
27/08/2025
==========================
"বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" শ্লোগান ও
বাংলাদেশি জাতীয়াতাবাদ
=========================
নিজ দেশের নামে যে শ্লোগান , বাংলাদেশের সকল নাগরিক তথা সমগ্র বাংলাদেশিদের যে শ্লোগান তা হলো "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ"।
এই শ্লোগানটি বাংলাদেশের বিখ্যাত রাজনৈতিক দল বিএনপি তার রাজনৈতিক শ্লোগান হিসেবে ব্যাবহার করে থাকে।
আগে আমাদের জাতীয়তা ছিল বাঙালি। কিন্তু বাংলাদেশে শুধু বাঙালি থাকেনা , অন্য সম্প্রদায়ের অন্য জাতির মানুষও থাকে। যেমন চাকমা , মারমা , হাজং ,গারো এরকম আরো বহু মানুষ যারা বাঙালি নয়। কিন্তু তারাও তো বাংলাদেশের মানুষ । বাংলাদেশ তো তাদেরও দেশ। আবার বাঙালি শুধু বাংলাদেশে থাকে না , বাংলাদেশের বাইরেও অন্যদেশেও অন্য নাগরিকরাও বাঙালি হিসেবে পরিচিত আছে। যেমন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি , আসামের বাঙালি ইত্যাদি। কিন্তু তারা তো বাংলাদেশের নাগরিক নয়।
তাই এসব বাস্তবতা থেকেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই প্রথম "বাঙালি জাতীয়তাবাদের" পরিবর্তে "বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ" প্রবর্তন করেন। ফলে বাংলাদেশে যারাই বসবাস করুক তা সে বাঙালি বা অবাঙালি তারা সবাই "বাংলাদেশি"। দেশের নামেই সবার পরিচয়।এটাই চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। কেউ যেনো বাদ না পড়ে। তিনি চেয়েছিলেন একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি।
আমাদের জাতীয়তাবাদের সাথে যেমন দেশের নাম উচ্চারিত হয় , ঠিক তেমনি 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' এমন একটি স্লোগান যে স্লোগানের সাথে আমাদের দেশের নাম উচ্চারিত হয়। যার ফলে এই দেশের প্রতি ভালোবাসা , দেশের প্রতি অঙ্গীকারের একটি মূর্ত প্রকাশ হচ্ছে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' স্লোগান। এজন্যেই বলা হয়ে থাকে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" একটি দেশপ্রেমের স্লোগান, যার অর্থ "বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক"। এটি একটি ফার্সি শব্দ "জিন্দাবাদ" থেকে এসেছে, যার অর্থ "দীর্ঘজীবী"। এই স্লোগানটি বাংলাদেশিদের দ্বারা দেশপ্রেম প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” — একটি স্লোগান, যা কেবল কিছু শব্দ নয়; বরং একটি জাতির আত্মপরিচয়, সাহস, স্বাধীনতা এবং দেশপ্রেমের প্রতীক। এটি এমন একটি উচ্চারণ, যা কোটি মানুষের হৃদয়ে গর্বের জোয়ার তোলে এবং আমাদের জাতীয় চেতনার গভীরতম স্তরকে নাড়া দেয়। এই স্লোগানটি যেমন ইতিহাস-নির্ভর, তেমনি বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের জন্যও এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা।
১৯৭১ সালে “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” স্লোগানটি প্রথম প্রবলভাবে উচ্চারিত হয়। এটি ছিল পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানিদের শ্লোগান "পাকিস্তান জিন্দাবাদ " শ্লোগানের বিপরীতে বাঙালি জাতির এক আত্মমর্যাদাপূর্ণ প্রত্যায়দীপ্ত উচ্চারণ , এক ঐতিহাসিক ঘোষণা। এটি একটি মুক্তিকামী জাতির আত্মপ্রকাশের শ্লোগান। এই শ্লোগান আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক।
এই স্লোগান আমাদের বলে দেয়, আমরা বাংলাদেশি এবং আমরা একটি স্বাধীন জাতি, যার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও গর্ব।
এই স্লোগানটি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখে। রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও, দেশের স্বার্থে একত্রিত হওয়ার প্রেরণা জোগায় এই শ্লোগান ।
বিশ্বমঞ্চে যখন একজন বাংলাদেশি “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” বলেন, তখন তা কেবল ভাষাগত উচ্চারণ নয়, এটি তার স্বদেশের প্রতি তার চেতনাগত অবস্থান এবং গর্বের প্রকাশ।
এটি রাজনীতি নিরপেক্ষ হলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক সময় এই স্লোগানকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করতে দেখা যায় , যেমন বিএনপি করে। তবুও, এর মূল আবেদন থাকে জনগণের মধ্যে, দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পরিসরেও এ শ্লোগানটি ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হয়।
“বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” কেবল একটি স্লোগান নয় — এটি একটি চেতনা, একটি আদর্শ, একটি ইতিহাস, এবং একটি ভবিষ্যৎ। এই স্লোগানের মাধ্যমে আমরা যেন সবসময় আমাদের স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস, বীর শহীদদের ত্যাগ, ও দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব স্মরণ করি। দেশের প্রতি ভালোবাসার এই চিরন্তন প্রতিজ্ঞা যেন আমাদের মননে ও কর্মে সদা জাগ্রত থাকে। আসুন আমরা সমস্বরে উচ্চারণ করি:
✊✊✊বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।✊✊✊
লেখক: কাজী এমদাদ
সাবেক সচিব।