের চিরসবুজ বনের আবাসস্থল দ্রুত সংকুচিত এবং খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে পড়ছে। বাসস্থান খণ্ডিত হওয়ার ফলে এদের ছোট ছোট দলগুলো একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে তাদের জিনগত বৈচিত্র্যকে কমিয়ে আনে এবং তাদের টিকে থাকার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও, খাবারের জন্য এবং ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় ব্যবহারের উদ্দেশ্যে চোরাশিকারও এদের অস্তিত্বের জন্য একটি বড় হুমকি।

বর্তমানে বাংলাদেশের লাউয়াছড়া, সাতছড়ি, রেমা-কালেঙ্গা এবং কাপ্তাইয়ের মতো কয়েকটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এদের অল্প কিছু দল কোনোমতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। বনের এই নীরব বাসিন্দাদের যদি রক্ষা করতে হয়, তবে প্রয়োজন কঠোর বন সংরক্ষণ নীতি এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, যা মানুষ ও বন্যপ্রাণীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারে।

এই লাজুক প্রাইমেট এবং বনের বাস্তুতন্ত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে আরও জানতে ‘ঘড়িয়াল বাংলা’ পেجটি লাইক ও ফলো করে আমাদের সঙ্গে থাকুন। মুখপোড়া হনুমানকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে বনভূমির সুরক্ষা কতটা জরুরি বলে আপনি মনে করেন? আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টস বক্সে আমাদের জানান।

#মুখপোড়াহনুমান #বিপন্নপ্রাণী #বাংলাদেশেরবন্যপ্রাণী

07/09/2025

Little Bee-eater — লিটল বি-ইটার: আফ্রিকার ক্ষুদে শিকারি পাখির বিজ্ঞানকথা

বিষাক্ত মৌমাছিকে ধরেও যে পাখি নিশ্চিন্তে খেতে পারে—তার রহস্য লুকিয়ে আছে শিকারের নিখুঁত কৌশলে। লিটল বি-ইটার, বৈজ্ঞানিক নাম Merops pusillus, উড়ন্ত অবস্থায় মৌমাছি-ভিমরুল ধরে ডানা মেলে নিকটস্থ ডালায় আঘাত করে হুল ও বিষের থলি ঝরিয়ে নেয়—তারপরই গিলে ফেলে। আকারে মাত্র প্রায় ১৬ সেমি, ওজন গড়ে ১৫–২০ গ্রাম; তবু তার শিকারি চৌকশতা রীতিমতো বিস্ময় জাগায়। বাংলাদেশের সবুজ শিকারি পাখির (Green Bee-eater) ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এই আফ্রিকান ক্ষুদে পাখিটি, রং-রূপ আর উড়ালভঙ্গিতে এক বিচ্ছুরিত জীববৈচিত্র্যের গল্প বলে।

#পাখি #আফ্রিকা #বন্যপ্রাণী #ঘড়িয়ালবাংলা

বনভূমির চশমাধারী সাধু: এক বিপন্ন প্রাইমেটের উপাখ্যানবাংলাদেশের চিরসবুজ অরণ্যের গভীরে যখন একটি চশমাপরা হনুমানের জন্ম হয়, ...
07/09/2025

বনভূমির চশমাধারী সাধু: এক বিপন্ন প্রাইমেটের উপাখ্যান

বাংলাদেশের চিরসবুজ অরণ্যের গভীরে যখন একটি চশমাপরা হনুমানের জন্ম হয়, তখন সে তার ধূসর বর্ণের পিতামাতার মতো হয় না, বরং তার সারা দেহ থাকে এক উজ্জ্বল সোনালি বা কমলা রঙের আবরণে ঢাকা। এই জ্বলজ্বলে রঙটি বনের সবুজ পাতার রাজ্যে তাকে এক জ্বলন্ত শিখার মতো দৃশ্যমান করে তোলে, যা আপাতদৃষ্টিতে আত্মরক্ষার পরিপন্থী বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি প্রকৃতির এক গভীর ও জটিল সংকেত ব্যবস্থা। এই উজ্জ্বল রঙটি দলের অন্য সকল সদস্য, বিশেষ করে অন্য স্ত্রী হনুমানদের কাছে এক অমোঘ বার্তা প্রেরণ করে—এটি একটি অসহায় শিশু, যার বিশেষ যত্ন ও সুরক্ষার প্রয়োজন। এই সংকেত পেয়েই দলের অন্য সদস্যরা সদ্যজাত শিশুটির প্রতি আরও বেশি সহনশীল ও প্রতিরক্ষামূলক হয়ে ওঠে, যা ‘অ্যালোপ্যারেন্টিং’ বা সম্মিলিত প্রতিপালনের এক অসাধারণ উদাহরণ।

এই লাজুক ও শান্ত স্বভাবের প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম Trachypithecus phayrei। এদের চোখের চারপাশে থাকা সাদা বা ফ্যাকাশে রঙের বৃত্তাকার বলয়টি দেখতে অনেকটা চশমার মতো হওয়ায় বাংলাদেশে এরা ‘চশমাপরা হনুমান’ নামেই সুপরিচিত। এদের দেহের বাকি অংশ ধূসর বা কালচে-ধূসর লোমে ঢাকা থাকে এবং মাথার উপরে থাকা খাড়া চুলের ঝুঁটি এদের চেহারায় এক স্বতন্ত্র ভাব যোগ করে। এদের লেজটি দেহের চেয়েও দীর্ঘ, যা গাছের ডালে চলাচলের সময় ভারসাম্য রক্ষায় এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। একসময় ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম থেকে শুরু করে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে এদের অবাধ বিচরণ ছিল। কিন্তু আজ এরা বিশ্বজুড়ে ‘বিপন্ন’ বা ‘Endangered’ এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এদের অস্তিত্ব মহাবিপন্ন।

চশমাপরা হনুমান সম্পূর্ণরূপে বৃক্ষবাসী এবং এরা পাতাভোজী প্রাণী। এদের খাদ্য তালিকার প্রায় পুরোটাই জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন গাছের কচি পাতা, কুঁড়ি, ফুল এবং ফল। পাতা হজম করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে সেলুলোজ এবং ট্যানিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা অধিকাংশ প্রাণীর পক্ষে হজম করা সম্ভব নয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য চশমাপরা হনুমানের পরিপাকতন্ত্র এক অসাধারণ অভিযোজনের মধ্য দিয়ে গেছে। এদের পাকস্থলী গরুর মতো বহু-প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট এবং জটিল, যা ‘স্যাকুলেটেড স্টমাক’ নামে পরিচিত। এই পাকস্থলীর বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া বাস করে, যারা গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেলুলোজকে ভেঙে ফেলে এবং পাতার মধ্যে থাকা বিষাক্ত উপাদানগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এক কথায়, এদের পাকস্থলী এক জীবন্ত জৈব-রাসায়নিক কারখানা, যা অখাদ্য পাতাকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে।

এরা অত্যন্ত সামাজিক প্রাণী এবং সাধারণত ৬ থেকে ২০ সদস্যের দলে বাস করে। প্রতিটি দল ‘হারেম’ কাঠামো অনুসরণ করে, যেখানে একজন প্রভাবশালী পুরুষ কয়েকটি স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে একটি পরিবার গঠন করে। দলের পুরুষটির প্রধান দায়িত্ব হলো এলাকা রক্ষা করা এবং শিকারি প্রাণীর হাত থেকে দলকে বাঁচানো। অন্যদিকে, স্ত্রী সদস্যরা সম্মিলিতভাবে শাবকদের লালন-পালন করে। একটি মা হনুমান প্রায় ২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটিমাত্র বাচ্চার জন্ম দেয়। জন্মের সময় এই বাচ্চার রঙ থাকে উজ্জ্বল সোনালি, যা প্রায় ৩ থেকে ৬ মাস পর ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ধূসর বর্ণে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এই উজ্জ্বল রঙের পেছনের কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে একাধিক তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে, যার মধ্যে সম্মিলিত প্রতিপালনকে উৎসাহিত করার তত্ত্বটিই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।

চশমাপরা হনুমান দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে এবং রাতের বেলায় উঁচু গাছের মগডালে দলবদ্ধভাবে ঘুমিয়ে কাটায়। এরা খুব কমই মাটিতে নামে এবং জীবনের প্রায় পুরোটাই গাছের চূড়া বা ক্যানোপিতে কাটিয়ে দেয়। এদের লম্বা লেজ এবং শক্তিশালী হাত-পা গাছের ডালে চলাচলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এরা অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির এবং মানুষের সান্নিধ্য এড়িয়ে চলে। বনের গভীরে এদের দেখা পাওয়া এক বিরল অভিজ্ঞতা।

বাংলাদেশের এই অনন্য প্রাইমেটটি আজ অস্তিত্বের এক চরম সংকটের সম্মুখীন। এর প্রধান কারণ হলো নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস। চা বাগান সম্প্রসারণ, কৃষিজমি তৈরি, অবৈধভাবে গাছ কাটা এবং অপরিকল্পিত বসতি স্থাপনের ফলে এদের প্রাকৃতিক বাসস্থান খণ্ড-বিখণ্ড ও সংকুচিত হয়ে গেছে। বাসস্থান খণ্ডিত হওয়ার ফলে এদের ছোট ছোট দলগুলো একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা আন্তঃপ্রজননের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তাদের জিনগত বৈচিত্র্যকে কমিয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও, কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে খাবারের জন্য এবং প্রচলিত চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য এদেরকে শিকার করার প্রবণতাও এদের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ।

বর্তমানে বাংলাদেশের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের মতো কয়েকটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এদের অল্প কিছু দল কোনোমতে টিকে আছে। এই বনের চশমাধারী সাধুদের যদি রক্ষা করতে হয়, তবে প্রয়োজন কঠোরভাবে বন সংরক্ষণ আইন প্রয়োগ করা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এই লাজুক প্রাইমেট এবং বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীদের টিকে থাকার সংগ্রাম সম্পর্কে আরও জানতে ‘ঘড়িয়াল বাংলা’ পেজটি লাইক ও ফলো করে আমাদের সঙ্গে থাকুন। এই বিপন্ন প্রাণীটিকে বাঁচাতে বন সংরক্ষণের পাশাপাশি আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন? আপনার সুচিন্তিত মতামত কমেন্টস বক্সে আমাদের জানান।

#চশমাপরাহনুমান #বিপন্নপ্রাণী #বাংলাদেশেরবন্যপ্রাণী

07/09/2025

Penguin — দক্ষিণের বরফ-সাঁতারুদের গোপন জগত

জলের নিচে হার্টবিট নাটকীয়ভাবে কমে যায়, ফুসফুস সঙ্কুচিত হয়ে নাইট্রোজেন শোষণ ঠেকায়, আর পেশিতে জমা মায়োগ্লোবিন অক্সিজেন সরবরাহ ধরে রাখে—এই সামঞ্জস্যে পেঙ্গুইন একটানা গভীর ডাইভ দেয়, আবার ভাঙা বরফের ফাঁক গলে শ্বাস নিতে উঠে আসে। উড়তে না পারা সত্ত্বেও জেন্টু পেঙ্গুইন ঘণ্টায় প্রায় ৩৬ কিমি বেগে সাঁতার কাটে; এম্পেরর পেঙ্গুইন ডুব দেয় প্রায় ৫০০ মিটারেরও গভীরে। কালো-সাদা পালকের “কাউন্টারশ্যাডিং” ওপর থেকে অন্ধকার জল আর নিচ থেকে উজ্জ্বল আকাশের সঙ্গে মিশে তাদের আড়াল দেয়—শিকারি আর শিকার উভয়ের চোখেই তারা যেন অদৃশ্য।

#পেঙ্গুইন #ঘড়িয়ালবাংলা

বনের গায়ক: উল্লুকের বিদায়ী সঙ্গীতবাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের চিরসবুজ বনের গভীরে, ভোরের কুয়াশা ভেদ করে ভেসে আসে এক অদ্...
07/09/2025

বনের গায়ক: উল্লুকের বিদায়ী সঙ্গীত

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের চিরসবুজ বনের গভীরে, ভোরের কুয়াশা ভেদ করে ভেসে আসে এক অদ্ভুত সুর—যেন কোনো দক্ষ শিল্পী তার কণ্ঠে আরোহণ ও অবরোহণের এক জটিল সঙ্গীত পরিবেশন করছে। এই গান কোনো পাখির নয়, বরং এটি বাংলাদেশের একমাত্র নরবানর বা ‘এইপ’—উল্লুকের। এই সমবেত সঙ্গীত বা ‘ডুয়েট’ কেবল কোনো সাধারণ ডাক নয়, এটি তাদের সামাজিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি উল্লুক পরিবার, যা মূলত একটি একগামী জুটি এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে গঠিত, এই গানের মাধ্যমে বনের অন্য পরিবারদের কাছে নিজেদের এলাকার সীমানা ঘোষণা করে এবং তাদের পারিবারিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে। প্রতিটি পরিবারের গানের ধরন বা সুর হয় স্বতন্ত্র, যা তাদের এক নিজস্ব সঙ্গীতময় পরিচয় তৈরি করে। কিন্তু বনের গাছ কেটে ফেলার সাথে সাথে এই গানের সুরও ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে, যা একসময় হয়তো চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যাবে।

উল্লুক, যার বৈজ্ঞানিক নাম Hoolock hoolock, গিবন পরিবারের এক অনন্য সদস্য এবং প্রাইমেট জগতের এক অসাধারণ বৃক্ষচারী। এরা মূলত উত্তর-পূর্ব ভারত, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনাঞ্চলে বসবাস করে। এদের পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যে চেহারায় রয়েছে সুস্পষ্ট পার্থক্য। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ উল্লুকের সমগ্র দেহ কুচকুচে কালো লোমে ঢাকা থাকে, যার বিপরীতে তার ভ্রুর উপরে থাকা ধবধবে সাদা একজোড়া রেখা তাকে এক গম্ভীর এবং আকর্ষণীয় রূপ দেয়। অন্যদিকে, স্ত্রী উল্লুকের লোমের রঙ হয় সোনালি-সাদা বা ধূসর-বাদামী এবং বয়সের সাথে সাথে এর রঙ আরও ফ্যাকাশে হতে থাকে। এই যৌন দ্বিরূপতা গিবনদের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

উল্লুকের শারীরিক গঠন সম্পূর্ণরূপে বৃক্ষবাসী জীবনের জন্য অভিযোজিত। এদের কোনো লেজ নেই এবং দেহের তুলনায় এদের হাতগুলো অস্বাভাবিক রকমের লম্বা। এই লম্বা হাতই এদের প্রধান চালিকাশক্তি। এরা ‘ব্র্যাকিয়েশন’ (Brachiation) নামক এক বিশেষ পদ্ধতিতে চলাচল করে, যেখানে তারা তাদের লম্বা হাত ব্যবহার করে অবিশ্বাস্য গতিতে এক ডাল থেকে অন্য ডালে ঝুলে ঝুলে এগিয়ে যায়, যেন তারা বনের চূড়ার মধ্য দিয়ে উড়ে চলেছে। এই পদ্ধতিতে এরা এক লাফে প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। তাদের কাঁধের সন্ধি বা শোল্ডার জয়েন্টটিও বল-ও-সকেট প্রকৃতির, যা তাদের হাতকে প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘোরানোর ক্ষমতা প্রদান করে, যা এই শরীরচর্চামূলক চলাচলের জন্য অপরিহার্য। এরা এতটাই বৃক্ষনির্ভর যে, এরা খুব কমই মাটিতে নামে।

উল্লুক মূলত ফলভোজী বা ‘ফ্রুজিভোর’। এদের খাদ্য তালিকার প্রায় ৬০ শতাংশই জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাকা ফল, বিশেষ করে ডুমুর এদের অত্যন্ত প্রিয়। ফল ছাড়াও এরা গাছের কচি পাতা, ফুল এবং মাঝে মাঝে পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এই খাদ্যাভ্যাসের কারণে এরা বনের বাস্তুতন্ত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা ফল খাওয়ার পর বনের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের মলের মাধ্যমে বীজ ছড়িয়ে দেয়, যা নতুন গাছ জন্মাতে এবং বনের পুনর্জন্মে সহায়তা করে। এক কথায়, এরা বনের এক দক্ষ মালী, যারা নিজেদের অজান্তেই অরণ্যের স্বাস্থ্য ও বৈচিত্র্য রক্ষা করে চলেছে।

সামাজিক দিক থেকে উল্লুক অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রাণী। এরা কঠোরভাবে একগামী, অর্থাৎ একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী উল্লুক সারাজীবনের জন্য জুটি বাঁধে। এরা তাদের সন্তানদের নিয়ে একটি ছোট পরিবার গঠন করে, যেখানে সাধারণত ২ থেকে ৬ জন সদস্য থাকে। একটি উল্লুক শাবক প্রায় ৭-৮ বছর বয়স পর্যন্ত তার বাবা-মায়ের সাথে থাকে এবং এরপর সে নিজের সঙ্গী খুঁজে নতুন পরিবার গঠন করার জন্য বেরিয়ে পড়ে। এই পারিবারিক বন্ধন এবং এলাকার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যই তারা তাদের বিখ্যাত গান ব্যবহার করে। প্রতিদিন সকালে, সূর্য ওঠার ঠিক পরেই, প্রথমে পুরুষ উল্লুকটি তার গম্ভীর স্বরে গান শুরু করে এবং কিছুক্ষণ পর স্ত্রী উল্লুকটি তার চেয়ে তীক্ষ্ণ ও জটিল সুরে তার সাথে যোগ দেয়। এই যুগল সঙ্গীত প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে চলে এবং এর শব্দ বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের এই একমাত্র নরবানরটি আজ ‘বিপন্ন’ বা ‘Endangered’ এবং এর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসছে। এর প্রধান এবং প্রায় একমাত্র কারণ হলো নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস। চা বাগান সম্প্রসারণ, কৃষিজমি তৈরি এবং অবৈধভাবে গাছ কাটার ফলে এদের বাসস্থান খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে ছোট ছোট দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উল্লুকেরা যেহেতু মাটিতে নামতে পারে না, তাই দুটি বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চলের মধ্যে তারা চলাচল করতে পারে না। এর ফলে, একটি ছোট দলের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন বা ‘ইনব্রিডিং’ শুরু হয়, যা তাদের জিনগত বৈচিত্র্যকে কমিয়ে দেয় এবং তাদের বিভিন্ন রোগের প্রতি দুর্বল করে তোলে। এছাড়াও, খাদ্য সংকট এবং চোরাশিকারও এদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।

বাংলাদেশের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের মতো কয়েকটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এখনও অল্প কিছু উল্লুক পরিবার টিকে আছে। এই বনের গায়কদেরকে যদি রক্ষা করতে হয়, তবে প্রয়োজন এদের খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাওয়া বাসস্থানগুলোকে ‘ক্যানোপি ব্রিজ’ বা গাছের সেতু তৈরি করে পুনরায় সংযুক্ত করা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে বন সংরক্ষণকে নিশ্চিত করা।

এই বৃক্ষচারী নরবানর এবং বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীদের টিকে থাকার সংগ্রাম সম্পর্কে আরও জানতে ‘ঘড়িয়াল বাংলা’ পেজটি লাইক ও ফলো করে আমাদের সঙ্গে থাকুন। উল্লুকের এই সমবেত সঙ্গীতকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টস বক্সে আমাদের জানান।

#উল্লুক #বিপন্নপ্রাণী #বাংলাদেশেরনরবানর

07/09/2025

Starfish: সমুদ্রের জীবন্ত তারা, যার পুনর্জন্মের ক্ষমতা হার মানায় রূপকথাকেও

মহাসাগরের গভীরে বাস করে এক আশ্চর্য শিকারী, যার কোনো মস্তিষ্ক নেই, শরীরে এক ফোঁটাও রক্ত নেই, এবং যে শিকার করে তার পাকস্থলীকে শরীরের বাইরে বের করে এনে। এটি কোনো কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়, বরং আমাদের পৃথিবীরই এক অবিশ্বাস্য বাসিন্দা—তারামাছ বা স্টারফিশ। যার একটি বিচ্ছিন্ন বাহু থেকেও জন্ম নিতে পারে একটি সম্পূর্ণ নতুন জীবন, যা প্রকৃতির পুনর্জন্মের ক্ষমতার এক জীবন্ত প্রমাণ।

#তারামাছ #সমুদ্র #সাগর #সেন্টমার্টিন #বন্যপ্রাণী #প্রকৃতি #ঘড়িয়ালবাংলা #বিজ্ঞান #ভাইরাল

শব্দের জাদুকর: নদীর অন্ধ প্রহরী শুশুকের উপাখ্যানগঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর ঘোলা জলের গভীরে এমন এক স্তন্যপায়ী প্রাণী বা...
07/09/2025

শব্দের জাদুকর: নদীর অন্ধ প্রহরী শুশুকের উপাখ্যান

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর ঘোলা জলের গভীরে এমন এক স্তন্যপায়ী প্রাণী বাস করে, যে তার চারপাশের জগৎকে চোখ দিয়ে দেখে না, বরং শব্দ দিয়ে ‘দেখে’। লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ধারায় এই নদীর কর্দমাক্ত পরিবেশে দৃষ্টিশক্তি প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ায় শুশুকের চোখ এক ক্ষুদ্র, লেন্সবিহীন অঙ্গে পরিণত হয়েছে, যা কেবল আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিই বুঝতে পারে। কিন্তু এই শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে সে পরিণত করেছে তার সবচেয়ে বড় শক্তিতে। শুশুক তার মাথার উপরের অংশ থেকে অবিরতভাবে উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ বা ‘ক্লিক’ নিঃসরণ করে এবং সেই শব্দ যখন কোনো বস্তু—হোক তা একটি মাছ, একটি পাথর বা নদীর তীর—থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে, তখন সে সেই প্রতিধ্বনিকে বিশ্লেষণ করে নিজের মস্তিষ্কে চারপাশের এক নিখুঁত ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করে ফেলে। এটি প্রকৃতির এক জীবন্ত সোনার ব্যবস্থা, যা এই অন্ধ শিকারিকে তার অন্ধকার জগতে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী অধিপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

শুশুক, যার বৈজ্ঞানিক নাম Platanista gangetica, বাংলাদেশের জাতীয় জলজ প্রাণী। এটি মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের একটি মিঠা পানির ডলফিন, যার প্রধান বিচরণক্ষেত্র হলো বাংলাদেশ ও ভারতের গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা এবং নেপালের কর্ণফুলী-সপ্তকোশী নদী অববাহিকা। এর দেহ স্থূল, ধূসর-বাদামী রঙের এবং এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর দীর্ঘ ও সরু ঠোঁট বা চঞ্চু, যা বয়সের সাথে সাথে আরও লম্বা হতে থাকে। এর পৃষ্ঠীয় পাখনাটি অন্যান্য সামুদ্রিক ডলফিনের মতো উঁচু ও ধারালো নয়, বরং এটি একটি নিচু, ত্রিভুজাকৃতির মাংসল পিণ্ড মাত্র। এরা জীবনের প্রায় পুরোটাই জলের নিচে কাটায় এবং প্রতি ৩০ থেকে ১২০ সেকেন্ড অন্তর শ্বাস নেওয়ার জন্য একবার জলের উপরে উঠে আসে, যে সময় এরা এক ধরনের ‘শুশ’ বা ‘সুস্’ শব্দ করে, যা থেকেই সম্ভবত এদের ‘শুশুক’ নামকরণ হয়েছে।

শুশুকের জীবনযাত্রা এবং আচরণ সম্পূর্ণভাবেই তার ঘোলা জলের পরিবেশের সাথে অভিযোজিত। এরা প্রায়শই একপাশে কাত হয়ে সাঁতার কাটে এবং তাদের একটি ফ্লিপার বা সাঁতারের ডানা দিয়ে নদীর তলদেশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে। এই অদ্ভুত আচরণের কারণ হলো, এটি তাদের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে শিকার ধরার প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। নদীর তলদেশে থাকা চিংড়ি, ক্যাটফিশ এবং অন্যান্য ছোট মাছ যখন তাদের এই স্পর্শ বা শব্দতরঙ্গ দ্বারা বিরক্ত হয়, তখন তারা নড়াচড়া শুরু করে এবং শুশুক সহজেই তাদের অবস্থান শনাক্ত করে শিকার করে ফেলে। এরা মূলত একাকী প্রাণী, তবে মাঝে মাঝে এদেরকে ছোট ছোট দলে দেখা যায়, বিশেষ করে যেখানে দুটি নদীর সঙ্গমস্থল বা যেখানে জলের ঘূর্ণি রয়েছে, কারণ এই সমস্ত স্থানে মাছের ঘনত্ব বেশি থাকে।

শুশুককে ‘ইনডিকেটর স্পিসিস’ বা পরিবেশের সূচক প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এর অর্থ হলো, একটি নদীতে শুশুকের উপস্থিতি এবং তাদের সুস্থ জনসংখ্যা নির্দেশ করে যে, সেই নদীর বাস্তুতন্ত্র সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যবান রয়েছে। শুশুক যেহেতু খাদ্যশৃঙ্খলের একেবারে উপরের দিকে অবস্থান করে, তাই এদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ মাছের ভান্ডার এবং দূষণমুক্ত জল। যদি কোনো নদীতে শুশুকের সংখ্যা কমতে শুরু করে, তবে এটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে যে, সেই নদীর জল দূষিত হচ্ছে, মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে অথবা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা কেবল শুশুকের জন্যই নয়, বরং সেই নদীর উপর নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্যও এক অশনি সংকেত।

বাংলাদেশের এই জাতীয় জলজ প্রাণীটি আজ ‘বিপন্ন’ বা ‘Endangered’ হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে একাধিক মানবসৃষ্ট কারণ। প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো নদীর উপর বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ। ফারাক্কার মতো বাঁধগুলো নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে, শুশুকের জনসংখ্যাকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলে এবং এদের প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্রকে সংকুচিত করে দেয়। দ্বিতীয়ত, মারাত্মক জল দূষণ। শিল্পকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক বর্জ্য, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক এবং অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশনের জল নদীতে মিশে শুশুকের খাদ্য শৃঙ্খলকে বিষাক্ত করে তুলছে এবং এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।

তৃতীয় হুমকিটি হলো মাছ ধরার জালে দুর্ঘটনাবশত আটকা পড়া বা ‘বাইক্যাচ’। জেলেরা, বিশেষ করে কারেন্ট জালের মতো অবৈধ জাল ব্যবহার করার সময়, প্রায়শই শুশুক সেই জালে আটকা পড়ে এবং শ্বাস নেওয়ার জন্য উপরে উঠতে না পেরে ডুবে মারা যায়। চতুর্থত, নদীর বুকে চলাচলকারী জাহাজ ও নৌকার সংখ্যা বৃদ্ধি। এই জলযানগুলোর ইঞ্জিনের শব্দ শুশুকের সূক্ষ্ম প্রতিধ্বনি ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে, যা তাদের শিকার ধরা, দিক নির্ণয় এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগের ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এছাড়াও, কিছু অসাধু জেলে শুশুকের তেলকে মাছ ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এদেরকে শিকার করে থাকে।

বাংলাদেশের সরকার শুশুক সংরক্ষণের জন্য বেশ কিছু অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে, বিশেষ করে সুন্দরবনের নদীগুলোতে। কিন্তু এই মহৎ প্রাণীটিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে রয়েছে নদীর দূষণ রোধ, ক্ষতিকর মাছ ধরার পদ্ধতির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং সর্বোপরি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

নদীর এই অন্ধ প্রহরী এবং বাংলাদেশের জলজ বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সম্পর্কে আরও জানতে ‘ঘড়িয়াল বাংলা’ পেজটি লাইক ও ফলো করে আমাদের সঙ্গে থাকুন। শুশুককে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আপনার এলাকার মানুষ বা আপনি ব্যক্তিগতভাবে কী ভূমিকা পালন করতে পারেন? আপনার ভাবনা কমেন্টস বক্সে আমাদের জানান।

#শুশুক #গাঙ্গেয়ডলফিন #বিপন্নপ্রাণী

07/09/2025

The Oxpecker's Role in the Animal Kingdom: আফ্রিকার সাভানার এক বিতর্কিত চিকিৎসক

আফ্রিকার বিস্তীর্ণ সাভানায় জিরাফ, মহিষ বা গণ্ডারের পিঠে নিশ্চিন্তে বসে থাকা একদল পাখিকে আমরা প্রায়শই বন্ধুত্বের এক নিখুঁত প্রতীক হিসেবে দেখি। আপাতদৃষ্টিতে এটি এক চমৎকার পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক—পাখিরা পরজীবী খেয়ে নিজেদের ক্ষুধা মেটায়, আর বিশাল তৃণভোজীরা বিরক্তিকর পোকামাকড় থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু এই সরল চিত্রের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক জটিল এবং বিতর্কিত বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা। অক্সপেকার কি সত্যিই এক নিঃস্বার্থ চিকিৎসক, নাকি স্বার্থপর এক রক্তচোষা পরজীবী?

#অক্সপেকার #বন্যপ্রাণী #আফ্রিকা #প্রকৃতি #ঘড়িয়ালবাংলা #রহস্য #সম্পর্ক #ভাইরাল

বনের প্রকৌশলী: এশিয়ার হাতির মহাকাব্যিক জীবনগভীর জঙ্গলের নিস্তব্ধতায়, যেখানে মানুষের কান কোনো শব্দ শুনতে পায় না, সেখানেও ...
07/09/2025

বনের প্রকৌশলী: এশিয়ার হাতির মহাকাব্যিক জীবন

গভীর জঙ্গলের নিস্তব্ধতায়, যেখানে মানুষের কান কোনো শব্দ শুনতে পায় না, সেখানেও হাতির দল একে অপরের সাথে অবিরত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। তারা এই কাজটি করে ‘ইনফ্রাসাউন্ড’ বা অবশ্রাব্য শব্দের মাধ্যমে—এমন এক নিম্ন কম্পাঙ্কের গর্জন, যা মানুষের শ্রবণ ক্ষমতার অনেক নিচে। এই গভীর ও শক্তিশালী কম্পন কেবল বাতাস দিয়েই নয়, বরং মাইলের পর মাইল মাটি কাঁপিয়েও বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর মাধ্যমে তারা দলের সদস্যদের অবস্থান জানায়, আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে, প্রজননের জন্য সঙ্গীকে আহ্বান করে এবং নিজেদের বিশাল বিচরণক্ষেত্রের মধ্যে এক অদৃশ্য সামাজিক যোগসূত্র বজায় রাখে। এটি প্রকৃতির এক গোপন বেতার ব্যবস্থা, যা এই বিশাল প্রাণীদের শুধুমাত্র আকারেই নয়, বরং বুদ্ধিমত্তা এবং যোগাযোগের কৌশলেও অনন্য করে তুলেছে।

এশীয় হাতি, যার বৈজ্ঞানিক নাম Elephas maximus, এশিয়ার বুকে বিচরণকারী বৃহত্তম স্থলচর প্রাণী। একসময় তুরস্ক থেকে শুরু করে চীনের ইয়াংজি নদী পর্যন্ত এদের বিস্তীর্ণ বিচরণক্ষেত্র থাকলেও, আজ এদের অস্তিত্ব মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৩টি দেশে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে টিকে আছে। বাংলাদেশে এরা প্রধানত চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের গভীর অরণ্যে বসবাস করে, যদিও মিয়ানমার থেকে কিছু দল প্রায়শই সীমান্ত অতিক্রম করে যাতায়াত করে। এদের আফ্রিকান জ্ঞাতিদের তুলনায় এরা আকারে কিছুটা ছোট হয়, এদের কানগুলোও ছোট ও গোলাকার এবং মাথার উপরে দুটি স্ফীত অংশ বা ডোম থাকে। তবে এদের সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি দেখা যায় এদের শুঁড়ের অগ্রভাগে—আফ্রিকান হাতির শুঁড়ের মাথায় দুটি আঙুলের মতো অংশ থাকলেও, এশীয় হাতির থাকে মাত্র একটি।

হাতির শুঁড় প্রকৃতির প্রকৌশলের এক চূড়ান্ত নিদর্শন। এটি মূলত নাক এবং উপরের ঠোঁটের একীভূত ও বর্ধিত রূপ, যাতে কোনো হাড় নেই, কিন্তু রয়েছে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি স্বতন্ত্র পেশিগুচ্ছ। এই জটিল পেশিবিন্যাস এদেরকে শুঁড়ের সাহায্যে অবিশ্বাস্য রকমের সূক্ষ্ম এবং শক্তিশালী কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করে। একটি হাতি তার শুঁড় দিয়ে মাটি থেকে একটিমাত্র চালের দানা তুলে নিতে পারে, আবার মুহূর্তেই কয়েকশ কেজি ওজনের গাছের গুঁড়িও অনায়াসে তুলে ফেলতে পারে। শুঁড় এদের শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘ্রাণ নেওয়া, স্পর্শ করা, শব্দ করা এবং আত্মরক্ষার প্রধান অঙ্গ। এরা শুঁড়ের মধ্যে প্রায় ৮ লিটার পর্যন্ত জল ধারণ করে মুখে চালান করে দিতে পারে বা গায়ে ছিটিয়ে নিজেদের শরীরকে শীতল রাখতে পারে।

এশীয় হাতি অত্যন্ত সামাজিক প্রাণী এবং এদের সমাজব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। একটি হাতির দল বা ‘পরিবার’ মূলত একজন বয়স্ক ও অভিজ্ঞ স্ত্রী হাতি বা ‘মাতা’ এবং তার কন্যা, নাতনিসহ বিভিন্ন প্রজন্মের স্ত্রী সদস্য ও তাদের শাবকদের নিয়ে গঠিত হয়। এই মাতা বা ‘ম্যাট্রিয়ার্ক’ তার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে দলকে পরিচালনা করে। কোন পথে গেলে খাবার পাওয়া যাবে, কোথায় জলের উৎস রয়েছে বা কোন এলাকায় বিপদ লুকিয়ে আছে—এই সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তার স্মৃতিতে সঞ্চিত থাকে, যা দলের বাকি সদস্যদের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। অন্যদিকে, পুরুষ হাতিরা কৈশোরে পৌঁছানোর পর দল ছেড়ে দেয় এবং একাকী বা অন্য পুরুষদের নিয়ে গঠিত ছোট দলে বা ‘ব্যাচেলর হার্ড’-এ বসবাস করে।

এশীয় হাতিকে ‘কীস্টোন স্পিসিস’ বা বাস্তুতন্ত্রের মূল প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ এদের উপস্থিতি একটি সম্পূর্ণ বনাঞ্চলের স্বাস্থ্য ও গঠনকে প্রভাবিত করে। এরা তৃণভোজী প্রাণী এবং প্রতিদিন প্রায় ১৫০ কেজি পর্যন্ত উদ্ভিদ খায়। খাবার খাওয়ার সময় এরা ছোট গাছপালা উপড়ে ফেলে বা ডালপালা ভেঙে বনের মধ্যে ফাঁকা জায়গা বা ‘গ্যাপ’ তৈরি করে। এই ফাঁকা স্থান দিয়ে সূর্যের আলো বনের মাটিতে পৌঁছাতে পারে, যা নতুন চারাগাছ জন্মাতে এবং তৃণভূমির বিস্তারে সাহায্য করে। এর ফলে হরিণ, সম্বর এবং অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য নতুন খাদ্যের উৎস তৈরি হয়। এছাড়াও, এরা বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়ার পর বহুদূর পর্যন্ত ভ্রমণ করে এবং তাদের মলের মাধ্যমে সেই ফলের বীজ ছড়িয়ে দেয়, যা বনের পুনর্জন্ম বা ‘ফরেস্ট রিজেনারেশন’-এ এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। শুষ্ক মৌসুমে এরা তাদের শুঁড় ও পা ব্যবহার করে শুকনো নদীর তলদেশে গর্ত খুঁড়ে জলের সন্ধান করে। এই তৈরি হওয়া জলাশয়গুলো বনের অন্যান্য প্রাণীদেরও জলের চাহিদা মেটায়। এক কথায়, হাতি হলো ‘বনের মালী’ বা ‘ফরেস্ট গার্ডেনার’।

এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, এশীয় হাতি আজ ‘বিপন্ন’ বা ‘Endangered’। এর প্রধান কারণ হলো বাসস্থান ধ্বংস এবং খণ্ড-বিখণ্ডকরণ। কৃষি, শিল্প এবং মানব বসতির প্রসারের ফলে এদের বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ-হাতি সংঘাত—যা বাংলাদেশসহ এশিয়ার সকল হাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের এক ভয়াবহ সমস্যা। খাদ্যের সন্ধানে হাতি যখন ফসলের ক্ষেতে বা লোকালয়ে প্রবেশ করে, তখন মানুষের সাথে তাদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে, যার পরিণতি প্রায়শই উভয় পক্ষের জন্যই মারাত্মক হয়। বিশেষ করে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমনের ফলে বনাঞ্চলের উপর যে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা সেখানকার হাতিদের চলাচলের পথ বা ‘এলিফ্যান্ট করিডোর’-গুলোকে প্রায় রুদ্ধ করে দিয়েছে, যা এই সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

এই মহাকাব্যিক প্রাণী এবং বনের বাস্তুতন্ত্রে তাদের অপরিহার্য ভূমিকা সম্পর্কে আরও জানতে ‘ঘড়িয়াল বাংলা’ পেজটি লাইক ও ফলো করে আমাদের সঙ্গে থাকুন। হাতি-মানুষের সংঘাত নিরসনে আমাদের সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? আপনার সুচিন্তিত মতামত কমেন্টস বক্সে আমাদের জানান।

#এশীয়হাতি #বনেরপ্রকৌশলী #বিপন্নপ্রাণী

07/09/2025

আমরা যে বাতাসে নিঃশ্বাস নিই, যে পানি পান করি, তার প্রতিটি কণা এক নীরব অভিভাবকের কাছে ঋণী। যে অভিভাবক সভ্যতার বহু আগে থেকেই এই গ্রহকে শাসন করে আসছে। এটি কোনো পৌরাণিক সত্তা নয়, এটি বন—পৃথিবীর জীবন্ত হৃৎপিণ্ড এবং আমাদের অস্তিত্বের মূল ভিত্তি।

#বন #প্রকৃতি #পরিবেশ #জলবায়ু_পরিবর্তন #সুন্দরবন #অক্সিজেন #সংরক্ষণ

সমুদ্রের মালী: সবুজ কাছিমের তৃণভূমি রক্ষার উপাখ্যানমহাসাগরের তলদেশে এমন এক তৃণভোজী প্রাণী বাস করে, যার খাদ্যাভ্যাস একটি ...
07/09/2025

সমুদ্রের মালী: সবুজ কাছিমের তৃণভূমি রক্ষার উপাখ্যান

মহাসাগরের তলদেশে এমন এক তৃণভোজী প্রাণী বাস করে, যার খাদ্যাভ্যাস একটি সম্পূর্ণ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য ও অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। সবুজ কাছিম নামের এই প্রাণীটি তার শক্তিশালী ও ধারালো ঠোঁট ব্যবহার করে সমুদ্রের তলদেশে থাকা ‘সি-গ্রাস’ বা সামুদ্রিক ঘাসের বিশাল তৃণভূমিকে ঠিক একটি বাগানের মালীর মতো ছেঁটে দেয়। এই নিয়মিত ছাঁটাই প্রক্রিয়াটি ঘাসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, এদের দ্রুত বৃদ্ধিতে এবং তৃণভূমির ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা হাজার হাজার প্রজাতির মাছ, অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং জলজ উদ্ভিদের জন্য এক অপরিহার্য নার্সারি বা প্রতিপালন ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। যদি সবুজ কাছিম না থাকত, তবে এই সামুদ্রিক তৃণভূমিগুলো মরে যেত, যার ফলে একটি সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ত। এটি কোনো সাধারণ প্রাণী নয়, এটি সমুদ্রের এক জীবন্ত প্রকৌশলী, যার প্রতিটি কামড়েই লুকিয়ে আছে জীবনের এক জটিল চক্র।

সবুজ কাছিম, যার বৈজ্ঞানিক নাম Chelonia mydas, পৃথিবীর বৃহত্তম কঠিন খোলসযুক্ত সামুদ্রিক কচ্ছপ। একটি পূর্ণবয়স্ক সবুজ কাছিম লম্বায় প্রায় ৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং এর ওজন ৩২০ কেজি ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদের ‘সবুজ কাছিম’ নামকরণের কারণ এদের খোলস বা ক্যারাপেসের রঙ নয়, বরং এদের ত্বকের নিচে থাকা চর্বির এক ধরনের সবুজ আভা, যা মূলত এদের শৈবাল-ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাসের ফল। এদের খোলসের রঙ সাধারণত জলপাই-বাদামী থেকে শুরু করে কালো পর্যন্ত হতে পারে, যার উপরে বিভিন্ন ধরনের নকশা দেখা যায়। এরা বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে বিচরণ করে এবং বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত।

এই কাছিমদের জীবনচক্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এদের খাদ্যাভ্যাসের নাটকীয় পরিবর্তন। জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে, যখন এরা আকারে ছোট এবং অরক্ষিত থাকে, তখন এরা সর্বভুক প্রাণী হিসেবে আচরণ করে। এই সময়ে এরা জেলিফিশ, শামুক, চিংড়ি এবং অন্যান্য ছোট সামুদ্রিক প্রাণী খেয়ে নিজেদের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটায়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে এদের খাদ্যাভ্যাসে এক আমূল পরিবর্তন আসে এবং এরা প্রায় সম্পূর্ণরূপে তৃণভোজী হয়ে যায়। তখন এদের প্রধান খাদ্য হয়ে ওঠে সামুদ্রিক ঘাস এবং বিভিন্ন ধরনের শৈবাল বা অ্যালজি। এই খাদ্য পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের ঠোঁটের গঠনও পরিবর্তিত হয়; এটি আরও ধারালো এবং করাতের মতো খাঁজকাটা হয়ে ওঠে, যা শক্ত সামুদ্রিক ঘাস কাটার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। প্রাপ্তবয়স্ক সামুদ্রিক কচ্ছপদের মধ্যে সবুজ কাছিমই একমাত্র প্রজাতি, যা প্রায় একচেটিয়াভাবে তৃণভোজী।

সামুদ্রিক ঘাসের তৃণভূমি বা ‘সি-গ্রাস বেড’ পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র। এটি কেবল অসংখ্য সামুদ্রিক জীবের আশ্রয়স্থলই নয়, এটি উপকূলীয় অঞ্চলকে ভূমিক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে এবং বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তনে বাধা দেয়। সবুজ কাছিম এই তৃণভূমির স্বাস্থ্য রক্ষায় এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এরা যখন ঘাসের উপরের অংশ খায়, তখন তা ঘাসের মূলকে আরও শক্তিশালী হতে এবং নতুন পাতা গজাতে উৎসাহিত করে। এর ফলে তৃণভূমিটি আরও ঘন এবং স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে। এদের অনুপস্থিতিতে, ঘাসগুলো অতিরিক্ত লম্বা হয়ে যায়, যার ফলে ঘাসের নিচের অংশে পচন ধরে এবং রোগ-জীবাণুর বিস্তার ঘটে, যা পুরো তৃণভূমিকে ধ্বংস করে দেয়।

সবুজ কাছিম এক অবিশ্বাস্য নাবিক। এরা ডিম পাড়ার জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঠিক সেই নির্দিষ্ট সৈকতেই ফিরে আসে, যেখানে তাদের নিজেদের জন্ম হয়েছিল। এই দীর্ঘ অভিপ্রয়াণে বা মাইগ্রেশনে দিক নির্ণয়ের জন্য এরা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে এক অভ্যন্তরীণ মানচিত্র এবং কম্পাস হিসেবে ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, প্রতিটি উপকূলীয় অঞ্চলের একটি স্বতন্ত্র চৌম্বকীয় স্বাক্ষর বা ‘ম্যাগনেটিক সিগনেচার’ রয়েছে, যা এই কাছিমগুলো তাদের মস্তিষ্কে ধারণ করে রাখে এবং পরবর্তী জীবনে সেই স্বাক্ষর অনুসরণ করেই নিজেদের জন্মস্থানে ফিরে আসে।

প্রজনন ঋতুতে স্ত্রী কাছিমেরা রাতের অন্ধকারে সৈকতে উঠে আসে এবং তাদের পেছনের ফ্লিপার বা সাঁতারের ডানা ব্যবহার করে বালিতে একটি গভীর গর্ত বা বাসা তৈরি করে। প্রতিটি বাসায় এরা প্রায় ১০০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর তারা পুনরায় বালি দিয়ে বাসাটি ঢেকে দিয়ে সমুদ্রে ফিরে যায়। প্রায় দুই মাস পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এই বাচ্চাগুলোর লিঙ্গ নির্ধারিত হয় বালির তাপমাত্রা দ্বারা। যদি বাসার তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে উষ্ণ থাকে, তবে বেশিরভাগ বাচ্চাই স্ত্রী হয়, আর যদি তাপমাত্রা শীতল থাকে, তবে বেশিরভাগই পুরুষ হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অনেক সৈকতে এখন প্রায় সকল বাচ্চাই স্ত্রী হিসেবে জন্মাচ্ছে, যা এদের ভবিষ্যৎ বংশবিস্তারের জন্য এক মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।

ডিম ফুটে বের হওয়ার পর হাজার হাজার কচ্ছপ ছানার জন্য শুরু হয় জীবনের সবচেয়ে বিপদসংকুল যাত্রা। সৈকতের উপর কাঁকড়া, পাখি এবং ডাঙার অন্যান্য শিকারি এবং সমুদ্রের জলে বড় মাছ ও হাঙরের আক্রমণ থেকে বেঁচে খুব অল্প সংখ্যক ছানাই শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।

এই সমুদ্রের মালীরা আজ বিশ্বজুড়ে বিপন্ন (Endangered)। মাছ ধরার জালে দুর্ঘটনাবশত আটকা পড়া, প্লাস্টিক দূষণ, ডিম পাড়ার সৈকতগুলোতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন এদের অস্তিত্বকে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যা একসময় এদের অন্যতম প্রধান বিচরণক্ষেত্র ছিল, আজ অপরিকল্পিত পর্যটনের চাপে তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে।

এই মহিমান্বিত সামুদ্রিক প্রাণী এবং এর সাথে জড়িত জটিল বাস্তুতান্ত্রিক চক্র সম্পর্কে আরও জানতে ‘ঘড়িয়াল বাংলা’ পেজটি লাইক ও ফলো করে আমাদের সঙ্গে থাকুন। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন? আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টস বক্সে আমাদের জানান।

#সবুজকাছিম #সামুদ্রিককাছিম #সেন্টমার্টিন

Address

3/1 Sher-Sha-Suri Road, Mohammadpur
Dhaka
1212

Telephone

+8801402863704

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ghorial Bangla posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Ghorial Bangla:

Share

Category